ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের কপালে কী আছে!!!

লিখেছেন লিখেছেন চেতনাবিলাস ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:৪৫:২৫ দুপুর

বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের সংস্কৃতি চালু হওয়ার পর

থেকে আজ পর্যন্ত কোনো দলই এভাবে একের পর এক

নির্বাচনে অব্যাহতভাবে এত বড় বিজয়ের মুখ দেখেনি।

আওয়ামী লীগের বৃহস্পতি এখন শুধু তুঙ্গেই নয়, বৃহস্পতির সব

নিয়ন্ত্রণই যেন দলটির হাতে। সুতরাং ভোটের

রাজনীতিতে এখন আওয়ামী লীগ মানেই মহাবিজয়।

ভোটার বাদে সকলেই আশা করেন আগামীর সকল

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এরুপ বিজয় অব্যাহত থাকবে।

ভোটাররা কিছুই আশা করতে পারে না কারণ তাদের

ভোট এখন আর তাদের হাতে নেই।

বিখ্যাত ব্রিটিশ লেখক কেন ফলেট তার সাড়া জাগানো

ঐতিহাসিক-রাজনৈতিক উপন্যাস উইন্টার অব দ্য ওয়ার্ল্ড ’এ

বলেছেন “অসবৎরপধহং ঃধষশবফ ধনড়ঁঃ াড়ঃবৎং ঃযব ংধসব

ধিু জঁংংরধহং ঃধষশবফ ধনড়ঁঃ ঝঃধষরহ. ঞযবু যধফ ঃড় নব

ড়নবুবফ.” (আমেরিকানরা কথা বলতো ভোটারদের নিয়ে

আর একইভাবে রাশিয়ানরা স্টালিনকে নিয়ে।

তাদেরকে অনুগত হতে হয়েছিল।) সেই সময়ের সোভিয়েট

ইউনিয়নের মত বাংলাদেশের জনগণের আলোচনাও এখন

একই রকম। জনগণ আর ভোট কিংবা তার ফলাফল নিয়ে

কোনো আলোচনা করে না। কারণ সেই ২০১৪ সালের ৫

জানুয়ারি থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়া

কারো পক্ষে বিজয়ী হওয়ার সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগ

জিতেই চলেছে।

এ মুহুর্তের ভোটশুন্য জনগণের সামনে এখন দুটো আওয়ামী

লীগ রয়েছে। একটি বর্তমানের । অন্যটি আগামীর। বর্তমান

আওয়ামীলীগের কাছে জনগণ এখন এতটাই ‘অনুগত’ যে

তাদের ভোট দেওয়ার ক্ষমতাও যেন আওয়ামী লীগের

হাতে অর্পণ করেছে। আওয়ামী লীগ এটাই এখন মনে প্রাণে

বিশ্বাস করে। আর এই ‘অর্পিত’ ভোটের ফলে আওয়ামী লীগ

এখন সরকারে, সংসদে, উপজেলায় এবং পৌরসভায়।

অপেক্ষায় রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদের। আওয়ামী লীগের

বর্তমান শক্তি সামর্থ সে নির্বাচনের মাধ্যমে গ্রামে

গ্রামে বিস্তৃত হবে এটা নিশ্চিত। কারণ তৃণমুলের শক্তিই

একটা দলের মুল শক্তি।

তবে বর্তমানের এই অস্বাভাবিক শক্তিধর প্রতাপশালী

আওয়ামী লীগ এবং জনগণের শক্তি বিচ্ছিন্ন হওয়ার

কারণে রাজনীতির স্বাভাবিক অবস্থায় ভবিষ্যৎ

আওয়ামী লীগের শক্তিমত্তা কেমন হতে পারে তা

সহজেই অনুমেয়। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

নিজের অজান্তেই এক অশুভ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। এই

যুদ্ধটি সরাসরি জনগণের সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক ও

রাজনৈতিক অধিকারের বিপক্ষে। বাংলাদেশে এখন শুধু

সতেরো কোটি মানুষই বসবাস করেনা, সেই সাথে ১০

কোটি ভোটারও বাস করে ন্যাশনাল আইডিসহ। সেই দশ

কোটি ভোটারের ভোট ’ইনভ্যালিড’ করে রাখার

ভেতরেই এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতি সীমাবদ্ধ।

অস্তিত্বও এখানে।

নিউটনের তৃতীয় সূত্র অনুযায়ী প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি

সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া আছে। কৃত্রিম যে বাঁধ

দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ভোট ঠেকিয়ে রাখা

হয়েছে সে ভোট ইতিহাস ও প্রকৃতির নিয়মেই আবার

ভোটকেন্দ্রের দিকে ধাবিত হবে। বাংলাদেশের মানুষ

রাজনীতি সচেতন ও ভোটপ্রিয়। ভোটের দিন ভোটকেন্দ্র

এখন জনগণের জন্য নিষিদ্ধ অঞ্চল! রাজনীতিকে কোথায়

নিয়ে এসেছে আওয়ামী লীগ? নির্বাচনের দিনের যে

স্বরুপ, চেহারা, চরিত্র, দাপট, ক্ষমতা, নৈতিকতা, ও অন্যান্য

বোধ এ দুই বছরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কয়েকটি

নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সামনে উন্মোচন করেছে

তাতে করে স্বাভাবিক ও প্রকৃত রাজনীতি ফিরে আসলে

‘আসল আওয়ামী লীগ’ ফিরবে কিভাবে?

প্রাচীন যুগ ও মধ্যযুগের গায়ের জোরের দখলী সা¤্রাজ্য

কিংবা শাসন পেরিয়ে এ পৃথিবীতে সভ্যতা, গণতন্ত্র ও

রাজনীতি দিনে দিনে বিকশিত হচ্ছে। নিরক্ষর পৃথিবীর

জনগণের রাষ্ট্রচিন্তা, নাগরিক বোধ, অধিকার সচেতনতা

ও সামর্থ আর এই একুশ শতকের শিক্ষিত ও প্রযুক্তি সমৃদ্ধ

জনগণের চিন্তাভাবনা কখনোই এক হবে না। গণতান্ত্রিক

রাষ্ট্রে ভোটাধীকার হরণ, অপশাসন, অপরাজনীতি ও

দুর্নীতি প্রযুক্তিগত ও বৈশ্বিক কারণেই বিদায় নিতে

বাধ্য হবে। জনগণ কোনো বাহিনী নয়। জনগণের প্রকৃত শক্তিও

তাই গোলাগুলি, রাজপথ কিংবা মারামারি করার

ক্ষমতা নয়। জনআকাঙ্খাই জনগণের শক্তি। জনগণের সেই

চাওয়টাকে গায়ের জোরে স্তব্দ করে রেখে কিংবা

গোটা জনগণকে জড়পদার্থ করে দিয়ে রাজনীতির

আকাশে পতন্মুখ উল্কা কিংবা অতি ক্ষণস্থায়ী ধুমকেতু

হওয়া যায়, গ্রহ-নক্ষত্র কখনোই নয়।

১০ কোটি ভোটারের ভোট স্তব্দ করে রেখে আগামীতে

ভোটের রাজনীতিতে একটি অতি দুর্বল প্রতিপক্ষ হওয়ার

সকল আয়োজন আওয়ামী লীগ সম্পন্ন করে ফেলেছে তাদের

এই বর্তমান অতিশয় ক্ষমতাবান হওয়ার প্রক্রিয়ায়। হতে

পারে ইতিহাস নির্ধারিত আরও কিছু দিন সময় আওয়ামী

লীগ পাবে। কিন্ত ইতিহাসের পরিণতি? বাংলাদেশ

ভোটের দেশ। ভোটহীন সরকারের দীর্ঘ সময়কাল দীর্ঘ

দুর্দশারও কারণ হয়। এরশাদ সরকার এখনও পর্যন্ত

বাংলাদেশের দীর্ঘতম সময়ের সরকার। ’এরশাদের নয়,

হাসিনার দশ,’ এটা কোনো বিরোচিত কিংবা কৃতিত্বের

স্টাটাস নয়। ‘গণমানুষের দল’ দাবি করা আওয়ামী লীগ এখন

গণভোটের বিপক্ষে!

ভোট ফিরেছে, এরশাদ নেই। এখন আবার ভোট নেই তাই

আওয়ামী লীগ এসেছে। আওয়ামী লীগকেও এখন টিকে

থাকতে হচ্ছে এরশাদের মত ভোটকে ছিপিবদ্ধ রেখে। কি

এক ভয়াবহ অবস্থায় আওয়ামী লীগ ভাবা যায়! ২০১৯ সাল বা

’২১ সাল কিংবা ’৪১ সাল সব স্বপ্নই শুধুমাত্র ১০ কোটি

আইডি কার্ডধারি জনগণের ভোটের সাথে তামাশা

করে। কিন্ত ইতিহাসের নিজস্ব নিয়মেই বোতলবদ্ধ

গণতন্ত্রের ছিপিটি এক সময় খুলে যাবে। দশ কোটি

ভোটারের ¯্রােত তখনতো ভোটকেন্দ্রের দিকে ধাবিত

হবে। আর এই দশ কোটি ভোটারের মাঝে বাংলাদেশ

আওয়ামী লীগওতো আছে। কেমন হবে সেদিন যেদিন এই দশ

কোটি ভোটারের ‘আসল’ ভোটে বাংলাদেশ আওয়ামী

লীগকে অবতীর্ণ হতে হবে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত

হওয়ার প্রতিযোগিতায়?

অতি বাস্তব ও স্বাভাবিক একটা কল্পনা করা যেতে

পারে: একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্টু

নির্বাচনের সকল আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী সকল

রাজনৈতিক দলই ভোট যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। নিবন্ধিত সকল

দলই উৎসবের আমেজে রাত দিন ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছে।

দীর্ঘদিনের ভোট হারানো বুভুক্ষু জনগণ অধীর আগ্রহে বসে

আছে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য। ভোটাধীকার ফিরে

পাওয়ায় তারা আনন্দে আত্মহারা। দলীয় কর্মীরাও

উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে বাড়ি বাড়ি যেয়ে ভোট

ভিক্ষা করছে। শুধু একটি দল বিকলাঙ্গ হয়ে যাচ্ছে। দেহের

বল, মনের শক্তি সবই যেন হারিয়ে যাচ্ছে।

বিষয়: রাজনীতি

৮১১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

358920
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০২:১১
কুয়েত থেকে লিখেছেন : আম্লীগের গুন্ডা আর মস্তানদের তান্ডবে গনতন্ত্র আর ভোটাররা পিছনের দরজাদিয়ে পালিয়ে গেছে। প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা সৈনিক ও দেশ রক্ষকরা অসহায় কিংকর্তব্য বিমুড হয়ে তাকিয়ে আছে। লেখাটি ভালো ভালো লাগলো ধন্যবাদ আপনাকে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File