শমসের মুবিনকে বিএনপি থেকে পদত্যাগে বাধ্য করার চাঞ্চল্যকর তথ্য !
লিখেছেন লিখেছেন চেতনাবিলাস ২৮ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৯:০৫:৪৬ সকাল
শমসের মবিন চৌধুরীর বিএনপি ছাড়ার কারণগুলোর মধ্যে
ইতালীয় নাগরিক চেসারি তাভেল্লা খুনের ঘটনায়
ফাঁসানোর হুমকি ছিল বলে জানিয়েছেন ডা. জাফরুল্লাহ
চৌধুরী।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গুলশান ২ নম্বরের ৯০ নম্বর সড়কের
গভর্নর হাউসের দক্ষিণ পাশের সীমানাপ্রাচীর ঘেঁষে
ফুটপাতে চেসারি তাভেল্লাকে(৫০) গুলি করে হত্যা
করা হয়।
তিনি নেদারল্যান্ডসভিত্তিক আইসিসিও নামের একটি
প্রতিষ্ঠান প্রুপের ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
তাভেল্লা খুন হওয়ার এক মাস পর ২৮ অক্টোবর রাতে
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম
আলমগীরের মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা
জিয়ার কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বিএনপির সব পদ
থেকে সরে দাঁড়িয়ে রাজনীতি থেকেই অবসরের কথা
জানান শমসের মবিন।
পরদিন সমশের মবিন রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর
কারণ হিসেবে শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি যুদ্ধাহত একজন মুক্তিযোদ্ধা। সম্পূর্ণ
শারীরিক কারণে আমি রাজনীতি থেকে অবসর
নিয়েছি। আমি বাইরে যেতে পারি না, আমার
চলাফেরার মধ্যে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ অবস্থায়
রাজনীতি করতে হলে যে ধরনের শ্রম, সময় দেওয়া প্রয়োজন,
সেটা আমার পক্ষে শারীরিক কারণে সম্ভব হচ্ছে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য আমার বিদেশে
যাওয়া জরুরি। এমআরপি পাসপোর্টের জন্য আবেদন জমা
দিয়েছি। হাতে পেলেই যেতে চাই। এ কারণে বিএনপির
সব পদ থেকে সরে গিয়ে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন
থেকেই তা কার্যকর হবে।’
শমশের মবিনের এই পদত্যাগের পর থেকেই রাজনৈতিক
মহলে গুঞ্জন ছিল তিনি সরকারের চাপের মুখে পদত্যাগ
করেছেন। এই চাপের মধ্যে তার এমআরপি পাসপোর্ট না
দেওয়া ও ফের কারাবন্দী করার হুমকির কথা আলোচিত
হয়েছিল।
কিন্তু শমশের মবিনের পদত্যাগের তিন মাস পর বুধবার
জাতীয় প্রেসক্লাবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী জানালেন তাভেল্লা হত্যায়
তাকে ফাঁসানোর হুমকির কথা। এক্ষেত্রে এক সময়
শমসেরের ইতালীতে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনের
বিষয়টিকে তাভেল্লা হত্যার যোগসূত্র হিসেবে
ব্যবহারের হুমকি ছিল।
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, “আজকে শমসের মবিন দল থেকে
পদত্যাগ করেছেন। করতেই পারেন। এই সরকারের এতো
অত্যাচার- অনাচার, তার ওপর চাপও ছিল। ইতালীয় নাগরিক
হত্যা হয়েছে। ইতালীতে কবে তিনি (শমসের) রাষ্ট্রদূত
ছিলেন, এর সঙ্গে যোগসূত্র করছে অথবা অন্যান্য।”
এ ব্যাপারে জানতে শমসের মবিনের সঙ্গে বিএনপি
চেয়ারপারসন খালেদা জিয় ও দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের
বসা দায়িত্ব ছিলে বলেও জানান জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
তিনি বলেন, “কিন্তু খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে আসার
পরে উনি কী শমসের মবিনের সঙ্গে বসেছিলেন? আমি
জানি না। যদি বসে না থাকেন তার জন্য খালেদা
জিয়ার যতটা দায়িত্ব তার চেয়ে বেশি দায়িত্ব নজরুল
ইসলাম খানসহ অন্য সিনিয়র নেতাদের।”
২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট
সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় শমসের মবিন পররাষ্ট্র
সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। যুক্তরাষ্ট্রে
বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দুই বছর চাকরি মেয়াদ
শেষে করে ২০০৮ সালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা
করে বিএনপিতে যোগ দেন শমসের মবিন চৌধুরী। সে সময়
চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব পান
তিনি। ২০০৯ সালে বিএনপির কাউন্সিলে শমসের
মবিনকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়।
২০১০ সালের জুন মাসে বিএনপির ডাকা এক হরতাল কর্মসূচি
চলাকালে রাজধানীর মহাখালী রেলগেটে পুলিশের
হামলার শিকার হন শমসের মবিন চৌধুরী। লাঠিপেটার পর
তাকে আটক করে পুলিশ। পরে গাড়ি ভাঙচুর করে, পুলিশের
কর্তব্যকাজে বাধা দেয় এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপের
অভিযোগে দায়ের করা মামলায় শমসের মবিনকে সাত
দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
শমসের মবিন বিএনপির আন্তর্জাতিক যোগাযোগের
ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালনের কারণে নানা চাপ ও
হুমকির মধ্যে ছিলেন।
গত বছরের ৮ জানুয়ারি বনানীর ডিওএইচএস মসজিদ রোডের
একটি বাসা থেকে শমসের মবিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এরপর পাঁচ মাসেরও বেশি সময় কারাগারে বন্দী ছিলেন
তিনি। গত ২২ মে তিনি কারগার থেকে মুক্তি পান।
রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন রয়েছে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড
নিয়ে কারাগারেই ব্যাপক চাপের মুখে পড়েন তিনি।
তাই জামিনে মুক্তির পরেও রাজনীতিতে আর সক্রিয়
হতে পারেননি। এমনকি তিনি খালেদা জিয়ার সঙ্গেও
সাক্ষাৎ না করে বাসায় অবস্থান করছিলেন।
এর মধ্যে গত ২৮ সেপ্টেম্বর চেসারি তাভেল্লা খুন হন। এক
মাস পর ২৮ অক্টোবর বিএনপি ছাড়তে খালেদা জিয়াকে
চিঠি লেখেন শমসের মবিন চৌধুরী।
শমসেরের পদত্যাগের ঠিক দুদিন আগে গত ২৬ অক্টোবর
রাসেল চৌধুরী, মিনহাজুল আরেফিন রাসেল, তামজিদ
আহম্মেদ রুবেল ও শাখাওয়াত হোসেন শরীফ নামে চার যুবক
চেসারি তাভেল্লা হত্যাকাণ্ডে জড়িত দাবি করে
তাদের নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান
মিয়া দাবি করেন, ২৫ অক্টোবার ঢাকার বিভিন্ন এলাকা
থেকে এই চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কমিশনার বলেন, “আন্তর্জাতিকভাবে সরকারকে চাপে
ফেলতে পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইতালির নাগরিক
চেসারি তাভেল্লাকে হত্যা করা হয়েছে। এক
‘বড়ভাই’য়ের নির্দেশে টাকার বিনিময়ে তিন ভাড়াটে
খুনি সরাসরি হত্যায় অংশ নেয়। এই বড় ভাইকে গ্রেপ্তারের
চেষ্টা চলছে।”
পরে ২৮ অক্টোবর শমসের মবিন বিএনপি থেকে পদত্যাগ
করলে ৪ নভেম্বর রাতে বিএনপির ঢাকা মহানগর কমিটির
যুগ্ম-আহ্বায়ক ও সাবেক কমিশনার এম এ কাইয়ুমের ছোট ভাই
এমএ মতিনকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
পুলিশের দাবি, তাভেল্লা হত্যায় জড়িত সন্দেহে
মতিনকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে ৪
নভেম্বর রাত ১১টার দিকে যশোরের বেনাপোল থেকে
গ্রেপ্তারের দাবি করে পুলিশ।
এদিকে এমএ মতিন, রাসেল চৌধুরী, মিনহাজুল আরেফিন
রাসেল, তামজিদ আহম্মেদ রুবেল ও শাখাওয়াত হোসেন
শরীফদের স্বজনরা দাবি করেন ১০ থেকে ২০ অক্টোবরের
মধ্যে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হন। তবে
পুলিশ স্বজনদের দাবি নাকচ করে আসছে।
উৎসঃ অনলাইন বাংলা
বিষয়: রাজনীতি
৯২৬ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন