স্বাধীনতা দিবস ও কিছু স্বাধীনতা......
লিখেছেন লিখেছেন মাহমুদুল হাসান হিরক ২৬ মার্চ, ২০১৩, ০৯:৪৬:১৯ সকাল
আগুন ঝরা মার্চ । স্বাধীনতার মাস । ’৭১ এর মার্চের ২৬ তারিখ থেকে শুরু হওয়া এক যুদ্ধ । স্বাধীনতা যুদ্ধ । এই দিন থেকে শুরু করে দীর্ঘ নয় মাস প্রতিক্ষার পর আসে বহুল কাংখিত বিজয় । সৃষ্টি হয় বাংলাদেশের । অনেক প্রাণের বিনিময়ে । অনেক সম্ভ্রমের বিনিময়ে । বাঙ্গালীরা পেল স্বাধীনতা ।
প্রতি বছর এই মাসের এই দিনে ঘটা করে পালন করা হয় স্বাধীনতা দিবস, স্বাধীন হবার সংগ্রাম শুরুর দিন । বেলুন উড়িয়ে, মাইক বাজিয়ে, অমৃত বাণী (!) ছড়িয়ে, কাঙ্গালীভোজের মাধ্যমে এবং আরো আরও অনেক পন্থায় ।
তো, আমরা এখন স্বাধীন । স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষ । যেহেতু মানুষ হিসেবে স্বাধীন, তাই ইচ্ছা, মন, চাহিদা সবই স্বাধীন । আর যেহেতু ইচ্ছা-মন স্বাধীন, তাই আমরা তথাকথিত মুক্ত-মনা ও প্রগতিশীল । আমরা সাম্প্রদায়িক মনোভাবের ক্ষ্যাত মানসিকতা মনে স্থান দেই না ।
আমি স্বাধীন । স্বাধীন দেশের স্বাধীন ছাত্র । আমি স্বাধীনভাবে রাজনীতি করব । সরকারী দলের হলে ইচ্ছামত হল দখল করব, চাঁদা তুলব, হরতালের সময় দেশের অদক্ষ পুলিশ বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য অস্ত্র হাতে রাজপথে মহড়া দিব । প্রয়োজনে অস্ত্রগুলোর সুব্যবহার করব । এতে বিশ্বজীতের মত দু’একটা নিরিহ মানুষ মারা গেলেও আমার ইছু আসে যায় না ।
আমি বিরোধীদলের ছাত্ররাজনীতি করলে হরতালের সময় পুলিশের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে স্বাধীনভাবে প্রতিবাদ জানাব । প্রয়োজনে ককটেল ফাটাব, পিকেটিং করব । হরতালের আগের রাত থেকে গাড়ি ভাঙ্গবো-পুড়াবো । এতে গুটি কয়েক মানুষ মারা গেলে অথবা আহত হলে আমার কোন প্রবলেম নেই ।
আমি স্বাধীন । স্বাধীন দেশের স্বাধীন পুলিশ । স্বাধীনভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করি । কত লিমনের যে ঠ্যাং খোঁড়া করেছি আর কত মানুষ যে সরকারবিরোধীতার জন্য মেরেছি, আর ইয়ত্ত্বা নেই । আর এপর্যন্ত কত মানুষকে যে বিনা অপরাধে জেলে ঢুকিয়েছি তার সঠিক হিসাব আমার কাছে নেই । এছাড়া স্বাধীনভাবে আমরা বিভিন্ন উৎস থেকে টাকা উঠাই । দয়া করে একে চাঁদাবাজি বলবেন না । আমরা আইনের স্বাধীন ব্যবহারে বদ্ধ-পরিকর । তবে স্বাধীন দেশের মানুষ হওয়ার পরও একটা জায়গাতে আমরা পরাধীন । সেটা সরকারী দলের কাছে ।
আমি স্বাধীন । স্বাধীন দেশের স্বাধীন স্বাধীন নারী । আমরা স্বাধীনভাবে সম অধিকার আন্দলনে ব্যস্ত । আমরা পার্শ্ববর্তী দেশের সংস্কৃতির কঠিন ধারক ও বাহক । আমরা আমাদের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে ঐ দেশের ভাবধারা বজায় রাখতে চাই। আমাদের ভাষা হিসাবে আমরা হিন্দিকে মনোনীত করতে চাই। কুচ পরোয়া নেহি । আমাদের বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম হিন্দি সিরিয়াল । বিনিময়ে আমরা আমাদের যুবসমাজের একমাত্র বিনোদনের মাধ্যম । ছোট-খাটো আর টাইট ফিটিং কাপড় পরে রাস্তাতেই আমরা তাদের আনন্দ দিয়ে থাকি । প্রয়োজনে আবাসিক হোটেল ও লিটনের ফ্লাট তো আছেই । এখন তো পার্কেও আমরা অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি । এছাড়া পার্টটাইম হিসেবে বারে ও নাইটক্লাবেও আমার অবাধ যাতায়াত আছে । ও হ্যা, পরকিয়াতে কিন্তু এখন আমরা সিদ্ধহস্ত ।
আমি স্বাধীন । স্বাধীন দেশের স্বাধীন যুবক । আমরাই তথাকথিত ইয়ো-ইয়ো টাইপের পোলাপাইন । আমরা বাংলিশে কথা বলতেই বেশী পছন্দ করি । Now এটা একটা Style, Dude ! হিপ-হপ ও র্যাপ ছাড়া আমাদের চলেই না । ঘাড়ে গিটার, চোখে সানগ্লাস, গায়ে আলখাল্লা, ছেঁড়া-ফাটা প্যান্ট, হাতে ট্যাব ও মুখে সিগারেট নাহলে আম,আমাদের ভাবই আসে না । ও, পাছার তলে একটা বাইক কিন্তু চাই-ই চাই । রাতে মোবাইলে গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলে বাপের টাকার শ্রাদ্ধ করতে আমার বাধে না । বার, নাইট-ক্লাব ও পার্কের ঘুপচিতে আমার নিয়মিত যাতায়াত । গাঁজায় সুখটান না দিলে আত্মায় সুখ আসে না । মাঝে মাঝে ইয়াবা ও গার্লফ্রেন্ড নিয়ে লিটনের ফ্লাটে যাই পৌরষত্বের পরীক্ষা দিতে । তাছাড়া আমরাও সম-অধিকার আন্দোলনে যুক্ত । আমরা জাফর ইকবাল, শাহরিয়ার কবির, হুমায়ুন আজাদ, তসলিমা নাসরিনকে গুরু মানি । আমরা ডারউইনের সাথে গলা মিলিয়ে বলতে চাই, আমরা বাঁদরের প্রকৃত বংশধর । আমরা মুক্তমনা ।
আমি স্বাধীন । স্বাধীন দেশের স্বাধীন বুদ্ধিজীবী । আমরা বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করি । এদেশের গণতান্ত্রিক দলগুলোকে অশেষ ধন্যবাদ যে, এখনও তারা ডাক্তার দিয়ে আমাদের মস্তিস্ক পরীক্ষা করায় নাই । পরীক্ষা করালে গরুর বিষ্ঠা ছাড়া অধিক কিছু পাইতো কিনা আমাদের কিঞ্চিত সন্দেহ আছে । এদেশের যুবক-যুবতীদেরকে সেক্যুলার বানাতে এবং নষ্টামী শিক্ষা দিতে বড়ই আনন্দ পায় । আমরা আমাদের যুক্তির মাধ্যমে পরকিয়া টাইপ কার্যকলাপকে আশ্রয় দেই । আমরা আমাদের লেখনী শক্তির মাধ্যমে আমাদের প্রভুদের খুশী করতে সদা ব্যস্ত । বলতে পারেন, এই তথাকথিত প্রভুদের পা-চাটতে চাটতে জ্বিহবা ক্ষয় করে ফেলতেও আমরা এক পায়ে খাড়া । ক্ষমতা পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের প্রভুও ৫ বছর পর পর পরিবর্তিত হয় । এসময় আমরাও বর্ণচোরার মত আমাদের রঙ পরিবর্তন করি । আমি মুক্তিযুদ্ধকে ঢাল বানিয়ে যাহা খুশি তাহা করি । আমার সম্বন্ধে আসলে আলাদা করে বলার কিছু নাই । তবে ভয় পাই কিছু সেকেলে ধর্মান্ধ যুবক-যুবতীদেরকে ।
আমি স্বাধীন । স্বাধীন দেশের স্বাধীন মিডিয়া । হলুদ সাংবাদিকতা আমাদের মুল শক্তি । মিথ্যাই আমাদের হাতিয়ার । আমরা সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বানাতে এতটুকু পিছ-পা হই না । এদেশের রন্ধ্রে রন্ধে পশ্চিমা ও পার্শ্ববর্তী দেশের সংস্কৃতি ঢুকানোর মূল দাবীদার আমরাই । এজন্য আমরা গর্বিত ।
আমরা ? আমরা স্বাধীন দেশের বন্দি মানুষ । আমরা মুক্তিযোদ্ধা, যারা ময়দানে যুদ্ধ করেছি ।
কিছু পেয়েছি কিনা ?
ভাই, স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে বাঁচতে চেয়েছি । পেলাম কই ? হ্যা, কিছু তো পেয়েছি । বীরশ্রেষ্ঠ, বীরউত্তম সহ আরো কিছু উপাধি, কিছু নামমাত্র ভাতা আর একরাশ হতাশা ।
চাকুরীর কোটার কথা বলছেন ? উনুনে ঠিকমত আগুণ জ্বলে না, ছেলেমেয়েদের পড়াব কিভাবে ? ওদের তো আবেদন করার মত যোগ্যতাই হয় না ।
তাহলে যারা পায় তারা কারা ?
হাসালেন, ওগুলো তো যারা টাকা দিয়ে সার্টিফিকেট কিনেছে আর যারা রাজনীতিবীদ মুক্তিযোদ্ধা তাদের সন্তান । চিরুণী অভিযান চালালে হয়ত আমাদের মত দু-একটা পাবলিক পেলেও পেতে পারেন ।
এরা ? এরা সেই ছেলেমেয়ে যারা ইসলামকে বুঝে ও মানে । যারা সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার চেষ্টা করে । বিনিময়ে অকথ্য নির্যাতন সইতে হয় । দেখছেন না, কথা বলছে না... আমিই ওদের হয়ে কথা বলছি । কেন ? হা, হা, হা, এটাও বলতে হবে ? ওদের গলার টুটি চেপে ধরা হয়েছে যাতে সত্য প্রকাশ না পায় । এজন্য সম্ভবপর যা কিছু করা সম্ভব তাই এদের বিরুদ্ধে করা হচ্ছে । মাঝে মাঝে এদের কপালে জুটে বিলামুল্যে হাজতবাস ও সেই সাথে উত্তমরুপে উত্তম-মধ্যম । এদের অন্যায় ? দাঁড়ি আছে, টুপি আছে, ইসলামের কথা বলে সেক্যুলারিজমের স্বপ্ন ধুলিস্যাত করতে চায়, এরা ইসলাম প্রতিষ্ঠা করে দেশকে কাফির-নাস্তিক-মুনাফিকদের হাত থেকে বাঁচাতে চায় । এরাও পরাধীন ।
আমি ? আমি এই সকল সেকেলে ধর্মান্ধ ছেলেমেয়েদের বিবেক, ওদের হয়ে কথা বললাম ।
পরিশিষ্টঃ কি এক আজব দেশে বাস করছি ! “বাপ-স্বামী নিয়ে যুদ্ধ” ছিঃনেমা দেখতে দেখতে চোখ ব্যথা হয়ে গেল । আরেক দল আছে ইসলামী গণতন্ত্র নিয়ে... এবার একটু ক্ষ্যান্ত দেন । স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে হাজার হাজার যুল আর মোমবাতি কিনে টাকা নষ্ট না করে ওই টাকাটা ভালো কাজে লাগান ।
সাধারণ পাবলিকদের বলি, আপনারা আপনাদের মুল্যবান সময় এই কমেডিয়ানদের পিছনে না লাগিয়ে ইসলামের জন্য লাগান । সন্তানদেরকে পশ্চিমা সংস্কৃতির শিক্ষা না দিয়ে কোর’আন-হাদিস শিক্ষা দেন । ছেলে-মেয়েদেরকে বেলেল্লাপনার শিক্ষা না দিয়ে হিজাবের শিক্ষা দেন । কাজে দিবে, ইহকাল-পরকাল দু কালেই ।
আল্লাহ সকলকে তাদের কর্ম অনুযায়ী প্রতিফল দিন । আমীন ।
বিষয়: বিবিধ
১১৪৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন