সেদিন যেভাবে বিএনপি-জামাত জোট কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতি দিয়েছিলো
লিখেছেন লিখেছেন চেতনাবিলাস ১৩ এপ্রিল, ২০১৭, ০৮:৩৬:৪৩ সকাল
শামসুল আলম
২০০৬ সালের আগস্ট মাস। চার দলীয় জোট সরকারের শেষ দিকে নানা ব্যস্ততা। এরি মধ্যে আমার এক সুহৃদ জানলেন, ঢাকার মুক্তাঙ্গনে কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সমাবেশে পুলিশের সাথে গন্ডগোল হচ্ছে, কয়েকজনকে আটকও হয়েছে। জোট সরকারের শরীক একটি দলের (ইসলামী ঐক্যজোট) আয়োজনে চলছিল সে সমাবেশ। তৎক্ষণাৎ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিস চৌধুরীকে জানালাম। রাজনৈতিক বিষয়গুলো দেখা উনার দায়িত্ব। দুর্যোগপূর্ন আবহাওয়ার মধ্যে সেই সমাবেশ চলে লাগাতার পাঁচ দিন। বৃষ্টির ভেতরেই ঐক্যজোট প্রধান আশীতিপর বৃদ্ধ শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক সমাবেশে পুরোটা সময় হাজির ছিলেন। পরে আমার সেই সুহৃদ সেখান থেকে আমাকে শোনান শাইখুল হাদীস সাহেবের ভাষণ, যেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে যা বলছিলেন তার মর্ম ছিলো এরকম, “আমি আপনাদের জোট সরকারে ছিলাম, কিন্তু কোনো পদ পদবী নেইনি। কেবল একটা দাবী ছিল, কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সনদের স্বীকৃতি।
এই সরকারের মেয়াদকালে এই দাবীপূরণ না হলে আমি কি জবাব দিব বাচ্চাদের কাছে? আমি দেশে থাকতে পারব না। আমার ইজ্জত রক্ষা করলে আপনারাও সম্মানিত হবেন!” টেলিফোনে এসব শোনার পরে আমি সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে তা অবহিত করি (যদিও এটা আমার চার্টারের কাজ ছিল না, তারপরেও কানে আসার পরে সরকারকে জানাই)। পলিটিক্যাল সেক্রেটারী হারিস সাহেবকে অনুরোধ করি, চলুন কিছু একটা করি। এক পর্যায়ে আমার চাপাচাপিতে হারিস চৌধুরী নিজে যেতে রাজী হলেন, এবং আমাকে সহ মুক্তাঙ্গনে গেলেন। স্টেজে উঠে তিনি বক্তৃতা করলেন, আশ্বাস দিয়ে সমাবেশের সমাপ্তি টেনে আসলেন। আমি পেছনে দাড়িয়ে সব শুনলাম। এরপরে মাত্র দু’দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত সারসংক্ষেপে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারী করা হয় ২৯ আগস্ট ২০০৬ তারিখে, যার নম্বর- শাখা-১৬/বিবিধ-১১(৯)/২০০৩(অংশ)-৮৮৭। এতে বলা হয় কওমী মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রি “দাওরায়ে হাদিসকে এমএ (ইসলামিক স্টাডিজ/ সাহিত্য) সমমান” হিসাবে ঘোষণা করা হলো। অবশ্য এর কিছুদিন আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কওমী মাদ্রাসার নেতৃবৃন্দের সাক্ষাৎকালে আশ্বাস দেন, অচিরেই সনদের মান ঘোষণা করা হবে।
পরবর্তীতে এই প্রজ্ঞাপনের ধারাবাহিকতায় ২০ ডিসেম্বর ২০০৬ এ সংক্রান্তে ক্বওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড গঠন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারী করে রাষ্ট্রপতি প্রফেসর ইয়াজউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার, এবং যথারীতি তা গেজেট হিসাবে জারী করা হয়। অর্থাৎ কওমী মাদ্রাসা সনদের স্বীকৃতি সংক্রান্ত প্রধান ২টি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত চার দলীয় জোট সরকার এবং পরবর্তী ইয়াজউদ্দিনের কেয়ারটেকার সরকারই সম্পন্ন করে।
আলহামদুলিল্লাহ - সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ তায়লার।
এই ঘটনার আগেও আমি জানতে পারি, কওমী মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি নিয়ে ইসলামী ঐক্য জোট এবং অন্যান্য কওমী মাদ্রাসার নেতাদের দাবীর কথা। কেননা প্রধানমন্ত্রীর প্রোগ্রাম ম্যানেজার হিসাবে এসব বিষয়াদি আমার জানা থাকত। এমনকি আমার অফিস কক্ষে বসে অনেক গুরুত্বপূর্ন কাজও সম্পদিত হয়েছে। একথা সবারই জানা ছিল যে, ডিগ্রির মূল্যমানের অভাবে কওমী মাদ্রাসার সর্বোচ্চ শিক্ষিত হয়েও হাজার হাজার ছাত্র জাতীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থান লাভের কোনো সুযোগ পেত না। সরকারের প্রথম থেকেই বিষয়টির প্রতি প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সহানুভূতিশীল ছিলেন। কওমী মাদ্রাসা, নেতারা সরকারের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর তৈরী করে দেন, কিছু কিছু দেখার সুযোগ হয়েছে। এমনকি আশেপাশের দেশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কারিকুলাম সহ বিভিন্ন মানদন্ড ও শর্তাবলী ঠিক করে দেন। সরকারের শিক্ষমন্ত্রী ডঃ ওসমান ফারুক এবং প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলনও চেয়েছিলেন বিষয়টি সুসম্পন্ন করতে। তবে কওমী মাদ্রাসার বেফাক এবং অনেকগুলি বোর্ড থাকায় এবং নেতাদের মধ্যে মতানৈক্যের কারনে সরকারের উদ্যোগ বারংবার বাধাগ্রস্থ হয়। অবশেষ অনেক ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক উদ্যোগের আগষ্টের শেষ সপ্তাহে কওমী মাদ্রাসার প্রাণের দাবী সনদের মান প্রদান সম্পন্ন করে চার দলীয় জোট সরকার।
কিন্তু গতকাল সন্ধায় ঢাকার গণভবনে দেখা গেলো এক মজার ঘটনা। হেফাজতে ইসলাম এবং তাদেরই ঘোষিত ওলামায়ে ছু’কে ডেকে নতুন নাটক করা হলো দাওরাকে “এমএ সমমান” ঘোষণার এক নাটক করলেন অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা! যে বিষয়টা ১১ বছর আগেই ঘোষণা করা হয়েছে, সেটা নতুন করে ঘোষণা দিয়ে (যেনো এর আগে আর কিছুই হয়নি!) তিনি কি আনন্দ পেলেন? এক মুরগি আর কয়বার জবাই করবেন? নতুন মুরগি ধরে আনলে ভালো হতো না?
বিষয়: বিবিধ
১০৭৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুন্দর বলেছেন, জবাইকৃত মুরগীকে বারবার জবাই করাই আ.লীগের কাজ. তবে হাসিনার কথা বলতে হবে, মাথা একটা। ওর মতো কুট বুদ্ধি রাজনৈতিক কমই আছে দেশে।ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন