আল্লামা শফির হেফাজত এখন ধর্মনিরপক্ষতা রক্ষার ক্রীড়নক!!
লিখেছেন লিখেছেন চেতনাবিলাস ১৩ এপ্রিল, ২০১৭, ০৬:০৬:০১ সকাল
পবিত্র কুরআনের সুরা কাফিরুন এর মর্ম কথা কী তা কুরআন সম্পর্কে অভিজ্ঞ ব্যক্তি মাত্রই জানেন। এখানে সুস্পষ্ট ভাবেই বলা আছে কাফির মুশরিকদের কোনও শয়তানি সংস্কৃতি অনুমোদনের বিনিময়ে ইসলামের কোন আদর্শ তাদেরকে মানতে অনুরোধ করা প্রকৃতপক্ষে ইসলামের বিরোধিতাকেই বোঝায়। আল্লামা শফির হেফাজত কিন্তু মুশরিক বান্ধব হাসিনার কাছ থেকে কেবল কওমী সনদের পার্থিব সার্থ সংশ্লিষ্ট স্বীকৃতি আদায় করে হাসিনার সব ইসলাম বিরোধী আদর্শকে স্বীকৃতি দিয়ে দিল। তাই এতদিন তারা বাংলা বর্ষ বরণের অনুষ্ঠানে মঙ্গল শোভা যাত্রার বিরোধিতা করে আসলেও এবার তারা এর বিরুদ্ধে কোন কর্মসূচি দেবেনা বলেই ঠিক করেছে। বোঝাই যাচ্ছে আল্লামা শফির নেতৃত্বাধীন হেফাজত প্রকৃত ইসলামের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে পার্থিব সার্থকেই. উর্ধ্বে স্থান দিয়েছে। নিচের খবর থেকে সেটাই সুস্পষ্ট।
সরকারের সাথে চলমান সুসম্পর্কের পথ ধরে মঙ্গল শোভাযাত্রা ইস্যুতে আপাতত ‘চুপ’ থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হেফাজতে ইসলামসহ বেশকিছু ধর্মভিত্তিক দল। আদর্শিকভাবে মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ বর্ষবরণ অনুষ্ঠানকে ইসলাম ধর্মবিরোধী বলে মনে করলেও এতে বাধা দেওয়া বা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা তৈরি করতে চায় না হেফাজতসহ ইসলামী দলগুলো। অন্যদিকে, সরকার মনে করে এবার হেফাজতকে সামনে ঠেলে দিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অঘটন ঘটিয়ে ফায়দা নিতে চেয়েছিল তৃতীয় কোনো পক্ষ।
যদিও যেকোনও পরিস্থিতিতেই বরাবরের চেয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা আরও জাঁকজমক করার কথা জানিয়েছেন এ অনুষ্ঠানের আয়োজকরা। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, হেফাজতে ইসলাম এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে কথা বলে এসব কথা জানা গেছে।
অপরদিকে মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজন এবং চিত্রকর্মের বিরোধিতা করলেও চট্টগ্রামের চিত্রকর্ম নষ্ট করার সাথে হেফাজতে ইসলাম কোনোভাবেই জড়িত নয় বলে দাবি করেছে সংগঠনটি।
হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী ঐক্য জোট, ইসলামী ছাত্র ঐক্যসহ বেশ কিছু সংগঠন গত কিছুদিন ধরেই চারুকলা ইনস্টিটিউটর এর আয়োজন করা মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরোধিতা করে নানান কর্মসূচি দিয়ে আসছিল। একইসঙ্গে চলছিল সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য সরানোর দাবি।
যা নিযে ইসলামি দল ও সংগঠনগুলো নানা হুমকিও দিয়েছিল। এ পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেফাজতে ইসলামের প্রধান আমির আল্লামা শফির নেতৃত্বে আসা প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠক করেন। এরপর কওমি মাদ্রাসার সনদকে আনুষ্ঠানিক মর্যাদা দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনিও মাদ্রাসার সামনে গ্রিক মূর্তি স্থাপন পছন্দ করেননি। সরকার প্রধানের এ অবস্থানের পর বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক এবং মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজকদের মধ্যে অন্যতম নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু পরিবর্তন ডটকমকে তার ক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া তুলে ধরে বলেন, আমরা হেফাজতসহ জঙ্গিদের কাছে মাথা নত করব না।
তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য সরানোর যে চিন্তাভাবনা সরকার করছে তা সরকারের আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত। সার্বিকভাবে তিনি খুব হতাশ বলে উল্লেখ করেন।
এ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও মুক্তিযোদ্ধা আরো বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি হিসাবে এ সরকারের আগামী দিনের কথা চিন্তা করে তিনি হতাশ।
কওমি মাদ্রাসার সনদের মর্যাদা প্রসঙ্গে বাচ্চু বলেন, ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদ কখনও কাম্য নয়। এখন যা হবে তা হলো ধর্মনিরপেক্ষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী। তার মতে, শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্ম শিক্ষা পাঠ্যসূতিতে থাকায় তাদের কোনও আপত্তি ছিল না। কিন্তু একমুখি শিক্ষার পরিবর্তে কওমি শিক্ষার প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছি, খুবই ভুল সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অন্যদিকে হেফাজতে ইসলামের মুখপাত্র ও দলটির যুগ্ম মহাসচিব এবং ইসলামী ঐক জোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহা পরিবর্তন ডটকমকের কাছে আবারও দাবি করেন, মঙ্গল শোভাযাত্রা হিন্দু ধর্মালম্বীদের অনুষ্ঠান।
তিনি বলেন, ‘হিন্দুরা এটি পালন করবে তাতে (হেফাজত ও ইসলামী ঐক্য জোটের) আপত্তি নাই। এটি মুসলমানদের ওপর যেন চাপিয়ে দেওয়া না হয়।’
তার মতে এটি অবশ্যই নিছক একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। মঙ্গল শোভাযাত্রা নামে দেশ থেকে ইসলামী কৃষ্টি কালচারকে মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে বলেও এই নেতার অভিযোগ। তার ভাষায়, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রায় পরপরুষ, পর নারীকে এবং পরনারী পরপুরুষকে লাগামহীনভাবে উলকি এঁকে দেয়, যা ইসলামবিরোধী। মঙ্গল শোভাযাত্রায় অহেতুক অর্থ অপচয় করে গরিবদের সাথে উপহাস করা হয় বলেও দাবি ফয়জুল্লাহার। তার দাবি, এ সব শয়তানের চক্রান্ত।
হেফাজতের এ নেতা বলেন, চট্টগ্রাম দেয়ালে শিল্পকর্ম নষ্ট করার ঘটনার সাথে হেফাজতের কেউ জড়িত নয়। হেফাজত বলপ্রয়োগ করে কিছু করার পক্ষে না বলেও দাবি তার। তবে এসব চিত্রকর্মও করা ঠিক না বলেও দাবি হেফাজত নেতার।
সার্বিক বিষয়ে পরিবর্তন ডটকমের সাথে কথা বলে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। তিনি অবশ্য বলেন, খামকাই একটি গ্রুপ মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরোধিতা শুরু করেছে। এতদিন এটা নিয়ে কেউ কিছু বলে নাই। এটি ২০/৩০ বছর ধরে চলছে।
মন্ত্রী মনে করেন, যেহেতু নির্বাচন সামনে তাই এটা পুরোটাই পলিটিক্যাল একটি চাল। এর সাথে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নাই বলে মনে করেন নূর।
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রায় শুধু সাজসজ্জা করা হয়। এখানে কোনো পূজা করা হয় না। এটা একটা আনন্দ মিছিল। এখানে কাগজের কিছু প্রতিকৃতি ব্যবহার করা হয়।
তিনি বলেন, এখন মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধের দাবি মেনে নিলে পরে তারা বলবে ক্রিকেট টিমের লোগোতো যে বাঘের ছবি আছে তা নামাতে, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সরাতে, শহীদ মিনার বা স্মৃতিসৌধ ভেঙে ফেলতে। যে কারণে জামায়াত কোনোদিন শহীদ মিনারে যায় না। মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধের দাবি জামায়াতের বলেও উল্লেখ করেন নূর।
উৎসঃ পরিবর্তন
বিষয়: বিবিধ
৮৬৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মঙ্গল শোভা যাত্রা সুষ্পষ্টভাবেই মূর্তি বা এদের ইমেজ নিয়ে একটা ইভেন্ট যা ইসলামী শরিয়তের পরিপন্থী ।
ইব্রাহীম (আঃ) এর মূর্তি নিয়ে যে ঘটনা আমরা জানি সেটার বিপরীতে আমরা খুবই দূর্বল ঈমান সম্পন্ন। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে তো তার বিপরীত।
কিন্তু পারিপার্শ্বিক ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশের কারণে আমাদের দেশে ( যেখানে ম্যাক্সিমাম লোক মুসলমান) এরকম একটা অনুষ্ঠান আমাদেরকে বাধ্য হয়ে পালন করতে হয় । বেশীর ভাগ মুসলমান এই ধরনের কাজ যে ভয়াবহ পারলৈকিক শাস্তির কারণ হবে সেটা বুঝতেই পারে না।
একজন মুসলমান হিসেবে অন্যতম বিশ্বাস স্থাপন করতে হয় পরকালের প্রতি , সেখানের শাস্তি ও পুরষ্কারের প্রতি।
মৃত্যুর পর আমাদের বিচার হবে আমরা মুসলমান কি না সেটা । মুসলমান হিসেবে আল্লাহর পছন্দ অনুযায়ী চলেছি কি না সেটা । চললে শান্তি ,না চলে শাস্তি।
সেখানে একজন বাঙ্গালী হিসেবে ফেভার পাবার সুযোগ কি আছে ?
আমাদের মুসলমানদেরকে আল্লাহর না -পছন্দ কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ আমাদের সেই তৌফিক দিন - আমিন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন