এটিএম জালিয়াতে সরকারের হাইপ্রোফাইল জড়িত !!
লিখেছেন লিখেছেন চেতনাবিলাস ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০১:৫৮:১৯ দুপুর
জালিয়াতির মাধ্যমে মাসে আয় ছিল ৪ কোটি টাকা *
মাসে ফ্ল্যাট ভাড়া দিতেন পৌনে ২ লাখ টাকা
এটিএম কার্ড জালিয়াতির প্রধান হোতা থমাস
পিটারের ভিআইপি কানেকশনের তালিকা দেখে
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা রীতিমতো বিস্মিত। সরকারের
হাইপ্রোফাইল লোকজনের সঙ্গে তার বেশ কয়েকটি
সেলফি দেখে চক্ষু চড়ক গাছ হওয়ার অবস্থা তাদের। আরও
বেশি হতবাক হয়েছেন এসব প্রভাবশালীর সঙ্গে তার
সম্পর্কের নানা ফিরিস্তি শুনে। আর ডিজিটাল
পকেটমারি বা ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি করে তার
মাসে আয় ছিল কমপক্ষে চার কোটি টাকা। পাঁচ তারকা
হোটেলে মাসে দু-একটি পার্টি দিতেন অর্ধকোটি
টাকা খরচ করে। আলিশান ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন
পৌনে দু’লাখ টাকায়। কয়েকটি দেশে থাকা তার আগের
স্ত্রীদের কাছে হুন্ডিতে টাকা পাঠানোর দায়িত্বটাও
ঠিকঠাক পালন করতেন। দু’হাতে টাকা বিলাতেন
দেদারসে। নতুন টাকার বান্ডিলের গন্ধ নেয়া তার
অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। আশপাশের লোকজনকেও এই
ঘ্রাণ শুঁকাতে পছন্দ করতেন।
ডিবি পুলিশের হাতে রিমান্ডে থাকা থমাস পিটার
এভাবে অকপটে অনেক কিছুই এখন স্বীকার করেছেন।
প্রথমদিকে তেমন একটা মুখ না খুললেও এখন তিনি অনেকটা
স্বপ্রণোদিত হয়ে নানা বিস্ময়কর তথ্য দিচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট
একাধিক সূত্রে বৃহস্পতিবার এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে রিমান্ডের তৃতীয় দিনে পিটারের দেয়া কিছু
টেকনিক্যাল তথ্য মিলিয়ে দেখতে কয়েকটি ব্যাংকের
আইটি বিশেষজ্ঞদের পিটারের মুখোমুখি করা হয়। সেখান
থেকেও বেরিয়ে এসেছে ভয়াবহ সব চাঞ্চল্যকর তথ্য।
দেখা গেছে, উত্তরার একটি রেস্টহাউসের পস মেশিন
ব্যবহার করে তিনি সাড়ে ৩ কোটি টাকা উঠিয়ে
নিয়েছেন।
সূত্র জানায়, প্রথমদিকে পিটার কিছুটা চুপচাপ ছিলেন।
উত্তর দিতেন ভেবেচিন্তে। অবশ্য গতকাল থেকে অনেক
কিছুই খোলাসা করতে শুরু করেছেন। যেমন পাসওয়ার্ড
দিয়ে লক করা তার মোবাইল ফোনের ফটো ফাইল থেকে
তিনি এমন কিছু সেলফি ছবি দেখিয়েছেন, যা চোখে না
দেখলে বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে। মনে হতে পারে, এসব ছবি
কম্পোজ করা। কিন্তু না। সরকার এবং সমাজের অনেক
হাইপ্রোফাইল ব্যক্তির সঙ্গে তার একাধিক সেলফি ছবি
প্রমাণ করে দেয় তিনি এখানে কত বড় মাপের চেইন
মেইনটেইন করতেন। এসব হাইপ্রোফাইলের সঙ্গে
বাংলাদেশী যেসব প্রভাবশালী লোকজন পিটারের
মধ্যে বিশেষ যোগসূত্রতা করে দিয়েছেন তাদের কেউ
কেউ এতটাই প্রভাবশালী যে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা
প্রাথমিকভাবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতেও
বিব্রতবোধ করছেন। পিটার গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের
অনেকটা গর্ব করে জানিয়েছেন, ‘দেখ আমি কোনো
থার্ডক্লাস লোক নয়। এই দেখ তোমাদের এখানে কত
পাওয়ারফুল লোকজনের সঙ্গে আমার ওঠাবসা ছিল। তাদের
সঙ্গে তোলা আমার ছবি দেখ।’
জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তিনি তার প্রধান
সহযোগী হিসেবে লন্ডনে বসবাসকারী একজন
বাংলাদেশী ব্যবসায়ীর নাম-পরিচয় তুলে ধরেন। নাম
তার ফরিদ নাবির। ‘পিটার বলেন, তার ক্রেডিট কার্ড
জালিয়াতিসহ আদম ব্যবসার অনেক কাজে নাবির ছিল
অন্যতম সহযোগী। লন্ডনের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি
দলের সঙ্গে সম্প্রতি নাবির বাংলাদেশ ঘুরেও গেছেন। এ
সময় তার সঙ্গে আমার বিশেষ বৈঠকও হয়েছে।’ এভাবে
তিনি আরও বেশ কয়েকজন বাংলাদেশীর নাম-পরিচয়
জানিয়েছেন। যাদের কেউ কেউ ঢাকায় থাকেন। পিটার
জানিয়েছেন, প্রভাবশালী অনেককে তিনি দ্রুত বশে
আনতে ইউক্রেন থেকে সুন্দরী মেয়ে নিয়ে আসতেন।
যারা তার পুরনো বান্ধবী। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে
অনেককে তিনি ইউরোপে পাঠানোর জন্য প্রথমে
ইউক্রেনে নিয়ে গেছেন। কিভাবে কাদের মাধ্যমে কত
টাকায় তাদের নিয়ে গেছেন তার বর্ণনাও দিয়েছেন।
এতে করে বাংলাদেশের অনেক প্রভাবশালীর গোমর
ফাঁস হয়ে গেছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের
জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, শুধু ক্রেডিট
কার্ড জালিয়াতি করেই তার মাসে আয় হতো কমপক্ষে ৪
কোটি টাকা। উত্তরার কমফোর্ট ইন রেস্টহাউসের পস
মেশিন জালিয়াতি করে তুলে নিয়েছেন সাড়ে ৩
কোটি টাকা। এভাবে তিনি অনেক জালিয়াতির বর্ণনা
দিয়েছেন। বলেছেন, ‘তোমাদের এখানকার অনেক
প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা তার জানা নেই। তার স্থানীয়
সহযোগীদের অনেকে তার কাছে পস মেশিন পর্যন্ত নিয়ে
আসত।’ তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘দেখ এসব জালিয়াতি
করে সব টাকা আমি নিইনি। তোমাদের এখানকার
লোকজনও প্রচুর টাকা নিয়েছে। নামিদামি লোকজন
ছাড়াও কয়েকটি ব্যাংক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের
কর্মকর্তারাও জড়িত আছেন।’
এদিকে পিটার আরও জানিয়েছেন, তিনি গুলশানে যে
আলিশান ফ্ল্যাটে স্ত্রী মেরিনাকে নিয়ে ভাড়া
থাকতেন তার মাসিক খরচ ছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এ
টাকা তার কাছে কিছুই ছিল না। আর তিনি সব সময় নতুন
টাকার ঘ্রাণ নিতে বেশি পছন্দ করতেন। এটি তার
ছোটবেলার অভ্যাস। হয়তো এই নেশায় তাকে এমন পথে
নামিয়েছে। তিনি সব সময় নিজের কাছে কয়েকটি নতুন
টাকার বান্ডিল রাখতেন। নিজে যেমন ঘ্রাণ নিতেন,
তেমনি আশপাশে থাকা পরিচিতদের ঘ্রাণ শুঁকাতেন।
গুলশান হলিডে প্ল্যানেটের কর্মচারীদেরও তিনি নতুন
টাকার ঘ্রাণ নিতে বলতেন। তবে একদিন পার হয়ে গেলেই
ওই বান্ডিল পরিবর্তন করতেন। এমনকি সব সময় নিজের কাছে
পিটার দামি আগ্নেয়াস্ত্র রাখতে পছন্দ করতেন। কিন্তু
ঢাকায় এসে তিনি সে সুযোগ পাচ্ছিলেন না।
প্রভাবশালী লোকজনের মাধ্যমে তিনি প্রথমে একটি
লাইসেন্স করা পিস্তল সংগ্রহ করার চেষ্টা করেন। এরপর
অবৈধ অস্ত্র। কিন্তু এসবে স্বস্তি না পেয়ে শেষমেশ তিনি
একেবারে অর্জিনাল অস্ত্রের আদলে বিদেশ থেকে
উন্নতমানের দামি সেভেন টু বোর মডেলের খেলনা
পিস্তল নিয়ে আসেন। কয়েক মাস ধরে যেটি সব সময় তার
ব্যবহৃত দামি প্রাইভেট কারের মধ্যে রাখতেন। তার
গাড়িতে কাউকে উঠানোর পর তিনি প্রথমেই ওই পিস্তল
নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু করতেন। কিন্তু কারও বোঝার উপায়
ছিল না যে, ওটি খেলনা পিস্তল। ডিবির একটি টিম
গতকাল রাতে গুলশানের ভাড়া ফ্ল্যাটের গ্যারেজে
রাখা তার গাড়ি থেকে খেলনা পিস্তলটি জব্ধ করে। এ
সময় গাড়িটিও ডিবি অফিসে আনা হয়। এছাড়া তার
লাগেজ তল্লাশি করে রাশিয়ার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের
প্রতিনিধি হিসেবে একটি ভিজিটিং কার্ড পাওয়া
যায়। যেখানে পিটারের নাম ও পরিচয় লেখা আছে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন গোয়েন্দা
কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, তারা ঘটনার শেকড়ের
অনুসন্ধানে বেশি নজর দিতে চান। এজন্য পিটারের কাছ
থেকে পাওয়া আরও অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য এখন প্রকাশ করতে
চান না। এ পর্যন্ত যেসব তথ্য পেয়েছেন তা পরীক্ষা-
নিরীক্ষা করে দেখছেন। পরে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত
নেবেন। প্রয়োজনে আরও জিজ্ঞাসাবাদের স্বার্থে
পিটারকে ফের রিমান্ডে আনার জন্য আবেদন করা হবে।
প্রসঙ্গত, যুগান্তর অনুসন্ধান টিমের দেয়া তথ্যের
ভিত্তিতে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এ মাসের
মাঝামাঝি গুলশান থেকে পিটারকে আটক করে।
রোববার আদালতে হাজির করে তাকে ৬ দিনের
রিমান্ডে আনা হয়।
উৎসঃ যুগান্তর
বিষয়: বিবিধ
৯৯৫ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
লেখা কপি পেইস্ট করবেন ভালো কথা, কিন্তু এডিট করবেন না!!!!!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন