ভালবাসা দিবসের গুরু শফিক রেহমাকে খোলা চিঠি
লিখেছেন লিখেছেন চেতনাবিলাস ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৭:১১:১৬ সন্ধ্যা
মাওলানা মুহাম্মাদ ইসহাক খান
প্রিয়, শ্রদ্ধেয় শফিক রেহমান!
প্রথমে আমার সালাম নিবেন। আপনার নিষ্ঠা, প্রতিভা
এবং যোগ্যতাকে আমি সম্মান জানাই, শ্রদ্ধা করি।
এদেশের সাহিত্য, সাংবাদিকতার অঙ্গনে আপনার অবদান
ও অভিজ্ঞতাকে কৃতজ্ঞ চিত্বে স্মরণ করি। সংস্কৃতি,
সাহিত্য-সাংবাদিকতার আন্তর্জাতিক অঙ্গন সম্পর্কে
আপনার গভীর জ্ঞান, পান্ডিত্য যে কাউকে হতবাক করে
দেয়ার জন্য যথেষ্ট। জালিমের বিরুদ্ধে আপনার বলিষ্ঠ
এবং সাহসী উচ্চারণ অবশ্যই অনুকরণীয়। এদেশের নবীন
লেখকদেরকে উৎসাহ প্রদান, লেখক হিসেবে তৈরী করা ও
গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আপনি যে অবদান রেখেছেন তা
এক ইতিহাস।
-এ ধরণের আরো অনেক ইতিবাচক, বীরল ও দূর্লভ বিষয়াবলী
আপনার ব্যাক্তিত্ব ও চরিত্রকে সম্মানিত করে আছে।
কিন্তু এতদসত্ত্বেও আপনার যে বিষয়টিতে আমি এবং
আমার মতো অনেকেই দ্বিমত পোষণ করে থাকি, আফসোস
করি, যা মেনে নেয়া আমাদের জন্য কোনোভাবেই সম্ভব
নয় তার অন্যতম একটি হচ্ছে- এদেশে ১৯৯৩ সনে আপনার চালু
করা ''ভ্যালেনটাইন্স ডে।"
সে সময় ও তার পরবর্তীতে আপনার সম্পাদিত যায়যায়দিন
পত্রিকাটি এ দিবসটি জনপ্রিয় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
রাখে।
আজকে যদিও আপনি '' আসলে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস
বলতে কিছু নেই।" শীর্ষক পত্রিকায় দেয়া একটি
সাক্ষাতকারে ১৯৮৬-১৯৯২ সাল পর্যন্ত লন্ডনে নির্বাসিত
থাকার সময় ভালোবাসা দিবস উদযাপন হতে দেখার কথা
বলে উল্লেখ করেছেন যে, -যদিও আশির দশকের তুলনায়
নব্বইয়ের দশকে পাশ্চাত্যে এই ''ভ্যালেনটাইন্স ডে" খুব
বেশি উদযাপন হওয়া শুরু হয়, তবে সেটা বাণিজ্যিক
কারণে। তবুও স্বামী-স্ত্রী, প্রেমিক- প্রেমিকা এটা
সাদরে গ্রহণ করেন। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে বা
ভালোবাসা দিবস শুধু সীমাবদ্ধ ছিল প্রেমিক-প্রেমিকা
এবং তরুণ- তরুণীদের মধ্যে। নির্বাসন থেকে
বাংলাদেশে ফিরে আসার পর মনে হলো এটা
বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। কারণ, এখানে
ভালোবাসার বাণী আছে। তবে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস
ডে করা যাবে না। কারণ, ছোটবেলায় আমরা এটাও লক্ষ্য
করেছি এপ্রিল ফুল ডে করতে গেলে বলা হতো এটা
খ্রিষ্টানদের জিনিস, মুসলিমবিরোধী। ভয় ছিল আমি
কোনো কিছু করতে গেলে আমার বিরুদ্ধে প্রচার হতে
পারে আমি ইসলামবিরোধী। সেজন্য সেন্ট
ভ্যালেন্টাইনস ডে নামটা কেটে দিয়ে শুধু
ভালোবাসার দিন হিসেবে নাম দিয়েছি।"
আপনি বলেছেন, "ভালোবাসা দিবস নিজে স্পেশালি
কখনো উদযাপন করিনি। পার্টি, ডিনার, ড্রিংকস এসব
কখনো করা হয়নি। ওই দিনটিতে ভালোবাসার বাণী
প্রচারে ব্যস্ত থাকি। আমি ভাবিনি এটা এত দূরে যাবে।
ফেসবুকে চুমু খাওয়ার বিষয়ে যে ঝড় উঠেছে, আমি মনে
করি চুমু খাওয়া কোনো বাহাদুরি নয়। যারা করেছে একটা
ফালতু জিনিস করেছে। প্রকৃত ভালোবাসার সংজ্ঞা
দেয়া মুশকিল। ভালোবাসা একটা পারস্পরিক আকর্ষণ। যদি
এটা পারস্পরিক আকর্ষণ হয়, এটা একতরফা নয়। ভালোবাসা
চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে। সৌন্দর্য এবং অনুভূতি নির্ভর
করে মনের ওপর। তবে আমি মনে করি ভালোবাসা হচ্ছে
যে মানুষকে তুমি ভালোবাসবে তাকে কখনো কষ্ট দেয়া
যাবে না। এমন কিছু করা যাবে না যেটাতে সে কষ্ট
পাবে। মমত্ববোধ এবং শ্রদ্ধবোধের মিশ্রণই হচ্ছে
ভালোবাসা।"
আপনি আরো বলেছেন, "আমার পরবর্তী পদক্ষেপ ছিল এটা শুধু
স্বামী-স্ত্রী, প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ
রাখলে হবে না। ভাই-বোন, পিতা-মাতা-সন্তানদের
মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। আমি বলছি, এই দিনে মায়ের
প্রতি ভালোবাসা দেখাও। অন্তত এক কাপ চা বানিয়ে
মাকে খাওয়াও। আমার খুব দুঃখ, আমি আমার মায়ের জন্য
কিছু করতে পারিনি। তবে বাংলাদেশে
ভালোবাসাটা অনেক বেশি দরকার। কারণ, এখানে
জনবসতি অনেক বেশি। সুসম্পর্ক, সহাবস্থান গড়ে ওঠা জরুরি।
ভালোবাসার পরিধিটা বৃদ্ধি করতে হবে যেন সবাই
অংশগ্রহণ করতে পারে।"
আপনার উপরোক্ত কথা থেকে বোঝা যায় যে, আমাদের
দেশের বর্তমান বাস্তবতায় আপনার নিয়ে আসা এই
''ভ্যালেনটাইন্স ডে" বর্তমানে যেই রূপ ধারণ করছে তথা-
ব্যাপক মদ্যপান, পার্টি, যুব-তরুণদের অশ্লীলতায় হারিয়ে
যাওয়া, যে কোনো মূল্যে এই দিনের সদ্ব্যবহার করে
প্রেমিকা, বান্ধবীকে নিয়ে ভোগে হারিয়ে যাওয়া,
প্রকাশ্যে চুম্বন, কেউ তো আরো আগ বেড়ে প্রকাশ্যে
সেক্স করা- ইত্যাদির সাথে আপনিও দ্বিমত পোষণ করেন।
আপনি যা চান নি তার অনেক কিছুই এখন হচ্ছে এই
''ভ্যালেনটাইন্স ডে" বা ভালোবাসা দিবস এর নামে।
আপনি না চাইলেও আপনার মাধ্যমে শুরু হওয়া এই দিবসের
মন্দ দিক ও তার প্রভাব কিন্তু আপনার দিকেই ফিরবে -যতক্ষণ
না আপনি এর বিপক্ষে আপনার শ্রম, সময় ও মেধা ব্যয় করছেন।
পরকাল, ইসলাম সম্পর্কে আপনার বিশ্বাস সম্পর্কে আসলে
আমি পরিস্কারভাবে অবগত নই। আপনি 'চীর নবীন, সতেজ'
থাকতে চাইলেও প্রতিদিন এবং প্রতি মুহূর্তে যে আপনি
মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন আশা করি এ বিষয়টিতে
দ্বিমত করবেন না। আপনার একজন প্রকৃত শুভাকাংখী
হিসেবে তাই আমি আপনার মৃত্যু পরবর্তী জীবনের সুখ এবং
সমৃদ্ধিও কামনা করি। আর সে জন্য আপনার অবশিষ্ট জীবন
সময়টুকু খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের প্রিয়নবী সা. এর দুটি বানী'র প্রতি আপনার দৃষ্টি
আকর্ষণ করে লেখা শেষ করতে চাচ্ছি। একটিতে তিনি
বলেছেন, 'যে কোনো ভালো বা মন্দ কাজ চালু করবে, তার
ফলাফল সে দুনিয়াতে এবং মৃত্যুর পরও অব্যাহতভাবে পেতে
থাকবে।'
অপর হাদীসে রাসূল বলেন, "তোমাদের মধ্যে জাহেলী
যুগে যারা উত্তম মানুষ ছিলো, তারা ইসলাম গ্রহণ করার
পরবর্তী সময়েও উত্তম এবং সম্মানীত।"
অর্থাত ইসলাম মানুষের যোগ্যতা, সম্মান এবং মেধাকে
মূল্যায়ন করে। দ্বীন এবং ইসলামে আসার আগে যারা সত
কাজ করেছেন, ভালো যোগ্যতার অধিকারী ছিলেন
ইসলামে আসার পর ইসলাম তারা আরো ভালো কাজ করতে
পারেন।
গত নভেম্বর, ২০১৪ এ আপনার জন্মদিনের একটি অনুষ্ঠানে
আপনার বাসায় সৌজন্য সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছিলো।
আমার লেখা 'এসো বক্তৃতা শিখি' এবং 'পিপড়ের উপদেশ'
বই দু'টো সেদিন আপনাকে গিফট করেছিলাম। জানিনা
বিষয়টি আপনার স্মরণ আছে কি না, বা আমার মতো ক্ষুদ্র
লেখকের বই দুটো দেখার সময় হয়েছিলো কি না।
তবে আমি কামনা করি, মহান আল্লাহ আপনাকে ইসলাম
সম্পর্কে পড়া-শোনা করার তাওফীক দিন। কুরআন ও সুন্নাহর
সহীহ-শুদ্ধ উতস থেকে কিছু সতেজ জ্ঞান আপনার ঝুলিতে
সঞ্চিত হোক। আপনার একজন শূভাকাংখী হিসেবে আমি
আশা করি মহান আল্লাহ আপনাকে আপনার বাকি জীবনে
জাহেলিয়াত ও দ্বীন হীনতা থেকে ফিরে এসে
ইসলামের জন্য অবদান রাখার তাওফীক দীন।
ভবিষ্যতে কোনোদিন আপনার সাথে দেখা হলে এক গুচ্ছ
'লাল গোলাপ' আপনাকে হাদিয়া দেয়ার আশা রেখে
আজকের মতো ইতি টানছি। ভালো থাকবেন। আল্লাহ
হাফেজ।
বিষয়: বিবিধ
১২২৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমি কিছুটা আন্দাজে চিনেছি৷ যদি আপনি ইসহাক খান না হন তবে আমার কথা গুলি তাকে দয়া করে পৌঁছে দেবেন৷ অপরাধ হলে ক্ষমা চাই৷ আব্দুস সামাদ৷
মন্তব্য করতে লগইন করুন