আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে হিন্দুদের দেশে পরিনত করছে।
লিখেছেন লিখেছেন চেতনাবিলাস ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৮:১৮:৫২ সকাল
বাংলাদেশের মুসলমানরা এখন আর ইচ্ছে করলেই কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক জীবন যাপন করতে পারছেনা | কেবলমাত্র তাবলীগ জামায়াত. যারা দেশের মধ্য থেকে জেনা .ব্যভিচার .সুদ .ঘুস এসবের বিরুদ্ধে কোন প্রতিরোধই করতে পারেনা তারাই কেবল দাওয়াত আর চিল্লার নামে নির্বিবাদে পিকনিক করতে পারছে | এতেই অনেকে আওয়ামী লীগকে এদেশের একমাত্র ইসলামী দল বলে স্বীকৃতি দিচ্ছে। কিন্তু আমি যেমন ইহুদিদের ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু মনে করি .তার পরেই হিন্দুদের কে ইসলামের দ্বিতীয় বৃহত্তম শত্রু ভাবি। আর বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানেই হিন্দুত্ববাদী চেতনা বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আওয়ামী লীগ যেহেতু বাংলাদেশের এই কথিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একমাত্র স্বঘোষিত সোলএজেন্ট তাই তাদেরকে আমি কোনদিনই ইসলামের বন্ধু বলে মানতে পারিনি। এরা ইসলামের নামে যা করে তাই হচ্ছে প্রকৃত ধর্ম ব্যবসা। এদেশের সব কিছু রামায়ণ মহাভারতের আদর্শ মতে চললেই আওয়ামী লীগের লোকেরা সবচেয়ে বেশি খুশি হয়। আর তাই তারা বাংলাদেশের সবকিছুই ভারতের হাতে তুলে দিতে এতটুকু দ্বিধা করেনা।
বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলামের গুরুত্ব উঠিয়ে দিয়ে সেখানে হিন্দুত্ববাদের গুরুত্ব স্থাপন করা হয়েছে। হিন্দুদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আওয়ামী নেতাকর্মীদের যেভাবে নিষ্ঠার সাথে উপস্থিত হতে দেখা যায় ইসলামী কোন অনুষ্ঠানে সেভাবে দেখা যায়না |
বর্তমানে গরুকে হিন্দুদের দেবতা হিসেবে মুসলমানদের গ্রহণ করার জন্য আওয়ামী সরকার যে ব্যবস্থা নিয়েছে তার প্রমাণ নিচে উল্লেখ করা হল।
এবার স্কুল-মাদ্রাসার পাঠ্যবইয়ে ‘গো-মাতা’র জয়গান!!!!
গতকাল শনিবার নিউইয়র্কে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য
পরিষদের সংবাদ সম্মেলন থেকে বাংলাদেশে গরু জবাই
বন্ধের দাবি তোলার পর এ নিয়ে তোলপাড় চলছে। পুরো
খবরটি এখানে http://www.first-bd.net/newsdetail/detail/31/193623
মধ্যযুগে ব্রাহ্মণদের দ্বারা সাধারণ হিন্দুদের জন্য গরু
খাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর থেকে ধর্মটির
অনুসারীদের অতিকট্টর অংশ গরুকে ‘দেবতা’ জ্ঞান করে
আসছে। ভারতে হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল বিজেপি
সর্বশেষ ক্ষমতায় আসার পর সে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে গরু
জবাই নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে আওয়ামী লীগ ভারত সরকারের
প্রত্যক্ষ মদদে ক্ষমতায় থাকতে পারার সুবাদে ভারপন্থী,
বিশেষ করে হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন
নানাভাবে সুবিধা পাচ্ছেন। এই সুযোগে হিন্দু
উগ্রবাদীরা এখানে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নিউইয়র্কে
বসে বাংলাদেশে গরু জবাই বন্ধের দাবি সেই
বেপরোয়া হয়ে ওঠার একটি উদাহরণ মাত্র।
তবে বাংলাদেশে হিন্দুত্ববাদীদের সক্রিয় কার্যক্রম
সবে মাত্র শুরু হয়নি। বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের
বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা সমানতালে কাজ করে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা সরকারের মধ্যে থেকে দেশের শিক্ষা
ব্যবস্থায় ইতোমধ্যে ইসলামবিদ্বেষী নানা উপাদান
ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। পাঠ্যপুস্তকে ইসলামী মূল্যবোধ
বিরোধী উপাদান ঢুকিয়ে দেয়ার খবর অবশ্য কয়েক বছর
আগে থেকেই কিছু সংবাদমাধ্যমে আসছে। কিন্তু
ইসলামকে সরানোর পাশাপাশি যে, হিন্দুত্ববাদী
ধ্যানধারণাও বাংলাদেশের স্কুল-কলেজ এমনকি
মাদ্রাসার পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে, তার খোঁজ
অনেকেই রাখেন না।
একটি উদাহরণ দেয়া যাক ক্লাস সিক্সের বাংলা
পাঠ্যবইটি থেকে। স্কুল এবং মাদ্রাসা উভয় জায়গায়ই এই বই
পড়ানো হয়।
বইটিতে ‘লাল গরুটা’ নামে একটি গল্প রয়েছে। যেটিতে
সরাসরি গরুর প্রতি হিন্দু ধর্মীয় গোঁড়া চিন্তাভাবনাকে
মহিমান্বিত করে তোলে ধরা হয়েছে। কিছু উদ্ধৃতি দেয়া
যেতে পারে।
গল্পের একটি প্যারা হচ্ছে--
“নিধিরামের বউ চাষির ঘরের মেয়ে, চাষির ঘরের বউ, সব
খবরই রাখে। সে অবিশ্বাসের সুরে বলল, হ্যাঁ, ওকে দিয়ে
কি আর চাষের কাজ চলবে? বুড়ো হয়ে রোগা আর দুর্বল হয়ে
গেছে। দেখছ না হাড় কখানা মাত্র বাকি আছে। যেই
ওকে কিনুক, দু দিন আগেই হোক আর পরেই হোক, কসাইয়ের
কাছে বেচে দেবেই।”
শেষ লাইনে নিধিরামের বউয়ের স্পষ্ট উদ্বেগ- ‘গরুটিকে
কসাইয়ের কাছে বেচে দেয়া হবে।’ অর্থাৎ, কসাইয়ের
কাছে বেঁচে দিলে তাকে জবাই করা হবে।
নিধিরামের বউ সেটা মেনে নিতে পারছে না! আবার
তার আগের প্যারায় নিধিরামের বক্তব্য--
“না না, কসাইয়ের কাছে বেচব কেন? নিধিরাম বলল,
যারা চাষবাস করে খায়, এমন লোকের কাছেই বেচব।”
নিধিরামও কিন্তু কসাইয়ের কাছে তার গরু বিক্রি করার
কথা বলছে না। বউয়ের উদ্বেগ প্রকাশের আগেই সে নিজে
(তার ধর্ম বিশ্বাসের আলোকে) ‘জবাই করে না’ এমন
ব্যক্তির কাছেই বিক্রির কথা ভাবছে।
গল্পের একদম শুরুতে বলা হয়েছে--
“লাল গরুটা বুড়ো হয়ে গেছে। দুধও দেয় না, কোনো
কাজেও লাগে না। বাড়ির কর্তা নিধিরাম বলল, এটাকে
রেখে আর কী হবে? দু চার টাকা যা পাই, তাতেই বিক্রি
করে একটা দুধালো গাই কিনে নিয়ে আসাই ভালো।
আমরা গরিব মানুষ, আমরা কি আর বাজার থেকে দুধ কিনে
খেতে পারি?
নিধিরামের বউ বলল, এমন কথা বলো না গো, অধর্ম হবে।”
বউ বলছে ‘অধর্ম হবে।’ এটি সরাসরি গরুর প্রতি হিন্দু ধর্মীয়
চিন্তাভাবনার প্রকাশ।
পুরো গল্পে গরুর প্রতি আবেগের অতিশয্য প্রকাশ করে
নানান বর্ণনা দেয়া হয়েছে। যেমন, গরুটি মনে মনে
নিধিরামের কাছে কী আকুতি জানাচ্ছিল তার বর্ণনা,
গরুটির চোখের ‘জলের’ বর্ণনা ইত্যাদি।
সর্বশেষ গল্পের সমাপ্তিও ঘটেছে হিন্দু বিশ্বাসের জন্য
‘সুখকরভাবে’। গরুটিকে শেষমেশ আর ‘জবাই’ হতে না দিয়ে
সে বাড়তি দাম দিয়ে কিনে নিয়ে আসার মাধ্যমে।
আরো লক্ষ্যণীয় হচ্ছে, পাঠ্যবইয়ে গল্পের পরেই ‘শব্দার্থ ও
টীকা’ অংশের শুরুতেই ‘কসাই’ শব্দের অর্থ হিসেবে লেখা
হয়েছে- “যারা গবাদি পশু জবাই বা হত্যা করে মাংস
বিক্রি করে।”
গল্পের মধ্যে হিন্দু ধর্মীয় চিন্তাভাবনা শিশুদেরকে
শিক্ষা দেয়ার যে মনোভাব স্পষ্টভাবে ধরা পড়ছে
তাতে বলা যায়, এই অর্থের ক্ষেত্রে ‘হত্যা’ শব্দটিকে
ইচ্ছাকৃতভাবে জুড়ে দেয়া হয়েছে। অন্যথায় শুধু বলা যেত,
“যারা গবাদি পশু জবাই করে মাংস বিক্রি করে।” কিন্তু
তা না করে ‘কসাই’কে ‘গো-হত্যাকারী’ হিসেবে তুলে
ধরা হল।
পাঠকের সুবিধার্থে পুরো গল্পটি নিচে দেয়া হল---------------
“লাল গরুটাসত্যেন সেন
লাল গরুটা বুড়ো হয়ে গেছে। দুধও দেয় না, কোনো কাজেও
লাগে না। বাড়ির কর্তা নিধিরাম বলল, এটাকে রেখে
আর কী হবে? দু চার টাকা যা পাই, তাতেই বিক্রি করে
একটা দুধালো গাই কিনে নিয়ে আসাই ভালো। আমরা
গরিব মানুষ, আমরা কি আর বাজার থেকে দুধ কিনে খেতে
পারি?
নিধিরামের বউ বলল, এমন কথা বলো না গো, অধর্ম হবে।
আমার শাশুড়ির বড় আদরের ছিল গরুটা। বড় লক্ষ্মী আর
শান্তস্বভাব, একটু ঢুঁ-ঢাঁও মারে না। এরকম গরু হয় না। এতকাল
মায়ের মতো আমাদের দুধ খাইয়ে এসেছে, আর এখন কটা
টাকার লোভে আমরা ওকে কসাইয়ের কাছে বেচে দেব?
না না, কসাইয়ের কাছে বেচব কেন? নিধিরাম বলল, যারা
চাষবাস করে খায়, এমন লোকের কাছেই বেচব।
নিধিরামের বউ চাষির ঘরের মেয়ে, চাষির ঘরের বউ, সব
খবরই রাখে। সে অবিশ্বাসের সুরে বলল, হ্যাঁ, ওকে দিয়ে
কি আর চাষের কাজ চলবে? বুড়ো হয়ে রোগা আর দুর্বল হয়ে
গেছে। দেখছ না হাড় কখানা মাত্র বাকি আছে। যেই
ওকে কিনুক, দু দিন আগেই হোক আর পরেই হোক, কসাইয়ের
কাছে বেচে দেবেই।
তবে করব কী? নিধিরাম একটু গরম হয়েই বলল, এই অকম্মা গরুকে
আর কতকাল বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াব? যাদের টাকার জোর
আছে, তারা তা পারে। আমাদের গরিব মানুষের কি আর
সেই সাধ্য আছে?
নিধিরাম মিছে কথা বলে নি। কিন্তু তার বউ কিছুতেই সে
কথা শুনতে চায় না। সে বলল, আমরাও একদিন বুড়ো হব,
আমাদের ছেলেমেয়েরা যদি তখন বলে, তোমরা বুড়ো
হয়ে গেছ, কোনো কাজেই লাগো না। তোমাদের আমরা
আর বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াতে পারব না।
তখন আমাদের কেমন লাগবে? আর আমরা যাবই-বা কোথায়?
ছেলেমেয়েরা কথাটা জানতে পেরে চেঁচামেচি শুরু
করে দিল। লাল গরুটাকে ছেড়ে তারা কিছুতেই থাকতে
পারবে না। বাড়িসুদ্ধ সব একদিকে আর নিধিরাম
একদিকে। কিন্তু নিধিরামের গোঁ বড় বিষম গোঁ। বাধা
পেলে তার জিদটা আরো বেড়ে ওঠে।
নিধিরামের পাঁচ বছরের ছেলে বিশু সটান দাঁড়িয়ে গর্জন
করে উঠল, আমার গরু। কাউকে বিক্কিরি করতে দেব না।
তোর গরু? তোর গরু আবার কেমন করে হলো? নিধিরাম
জিগ্যেস করল।
বিশু বলল, আমারই তো, আমি যে রোজ ওকে ঘাস খাওয়াই।
কিন্তু যে যতই বলুক না কেন, কারুই কোনো কথা খাটল না।
নিধিরাম লাল গরুটাকে মাত্র কুড়ি টাকায় বিক্রি করে
দিল। দু-ক্রোশ দূরে সোনাকান্দা গ্রাম। সেখানকার একজন
বুড়ো লোক তাকে কিনে নিয়ে গেল।
লাল গরুটার সাদা সরল মন। সে এতসব কিছু জানে না।
ভাবতেও পারে নি। সারা জনম তার এই বাড়িতেই কেটে
গেল। এ সব বেচাকেনার খবর সে রাখে না। যে
মানুষগুলোকে সে এত ভালোবাসে, তারা যে তার সঙ্গে
এমন করতে পারে, সে তা কেমন করে বুঝবে? ভাবল, একটা
বুড়ো লোক তাকে মাঠে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে চলেছে।
অবশ্য তার সঙ্গে ওর জানাশোনা নেই। নাই-বা থাকল। ওর
ঘাস খাওয়া নিয়ে কথা। সে কোনো আপত্তি না করে
দিব্যি তার পেছন পেছন চলে গেল। আর ঠিক সেই সময়টায়
নিধিরামের বউ তার ছেলেমেয়েদের নিয়ে পাশের
বাড়িতে চলে গিয়েছিল। এ কি চোখের সামনে দেখা
যায়।
তারপর ফিরে এসে যখন শুনল লাল গরুকে নিয়ে গেছে, তখন
বিশুর কী কান্না! ছেলেমেয়েদের সবার মুখই ভার। মায়ের
অবস্থাও তাই। সেদিন বাড়ির কারোই ভালো করে
খাওয়া হলো না। কিন্তু নিধিরামকে কেউ কিছু বললে
না। কেউ কিছু বললে সে নিশ্চয়ই খুব রেগেমেগে উঠত।
রাগবার জন্য মনে মনে তৈরি হয়েও ছিল। কিন্তু কেউ
তাকে সেই সুযোগ দিল না। নিধিরাম এমন বিপদে আর
কখনো পড়ে নি। কী আশ্চর্য, এমন যে তেজস্বী নিধিরাম,
সে যেন ঠাণ্ডা জল হয়ে গেল।
এর সাত-আট দিন বাদে এক অবাক কাণ্ড। বিকেলবেলা
লাল গরুটা ছুটতে ছুটতে এসে হাজির। নিধিরাম উঠানের
ধারে বসে বেড়া বাঁধছিল। আর এদিক ওদিক নয়, লাল গরুটা
সোজা তার কাছে গিয়ে লম্বা মুখটা তার কাঁধের উপর
তুলে দিল। ঠাণ্ডা নাকটা গায় লাগতেই নিধিরাম চমকে
উঠল, এটা আবার কী? ওমা, এ-যে লাল গরুটা। অ্যাঁ, কেমন
করে এসে পড়ল? লাল গরু তার ডাগর ডাগর চোখ দুটি ওর মুখের
দিকে তুলে ধরল। ওর চোখ দুটো যেন কথা বলছে। যেন বলছে,
তোমার এ কেমন আক্কেল বল তো? আমাকে একা কোথায়
পাঠিয়ে দিয়েছিলে? আমি কি তোমাদের ছেড়ে
থাকতে পারি? গরু তো মুখ ফুটে কথা বলতে পারে না।
কিন্তু মনে মনে সে এই কথাই বলছিল।
তারপর তাকে নিয়ে বাড়িসুদ্ধ হৈ হৈ পড়ে গেল।
ছেলেমেয়েরা চেঁচামেচি, মাতামাতি, নাচানাচি
শুরু করে দিল। বিশু লাল গরুর গলা জড়িয়ে ধরে বলল, আমার
গরু। সেদিন অনেক রাত্রি পযর্ন্ত লাল গরুর কথাই চলল।
নিধিরাম কিন্তু মাথা নিচু করে চুপ করেই রইল। ভালোমন্দ
কোনো কথা বলল না।
কিন্তু এ আনন্দ যে বেশিক্ষণের জন্য নয়। পরদিন বেলাটা
একটু উঠতেই সোনাকান্দা থেকে তিনজন লোক এসে
হাজির। বুড়ো লোকটাও তাদের সঙ্গে আছে। ওরা
পালিয়ে-যাওয়া গরুটার খোঁজে এসেছে। বিশু তার লাল
গরুকে তখন ঘাস খাওয়াচ্ছিল। ওদের দেখেই গরুটার চোখে
সে কী আতঙ্ক!
নিধিরামের সঙ্গে দু-একটা কথা বলে ওরা গরুটাকে
টেনে নিয়ে যেতে লাগল। কিন্তু সে কি যেতে চায়।
চারটা পা খুঁটার মতো শক্ত করে দাঁড়িয়ে রইল। গরুটি হয়তো
মনে মনে আশা করছিল, নিধিরাম ওকে এসে সাহায্য
করবে। সেই আশায় সে হা করে ডেকে উঠল। কিন্তু কেউ
ওকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলো না। ওরা তিনজন আর সে
একা। কতক্ষণ আর ওদের রুখবে। ওরা তাকে হিঁচড়ে টেনে
নিয়ে চলল। লাল গরু ফিরে ফিরে পেছন দিকে
তাকাচ্ছিল। সবাই পরিষ্কার দেখতে পেল, ওর বড় বড় চোখ
দুটি থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় জল ঝরছে।
ছেলেমেয়েরা কেঁদে উঠল। ওদের মা মুখ ফিরিয়ে মুখে
কাপড় গুজল। আর নিধিরাম? নিধিরাম কী করল? সে হন হন
করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল।
সেই যে গেল, গেলই, সারাদিন আর ফিরল না।
নিধিরামের বউ গরুর চিন্তা ভুলে গিয়ে স্বামীর চিন্তায়
অস্থির হয়ে উঠল। বলা নেই, কওয়া নেই, গেল কোথায়? এমন
তো কোনোদিন করে না।
সন্ধ্যা লাগে লাগে ঠিক এমন সময় নিধিরামের বাড়িতে
গত দিনের মতই আবার হৈ হৈ পড়ে গেল। নিধিরাম ফিরে
এসেছে। কিন্তু ছেলেমেয়েদের এত আনন্দ সেই জন্যই কি?
না, তা নয়। নিধিরাম লাল গরুটাকে সঙ্গে করে নিয়ে
এসেছে।
নিধিরামের বউ অবাক হয়ে জিগ্যেস করল, এ আবার কী?
নিধিরাম ঝাঁঝাল সুরে উত্তর দিয়ে বলল, কী করব?
তোমাদের জ্বালায় কি আর পারবার উপায় আছে? গরুটা
ফিরিয়ে নিয়ে এলাম। উলটো আরো দশটা টাকা গচ্চা
লাগল।
গচ্চা লাগল কী রকম?
টাকা ফেরত দিতে গেলাম, আর ওরাও পেয়ে বসল। বলে,
তোমার গরু আমাদের এই ক্ষতি করেছে, ঐ ক্ষতি করেছে।
ক্ষতির এক লম্বা ফিরিস্তি দিল। কী আর করব, শেষ পর্যন্ত
আরো বাড়তি দশটা টাকা আদায় করে ছাড়ল।
নিধিরামের বউয়ের চোখমুখ খুশিতে হেসে উঠল। কিন্তু
সঙ্গে সঙ্গেই হাসিটা চাপা দিয়ে সে বলল, বিক্রি
করেছিলে, আবার কী দরকার ছিল ফিরিয়ে আনবার? সত্যি
কথাই তো, এই অকম্মা গরুটাকে কী দরকার আমাদের?
নিধিরাম এবার হেসে ফেলল। বাবাকে হাসতে দেখে
ছেলেমেয়েরাও সবাই তাকে ঘিরে ধরল। একদিন বাবার
উপর মনে মনে কী-যে রাগ হয়েছিল তাদের। আজ সবার মন
হালকা হয়ে গেছে। বাবাকে যত খারাপ মনে হয়, আসলে
বাবা তত খারাপ নয়।
বিষয়: বিবিধ
১১৩১ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধ!
মন্তব্য করতে লগইন করুন