যাদের নেতৃত্বে রংপুরের হিন্দু পল্লীতে আগুন!!?
লিখেছেন লিখেছেন চেতনাবিলাস ১২ নভেম্বর, ২০১৭, ০৪:১৩:১০ বিকাল
গত শুক্রবার রংপুরের ঠাকুরপাড়ায় শ্রী টিটু চন্দ্র রায় নামে এক হিন্দু যুবক কর্তৃক ফেসবুকে ইসলাম ও ইসলামের নবী মুহাম্মদ সা: কে নিয়ে কটুক্তিপূর্ণ পোষ্ট এর প্রেক্ষিতে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ ও হিন্দু পল্লীতে হামলা-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীকে নেতৃত্ব ও উস্কানি দেয়ার পেছনে এলাকার আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের নেতৃত্বেই হিন্দু বাড়িতে আগুন দেয়ার প্রমানও পাওয়া যাচ্ছে।
ঘটনার সূত্রপাত গত ২৮ অক্টোবর। সেদিন সদর উপজেলার খলেয়া ইউনিয়নের ঠাকুরপাড়া গ্রামের টিটু রায় (৪০) নামে এক যুবক ‘এমডি টিটু’ নামে তার ফেইসবুক আইডিতে মুহম্মদ (সা.) কে নিয়ে অবমাননাকর উক্তি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিলে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। পরবর্তীতে বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করা হয়। অনলাইন পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউন জানায় যে, এই স্ট্যাটাসটিকে ঘিরে বেশ কিছুদিন ধরে পাশের এলাকায় বেশ আলোচনা হচ্ছিল এবং টিটুর বিচারের দাবিতে তাদের গ্রামে হামলার হুমকিও আসছিল।
অ্যানালাইসিস বিডির অনুসন্ধানে জানা যায়, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে পোষ্ট করায় ৬ নভেম্বর স্থানীয় কিছু মুসল্লি থানায় যায় টিটুর বিরুদ্ধে মামলা করতে। কিন্তু প্রথমে পুলিশ মামলা গ্রহন না করলে মুসল্লিরা চলে আসে। পরে মুসল্লিদেরকে থানায় ডেকে নিয়ে গিয়ে মামলা গ্রহন করে পুলিশ। মামলা গ্রহনের পর মুসল্লিরা টিটুকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশকে ২৪ ঘন্টা আলটিমেটাম দিয়ে আসে এবং এই সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করা না হলে তারা আন্দোলনের হুমকিও দেয় পুলিশকে।
৭ নভেম্বর আল্টিমেটামের সময় শেষ হয়ে গেলে মুসল্লিরা শ্রী টিটু চন্দ্র রায়ের গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করে। সেই সমাবেশে নেতৃত্ব ও বক্তৃতা প্রদান করেন রংপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ এর যুগ্ম আহবায়ক হালিমুল হক, হরিদেবপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ এর সেক্রেটারি সাইদুল ইসলাম, হরিদেবপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি শাহজাদা ইসলাম জয়, হরিদেবপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সেক্রেটারি এজাজুল ইসলাম রাজুসহ স্থানীয় আরো কয়েকজন নেতৃবৃন্দ।
এদিকে মামলা করার ৩ দিন পরও পুলিশ টিটুকে গ্রেফতার না করায় ৯ নভেম্বর মুসল্লিরা ফের সমাবেশের আয়োজন করে। সেই সমাবেশ থেকে মুসল্লিরা পুলিশকে আরো একদিনের আল্টিমেটাম ও শুক্রবার বিশাল সমাবেশের ঘোষণা দেয়।
শুক্রবার পুরো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করলে অনাকাঙ্খিত ঘটনা রুখতে জুমার নামাজের সময় পাগলাপীরসহ আসপাশের এলাকাগুলো পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরে পাগলাপীর বাজারে সমাবেশ করতে না পেরে অল্প কিছু মুসল্লি, প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে সেই সংখ্যাটি প্রায় তিনশ’র মত হবে, যারা পাগলাপীর সংলগ্ন সলেয়াশা বাজারে মানববন্ধন করে চলে যায়। মুসল্লিরা চলে যাওয়ার পর পাশ্ববর্তি কয়েকটি ইউনিয়ন থেকে প্রায় দশ থেকে পনের হাজার মানুষ লাঠি সোঠাসহ রাস্তায় অবস্থান নেয় এবং মানববন্ধন করে। তবে এসময় তাদের নেতৃত্বে তেমন কোনো পরিচিত নেতাকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। এক পর্যায়ে কিছু সংখ্যক লোক পাশ্ববর্তি একটি হিন্দু পল্লীতে হামলা চালায়।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, সাধারণ জনতার ঐ হামলায় হিন্দু বাড়িগুলোর খুব সামান্যই ক্ষতি হয়। তারা শুধু লাঠি সোঠা দিয়ে ঘর বাড়িতে আঘাত করে। কিন্তু সাধারণ জনতার উপস্থিতিতেই এক ব্যক্তি মোটর সাইকেলে করে এসে হিন্দুদের ঘরগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয়। হিন্দুদের ঘরে আগুন লাগানো সেই ব্যক্তি সাদা পোশাকে পুলিশের লোক ছিলো বলেই দাবি করেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা অ্যানালাইসিস বিডিকে আরো জানান, মোটর সাইকেলে করে এসে যখন ঐ আগন্তুক হিন্দুদের ঘরগুলোতে আগুন দিচ্ছিলেন তখন তার সঙ্গে ছিলেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা পলাশ চন্দ্র রায়। হিন্দু বাড়িতে আগুন ধরানোর পেছনে এই পলাশ চন্দ্র রায়কেই প্রধান কারিগর হিসেবে মনে করেন স্থানীয়রা। হামলার পর সাবোটাজ করতে তার সহযোগীতায়ই সাদা পোশাকের পুলিশের লোক হিন্দুদের ঘরে আগুন দেয় বলে তাদের দাবি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রামু ও নাসিরনগরের ঘটনায় টার্গেট ছিলো সংখ্যালঘু রাজনীতিকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা আদায়। রংপুরের ঘটনাও ভিন্ন কোনো ঘটনা নয়। প্রমাণ ছাড়াই পুলিশ কর্তৃক একটি নির্দিষ্ট দলকে দোষারোপ করাই প্রমান করে এই ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত ও রাজনৈতিক ফায়দা আদায়ের চক্রান্ত। রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে সংখ্যালঘুদের সমর্থন আদায়ের জন্য এটি সরকার দলীয়দের ঘৃণ্য কৌশল বলেও মনে করেন অনেকে।
বিষয়: রাজনীতি
৭৬৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন