প্রধান বিচারপতি সিনহার বক্তব্যে তোলপাড়
লিখেছেন লিখেছেন চেতনাবিলাস ২১ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৮:৫২:৫১ সকাল
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার দেয়া একটি
বক্তব্যে সর্বত্র তোলপাড় চলছে।
বাংলাদেশের ২১ তম প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব
গ্রহণের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার সুপ্রিম
কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বাণীতে প্রধান
বিচারপতি বলেন, “কোনো কোনো বিচারপতি রায়
লিখতে অস্বাভাবিক বিলম্ব করেন। আবার কেউ কেউ
অবসর গ্রহণের দীর্ঘদিন পর পর্যন্ত রায় লেখা অব্যাহত
রাখেন, যা আইন ও সংবিধান পরিপন্থী।”
এখন অনেকে প্রশ্ন তুলছেন প্রধান বিচারপতির বক্তব্য
অনুযায়ী বর্তমান সরকারের সাংবিধানিক বৈধতা
থাকে কিনা? কারণ, এই সরকার যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচন
করে ক্ষমতায় বসেছে তার ভিত্তিমূলে রয়েছে
সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী। আর এই পঞ্চম সংশোধনীর
পূর্ণাঙ্গ রায় লিখেছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি ও
বর্তমানে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি খায়রুল
হক।
খায়রুল হকই পঞ্চম সংশোধনীর রায়ের মাধ্যমে তত্বাবধায়
সরকার ব্যবস্থা বিলপ্তু করার নির্দেশনা দেন। প্রধান
বিচারপতির মতে, অবসরের পর রায় লেখা সংবিধান
পরিপন্থী হলে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে যেসব কর্মকাণ্ড
করেছে বর্তমান সরকার সেগুলোর বৈধতা থাকে কিনা?
এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. তুহিন
মালিক। তিনি তার ফেসবুকে প্রধান বিচারপরিত বক্তব্য
শেয়ার করেছে প্রশ্ন করেছেন--
“-তাহলে অবসরের পরে লিখিত ৫ম সংশোধনী এবং
ত্রয়োদশ সংশোধনী (তত্বাবধায়ক সরকার) বাতিলের
রায়গুলো কি বেআইনী ও সংবিধান পরিপন্থি বলে
বিবেচিত হবে?
-তাহলে অবসরের পরে লিখিত ফাঁসির রায়গুলোও কি
বেআইনী ও সংবিধান পরিপন্থি বলে বিবেচিত হবে?
-তাহলে যে সকল বিচারক এসব সংবিধান পরিপন্থী কাজ
করেছেন তাদেরকে কি বিচারের মুখোমুখি করা হবে?”
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাবিবুর রহমান নামে একজন
লিখেছেন, “কে কী লিখেছেন তার চেয়েও বড় কথা হলো
যে প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা
পরবর্তিতে দায়িত্ব গ্রহন করার পর ঐ সব রায় অফিসিয়ালি
গ্রহন করে বাস্তবায়ন করেছেন তারাই প্রকৃত আইন
ভঙ্গকারী- (সংবিধানের ব্যাখ্যা যদি সঠিক ভাবে
দেয়া হয়ে থাকে)।”
মাইনুল ইসলাম নামে একজন লিখেছেন, !ইদানীং কল্লা
ফেলানোর হুকুমদাতা বিচারপতি সিনহার নীতিবাক্য
হারহামেশা শুনা যাচ্ছে, তার এই বালখিল্য কথার উদ্দেশ্য
কি তা সামনে হয়তো বুঝা যাবে। বিচারপতি সিনহার
কথার সূত্র ধরে বলতে গেলে বিচারপতি খায়রুল হক,
মোজাম্মেল হক এবং কসাই মানিকের লিখিত রায়ও ছিল
অবৈধ। আর অবৈধ রায়ের পথ ধরে, অবৈধ ভাবে ক্ষমতায়
বসে এবং অবৈধ ভাবে কিছু মানুষকে হত্যা করে যারা
বারবার অট্টহাসি দিয়ে যাচ্ছে, তাদের কাছে আমরাই
বারবার বৈধ সংলাপের ভিক্ষা করে চলছি!”
এদিকে কয়েকদিন আগে অবসরে যাওয়া সুপ্রিম কোর্টের
বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিক ৭১ টিভির সাথে এক
সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “প্রধান বিচারপতি নিজেই
স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার ও বিএনপি-
জামায়াতের এজেন্ট। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার
সিনহা নিজের স্বীকার করেছেন, তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময়
শান্তি (পিস) কমিটির সদস্য ছিলেন যাদের কাজ ছিল
একাত্তরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করা । তাই
তিনি মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী রাজাকার। সিনহা বিএনপি-
জামাতের এজেন্ট।”
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে অনেকেই প্রধান বিচারপতির
বক্তব্য শেয়ার করে দেশের সংবিধানকে ক্ষমতাসীনদের
ইচ্ছানুযায়ী ব্যাখ্যা ও ব্যবহারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ
করছেন। এভাবে প্রকাশ্যে দুই বিচারপতির দ্বন্দ্বকে
বিচারবিভাগের চরম দলীয়করণের বহিঃপ্রকাশ
হিসেবেও দেখছেন সাধারণ মানুষ।
আবদুল জলিল নামে একজন লিখেছেন, “প্রধান বিচারপতির
অন্যান্য বিচারপতিদের কাজে অবহেলা ও অবসরে
যাওয়ার পর মামলার রায় লিখার মত নীতিগর্হিত কাজের
অভ্যাস জনসম্মুখে প্রকাশের জন্য তাহার প্রশংসা করি ৷
বিচারক মানিকের সাথে তাহার বিরোধের মূল কারন ও
ওখানেই ৷ এখন সে তাই প্রধান বিচারপতির বিরূদ্ধে
অশালীন মন্তব্য ৭১ টিভিতে করেছে যাতে তাঁহাকে
আওয়ামী সরকারের বিরোধী বলে বিশ্বাসযোগ্য
করাতে পারে I”
জুয়েল লিখেছেন, “ওরা নির্লজ্জ, ওদের কথা ঘুরাতে সময়
লাগেনা। ওরা নিজে বোকা হয়েও অন্যকে বোকা
বানাতে চায়। আপনার বক্তব্যের পরিপেক্ষিতে
আগামীকালই দেখতে পাবেন এদের বেহায়াপনার
মাত্রা।”
আকাশ লিখেছেন, “এদের মনে যখন যা আসে সেটাই আইন!”
মিঠু লিখেছেন, “সংবিধান অমান্য করলে সর্বোচ্চ ফানি
হয়।তাহলে এ ক্ষেত্রে কি হতে পারে? এবং যারা এর
সুবিধা ভোগ করছে তাদের কি হতে পারে।বলবেন কি???”
মিজুনার লিখেছেন, “বিচারপতি সিনহা, সামছদ্দিন
মানিক একেই সুতার মালা। সামছদ্দিন বলবে সিনহা পিস
কমিটির সদস্য ছিলেন আর সিনহা তাহা মিথ্যা প্রমানের
জন্য বিরুদিদের ফাঁসিতে জুলিয়ে দিবে। এটা
সামছদ্দিনদের আর সিনহাদের নীতি। কোথায় আবার
বিচার ব্যবস্থা?!
বিষয়: রাজনীতি
৮৭৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন