হায় সৌদি আরব! হায় মুসলমানদের অভিভাবক! !!
লিখেছেন লিখেছেন চেতনাবিলাস ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৬:৫১:৩৫ সন্ধ্যা
ঢাকা শহরে স্বামী দিনমজুর আর স্ত্রী মিনা বেগম অন্যের
বাসাবাড়িতে কাজ করে। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে।
এবার মিনা বেগম জীবনে স্বচ্ছলতার একটা স্বপ্ন দেখলেন।
স্বচ্ছল হলে ছোট মেয়েকে লেখাপড়া করাতে পারবেন।
পড়ালেখা করাতে পারলে সে বড় অফিসে চাকরি করবে।
এসব স্বপ্ন পূরণে ৪৫ বছর বয়সী মিনা বেগম সৌদি আরব
গেলেন গৃহকর্মী হিসেবে। তার এই প্রবাস জীবনের বয়স
ছিলো মাত্র ৩ মাস। সেই স্বপ্নকে বিদায় করে তিনি
দেশে ফিরলেন গত ৩ ফেব্রুয়ারি। দেশে ফিরে ’প্রবাস
কথা’র সাথে কথা বলেন মিনা বেগম।
‘বাসাবাড়িতে কাজের চুক্তিতে আমি আর আমার এক
বোন সৌদি আরব গেছিলাম। কথা ছিল দুইজন একই
পরিবারে কাজ করবো। আর বেতন দেবে মাসে ২১০০০
টাকা। কিন্তু ওখানে গিয়ে আমাদের মাঠে পাথর
ভাঙ্গার কাজ দেয়। এই কাজ আমি করতে পারি না’।
পাথর ভাঙ্গার কাজে ১৯ দিন পেরিয়ে যায় মিনা
বেগমদের। তারপর শরিফের সাথে যোগাযোগ করতে
পারে তারা। শরিফের মাধ্যমেই তারা সৌদি আরব যায়
বলে জানিয়েছে মিনা বেগম। সেই শরিফই এসে তাদের
পাথর ভাঙ্গার কাজ থেকে মুক্তি দেয়।
‘শরিফ আমাদের ২ জনকে ২ পরিবারে নিয়ে যায়। আমি যে
পরিবারে যাই সেখানে সদস্য ছিল ৯ জন। আর যাওয়ার
আগে আমাদের বলছিল যে, আমরা যে পরিবারে কাজ
করবো সেখানে ৩ জন সদস্য থাকবে। তাদের ছোট
ছেলেকে দেখে রাখতে হবে আর বাসার কাজ করতে
হবে। কিন্তু আমাদের ২ জনকে সেই পরিবারে কাজ না
দিয়ে আলাদা আলাদা পরিবারে পাঠায়’।
‘প্রবাস কথা’ জানতে চায় তার পরের ঘটনা।
‘কি আর করব, তখন সে পরিবারে কাজ করতে থাকলাম। ওরা
আমাকে সারা দিন-রাত কাজ করাতো। সকাল ৭ টায় কাজ
শুরু হতো, শেষ হতে হতে রাত ৩টা বেজে যেতো। খাওয়া
দাওয়ার খবর থাকতো না। দেশে কারো সাথে কথা হইতো
না। ১ মিনিট সময়ও বসারর উপায় আছিলো না’।
মিনা বেগম বলছেন, তিনি যেন বাড়িতে কারো সাথে
কথা বলতে না পারেন সে জন্য তাকে মোবাইল ব্যবহার
করতে দিতো না। তারপরেও তিনি গোপনে একটা
মোবাইল ব্যবহার করতেন।
‘একদিন ঐ পরিবারের একটা ছেলে আমার সাথে খারাপ
কাজ করতে চায়। আমি তখন তাদেরকে জানাই। কিন্তু তখন
তারা আমার প্রতি আরো বেশি খেপে গেল। আমাকে
অত্যাচার করা শুরু করল। একদিন তাদের স্টোর রুমে কাজ
করতাছিলাম, তখন তাদের বড় মেয়ে এসে কাজ করি না
বলে আমাকে মারতে শুরু করল। এর মধ্যে তারা বুঝতে
পারলো যে আমি গোপনে মোবাইল ব্যবহার করি। তখন
সবাই মিলে আমাকে মারলো। আমি প্রথমে মোবাইল দেই
নাই। পরে মার সইতে না পেরে মোবাইল বের করে দেই’।
IMG_5723
এরপর ঐ পরিবার থেকে শরিফকে ডাকা হয়। শরিফ আসে।
শরিফ তখন তাদের পক্ষ নিয়ে মিনা বেগমকে ধমকায়।
মিনা বেগম শরিফকে জানায়, এখানে থাকলে সে মারা
যাবে।বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানায়
শরিফকে।
‘আমাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেন। আমি এই কষ্ট সইতে
পারছি না। আমি বাংলাদেশ যেয়ে আপনার সব টাকা
দিয়ে দিব। কিন্তু শরিফ আমার কোন কথা শুনে না। পরে
ওদের সাথে কথা বলে শরিফ। ওরা তখন আমাকে ৩৩০০০
হাজার টাকা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দেয়। পরে
শরিফ ওদের সাথে কথা বলে আমাকে বিমানবন্দরে
নিয়ে আসে। আমার কাছ থেকে ২৫০০০ টাকা নিয়ে
আমাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। এর মাঝে আমার
সেই বোনটির সাথে একদিন দেখা হইছিল। আমি কিছু
বলতে পারি নাই। ২ মিনিট আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না
করে আবার চলে গেছে। যাওয়ার আগে শুধু বলে গেল, আপা
তুমি বাংলাদেশে যেয়ে আমাকে নেওয়ার ব্যবস্থা
করো’।
মিনা বেগম জানান, সৌদি আরব যেতে তার দেড় লাখ
টাকা খরচ হয়। এমন মিনা বেগমদের ঘটনা আরো অনেক
আছে। আবার তাদের মতো গৃহকর্মী হিসেবে গিয়ে
নিজের পরিবারের স্বচ্ছলতা আনতে পেরেছেন
অনেকেই।
রেজা চৌধুরী, ঢাকা।
উৎসঃ প্রবাসকথা
বিষয়: বিবিধ
১০৮৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কাবা ঘরটি ওদের দদেশে আছে বলেই ওরা শুকনা সম্মান পায়, নচেৎ ওদের মত নরাধম যেন আল্লাহ আর কাউকে না বানায়৷ ওরা মুসলীমদের অভিভাবক মোটেও নয়৷
মেয়েদের না কম টাকায় নেয়া হয় ???
মন্তব্য করতে লগইন করুন