মিস্টার জাস্টিস চৌধুরী প্লিজ প্লিজ.
লিখেছেন লিখেছেন চেতনাবিলাস ৩১ মে, ২০১৩, ০৮:৩৮:২৭ সকাল
[/b
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত আওয়ামীলীগের পা চাটা বিচার পতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক গতকাল কাদের মোল্লার আপিল শুনানিতে যে কান্ড করেছেন তাই তুলে ধরেছে আজকের যুগান্তর পত্রিকা। সেখান থেকেই প্রদিবেদনটি কিপ করলাম।
[b]মিস্টার জাস্টিস চৌধুরী প্লিজ প্লিজ...
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে সদ্য নিয়োগ পাওয়া বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন বলেছেন, মিস্টার জাস্টিস চৌধুরী প্লিজ প্লিজ। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আপিলের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি তাকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে এ কথা বলেন। কাদের মোল্লার আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের বক্তব্যর বিরোধিতা করে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী মন্তব্য করা অব্যাহত রাখলে প্রধান বিচারপতি পরে গতকালের মতো আদালত মুলতবি ঘোষণা করেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার কবি মেহেরুন্নেসা হত্যাকা-ের অভিযোগ বিষয়ে আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়েছে এবং তিন নং অভিযোগ খন্দকার আবু তালেব হত্যার অভিযোগ বিষয়ে শুনানি শুরু হয়েছে। প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের বেঞ্চ শুনানি গ্রহণ করেন। গতকাল শুনানির সময় বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে বলেন, আপনি বলেছেন সাক্ষী একস্থানে বলেছেন তিনি দেখেছেন আরেক স্থানে বলেছেন তিনি শুনেছেন। সাক্ষী ঘটনা দেখার কথা কোথায় বলেছেন তা দেখান। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক তখন সাক্ষীর জবানবন্দী পড়ে শোনাতে শুরু করেন। সাক্ষী কাজী রোজী বলেছেন, ‘২৭ মার্চ বিকালে খবর পেলাম যে, মেহেরুন্নেসা ও তার দুই ভাই ও মাকে কাদের মোল্লা ও তার সহযোগী যারা ছিলেন তাদের অনেকে মাথায় সাদা অথবা লাল পট্টি বেঁধে সকাল ১১টায় মেহেরের বাসায় ঢুকে যায় বলে শুনেছি।’ আরেক জায়গায় তিনি বলেছেন, ‘কাদের মোল্লার নেতৃত্বে সেদিন ওরা মেহেরুনের বাসায় ঢুকেছিল। কিন্তু কাদের মোল্লা নিজে ওই বাসায় ঢুকেছিল কি-না তা বলতে পারব না।’ সাক্ষীর জবানবন্দী থেকে রেফারেন্স পেশ শেষ করে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এখানে তিনি ঘটনা এমনভাবে বর্ণনা করছেন মনে হয় যেন তিনি নিজে ঘটনা দেখেছেন। এসময় বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী বলেন, এখানে তিনি দেখেছেন তা কোথায় আছে? তিনি দেখেছেন একথা কি বলেছেন সাক্ষী? ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, হ্যা বলেছেন। এটা আমার সাবমিশন। আপনি এর সাথে একমত হতেও পারেন আবার নাও হতে পারেন সেটা আপনার এখতিয়ার। কিন্তু আমাকে আমার সাবমিশন রাখতে দেন। আমি একজন কাউন্সেল।
এসময় কিছুটা উত্তেজনা দেখা দেয়। প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরীকে থামার ইশারা দেন এবং ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, প্লিজ প্রসিড, প্লিজ প্রসিড মিস্টার রাজ্জাক। বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে লক্ষ্য করে বলেন, প্লিজ ডোন্ট মিস লিড দ্য কোর্ট। কোর্টকে মিস লিড করবেন না। দিস ইজ দ্য হাইয়েস্ট কোর্ট অব দি নেশন। কোর্টকে মিস লিড করবেন না। তিনি আবারো ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের কাছে জানতে চান সাক্ষী দেখার কথা বলেছেন তা কোথায় আছে দেখান। এসময় আবারো প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে তাকে থামার অনুরোধ করে বলেন, মিস্টার জাস্টিস চৌধুরী প্লিজ, প্লিজ। এটা ব্যারিস্টার রাজ্জাক সাহেবের সাবমিশন। এরপর তিনি ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে সামনে এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে আবারো বলেন, মিস্টার রাজ্জাক প্লিজ প্রসিড। এসময় ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরীর প্রশ্নের জবাব দেয়ার চেষ্টা করলে প্রধান বিচারপতি ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে বলেন, সিঙ্গেল জাস্টিসকে এড্রেস করে সাবমিশন রাখবেন না। কোর্টকে এড্রেস করে সাবমিশন রাখুন প্লিজ। প্লিজ প্রসিড, প্রসিড মিস্টার রাজ্জাক। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা তো শিখেছি কোর্টের কোন একজন জাজ কোন প্রশ্ন করলে সেটা কোর্টেরই কোশ্চেন হিসেবেই ধরে নেয়া হয়। সেজন্য আমি তার জবাব দেয়ার চেষ্টা করছি। এসময় বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী আবারো ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের উত্তরের বিরোধিতা করে মন্তব্য করা অব্যাহত রাখলে এবং তার প্রশ্নের জবাব চাওয়ায় প্রধান বিচারপতি তাকে উদ্দেশ করে বলেন, মিস্টার জাস্টিস চৌধুরী প্লিজ প্লিজ। কিন্তু তখনো তিনি ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের সাবমিশনের বিরোধিতা করে তার মত প্রকাশ করায় প্রধান বিচারপতি কোর্ট মুলতবি ঘোষণা করেন। তখন ঘড়ির কাটায় ১০টা ৫৫। সাধারণত সকাল ১১টায় কোর্ট মুলতবি হয়। বিতর্কের এক পর্যায়ে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও একবার দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন হাত নেড়ে।
আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক গতকাল যুক্তি পেশ করে বলেন, কবি মেহেরুন্নেসা হত্যার অভিযোগ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ তিনজন সাক্ষী হাজির করেছে। তিনজন সাক্ষী তিনরকম সাক্ষ্য দিয়েছেন। ২নং সাক্ষী শহীদুল হক বলেছেন, তিনি জনতার কাফেলা থেকে এবং পরিচিত ব্যক্তির কাছ থেকে শুনেছেন এ ঘটনা। ১০নং সাক্ষী আব্দুল কাইউম বলেছেন অবাঙালিরা কবি মেহেরুনকে হত্যা করেছে। অপরদিকে ৪নং সাক্ষী কাজী রোজী ট্রাইব্যুনালে এসে আব্দুল কাদের মোল্লাকে জড়িয়ে এ ঘটনায় সাক্ষ্য দিলেও তার নিজের লেখা বইয়ের তথ্যের সাথে ট্রাইব্যুনালে প্রদত্ত বক্তব্যের গরমিল রয়েছে। তাহলে কার কোন বক্তব্য আপনারা গ্রহণ করবেন? কাউকে কোন অভিযোগে সাজা দিতে হলে সকলের সাক্ষ্য পর্যালোচনা করে তাদের এভিডেন্স বিষয়ে একটাই উপসংহারে পৌঁছতে হবে। কিন্তু এখানে সবার সাক্ষ্য বিবেচনা করে একটা উপসংহারে পৌঁছানো সম্ভব নয়। তাই এ অভিযোগে তাকে সাজা দেয়ারও উপায় নেই।
বিষয়: বিবিধ
১২৯৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন