আদালত রাজনীতি ও ইতিহাস সারাবে ! আদালত সারাবে কে ?
লিখেছেন লিখেছেন চেতনাবিলাস ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৮:০৭:০৪ রাত
ডক্টর এম মুজিবুর রহমান
ইতিহাস নিয়ে নানা সময়ে নানা আলোচনা ও বিতর্কও
সৃষ্টি করেছেন অনেক রাজনৈতিক নেতা। তবে এসব
আলোচনা বা বিতর্ক থেকে অনেক অজানা তথ্যও
বেরিয়ে আসে, যা নতুন করে ইতিহাস রচনায় সহায়ক হয়।
ইতিহাসের কোনো বিষয় মীমাংসীত হয় না। আর আদালত
দিয়ে তো ইতিহাস লেখার প্রশ্নই উঠেনা। কিন্তু তা করা
হচ্ছে, সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশে। ইতিহাস হচ্ছে
সত্যের জন্য অনুসন্ধান। ইতিহাসে যা লেখা হয়েছে তার
সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন থাকলেই ইতিহাসকে
নির্মোহভাবে বোঝা সহজ হয়।
কোনো রাজনৈতিক নেতার তথ্যের সত্যতা বিচার হবে
ইতিহাসের আলোকে। অথচ দেখা যায়, দলিল প্রমাণ নয়,
লাঠি হাতে সব সময় মাঠে নামিয়ে দেয়া হয় যুবলীগকে।
ব্যাংক ডাকাতি, গান পাউডার বা পেট্রোল বোমা
দিয়ে গাড়ি পোড়ানো/মানুষ পোড়ানো কিংবা
টেন্ডারবাজির ইতিহাস হলে সেখানে যুবলীগের
লাঠিসোটা মানায়। কিন্তু ঐতিহাসিক তথ্যের ক্ষেত্রে
যুবলীগের কিছু করার নেই। নারী নির্যাতন, বৈশাখী
মেলায় বস্ত্রহরণ, হল দখল, গোরস্থান দখল, ব্যাংক ডাকাতি,
লুটতরাজ, টেন্ডারবাজি আর জঙ্গিবাদ এসব হলো যুবলীগের
ইতিহাস। অপ্রিয় হলেও সত্য, যুবলীগের এই লাঠি বাহিনীর
কারণেই প্রকৃত ও সত্য ইতিহাস নিয়ে স্বাধীনতার ৪৪ বছর
পরও প্রশ্ন তুলতে হয়। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ঐতিহাসিক
সঠিক তথ্য আড়াল করতে আওয়ামী লীগ ও ভোটারবিহীন
নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত ক্ষমতাসীন সরকারের এমন কিছু
লোক কোনো প্রকার যুক্তিবুদ্ধি ছাড়াই যুবলীগের
লাঠিয়াল বাাহনীর সর্দার হিসেবে মাঠে নেমেছেন
যাদের অতীত প্রশ্নবিদ্ধ। এরা ইতিহাসের সত্য প্রমাণের
পরিবর্তে হুমকি-ধমকি শুরু করেছেন। অনেকের বিরুদ্ধে
রাষ্ট্রযন্ত্রের পৃষ্ঠপোষকতায় রাষ্ট্রদ্রোহী মামলাও রুজু
করা হয়েছে।
আসলে যারা স্বাধীনতার পর থেকে ইতিহাস লেখায়
মনোনিবেশ করেছেন, তাদের মধ্যে যারাই
নির্মোহভাবে ইতিহাসকে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন
তাদেরকে সর্বদা তাড়িয়ে বেড়িয়েছে যুবলীগের
লাঠি। আর মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করেও যারা
এতোদিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফেরি করে বেড়িয়েছিল
সত্য ইতিহাসে তাদের শুরু হয়েছে গাত্রদাহ। শেখ মুজিবুর
রহমানের এককালের কঠিন শত্রু যারা তাঁর চামড়া দিয়ে
ডুগডুগি বাজাতে চেয়েছিলেন, আওয়ামী লীগের
সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ সেলিমও সম্প্রতি যাদেরকে
শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী
হিসেবে স্বীকার করেছেন, সেই ইনু-মতিয়ারা এখন শেখ
হাসিনার চেয়েও শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ভক্ত।
দুই:
মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবোজ্জল
ইতিহাসের ঘটনাবলী সম্পর্কে বিভিন্ন রাজনৈতিক
নেতৃবৃন্দ, সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী সামরিক
বাহিনীর অফিসার, গবেষকদের ঐতিহাসিক তথ্য
উপস্থাপনের পর এর সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে
মুক্তিযুদ্ধের উপ-অধিনায়ক এ.কে. খন্দকার বীরোত্তম কর্তৃক
লেখা আত্মজৈবনিক গ্রন্থ ‘১৯৭১ : ভেতরে বাইরে’ এবং
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা
শারমিন আহমদ সম্পাদিত ‘তাজউদ্দীন আহমদ নেতা ও পিতা’
বই দু’টি।
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান
সম্পাদিত 'জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম
প্রেসিডেন্ট ও স্বাধীনতার ঘোষক' বইটি প্রকাশের পরপরই
‘১৯৭১ : ভেতরে বাইরে’ এবং ‘তাজউদ্দীন আহমদ নেতা ও
পিতা’ গ্রন্থ দু'টি রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্ঠি
করেছে । মুক্তিযুদ্ধের অনালোচিত অধ্যায় লিখে
আলোচনায় তাজউদ্দীন কন্যা শারমিন আহমদ। স্বাধীনতার
ঘোষণাপত্রে শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাক্ষর দিতে
অস্বীকৃতি, মুজিববাহিনীর তাজউদ্দীন আহমদকে হত্যা
চেষ্টা, বাকশাল গঠনে সায় না থাকাসহ নানা প্রসঙ্গে
একজন ভেতরের মানুষ হিসেবেই বয়ান করেছেন তার
‘তাজউদ্দীন, নেতা ও পিতা’ বইতে ।বিশেষ করে
স্বাধীনতার ঘোষণায় স্বাক্ষর করেননি শেখ মুজিব এই
তথ্যটি নি:সন্দেহে স্বাধীনতার সত্য ইতিহাস অনুসন্ধানে
ভূমিকা রাখবে।
এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের উপ-অধিনায়ক পরবর্তীতে আওয়ামী
লীগের টিকেটে নির্বাচিত এমপি ও সাবেক মন্ত্রী,
সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সাবেক সভাপতি এ.কে.
খন্দকার বীর উত্তম কর্তৃক লেখা বইটি নিয়ে রাজনৈতিক
বিশ্লেষকদের মধ্যে চলছে চুলচেড়া বিশ্লেষণ ।
মুক্তিযুদ্ধের উপ-অধিনায়ক এ.কে. খন্দকারের লেখা
প্রকাশের পর তাঁর নিজের দল আওয়ামী লীগ ও তার
সহযোগীদের ক্ষোভের মুখে পতিত হয়েছেন। এই বইয়ে
তিনি মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর নিজের অভিজ্ঞতালব্ধ যে
বিবরণ দিয়েছেন তাতে তাঁর নিজের দল আওয়ামী লীগ
তাঁর বিরুদ্ধে তেড়ে এসেছে । এই বিবরণের উল্লেখযোগ্য
দিক হলো, বইয়ের ৩২ পৃষ্ঠায় এ.কে. খন্দকার লিখেছেন,
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের শেষ
শব্দ ছিল ‘জয় পাকিস্তান’।
বিএনপি'র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান
সম্পাদিত বইটি মূলত ঐতিহাসিক দালিলিক প্রমাণের
ভিত্তিতে একটি প্রামাণ্য সংকলন । বইটিতে তারেক
রহমান তাঁর নিজের কোনো মন্তব্য বা বক্তব্য উপস্থাপন
করেন নাই। তিনি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখিত বিভিন্ন গ্রন্থ,
দেশী বিদেশী সংবাদপত্রে তখনকার সময়ে প্রকাশিত তথ্য
থেকে উদ্বৃত করেছেন মাত্র। তিনি যেসব নেতৃস্থানীয়
মুক্তিযুদ্ধাদের সাক্ষাত্কার বা গ্রন্থ থেকে তথ্য উদ্বৃত
করেছেন তাঁরা ভারতে বসে থাকা মুক্তিযুদ্ধা নয় বরং
উনারা ছিলেন সম্মুখ সমরের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধা । যাদের
প্রায় সকলেই মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশে
আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।
তিন:
৩০ জানুয়ারী ছিল বাংলা চলচ্চিত্রের ক্ষণজন্মা প্রতিভা
কিংবদন্তী পরিচালক জহির রায়হানের ৪৪ তম অন্তর্ধান
দিবস। অনেকে বলে থাকেন মুক্তিযুদ্ধকালে আওয়ামী
নেতাদের আসল চিত্র বিশেষ করে ভারতে বসে কি
করেছিলেন তার সচিত্র প্রতিবেদন জহির রায়হানের
কাছে থাকাটাই তাঁর কাল হলো। জহির রায়হান ছিলেন
একজন সত্য ও সাহসীকতার চেতনা। তাই "স্টপ জেনোসাইড"
ছবিটি নির্মাণের সময় আওয়ামী লীগের নেতারা
তাঁকে নানাভাবে বাধা দিয়েছেন । বিভিন্ন সেক্টরে
শুটিং করতে দেয় নি, এমন কি কোন কোন সেক্টরে তাঁর গমন
পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছিল। ১৯৭২ সালে যেখানে হারিকেন
দিয়া রাজাকারদের খোজে পাওয়া যেতো না, সেই সময়
তাঁকে কে তুলে নিয়ে গেল ? আজো তা অধরাই রয়ে
গেলো !
তবে এক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রবাসী
সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের কন্যা শারমিন
আহমেদ তাঁর ‘তাজউদ্দীন, নেতা ও পিতা’ বইতে মুজিব
বাহিনীর কিছু কর্মকান্ডের যে অবতারণা করেছেন তা
প্রনিধানযোগ্য। শারমিন আহমদ মুজিব বাহিনী গড়ে ওঠার
ক্ষেত্রে চিত্তসূতার-এর সম্পৃক্ততার উল্লেখের [পৃ. ১৫১]
পাশাপাশি তাজউদ্দীন আহমদের আরেক সহযোগী মঈদুল
হাসানকে উদ্ধৃত করে লিখেছেন: ...মুজিব বাহিনী
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে ক্ষতিগ্রস্ত
করেছিল। তাদের আত্মঘাতি কর্মকান্ড ও ভিত্তিহীন
অপপ্রচারণা ক্রমে তাদের অজনপ্রিয় করে তুলেছিল।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী নয় মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন
ইউনিট মুজিব বাহিনীর আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়। পৃ. ১১৬-১১৭।
এছাড়া মুজিব বাহিনী এমনকি তাঁর বাবাকেও হত্যা
করতে চেয়েছিল বলে উল্লেখ করেছেন।
তারেক রহমান ও এ.কে. খন্দকারের লেখা গ্রন্থ নিয়ে
আওয়ামী লীগের নেতারা যুক্তি বা ঐতিহাসিক
দালিলিক প্রমাণাদির ভিত্তিতে উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়ে
বরং যুবলীগার দিয়ে যুক্তির বদলে শক্তি দিয়ে ইতিহাস
লিখতে চাইছেন । তারেক রহমানের উপস্থাপিত তথ্যের
কোনো একাডেমিক জবাব চোখে পড়েনি। তবে ইতিহাস
বিকৃতি বলে চিত্কার ও চেচামেচি শুনেছি । এমনকি
আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক তাজউদ্দীন
আহমদের অভিজ্ঞতা থেকে লেখা বইটি সম্পর্কে এখন
পর্যন্ত কোনো প্রতিবাদ করে নাই । আওয়ামী লীগের এই
নীরবতা ও লাঠিয়াল বাহিনীর জঙ্গিবাদী প্রতিবাদ
থেকে কি প্রমাণ হয়না যে, রনাঙ্গনের মুক্তিযুদ্ধা,
তত্কালীন সামরিক বাহিনীর অফিসার ও গবেষকদের তথ্য
নির্ভর বক্তব্য সঠিক?
শুধু তাই নয়, নিকট অতীতের খবর বাদ দিলেও মাত্র দুই সপ্তাহ
আগে, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে
আওয়ামী লীগের ইতিহাস বিকৃতি সম্পর্কে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ঠ গবেষক ও অধ্যাপক এবং নিহত
প্রকাশক দীপনের বাবা আবুল কাশেম ফজলুল হক বাংলা
ভিশন টেলিভিশনের একটি টকশোতে বলেছেন,
'আওয়ামী লীগ নিজেরদেরকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি
বলে থাকে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে আওয়ামী
লীগ থেকে যেভাবে বলা হয় তা একপেশে ও বিতর্কিত।
আজকে বাংলা একাডেমি পর্যন্ত কোনো কোনো
ক্ষেত্রে কি লিখবে আর কি লিখবে না এটা সরকারের
নির্দেশে অথবা মত অনুযায়ী না হলে বাংলা
একাডেমির বই বন্ধ রাখা হয়। অথবা ফর্মা পরিবর্তন করে বা
গোটা বই পরিবর্তন করে নতুন করে লিখতে হয়। টেক্সট বুকে
কি লিখবে, আর কি লিখবে না, তা সরকারের মুখাপেক্ষী
হয়ে লিখতে হয়। না হলে সেই বই লিখতে পারে না ।
ইভেন, এশিয়াটিক সোসাইটির মতো প্রতিষ্ঠান যেটাকে
সরকারি প্রতিষ্টান বলা চলে না। বিভিন্ন সোর্স থেকে
টাকা যোগাড় করে চলে, সরকার থেকেও সামান্য গ্রান্ট
পেয়ে থাকে । সেই এশিয়াটিক সোসাইটিও
স্বাধীনভাবে বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস
স্বাধীনভাবে লিখতে পারে কি ?’
চার:
আওয়ামী লীগ তথা তাদের ঘরাণার কিছু
সুবিধাভোগীদের দীর্ঘদিনে সাজিয়ে তোলা ইতিহাস
যেন তছনছ হয়ে যাচ্ছে। এই ‘তছনছ’ করার কাজে সর্বাধিক
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন আবার তাদেরই ঘরের সত্য
সন্ধানী লোকেরা। এর ফলে চরম বিব্রত ও বিভ্রান্তিকর
অবস্থায় পড়েছে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের
একচেটিয়া কৃতিত্বের দাবিদার বাংলাদেশ আওয়ামী
লীগ। অন্যদিকে আ’লীগ ও তাদের সমর্থকদের চিন্তাধারার
সঙ্গে দ্বিমত বা ভিন্নমত প্রকাশ করায় একের পর এক রোষের
শিকার হচ্ছেন মহান মুক্তিযুদ্ধের নায়করা।
ভিন্নমত প্রকাশের কারণে এ যাবত আওয়ামী রোষের
শিকার হতে হয়েছে অনেক রাজনৈতিক নেতৃত্ব,
মুক্তিযুদ্ধের অধিনায়ক, সেক্টর কমান্ডারবৃন্দ, বীর সেনানী
ও লেখক-বুদ্ধিজীবীকে। এঁদের মধ্যে মোটা দাগে আছেন,
মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী,
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমান বীর
উত্তম, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএ জি
ওসমানী, শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম সহযোগী,
বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও
পরবর্তীকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন,
মুক্তিযুদ্ধে কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান বাঘা কাদের
নামে খ্যাত আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম,
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অধিনায়ক কর্ণেল (অব) অলি আহমদ বীর
বিক্রম, সেক্টর কমান্ডার মেজর এম.এ. জলিল ও হামিদুল্লাহ
খান বীর প্রতীক এবং সর্বশেষ পরিস্থিতির শিকার
মুক্তিযুদ্ধের উপ-অধিনায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল (অব) এ.কে.
খন্দকার বীর উত্তম।
ঐতিহাসিক দালিলিক প্রমাণাদির মাধ্যমে বিভিন্ন
গ্রন্থে মুক্তিযুদ্ধের বেসামরিক নেতৃত্বের মধ্যে একমাত্র
তাজউদ্দীন আহমদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে তৎকালীন বেসামরিক নেতৃত্ব
যাদের বেশিরভাগই ভারতে তখন আরাম আয়েশের
পাশাপাশি যাদের মুখরোচক নানা কাহিনীও সকলের
জানা । এ ছাড়া ‘মুজিব বাহিনী ভারতীয়দের কাছ থেকে
সম্মানী পেতো’, ‘মুজিব বাহিনী অস্থায়ী সরকার ও
মুক্তিবাহিনীকে অবজ্ঞা করত’ প্রভৃতি মন্তব্যে দর্পচূর্ণ
হয়েছে ‘মুজিববাদী’ হিসেবে গর্বিত নেতাদের।
আওয়ামী লীগের রাজনীতির একমাত্র হাতিয়ার
মুক্তিযুদ্ধ ও শেখ মুজিবুর রহমান যাকে তারা
বাংলাদেশের ইতিহাসে অপ্রতিদ্বন্দ্বী করে রাখতে
চায়, মহান মুক্তিযুদ্ধে আসলেই তাদের অবদান কতটুকু তা
ইতিহাসের বিচার্য বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। আর এতে
করে বর্তমানে আওয়ামী লীগের বাকসর্বস্ব রাজনীতি
আজ হুমকির মূখে পড়েছে বিধায় তারা আজ্ঞাবহ আদালত
দিয়ে গায়ের জোরে ইতিহাস লিখতে বসেছে ।
অবসর গ্রহণের পর রায় লেখা নিয়ে প্রধান বিচারপতি এস
কে সিনহার আলোড়ন সৃষ্ঠিকারী বক্তব্যের পর, আওয়ামী
লীগের ভোটারবিহীন নির্বাচন ও প্রধান বিচারপতির
কথা মতে সংবিধান পরিপন্থী উপায়ে তত্ত্বাবধায়ক
ব্যবস্থা বাতিলের মাধ্যমে গঠিত সরকারে আগের থেকে
শুরু হওয়া কম্পন তীব্র আকার ধারণ করেছে । এজন্য গণভবনে
তড়িঘড়ি করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী কর্তা
ব্যক্তিদের প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে নৈশ-ভূজ আয়োজন
করতে হয়েছে !
প্রচলিত প্রবাদে যেমন আছে 'কুইনান জ্বর সারাবে কুইনান
সারাবে কে?' অর্থাত কুইনান দিয়ে জ্বর সারিয়েছেন
এখন শরীরে যে কুইনান আছে তা সারাবেন কী দিয়ে?
তাইতো প্রচলিত কথা থেকে বলা যায়, আদালত দিয়ে
ইতিহাস বা রাজনীতি সারাতে চাইছেন কিন্তু
আদালতে যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে তা সারাবেন কী
দিয়ে ? (চলবে .....)
লন্ডন, ৩১ জানুয়ারী ২০১৬।লেখক: ডক্টর এম মুজিবুর রহমান,
শিক্ষক ও গবেষক, সাবেক সহকারী অধ্যাপক, শাহজালাল
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
বিষয়: বিবিধ
১১৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন