রাজনৈতিক মামলার অজুহাতে খুনিদেরকে খালাশ দেওয়ারআদেশ দিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়!!!!!!!!!
লিখেছেন লিখেছেন চেতনাবিলাস ২৪ নভেম্বর, ২০১৩, ০৯:৫৯:৫৪ রাত
দরিদ্র অসহায় মাও মেয়ে খুন হল প্রভাবশালী অসভ্যদের হাতে। তারাওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত। তাদেরকে বাঁচাতেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার যে কুট চাল শুরু করেছে তারই বিবিরণ নিম্ন রূপ।
মামলার নথি ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, দরিদ্র্যতার কারণে হাবিবুর রহমান নান্না তালুকদারের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ নেয় উপজেলার ডাকুয়া গ্রামের হতদরিদ্র এক সন্তানের জননী শাহিনুর বেগম। চার বছরের মেয়ে সেলিনাকে নিয়ে ওই বাড়িতেই থাকতেন শাহিনুর। তার দরিদ্রতার সুযোগ নিয়ে তাকে জোরপূর্বক অসামাজিক কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করে নান্না তালুকদারের মেয়ে লুপা তালুকদার। লুপার দুই ভাই ও স্বামী বাদল একাধিকবার শাহিনুরকে ধর্ষণও করে। এছাড়া তার ওপর চালানো হতো শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।
২০০৩ সালে ২৪ মে নিখোঁজ হয় গৃহপরিচারিকা শাহিনুর বেগম ও তার মেয়ে সেলিনা। নিখোঁজ হওয়ার সাতদিন পর ৩১ মে উপজেলার রামনাবাদ নদীর ডাঙ্গারখাল থেকে বস্তাবন্দী শাহিনুরের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার হয়। তবে মেয়ে সেলিনার লাশ উদ্ধার হয়নি আজও। এ ঘটনায় নয় জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৮/৯ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে পরদিন ১ জুন গলাচিপা থানায় হত্যা মামলা করেন শাহিনুরের মা নিলুফা বেগম।
একই বছরের ১৭ জুলাই ১১ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দায়ের করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবুল হোসেন। মা ও মেয়ে হত্যা মামলাটি পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল থেকে ২০১১ সালে বরিশাল দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।
মামলার বাদী নিলুফা বেগম জানান, ঘটনার দিন রাতে (২০০৩ সালে ২৪ মে) ডাকুয়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে লুপা, লুপার ভাই ও স্বামী এবং তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী শাহিনুর ও সেলিনাকে অস্ত্রের মুখে ট্রলারে তুলে নিয়ে যায়। ঘটনার সাতদিন পর শাহিনুরের ভাসমান লাশ উদ্ধার হয়। বাদীর ধারণা শাহিনুর আসামিদের এমন কোনো গোপন বিষয় জেনে ফেলেছে যা ফাঁস হলে তাদের ক্ষতি হতে পারে। তাই পরিকল্পিতভাবে শাহিনুর ও তার মেয়েকে হত্যা করেছে আসামিরা।
মামলার প্রধান আসামিসহ পাঁচ আসামির নাম প্রত্যাহারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের প্রেক্ষিতে মেয়ে ও নাতি হত্যার ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাদী নিলুফা বেগম।
তিনি বলেন, “পটুয়াখালীতে বিচার না পেয়ে বরিশালে এসেছি। এখান থেকেও বিচার বঞ্চিত হবো?” আসামিরা গত ১০ বছরে একাধিক বার উচ্চাদালত থেকে মামলাটি স্থগিত করে রাখে বলে জানান বাদী নিলুফা বেগম।
চলতি বছরের (২০১৩) ১০ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন অধিশাখা-১’র উপসচিব মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত ৪৪.০০.০০০০.০৫৫.০৫.০০১.২০১৩-১১২৯ নং স্মারকের এক নির্দেশে বলা হয়েছে “সরকার ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ৪৯৪ ধারার আওতায় পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা থানার মামলা নং- ১, তারিখ- ০১.০৬.০৩, ধারা- ৩৬৪/৩০২/২০১/৩৪ দণ্ডবিধির আসামি মোস্তাফিজুর রহমান লিটন, সোস্তাইনুর রহমান লিকন, হাকিম আলী, আলী হোসেন ও নাজনীন আক্তার লুপার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মামলার অপরাপর আসামিদের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষের প্রসিকিউশন যথানিয়মে চলবে।”
বরিশাল দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট লস্কর নূরুল হক সাংবাদিকদের জানান, মামলাটি কোনো রাজনৈতিক মামলা নয়। তবে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীদের এসব মামলায় জড়ানো হয়েছে। তাই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আসামিদের নাম প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন।
পিপি বলেন, “ফৌজদারি কার্যবিধির ৯৪ ধারায় সরকার চাইলে যেকোনো মামলা প্রত্যাহার করতে পারে। সে ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার তথা জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে প্রথম আদালতে আবেদন করবে। এই প্রক্রিয়াই পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক গলাচিপার মামলাটি রাজনৈতিক মামলা দেখিয়ে পাঁচ আসামির খালাস চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন।
পরবর্তী সময়ে সরকারের সেল মিটিংয়ে আবেদনটি পাস হওয়ায় মন্ত্রণালয় থেকে এ ধরনের সুপারিশ এসেছে। তবে এ প্রক্রিয়ায় পিপি হিসেবে তার কোনো হাত নেই বলে জানান লষ্কর নূরুল হক।
এদিকে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানান ব্লাস্ট কর্মকর্তা। ব্লাস্টের বরিশালের কো-অর্ডিনেটর মো. খলিলুর রহমান বলেন, “মামলা ধরন অনুযায়ী বিচার হওয়া উচিত। ১৯ জন স্বাক্ষীর মধ্যে ১৭ জন স্বাক্ষ্য দেয়ার পরেও আসামিরা রেহাই পেলে বাদী ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হবেন।”
মামলার প্রধান আসামি নাজনিন আক্তার লুপা তালুকদারের দাবি মামলাটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার তাকে এবং তার পরিবারকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসিয়েছে। এর কারণ হিসেবে লুপা তালুকদার বলেন, “২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসন থেকে বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রার্থী ছিলেন শাহজাহান খান। ওই নির্বাচনে তার পরিবারকে শাহজাহান খানের পক্ষে কাজ করতে বলেছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী। কিন্তু তারা আওয়ামী লীগের প্রাথী আ খ ম জাহাঙ্গীরের পক্ষে কাজ করেন এবং তিনি নির্বাচিত হন। এর জের ধরেই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তাদের মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে।”
লুপা তালুকদারের দাবি- তিনি ও তার পরিবার জোট সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন যা তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। তাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাদের নাম প্রত্যাহারের নির্দেশ এসেছে।
বিষয়: রাজনীতি
১০৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন