দাম্পত্য ভাবনা- ২ (শুধুমাত্র ছেলেদের জন্য)
লিখেছেন লিখেছেন আল্লারাখা ১৫ মার্চ, ২০১৫, ১২:১৬:৫৫ দুপুর
বিয়ের ক্ষেত্রে বয়সের পার্থক্য কোন ফ্যাক্টর না। অন্তত ইসলামে এ বিষয়ে কোন বিধি নিষেধ নেই। কিন্তু বাস্তবে স্ত্রী বয়সে কিছু ছোট হলে দাম্পত্য ব্যবস্থাপনা অনেক সহজ হয়ে যায়। আপনি পরিবারের কর্তা, আল্লাহ নির্ধারিত কর্তা।যে কোন ক্ষেত্রেই জুনিয়রের উপর কর্তৃত্ব ফলানো যত সহজ, সিনিয়রের উপর ততটা সহজ নয়।
কথায় আছে কিছু কাটে ধারে কিছু কাটে ভারে। আপনার ধার যদি কিছু কমও থাকে, আপনি সিনিয়র হলে তা ‘ভার’ এর কাজ করে সে ঘাটতি কিছু পুষিয়ে দেবে। এখানে ‘ধার বলতে বোঝায় ব্যক্তিত্ব, মেধা, যোগ্যতা, তীক্ষ্ম উপলব্ধি ক্ষমতা, নেতৃত্বের ক্ষমতা ইত্যাদি। সেক্ষেত্রে ধার ও ভার দুটোই যদি কম হয়, তখন দাম্পত্য ব্যবস্থাপনাটা আর অত মসৃণ থাকেনা।
দাম্পত্য জীবনে চাই স্বতস্ফুর্ত ভালবাসা। জনা কথা, ভাললাগা আর ভালবাসা এক নয়। পুরুষের ভালবাসা আর নারীর ভালবাসায় তফাৎ আছে। পুরুষ ভালবাসে নারীর নারীত্বকে, নারীত্ব যত পূর্ণ হবে, ভালবাসা তত গভীর হবে। কিন্তু নারীর পক্ষ থেকে ভালবাসা হচ্ছে শ্রদ্ধামিশ্রিত ভাললাগা। প্রকৃতিগতভাগে প্রতিটি নারী তার হাসব্যান্ডকে সম্মানিত দেখতে চায়, এমন একজন যে হবে আশ্রয়স্থল, যার কাছে নিজেকে সমর্পন করা যায়, নির্ভর করা যায়। এই সম্মান যেমন যোগ্যতায় আসে, আবার বয়সও সম্মান নিয়ে আসে। অফিসে বসের চেয়ারে একজন সিনিয়রকে দেখলে তার অনেক নির্দেশনাই স্বাচ্ছন্দে পালন করা যায়, খুব বেশি বিচার বিশ্লেষণ না করে।কিন্তু বস যদি হয় একই র্যা ঙ্কের বা একই যোগ্যতার, কেমন যেন তার স্বাভাবিক নির্দেশনাও মাঝে মধ্যেই ত্রুটিপূর্ণ ও উদ্ভট মনে হয়। সম্মানিত কেউ ত্রুটিপূর্ণ সিদ্ধান্ত দিলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা যত সহজ, সমবয়স্ক বসের ত্রুটিপূর্ণ নির্দেশ সেক্ষেত্রে সহজে হজম হতে চায়না।
কিন্তু আপনি দাম্পত্য জীবনকে অফিসের সাথে তুলনা করলেন? … স্যরি, দাম্পত্য একটি সহযোগীতামূলক ভালবাসার সম্পর্কের ঠিকানা তাতে কোনই সন্দেহ নেই, কিন্তু সংসার যে পৃথিবীর জটিলতম ও কর্মবহুল একটি প্রতিষ্ঠান- তাতেও সন্দেহ নেই। নেতৃত্ব ছাড়া এই জটিল কর্মমুখর প্রতিষ্ঠান অচল হবে মুহূর্তেই। আমরা হাসব্যান্ড ওয়াইফ কেউ কারো কর্তা নই, হাতে হাত ধরে সংসার তরী এগিয়ে নিয়ে যাই- এ কথা ফেসবুকে কি সাহিত্যে খাটে, বাস্তবে হাতে হাত ধরে কেবল একজনের নেতৃত্বেই এগিয়ে যেতে হয়, সাথে থাকে আরেকজনের সহযোগীতা । আর নেতৃত্ব যেখানে, আদেশ-আনুগত্য সেখানে। বয়সের পার্থক্য এই নেতৃত্ব- আনুগত্যকে বেশ সহজ করে দেয়।
পরিবারে কর্তা ও কর্ত্রীর মধ্যে শ্রদ্ধামিশ্রিত ভালবাসা ও আনুগত্যের সম্পর্ক সন্তানদের মানসিকতা গঠনের জন্যও অতীব জরুরী। ওরা যখন মাকে দেখে পিতাকে শদ্ধা করতে, ওরাও পিতা-মাতাকে শ্রদ্ধা ও আনুগত্যের প্রাকটিস নিয়ে বেড়ে ওঠে। আর পিতা-মাতার সম্পর্ক যখন দরকষাকষির হয়, সন্তানরাও সেভাবেই বড় হয়ে। আজকাল অধিকাংশ ঘরের শিশুদের ব্যাপারে অভিভাবকদের অভিযোগ, ওরা কথা শোনেনা; আর এত যীদ- বাপরে বাপ।সুতরাং, শিশুদের এ আচরণের পেছনে পিতা-মাতার মধ্যে শ্রদ্ধাপূর্ণ কর্তা-কর্ত্রীর সম্পর্কের অভাব যে অনেকাংশে দায়ী, তা বলাই বাহুল্য।
রসূল স. বিভিন্ন বয়সী নারীকে বিয়ে করে কোন বয়সী নারীকে কিভাবে ডিল করতে হবে তার প্রাকটিকাল নমুনা দেখিয়ে গেছেন। হযরত আয়েশা রা. কে যেমন পুতুল খেলার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, তেমনি অত্যুচ্চ ব্যক্তিত্ব দিয়ে খাদিজা রা. এর মত সিনিয়র নারীর শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও আত্ম নিবেদন আদায় করে নিয়েছেন। আবার উম্মু সালামা রা. এর মত প্রখর মর্যাদাবোধসম্পন্ন নারীকে নিয়েও নিপুন দুরদর্শিতা ও বিশ্লেষণী ক্ষমতা প্রয়োগ করে দাম্পত্য পরিচালনা করেছেন।
আপনি সমবয়স্কা নারীকে নিয়ে সংসার করতে হলে যেভাবে ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় সজাগ রেখে হেকমত প্রয়োগ করে করে নিজের কর্তৃত্বের অবস্থান ঠিক রাখার চেষ্টা করতে হবে, বিপরীতে কিছুটা জুনিয়রকে বিয়ে করলে তুলনামূলক মসৃণ নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবেন। এ পরামর্শ সবার জন্য নয়, সমাজে এমন কিছু যোগ্য মানুষ আছে, যারা যে কারো স্বতস্ফুর্ত শ্রদ্ধা-ভালবাসা আদায় করে নিতে পারে, তাদের কথা ভিন্ন।
পুনশ্চঃ শুধুই ব্যক্তিগত ভাবনা, দ্বিমত থাকার সম্ভাবনাই বেশি।
দাম্পত্য ভাবনা-১
দাম্পত্য ভাবনা-৩
বিষয়: বিবিধ
১৮৬৪ বার পঠিত, ২৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মনের কথাগুলো সব যেন আপনিই লিখে পেললেন। কিভাবে যে আপনাকে ধন্যবাদ দিব। তবে নারীবাদীরা জানতে পারলে আপনার বারোটা বাজিয়ে চাড়বে। তবে কুকুরের আওয়াজের ভয়ে তো আর চাঁদের আলো চুপসে যায় না। লিখতে থাকুন। খুব ভালো লাগলো। সাখেই আছি। লিখতে থাকুন। জাযাকাল্লাহ খাইর
উৎসাহ পেয়ে উৎসাহিত হলাম।
এই কথাটা বেশ ভাল লাগল।
আমি একমত। দ্বিমত তারাই করবে যারা অঞ্চল প্রভাবে প্রভাবান্বিত।
ছেলেদের জন্য!!!!!!! লিখতে গেলেন কেন বুঝতে পারলাম না। দুজনেরই ঐকমত থাকার কথা! যুক্তির দুয়ারে আমারা দাড়ায় কিন্তু প্রবেশ করিনা। প্রবেশ করতে পারলেই শান্তির পরশ খোঁজ পাওয়া যাবে।
আপাতত একটি ছেলে নতুন বিবাহিত জীবনে কিভাবে স্ত্রীকে ডিল করবে সে বিষয়ে কিছু টিপস দেয়ার চেষ্টা করেছি।
আল্লাহর বানী যাতে নবী - রাসূলরা সঠিক , নির্ঝন্ঝাটভাবে প্রচার করতে পারেন সেজন্য আল্লাহ তায়ালা তাদের সংসারের তথা জীবনের এই চরম ঝামেলাতম দিকটি থেকে মুক্ত রেখেছিলেন । আমরা নবী রাসূলদের আল্লাহর বানী প্রচার করার সময় বিধর্মীদের বিরোধীতার কথাই শুনেছি ।
দৈনন্দিন পারিবারিক ঝগড়া ঝাটির কথা কি শুনেছি ?
সাধারণ মানুষ এতটা সৌভাগ্যবান হয় কি ?
০১. রসূল স. একসাথে ৮/৯ জন স্ত্রী নিয়ে ঘর করেছেন।
০২. স্ত্রী দের মধ্যে সতিন-সূলভ দ্বন্ধ ছিল এবং রসূল স. এর স্ত্রীরা নিজ মুখে সে দ্বন্দ্বের বর্ণণা দিয়েছেন- হাদিসের পাতায় পাতায় সে বর্ণণা পাওয়া যায়।
০৩. স্ত্রীদের সাথে পারিবারিক মনোমালিণ্যের এক পর্যায়ে রসূল স. এক মাস তাদের থেকে দূরে থেকেছেন মসজিদে নববীতে পৃথক একটি মাচান বানিয়ে।
০৪. স্ত্রীদের সাথে পারিবারিক মনোমালিন্যে বিরক্ত হয়ে কখোনো কখোনো বলেতেন, তোমরা আমার জন্য হযরত ইউসুফ আ. এর নারীদের মত।
০৫. স্ত্রীদের পারস্পারিক সতীন সুলভ অন্তর্দন্দ্বের সমাধান দিতে কখোনো কখোনো খোদ আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে ওহী নাজিল হয়েছিল।
এরপরও কিভাবে বলা সম্ভব রসূল স. এর জীবন থেকে উম্মতগণ নিজ পারিবারিক সমস্যাবলীর সামধান নিতে অক্ষম?
'' তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম '' এই হাদিসটি যত জোরালোভাবে এসেছে আপনার উদ্বৃত করা ২,৩,৪, নং হাদিসগুলো সেরকম জোরালোভাবে শোনা যায় না ।
৫ নং : ক্বুরআনের কোন সূরার কোন আয়াতে এরকম বলা হয়েছে যদি জানাতেন তাহলে খুবই ভাল লাগতো এবং তা দেখে নিতাম ।
২. ওই হাদিসগুলো আমরা চর্চা করলেই জোরালোভাবে শোনা যাবে
৩. রসূল স. বিশেষ ব্যক্তি ছিলেন বলেই তো ৮/৯ জন স্ত্রীর সাথে সমান আচরণ ও ব্যবহার করে জীবন যাপন করতে পেরেছেন। উম্মতের জন্য তো এক সাথে এত স্ত্রী রাখার অনুমতিই নেই :( । সর্বোচ্চ চারজন পর্যন্ত অনুমতি, উৎসাহ নয়, দেয়া হয়েছে এবং ন্যায় বিচার না করতে পারলে একজন স্ত্রীতেই সীমাবদ্ধ থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রসূল স. এর এই ৮/৯ জন স্ত্রী পরিচালনা থেকে প্রতিটি উম্মত এক বা একাধিক স্ত্রী পরিচালনার প্রাকটিকাল গাইডলাইন পেতে পারেন।
বর্তমানে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে সব বিষয়ে চরম দ্বন্দ্ব হয় সেটা কি এরকম ?
স্বামীর মা তথা শাশুড়ীর সাথে যে দ্বন্দ্ব চালিয়ে যায় স্ত্রী বা সময়ে অসময়ে বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যাওয়া , খাওয়ানো এবং বিভিন্ন গিফট কিনে দেওয়ার যে প্রেসারে থাকতে হয় স্বামীর - রাসূলরা কি এধরনের প্রেসারের ছিলেন ?
এমন প্রেসারে কি উনাদেরকে পড়তে হয়েছে যে মায়ের সাথে বউয়ের দ্বন্দ্ব মেটাতে গিয়ে বা স্ত্রীদের আবদার পূরণ করতে গিয়ে আল্লাহর বানী প্রচার করা উনাদের জন্য কঠিন হয়ে গিয়েছিল ?
স্ত্রীদের আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রত্যাশার জবাব দিতেই তো এক পর্যায়ে রসূল স.কে আলটিমেটাম পর্যন্ত দিতে হয়েছিল। স্ত্রীদের ডেকে বলছিলেন, যে চাও চাহিদামত স্বর্ণালঙ্কার দিয়ে বিদায় করে দেই, যে চাও এভাবেই আমার সাথে থাকবে,- চিন্তা করে দেখ।
বিয়ের আগে বেশি পড়া নাকি ঠিক না এগুলো?
নাকি বিয়ের পড়েই পড়বো?
নাকি এখন পড়বো?
এসেই যখন পড়েছেন, পড়েই ফেলুন, টুডে অর টুমোরো, কাজে লেগেও যেতে পারে...
ভাইয়া সব দোষ ঐ হারিকেনটার।
ওটাকে হাতুড়ি পেটা করতে হবে।
যাক ঠিকাছে ভাইয়া ।
দুঃখিত আর কোনদিন বলবোনা।
শুকরিয়া অনেক অনেক।
জাজাকাল্লাহু খাইরান।
মন্তব্য করতে লগইন করুন