পাঠকের কাঠগড়ায় সাংবাদিকতা
লিখেছেন লিখেছেন চেতনাবিলাস ৩১ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৭:৩২:৫৭ সন্ধ্যা
কদরুদ্দীন শিশির
দুনিয়ার সব জায়গায় ক্ষমতাকে অবলম্বন করেই এবং ক্ষমতার
কাছাকাছি মানুষদের দ্বারাই সবচেয়ে বেশি অপরাধ বা
অপকর্ম অনিয়ম ইত্যাদি হয়ে থাকে। সংবাদমাধ্যমের কাজ
হল অপরাধ-অপকর্মকে উম্মোচিত করা। ফলে
স্বাভাবিকভাবে ক্ষমতাসীনদের সাথে
সংবাদমাধ্যমের একটা দ্বন্দ্ব থাকে। ক্ষমতাসীনরা তাই
সাংবাদিকদের সমালোচনায় মুখর থাকেন। অন্যদিকে
সংবাদমাধ্যম সাধারণ মানুষের হয়ে কথা বলে। যে
কারণে তার আরেক নাম ‘গণমাধ্যম’।
ফলে আদর্শ সংবাদমাধ্যম বা গণমাধ্যম সাধারণ মানুষের
সমালোচনার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়ার কথা নয়। কিন্তু
বাংলাদেশে দিন দিন গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকদের
সমালোচনা জনপরিসরে বাড়ছেই। এসব সমালোচনা
সংবাদের ব্যাকরণগত ভুলত্রুটির জন্য নয়, বরং নৈতিকতা
নিয়েই হচ্ছে বেশি। সাংবাদিকতা বা সংবাদমাধ্যমকে
এখন অনেক বেশি রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্বার্থে
ব্যবহার করা হচ্ছে বলে পাঠকরা মনে করছেন।
সাংবাদিকরাও বিনাবাক্যব্যয়ে ব্যবহৃত হচ্ছেন করপোরেট,
রাষ্ট্র ও রাজনীতির স্বার্থে। অনেকে আবার অপরাধেও
জড়িয়ে পড়ছেন। সবমিলিয়ে অতীতের যে কোনো সময়ের
চেয়ে বর্তমানে বাংলাদেশে সাংবাদিক এবং
সাংবাদিকতা প্রশ্নের মুখে। শুধু পাঠক নন, বোদ্ধারাও এ
বিষয়ে উদ্বিগ্ন। আজকে আমরা পাঠকের এমন কিছু উদ্বেগ
তুলে ধরবো এবং ধারণা নেয়ার চেষ্টা করবো এর
ব্যাপকতা সম্পর্কে।
গত ১৮ জানুয়ারি জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে (উড
বাংলা) ‘অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে বাংলাদেশের কিছু
সাংবাদিক’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রতিবেদন
প্রকাশ করে। সেখানে সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা তুলে
ধরা হয়। এই সংবাদ ফেসবুকে শেয়ার করার পর সেখানে
পাঠকরা কিছু মন্তব্য করেন, যার বেশিরভাগই
সাংবাদিকদের সম্পর্কে নেতিবাচক। এসব মন্তব্যকে
ভিত্তি করে ২০ জানুয়ারি উড ‘বাংলাদেশের ৯০
শতাংশ সাংবাদিক ভন্ড’ শিরোনামে আরেকটি সংবাদ
প্রকাশ করে। অবশ্য এই রিপোর্টটি নিজেই বাংলাদেশের
প্রশ্নবিদ্ধ সাংবাদিকতার একটি উদাহরণ। একজন পাঠক
মন্তব্য করেছিলেন কোনো জরিপের ফলাফল ছাড়া
কোনো সংবাদমাধ্যম কিভাবে একটি আনুমানিক
মন্তব্যকে পরিসংখ্যানের মর্যাদা দিতে পারে?
যাইহোক, সাংবাদিকদের নেতিবাচক দিক নিয়ে
গণমাধ্যমে খুব বেশি প্রতিবেদন প্রকাশ হয় না। ভুলত্রুটি
সত্ত্বেও উড এর সংবাদটি ফেসবুকে শেয়ার করার পর বেশ
সাড়া পড়ে এবং পাঠকদের অনেকে তাদের মতামত
জানান।
উড এর পাতায় গত কয়েকদিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি
‘লাইক’ (প্রায় আট হাজার) অর্জন করা সংবাদ এটি।
সংবাদটির লিংকের নিচে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত মন্তব্য
করেছেন ২১০ জন। লক্ষ্যণীয়, তাদের একজনও সংবাদটির
সাথে শতভাগ দ্বিমত পোষণ করেননি। তবে শতভাগ সহমত
পোষন করেছেন এমন অনেকে রয়েছেন। কয়েকজন অবশ্য
মধ্যমপন্থা অবলম্বন করেছেন মতামতে। এর মধ্যে ইব্রাহিম
পলাশ নামে একজন লিখেছেন, ‘কথাটা সম্পূর্ণ সত্যি না
হলেও পুরোপুরি মিথ্যেও না। অর্থাৎ, পারসেন্টেজটা একটু
কম হবে। এটা আমার ধারণা।’
এম. এ. হাসান নামে একজন লিখেছেন, ‘এ কথাটা আমি
সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের পর কমেন্ট করেছিলাম, তবে
অন্যভাবে। সাংবাদিকরা ইদানিং রাজনৈতিক দাসে
পরিণত হচ্ছে।’ শিহাব খানের মন্তব্য ‘সব সাংবাদিক
খারাপ নয়। ঢালাওভাবে দোষ দেওয়া যাবে না।
সাংবাদিকদের কারণেই বাংলাদেশের অনেকে দুর্গম
এলাকার খবর প্রচার হয়, যাতে ঐ লোকগুলো অনেক সুবিধা
পেয়ে থাকে। তবে কিছু সাংবাদিক আছেন যারা
টাকার জন্য সাংবাদিকতা করেন।’ মল্লিকা চন্দন মনে
করেন, ‘আমাদের দেশের কতিপয় অসাধু সাংবাদিকদের
কারণে সাংবাদিক মহল প্রশ্নবিদ্ধ, যেটা অতীতে ছিল
না। এর জন্য দায়ী রাজনৈতিক মহল।’
সোলাইমান সুমনের মন্তব্য অনেক কড়া। তিনি লিখেছেন,
‘এখনকার সময় সাংবাদিক আর সাংবাদিক নেই। এরা হয়ে
গেছে সাংঘাতিক! এদেশে সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসীদের
সাথে নতুন নাম যুক্ত করার সময় এসেছে। সেই নামটা হলো
‘সাংবাদিক’।
উড এর ফেসবুক পেইজে করা মন্তব্যগুলোর মধ্যে উপরে
উল্লিখিতগুলো অনেকটা ভারসাম্যপূর্ণ। অনেকে অবশ্য
পুরো সাংবাদিকতা পেশা এবং সাংবাদিক সমাজকেই
কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। উড এর এই একটি
সংবাদে পাঠক প্রতিক্রিয়া দিয়ে পুরো বাংলাদেশের
সাংবাদিকতাকে বিচার করে রায় দিয়ে দেয়া
মোটেও কোনো বিবেচকের কাজ হবে না। কিন্তু এ
থেকে এই ধারণাটা অন্তত নেয়া যায়,
সাংবাদিকদের একটা অংশে ব্যক্তিগত অসততা,
রাজনৈতিক পক্ষপাত ইত্যাদির কারণে পাঠকরা
সার্বিকভাবে সাংবাদিকদের ওপর আস্থা রাখতে
পারছেন না। ফলে পুরো সাংবাদিকতা পেশাকেই
কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে।
বিষয়: বিবিধ
৮৯৬ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন