বিরোধী নেতা-কর্মী গুম-খুনের হোতাদের জীবনই এখন হুমকীর মুখে!!!

লিখেছেন লিখেছেন চেতনাবিলাস ১০ জুলাই, ২০১৭, ০৭:১৪:৫৮ সকাল

গুম আর বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে নির্মুল করার চেষ্টায় বাংলাদেশের অনির্বাচিত স্বৈরাচারী সরকারটি টিকে আছে। সরকারের এই পৈচাশিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে যেসব কুশিলব মৃত্যুদূত হিসেবে কাজ করেছেন তাদের সবার জীবনই এখন হুমকীর মুখে। কারণ এইসব মৃত্যুদূতদের কাছে রয়েছে গুম-খুনের আদেশদাতার আদেশের প্রমান এবং গুম-খুন করা বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের তালিকা।

সেই আদেশদাতার পরিচয় এবং তার দেয়া গুম-খুনের আদেশের প্রমান মুছে দিতেই একে একে রহস্যজনকভাবে অপমৃত্যু হয়েছে ওসি সালাউদ্দিন, গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম, শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী মাহাবুব শাকিল, র্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজাদ, জালালাবাদ থানার ওসি মনিরুল ইসলাম, সিলেট সিটি স্পেশাল ব্রাঞ্চের ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ আবু কয়সর, সিলেট মহানগর পুলিশের ইন্সপেক্টর আবু ফয়সাল এবং বগুড়া গাবতলী মডেল থানার ওসি আ ন ম আবদুল্লাহ আল হাসানের।

ওসি সালাউদ্দিন ছিলেন মিরপুরের ত্রাস। অবৈধ সরকারের গদি টিকিয়ে রাখতে তিনি মিরপুর থানাধীন তার এলাকার অর্ধশতেরও বেশি বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীকে বিচারবহির্ভুত সাজানো বন্দুক যুদ্ধে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করেছেন। চাঁদাবাজির জন্য খুন করেছেন ব্যবসায়ী সুজনসহ আরো এক ডজনের বেশি অরাজনৈতিক সাধারণ নাগরিককে। এছাড়াও তার হাতে গুম হয়েছেন মিরপুর এলাকার দুই ডজনের বেশি মানুষ। এইসব গুম-খুনের প্রমান মুছে দিতে ওসি সালাউদ্দিনকে খরচের খাতায় তোলা খুবই জরুরী ছিল। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গী হামলার সময় বনানী থানার ওসি হিসেবে কর্মরত সালাউদ্দিনের বা গোয়েন্দা পুলিশের এসি রবিউলের সেখানে যাওয়ার কোন কথা ছিল না। জঙ্গী মোকাবেলায় সেখানে যাবার কথা সোয়াট বা র্যাবের। কিন্তু সেখানে অপ্রত্যাশিতভাবে অভিযান চালাতে গিয়ে অপমৃত্যুর শিকার হলেন ওসি বনানীতে হিসেবে কর্মরত সালাউদ্দিন এবং গোয়েন্দা পুলিশের এসি রবিউল। মুছে গেল সালাউদ্দিনের সকল গুম-খুনের আদেশদাতার পরিচয়, আর রবিউলের দ্বারা ডিবির গুমঘরে এবং ক্রসফায়ারে নিহতদের প্রকৃত ঘাতক রয়ে গেল পর্দার আড়ালে।

শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী মাহাবুব শাকিলের মালিকানাধীন সামদাদো রেস্টুরেন্টে বসেই তৈরী হতো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার এবং মিডিয়া নিয়ন্ত্রনের নীল নকশা। সেই মাহাবুব শাকিলকে একদিন তারই রেস্টুরেন্টে রহস্যজনকভাবে জীবন দিতে হলো। শাকিল এমন কিছু তথ্য জানতেন যে কারণে তিনি তার ঘনিষ্ট সাংবাদিকের কাছে আশংকা প্রকাশ করেছিলেন যে তাকে তার ঘনিষ্ট কেউ হত্যা করবে। সাংবাদিক পীর হাবিব সেই কথা ফেসবুকে লিখে স্ট্যাটাসও দিয়েছিলেন। কে ছিল সেই ঘনিষ্ট আততায়ী সেটাও রহস্যই রয়ে গেল।

সিলেটে আতিয়া মহলে জঙ্গী বিরোধী অভিযানের সময় সেই বাড়িটি এবং তার আশেপাশের এক কিলোমিটার এলাকা পুলিশ, র্যাব, সোয়াট এবং সেনাবাহিনী ঘেরাও করে রেখেছিল। সেই ঘেরাও এর মধ্যে আতিয়া মহল থেকে ২০০ গজেরও বেশি দূরে বোমা বিষ্ফোরণে নিহত হলেন র্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজাদ, জালালাবাদ থানার ওসি মনিরুল ইসলাম, সিলেট সিটি স্পেশাল ব্রাঞ্চের ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ আবু কয়সর এবং সিলেট মহানগর পুলিশের ইন্সপেক্টর আবু ফয়সাল। আতিয়া মহলের ভেতরে থাকা জঙ্গীদের পক্ষে এতদূরে বোমা নিক্ষেপ করা সম্ভব নয়, আর প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে ঐখানে সেনাবাহিনীর সংবাদ সম্মেলন শেষে ছাত্রলীগের তিন নেতা একটা মোটর সাইকেলে করে কিছু বয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, পথে মোটরসাইকেল থামিয়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তার সাথে কথা বলার সময় একটি বোমা বিষ্ফোরণ হয়। বিষ্ফোরণে ঐ পুলিশ কর্মকর্তা এবং দুই ছাত্রলীগ নেতা নিহত হয়েছেন অন্যজন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পালিয়ে গেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে- ঐ সেনা কর্ডনের ভেতরে ছাত্রলীগ নেতারা মোটর সাইকেল নিয়ে কিভাবে প্রবেশ করেছিলেন? প্রথমে পুলিশের পক্ষ থেকে এই ঘটনাকে আত্মঘাতী হামলা বলা হলেও পরবর্তীতে ছাত্রলীগ পরিচয় প্রকাশ হবার পর বলা হলো, বোমা পেতে রাখা হয়েছিল। এখানেও প্রশ্ন থেকে যায়- সেনা কর্ডনের ভেতরে ঐ বোমা কে কিভাবে পাতলো?

প্রথম বোমা বিষ্ফোরণের পর, যে পথ দিয়ে ঐ মোটর সাইকেল এসেছিল সেই পথেই আরেকটু পেছনে একটি বোমা সদৃশ বস্তু দেখিয়ে একজন তরুন পুলিশের দুই ইন্সপেক্টর এবং র্যাবের গোয়েন্দা প্রধানকে ডাকেন। সেই বোমা ফেটে নিহত হন তারা। সেই একই প্রশ্ন এখানেও প্রযোজ্য- সেনা কর্ডনের ভেতরে ঐ বোমা কে কিভাবে পেতে রাখলো?

এই দুই বোমা হামলায় যে তিনজন পুলিশের ওসি/ইন্সপেক্টর নিহত হয়েছেন তারা সবাই সিলেট অঞ্চলে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গুম-খুনের সাথে জড়িত। অন্যদিকে র্যাবের গোয়েন্দা প্রধানের কাছে ছিল গত ছয় বছরে তাদের হাতে গুম-খুনের শিকার মানুষের তালিকা এবং তথ্য। এইসব তথ্য মুছে দিতেই কী তাহলে এই চারজনকে হত্যা করা হলো?

বগুড়ার গাবতলী মডেল থানার ওসি আ ন ম আবদুল্লাহ আল হাসানও তার এলাকায় বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের উপর অনেক নির্যাতনের হোতা। গত ২৯ মার্চ বুধবার নিজের কোয়ার্টারের গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় তার মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। একজন পুলিশের ওসি কী কারণে গলায় ফাঁস দেবেন? ধারণা করা হচ্ছে- এটিও প্রমান মোছারই একটি অংশ।

এভাবে গুম-খুনের হোতাদের একের পর এক রহস্যজনক অপমৃত্যুর পর এখন অন্য গুম-খুনের হোতা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা আতংক। সবার মনের মধ্যে একই প্রশ্ন- এরপর কার পালা?

বিষয়: রাজনীতি

৭৭৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

383531
১০ জুলাই ২০১৭ বিকাল ০৪:৫৩
হতভাগা লিখেছেন : ইহা একটি কপি পেস্ট পরিবেশনা ( টপ টু বটম - কোনটাই বাদ যায় নাই)

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File