ডিজিটাল রাজার এনালগ গোপাল ভাঁড
লিখেছেন লিখেছেন চেতনাবিলাস ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১০:৫১:৪৩ সকাল
মিনার রশিদ
একদিন সম্রাট তার পরিষদকে হুকুম করেন , গোপাল ভাঁড়ের
উঠান পায়খানা করে ভরিয়ে দাও । রাজার হুকুম তামিল
করতে মন্ত্রী সান্ত্রীরা মহা উৎসাহে গোপাল ভাঁড়ের
বাড়ির দিকে দৌড়ে গেলেন ।
সব শুনে গোপাল ভাঁড় বললেন , বেশ ভালো কথা । সম্রাটের
হুকুম তামিল করো। কিন্তু মনে রেখো, রাজা
তোমাদেরকে হুকুম করেছেন শুধু পায়খানা করার জন্যে ।
প্রস্রাব করতে বলেন নি। কাজেই এক নম্বরটি করতে গিয়ে
যদি কেউ দুই নম্বরটি করে বসো তখন সম্রাটের হুকুম অমান্য
করার জন্যে এই তরবারী দিয়ে প্রত্যেকের গর্দান কেটে
ফেলবো । বিষয়টির টেকনিকেল জটিলতা উপলব্ধি করে
সবাই একে একে রাজ দরবারে ফিরে গেলেন । গোপাল
ভাঁড়ের উপস্থিত বুদ্ধি দেখে রাজা আরেকবার চমকিত
হলেন ।
আগেকার দিনে রাজা বাসম্রাটদের কাজ কর্ম নিয়ে
কোনরূপ প্রশ্ন করার সাহস প্রজাদের কারো হত না । তবে
গোপাল ভাঁড়ের মত কিছু ভাঁড় অনায়াসেই রাজা বা
সম্রাটদের সমালোচনা করতে পারতেন । সম্রাটকে
বিভিন্ন কথা দিয়ে আটকিয়ে রাজা ও তার পরিষদকে
বিনোদিত করতেন ।
বর্তমান সরকার ও তাদের কাজ কর্ম নিয়ে কিছু মিডিয়ার
সমালোচনা বা প্রতিক্রিয়া দেখে রাজা ও গোপাল
ভাঁড়ের মধ্যকার সম্পর্কের কথাটি মনে পড়ে যায় ।
অনেকটা এই গোপাল ভাঁড়ের মত সোহাগে থেকে
সরকারের সমালোচনা করতেন - এমন একজন সম্পাদকের উপর
হঠাৎ বর্তমান ডিজিটাল রাজা কেন নাখোশ হয়ে পড়লেন ,
তা নিয়ে অনেকেই চিন্তিত হয়ে পড়েছেন !
দেশের ডিজিটাল প্রাসাদ থেকে আদেশ জারি করা
হয়েছে , এই সম্পাদককে গ্রেফতার করে বিচার করা হোক ।
কিন্তু জনগণের অভিজ্ঞতা বলে , এই হুকুম কখনই তামিল বা
ম্যাটারিয়েলাইজ করা হবে না । এই নির্দেশের মধ্যে এমন
কিছু গোপন রহস্য লুকিয়ে আছে তাতে গোপাল ভাঁড়ের মত
এই কিছিমের কোন বুদ্ধিমত্তা বা কৌশল প্রয়োগ করে একই
ভাবে এই হুকুমকে অকার্যকর করে ফেলা হবে ।
আমরা জানি যে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় এনেছে এক
এগারোর জরুরী সরকার । অন্যদিকে এক এগারোর সরকারকে
যারা ক্ষমতায় এনেছিলেন তাদের মধ্যে একই ঘরানার দুটি
পত্রিকার দুজন সম্পাদক ছিলেন অন্যতম । পরবর্তিতে কিছুটা
চুপসে গেলেও এই কথা তখন তারা প্রকাশ্যে গর্ব করেই বলে
বেড়াতেন । বিশেষ করে জরুরী সরকারের হানিমুন
পিরিয়ডে তাদের এই তৃপ্তির ঢেঁকুর সকলের নজর কেড়েছে
। সেই জরুরি সরকারের কৃতিত্ব নেয়ার ইঁদুর দৌড়ে আজকের
প্রধান মন্ত্রীও জানিয়েছিলেন , এই সরকার তাদেরই
আন্দোলনের ফসল ।
সেই হিসাব টানলে এই দুজন সম্পাদকের একজন হন বর্তমান
সরকারের দাদা শ্বশুর এবং অন্যজন হন নানা শ্বশুর । আগ্রহের
বিষয় হলো , মহামান্য সেই নানা শ্বশুরকে প্রধান মন্ত্রীর
তনয় গ্রেফতার করে বিচারের দাবি উত্থাপন করেছেন ।
ফেইসবুকে তার এই স্টেটাসটি আসার সাথে সাথেই সংসদ
থেকেও একইরূপ দাবি তোলা হচ্ছে । দেশের বিভিন্ন
জায়গা থেকে লীগের নেতাকর্মীরা তার বিরুদ্ধে
একের পর এক মামলা দায়ের করে চলেছেন। অর্থাৎ বর্তমান
জমানার গোপাল ভাঁডের গলা কর্তনের বা তার উঠান
ভরিয়ে দেয়ার হুকুম জারি হয়ে গেছে । এখন দেখার বিষয় ,
কী বুদ্ধি প্রয়োগ করে এই এনালগ ভাঁড় ডিজিটাল সম্রাটের
হাত থেকে নিজের কল্লা বা উঠানকে রক্ষা করেন।
এই সম্পাদকগণ বেশি চালাকি করে নিজেদেরকে
অনেকটা রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুরের জায়গায় নিয়ে
গেছেন। এখন লাথ্থি দিলেও বেহায়ার মত আবারও
সরকারের কৃপা ভিক্ষা করা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই।
কখনো গোপাল ভাঁড়ের স্টাইলে সরকারের বিরুদ্ধে একটি
উচিত কথা বলে ফেললে পরক্ষনেই ইনিয়ে বিনিয়ে
কয়েকটি মিথ্যা স্তুতি দিয়ে কাফফারা দিয়ে দেন ।
তাদের এই প্রচেষ্টা সত্যিই করুণার উদ্রেক করে ।
শুধু আফসোস হয় , এই উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও
সাংবাদিকের জন্যে যার ঔরস থেকে এমন সন্তানের জন্ম
হয়েছে ! কারণ সেনাপতি মীর জাফরের নামের সাথে
সাথে যেমন জগৎ শেঠ, ঘষেটি বেগম, রাজ বল্লভ, উমি চাদ,
রায় দুর্লভ, ইয়ার লতিফ নামগুলি উচ্চারিত হয় তেমনি করে
আরেক কুলাঙ্গার সেনাপতি মঈন ইউ আহমেদের সাথে
সাথে এদের নামগুলিও উচ্চারিত হবে ।
এখন তারা সাধু সেজে বলেন , দেশের একটি সংস্থার
কথামত সংবাদ ছাপিয়ে তিনি মারাত্মক ভুল করেছেন ।
এখন এই সম্পাদক মহাশয়ের গেছে 'ইশ্ ' বা 'সরি' আর জাতির
কপাল থেকে ছুটে গেছে চৌদ্দ আনার কবুতর !
মতলববাজি হলুদ সাংবাদিকতার এই জঘন্যতম কর্মটি এখনও
অব্যাহত রেখেছেন । এক এগারোর সময়ের দুয়েকটি
অপকর্মের কথা স্বীকার করেছেন মাত্র । হঠাৎ করে মাছুম
বাচ্চা সাজার এই মতলবটি নিয়েও ওয়াকেবহাল মহলে
সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।
বিরোধী দলীয় জোটটির বিরুদ্ধে উক্ত সম্পাদকের এরকম শত
শত অপকর্ম ছড়িয়ে আছে । মাঝখান থেকে হঠাৎ দুয়েকটি
ঘটনার উল্লেখ করে দোষ স্বীকার এবং সেটাকে নিয়ে
সরকারের প্রতিক্রিয়া গোয়ালার টক দইয়ের উপাখ্যান
স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে । তবে চুক্তিতে শুধু গালিগালাজ
থাকলেও এবার দুয়েক খানা থাপ্পরও জুটে যেতে পারে
বলে ওয়াকেবহাল মহল মনে করছেন ।
বাংলাদেশের সাংবাদিকতার অন্যতম দিকপাল
হিসাবে গণ্য এই ঝানু সাংবাদিক এখন নিস্পাপ মাছুম
বাচ্চা সেজেছেন । অন্যরা এই নাবালকদের দিয়ে এই কাজ
করিয়েছিল । অথচ জাতি তখন তাদের গলায় ধর্ষণের আর্ত
চিৎকারের শব্দ শুনে নি - রীতিমত তৃপ্তি ও যথারীতি
শৃঙ্গারের শব্দ শুনেছে।
কিন্তু এর ফলে জাতির কী সর্বনাশটি করা হয়েছে তা
উপলব্ধির মত প্রজ্ঞা জাতির এই সব অকাল কুস্মান্ডের
কোনদিন হবে না ।
গুটি গুটি পা পা করে যে দেশটি গণতন্ত্রের পথে যাত্রা
শুরু করেছিল , সেখান থেকে এরাই আজ বর্তমান করুণ দশায়
দেশটিকে পৌছে দিয়েছে। দেশের রাজনীতিকে
পরিচ্ছন্ন করার নামে আগের চেয়ে আরো জটিল করে
ছেড়েছে । দেশের দুটি রাজনৈতিক দলের একটিকে এরা
বাঘের পিঠে চড়িয়ে দিয়েছে। এক দল দিয়ে এখন
অন্যটিকে নিস্তেজ ও বিলুপ্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে ।
এদেশে বিরাজনীতিকরণের তথাকথিত এক এগারোর সেই
মিশনটি এখনও থেমে নেই । একটি রাজনৈতিক দলকে বিষ
খাইয়ে এবং অন্য দলটিকে মিঠাই খাইয়ে পুরো
রাজনীতিকে পিষে মারার ব্যবস্থা করছে ।
মজার ব্যাপার হলো , যারা আজ বাঘের পিঠে চড়েছে
এবং যারা চড়িয়েছে উভয়েই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে সেই একই
কম্যান্ড সেন্টার থেকে । মূলত: বিরাজনীতিকরনের
মাধ্যমে দেশটিকে স্থায়ীভাবে পঙ্গু করে রাখাই এই
কম্যান্ড সেন্টারের মূল উদ্দেশ্য । ফলে সেই কম্যান্ড
সেন্টারের নির্দেশে কেউ সম্রাট সাজে , কেউ সাজে
গোপাল ভাঁড় ।
এই প্রভুরা নিজেদের দেশে গণতন্ত্রকে দিন দিন
শক্তিসালী করে যাচ্ছে । কিন্তু আমাদেরকে গণতন্ত্রের
প্রকৃত স্বাদ পেতে দিচ্ছে না । তজ্জন্যে কারো মগজে
বাকশালের বীজ বা কারো মনে অন্য ফোবিয়া ঢুকিয়ে
দিচ্ছে । আর এদেরই হাতের ক্রীড়নক হিসাবে কাজ করছে
আমাদের দেশের বিভিন্ন জগতের রং বেরংয়ের এই
ব্যক্তিরা।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে এদেশে প্রকৃত গণতন্ত্র
প্রতিষ্ঠিত হয়ে যেতে পারে - তজ্জন্যে এই সুশীল গং দের
ব্যবহার করে উদ্দীনদের মাধ্যমে সেটাকে প্রথমে বিকৃত ও
বিকলাঙ্গ করা হয়েছে । পরে সেই অজুহাত দেখিয়ে
আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে অন্য গ্রুপটির মাধ্যমে তাকে
বিলুপ্ত করা হয়েছে। এখন ধীরে ধীরে বের হয়ে আসছে এই
সব সম্পাদকদের কাজে লাগিয়ে বিরাজনীতিকরণের
এজেন্ডা কীভাবে এগিয়ে নেয়া হয়েছে , দেশের
রাজনীতিবিদদের চরিত্র কীভাবে ও কেন হনন করা
হয়েছে সেই সব ঘটনা । শুধু তাই নয় , প্রাইভেটাইজেশনের
মাধ্যমে দেশে যে দারুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনা দেখা
দিয়েছিল - তাকে ধুলিস্যাৎ করতে ব্যবসায়ীদেরকেও
নাজেহাল ও চরমভাবে হেনস্তা করা হয়েছে । দেশ রক্ষা
বাহিনীর একটিকে অন্যটির মুখোমুখি করে তাদের মনোবল
চিরতরে ধ্বংস করা হয়েছে । জাতির একুশে ফেব্রুয়ারীর
বেদনাকে ছাডিয়ে গেছে পচিশে ফেব্রুয়ারী । অর্থাৎ
এরা টার্গেট করেছে দেশের রাজনীতি ,অর্থনীতি ও
প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা; এই তিনটিকেই এরা যুগপৎ তছনছ করে
ছেড়েছে ।
এখন শুরু হয়েছে ডিজিটাল রাজা আর এনালগ গোপাল
ভাঁড়ের মধ্যকার ভাঁড়ামো পূর্ণ অভিনয়। বস্তুত মিডিয়া
নামক কিছু ভাঁড়দের কারণেই গণতন্ত্র ধ্বংস করে এদেশে
আজ একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে ।
এদের বিপরীতে একজন দেখিয়ে দিয়েছেন একজন
সম্পাদকের প্রকৃত ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত । এই মজলুম
সম্পাদককে মাসের পর মাস কারাগারের অন্ধকার
প্রকোষ্ঠে আটক করে রাখা হলেও এদেশের বাদবাকি
সম্পাদকগণ একটা টু শব্দও উচ্চারণ করছেন না । তার বিরুদ্ধে
করা ৭০টি মামলায় জামিন পেলেও তাকে মুক্তি দেয়া
হচ্ছে না। নতুন করে শ্যান এরেষ্ট দেখানো হয়েছে । এটা
নিয়ে কারো মধ্যে সামান্য উসখুসও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
তজ্জন্যে এসব সম্পাদকগণ বিবেকের সামান্য দংশনও অনুভব
করছেন না। মাহফুজ আনামকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে
তথাকথিত সম্পাদক পরিষদ। অথচ মাহমুদুর রহমানের ব্যাপারে
মুখে কুলুপ এটে রেখেছে এই ভাঁড় পরিষদ ।
এই সব ইঁদুর প্রজাতির গোঁপাল ভাঁডরা কালের স্রোতে
হারিয়ে গেলেও টিকে থাকবে এদেশের
সাংবাদিকতার সিংহ পুরুষ মাহমুদুর রহমান ।
বিষয়: বিবিধ
১৬৬৩ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন