এবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট চুরি নয় .হবে প্রকাশ্যে ভোট ডাকাতি! !""

লিখেছেন লিখেছেন চেতনাবিলাস ২১ মার্চ, ২০১৬, ০৭:৩৫:৩০ সকাল

আমতলী থেকে বরগুনায় ঢোকার সময় উত্তাল নদীর মাঝে

ট্রলারে বসেই বরগুনার এক যাত্রী ভোটের প্রসঙ্গ তুলে

বললেন, “এমনিতেই ভোট দিতে কতজন যায় তা নিয়ে আগে

থেকেই শঙ্কায় ছিলাম। আর এখন তো নৌকা মার্কার

লোকজন প্রকাশ্যেই বলে দিচ্ছে ‘নৌকার ভোট ওপেনে—

বাকিগুলা গোপনে।’ যদি তাই হয়, তবে আর ভোটের

থাকলটা কী!”

কী থাকল তা বোঝা গেল বরগুনার তীরে পা রেখেই। বড়

পায়রায় বিচ্ছিন্ন জেলা আর উপজেলা। পশ্চিম পারে

বরগুনা জেলা আর পূর্বে আমতলী উপজেলা। দুই পারেই

নির্বাচন। তবে পরিবেশ বলছে ভিন্ন কথা। আমতলীতে সাজ

সাজ রব। সমানে চলছে প্রচারণা। পশ্চিম পারে সুনসান

নীরবতা। শুধু এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর পোস্টারে ছেয়ে

আছে ফেরিঘাট। দেখলে মনে হবে ইউনিয়নে প্রার্থীই

একজন। ঘাটের বেশ কয়েকজন দোকানি জানাল, এই

ইউনিয়নে একজনই প্রার্থী ছিলেন। তিনি কোনো

প্রার্থীকেই মনোনয়নপত্র দাখিল করতে দেননি। বিধি

অনুযায়ী, তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতও

হয়েছিলেন। গরু কেটে বিজয় উল্লাসও করেছিলেন। কিন্তু

সপ্তাহখানেক ধরে শুনছি আরো দুজন আদালতের নির্দেশে

প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু তাঁরা ওই প্রার্থীর ভয়ে

প্রচারণাই করেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরগুনা সদর উপজেলা আওয়ামী

লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ওরফে ভায়রা সিদ্দিক

বুড়িরচর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান। দলীয় প্রার্থী

হয়েছেন। কিন্তু কোনো প্রার্থীকে তিনি মনোনয়নপত্র

দাখিল করতে দেননি। ফলে বিধি অনুযায়ী সিদ্দিকুর

রহমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এ নিয়ে

কালের কণ্ঠে সংবাদ প্রকাশের পর দুই প্রার্থী উচ্চ

আদালতের শরণাপন্ন হন। শেষমেশ আদালত তাঁদের

নির্বাচনে ফিরে আসতে সাহায্য করেন। কিন্তু এলাকায়

ঘুরে তাঁদের কোনো পোস্টার কিংবা নির্বাচনী

ক্যাম্প চোখে পড়েনি।

সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও স্বতন্ত্র

প্রার্থী ইকবাল মাহবুব কালের কণ্ঠকে বলেন, আওয়ামী

লীগের প্রার্থীর লোকজন ভোটারদের কাছে ভোট

চাইছেন না। শুধু বলছেন, ‘ভোট দিলে দেখিয়ে দিতে হবে,

না হলে ভোট দিতে আসবেন না।’ তিনি আরো বলেন,

‘কেন্দ্রে কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট যাদের দেব তাদের

বাড়ি বাড়ি গিয়ে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা হুমকি

দিচ্ছে—কেন্দ্রে গেলে খুন করে ফেলবে। এই

পরিস্থিতিতে ভোটার তো দূরের কথা পোলিং এজেন্ট

কেন্দ্রে জেতে পারবে কি না তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।’

সিদ্দিকুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি আওয়ামী

লীগের মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছি।

উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব

পালন করায় নিজের ভোটের এলাকায় যেতে পারছি না।

দলীয় কর্মীরা আমার প্রচারণা চালাচ্ছেন।’ হুমকি প্রসঙ্গে

বলেন, ‘সপ্তাহখানেক আগে তাঁরা আদালতের নির্দেশে

প্রার্থী হয়েছেন। এর পর তাঁদের এলাকায় দেখা নেই।

এমনকি তাঁরা পোস্টারিং পর্যন্ত করেননি। মুলত আমি

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী যাতে না হতে পারি সে

জন্যই তাঁরা কাগুজে প্রার্থী হয়েছেন।’

বরগুনার অন্য তিন উপজেলা আগে থেকেই সারা দেশে

আলোচিত হয়ে উঠেছে সরকারদলীয় স্থানীয় সংসদ

সদ্যসের আচরণে। আচরণবিধি ভঙ্গ করায় ওই সংসদ সদস্য শওকত

হাচানুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে খোদ নির্বাচন

কমিশন। নেতার বিরুদ্ধে মামলা করলেও থেমে নেই

সরকারদলীয় প্রার্থীরা। বিশেষ করে বেতাগী সদরে দল

মনোনীত বা বিদ্রোহী—দুজনই প্রায় সমানতালে

প্রতিদিনই লোকজন দিয়ে ভয়ভীতি ছড়ানোর মতো মহড়া

দিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ অন্য দুই প্রতিদ্বন্দ্বী

চেয়ারম্যান প্রার্থীর।

পাশের বিবিচিনি ইউনিয়নের বিদায়ী চেয়ারম্যান ও

এবারের নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আনিসুর

রহমান বলেন, ‘এত দিন নানা বাধাবিপত্তি থাকলেও তা

পাশ কাটিয়ে প্রচারণা চালিয়েছি। কিন্তু এখন দেখছি

নিরাপত্তাজনিত সমস্যা বড় হয়ে উঠেছে। নৌকার

প্রার্থীর লোকজন শুধু সাধারণ ভোটারদেরই নয়—আমার

এজেন্টদেরও হুমকি-ধমকি দিচ্ছে, যাতে তারা কেন্দ্রে

না যায়। এ ছাড়া এখানে-সেখানে হামলার ঘটনা তো

আছেই। ভোটারদের সরাসরি বলা হচ্ছে, চেয়ারম্যানের

ভোট ওপেনে নৌকায় দিতে হবে আর বাকিটা গোপনে

হবে।’

বেতাগী সদর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী তারিকুল আলম

বাবু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখানে আওয়ামী লীগের

মনোনীত ও বিদ্রোহী—দুই প্রাথীই যাঁর যাঁর মতো করে

সাধারণ ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। এমনকি

দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দিনের আলোয় মহড়া দেওয়ার

প্রমাণও আছে আমার কাছে। ফলে ভোটাররা রীতিমতো

আতঙ্কিত। বিশেষ করে দক্ষিণ বেতাগী, কেওড়াবুনিয়া,

ফরাজিবাড়ি, ঝোপখালীসহ আরো কয়েকটি এলাকার

ভোটকেন্দ্র নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক খুব বেশি। এ

ছাড়া বেতাগী সদর ইউনিয়নের বিএনপি মনোনীত

প্রার্থী অধ্যাপক মজিবর রহমানের বাড়িতে শনিবার

রাতে প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীরা হামলা ও ভাঙচুর

করেছে। পাশের হোসনাবাদ ইউনিয়নের বিএনপির

প্রার্থী বেল্লাল হোসেন রাঢ়ীর খড়ের গাদায় আগুন

দিয়েছে সন্ত্রাসীরা।

এখানে তো বিজিবির টিম এসেছে, অতিরিক্ত পুলিশ

এসেছে, র্যাব থাকছে—এর পরও এত ভয় কেন থাকবে? প্রশ্নের

জবাবে তারিকুল আলম বলেন, ‘কোনো কেন্দ্রে কোনো

রকম সমস্যা হলে আমরা প্রার্থীরা যে প্রশাসনের কাছে

বা বিজিবি-র্যাবের টহল টিমকে জানাব তেমন কোনো

যোগাযোগ নম্বর আমাদের দেওয়া হয়নি। শুধু বলা হয়েছে

কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসারই ব্যবস্থা নেবেন। এটা

আমাদের মধ্যে কিছু সন্দেহের উদ্রেক করেছে। আবার

স্থানীয় থানাকে কোনো ঘটনা জানালেও তাঁরা

অনেকটা এড়িয়ে যায়। ফলে ভোটাররা আশ্বস্ত হতে

পারছে না।’

বেতাগীর আরেক ইউনিয়ন বুড়া মজুমদারে বেশ জোরালো

অবস্থান নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন নৌকা ও ধানের

শীষের প্রার্থী। উভয় পক্ষই ইতিমধ্যে একাধিকবার

সহিংসতায় জড়িয়েছে। তবে ভোটের দিন কেউ কাউকে

ছেড়ে কথা বলবে না বলে জানান সাধারণ ভোটাররা।

গতকাল দুপুরে কাউনিয়া বাজারে বসে বাম সংগঠনের

নেতা আব্দুল হালিম কালের কণ্ঠকে বলেন, এলাকার

সাধারণ ভোটাররা খুব সচেতন। সুযোগ পেলে তাঁরা ঠিকই

যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নেবেন। আর এ এলাকায়

চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে একাধিক আছেন শিক্ষা-

দীক্ষা, রাজনীতি ও সামাজিকভাবে যোগ্য প্রার্থী।

তাই প্রশাসনের উচিত হবে নিরপেক্ষভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন

সম্পন্ন করা।

বরগুনা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হুমায়ুন কবির হিরু

কালের কণ্ঠকে বলেন, বিভিন্ন সন্ত্রাসী তৎপরতা ও হুমকি-

ধমকির মুখে সাধারণ ভোটারদের উপস্থিতি নিয়ে সংশয়

রয়ে গেছে। ভোটের দিন বৃষ্টি থাকলে ভোটারের

উপস্থিতি আরো কমে যাবে, সুবিধাভোগীদের

পোয়াবারো হবে।

বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও

জেলা পরিষদের প্রশাসক জাহাঙ্গীর কবির কালের

কণ্ঠকে বলেন, নির্বাচনের আগে ভয়ভীতি সৃষ্টির জন্য

অনেকেই মিথ্যার আশ্রয় নেয়। বরগুনার ক্ষেত্রেও তেমনটি

ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির তেমন কোনো অবনতি

ঘটেনি যে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বলবে, তাদের

ভোট দেখিয়ে দিতে হবে। বরং আওয়ামী লীগের

বিদ্রোহীরা জেলার কোনো কোনো ইউনিয়নের দলীয়

প্রার্থীর কর্মীদের মারধর করছে আর হুমকি দিচ্ছে। এ

ধরনের ঘটনা কোথায় ঘটেছে জানতে চাইলে

জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘একটু ব্যস্ত আছি, পরে ফোন

দিয়েন।’

উৎসঃ কালের কণ্ঠ

পাঠক মন্তব্য

সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন

কীবোর্ড নির্বাচন করুন: Bijoy UniJoy Phonetic English

আপনার মতামত দিন

নাম (অবশ্যই দিতে হবে)

ইমেইল (অবশ্যই দিতে হবে)

ঠিকানা

মন্তব্য

মতামত পাঠিয়ে দিন

"অবাঞ্চিত মতামত নিয়ন্ত্রনের জন্য সঞ্চালক কতৃক

অনুমোদনের পর মতামত প্রকাশিত হয়"

প্র

বিষয়: বিবিধ

১১৫৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

363133
২১ মার্চ ২০১৬ দুপুর ০২:২০
কুয়েত থেকে লিখেছেন : ডাকাতরা ডাকাতি না করেকি চুরি করবে..?চোরের যুগ শেষ। শেখ মুজিবের চাটার দল আর চোর গুলি এখর আর সে চোর নেই এখন তারা বড় বড় ডাকাত আপনাকে ধন্যবাদ
363162
২১ মার্চ ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:১৬
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : আমি মনে করি বিরোধীদলের কেউ এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাও উচিত না। কারণ এতে টাকা ও জীবন দুইটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলাফল শুন্য

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File