দাম্পত্য ভাবনা- শুধুমাত্র ছেলেদের জন্য
লিখেছেন লিখেছেন আল্লারাখা ১২ মার্চ, ২০১৫, ১২:৪৩:১০ দুপুর
পাত্রী দর্শন সমাপ্ত পূর্বক দাম্পত্য জীবনের সূচনা- তাও তিন বছর ছুঁই ছুঁই। এখন দাম্পত্য বিষয়ক কিছু আত্মদর্শন নিশ্চয় খুব বেশি অকালপক্ক কর্ম হবেনা!
বিবাহেচ্ছুক কি নব বিবাহিত ব্যক্তিগণ কিছু খোরাক পেলেও পেতে পারেন...।
দাম্পত্য জীবনের কথাবার্তায় যতদূর সম্ভব খোলামেলা থাকাই ভাল। স্ত্রী কর্তৃক জিজ্ঞাসিত হয়েছিলাম- 'কখোনো কোন মেয়েকে ভাল লেগেছিল কিনা।' আমার ধারণা বিবাহিত জীবনের সূচনাতে পারস্পরিক পরিচয় পর্বের সময়গুলোতে এটি একটি কমন আলোচনা। বউয়ের মুখে এমন প্রশ্ন শুনে কান গরম হয়ে যেতে পারে, কেউ রাগ করতে পারেন, আবার কেউ উত্তর খুঁজে হয়রান হয়ে যেতে পারেন- সত্য অক্ষুণ্ন রেখে কিভাবে যুৎসই জবাব দেয়া যায় তা ভেবে।
আমার উত্তরটি কারো কারো পছন্দ হতেও পারে। বলেছি- "জীবনে অসংখ্য নারীকে ভাল লেগেছে। সেই ক্লাস নাইনে স্কুলে হেঁটে যাওয়ার সময় যখন রিক্সায় চড়া একটি মেয়ের দিকে তাকিয়ে প্রথম খেয়াল করলাম আমার কেমন যেন ভাল লাগলো- তখন মাথায় চিন্তার ঝড় উঠলো। হাঁটতে চলতে কত শত মেয়েকেই তো দেখেছি- ভাল লাগার এই অনুভুতি তো আগে কখোনো হয়নি! তাহলে এরই নাম কি সাবালকত্ব!"
"হ্যা, সেই সাবালক হওয়ার সাক্ষী রিক্সায় দেখা মেয়েটির পর থেকে রাস্তাঘাটে, বাসে, ক্লাসে, বেড়াতে গিয়ে, আত্মীয় স্বজনের মধ্যে- বহু মেয়েকে ভাল লেগেছে। বহু জনকে স্ত্রী হিসেবে কল্পনা করতে ইচ্ছে করেছে। সংখ্যায় তা অসংখ্য। তবে প্রশ্রয় দেইনি কখোনো। আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়েছি গুনাহর হাত থেকে বেঁচে থাকার জন্য। আর সাধ্যমত নিজেকে সংবরণ করার পরও যদি কখোনো কাউকে ভাল লেগে যায়- তা দোষের নয়। দোষ হচ্ছে তা মনে মনে চর্চা করা কিংবা গোপনে খাতির জমানো।"
সে অবাক হয়েছিল, আর জিজ্ঞেস করেছিল- 'সত্যি'!!
বলেছি, হ্যা, এটাই সত্যি, এবং যথাসম্ভব প্রতিটি পুরুষের ক্ষেত্রে এটাই সত্য। আর এই ক্ষেত্রে বিয়েটা হচ্ছে বড় একটা ঢাল।
না, এই জবাবের পর আর কাখোনো এ জাতীয় প্রশ্ন শুনতে হয়নি।
০২. দুই পরিবার
দাম্পত্য জীবনের সূচনা হতে না হতেই শ্বশুর বাড়ির বিভিন্ন জনের কার কোন জিনিসটি আপনার কাছে ভাল লেগেছে তার উষ্ণ প্রশংসা করে ফেলুন স্ত্রীর কাছে। এটা ভ্যাকসিনের কাজ করবে, রোগ সৃষ্টির পূর্বেই রোগ প্রতিরোধ। দাম্পত্য জীবনের প্রথম মানসিক কষ্টের সূচনা হতে পারে দুই পরিবার বিষয়ে। সুতরাং শুরুতেই বিড়াল খাঁচায় পুরে ফেলুন । স্ত্রী কিংবা তার পরিবারের কেউ আপনার পরিবারের কারো বিষয়ে বিরক্তি কি আপত্তি জানানোর চিন্তা করার আগেই যদি জানতে পারে আপনি তার পরিবারের বিভিন্নজনের বিভিন্ন গুণে মুগ্ধ... তারা আর আপনার পরিবারের কারো আচরণ নিয়ে ভাবনার চিন্তাই করবেনা, বরং তাদের চোখেও কেন যেন আপনার পরিবারের সবাই একটু একটু ভাল লাগতে শুরু করবে।
আর হ্যা, থেমে যাবেননা, সুযোগ পেলেই স্ত্রীর আত্মীয় স্বজনদের প্রতি প্রশংসা কর্মটি অব্যহত রাখতে হবে.. আজীবন। লিখতে লিখতে 'কন্ট্রোল এস' দেয়ার মত... আল্লাহর শুকরিয়া, এই সাবজেক্টে আমাকে এখন পর্যন্ত কোন পরীক্ষাই দিতে হয়নি। আমিতে বিড়াল খাঁচায় পুরেছি, আর সে বিড়াল ঘর থকেই বের করে দিয়েছে।
০৩. পরামর্শ নিন, কিন্তু নেতৃত্ব ছেড়ে দেবেননা।
হ্যা, উদারভাবে পরামর্শ নিন। বহু ক্রিটিকাল সময়ে নারীরা ঠাণ্ডা মাথায় এত চমৎকার পরামর্শ দিতে সক্ষম যা আপনার সঙ্কটকে পানি করে দেবে। রসূল স. জীবনের অন্যতম হতবিহ্বল মুহূর্তে স্ত্রী হযরত উম্মু সালামার পরামর্শ নিয়ে ভীষণভাবে লাভবান হয়েছিলেন। হদায়বিয়ার সন্ধীর পর রসূলের নির্দেশ পেয়েও সাহাবীরা যখন একযোগে তা পালন করলেননা, স্ত্রীর পরামর্শে চিন্তিত রসূল স. এমন এক দাওয়াই দিলেন- মুহূর্তে সব ঠিক হয়ে গেল।
তবে হ্যা, পরিবারের নেতৃত্ব পুরুষের জন্য। এক্সেলের কাজ ওয়ার্ড দিয়ে কিছু করা যায়। কিন্তু বেশি করতে গেলে সব ওলটপালট হয়ে যেতে পারে। নারীদেরকে আল্রাহ তায়ালা নেতৃত্বের কোয়ালিটিই দেননি। দিয়েছেন সেক্রেটারী তথা উজিরের কোয়ালিটি। সুতরাং নেতৃত্ব নিজের কাধে নিন। সে আপনাকে পাশ কাটিয়ে নেতৃত্ব নিতে চাইলে তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপে ঝামেলার আশংকা থাকলে পরে ধীরে সুস্থ্যে শক্তভাবে জানিয়ে দিন- এটা তার কাজ না। সে পারিবারিক সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার রাখেনা, পরামর্শ দিতে পারে, প্রস্তাব দিতে পারে, যুক্তি দিতে পারে, সিদ্ধান্ত দিতে পারেনা। আল্লাহ তায়ালা এভাবেই দায়িত্ব বণ্টন করে দিয়েছেন।
ঝামেলার আশংকায় যদি চুপ থাকেন, ভবিষ্যতে আরো বিপদে পড়বেন। নেতৃত্ব চর্চা করার মাঝপথে আপনি হস্তক্ষেপ করতে গেলে সঙ্কট আরো গুরুতর হবে। সুতরাং শুরুতেই বুঝিয়ে দিন। মনে রাখবেন- যে পরিবারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকর্তা পুরুষকে পাশ কাটিয়ে নারী- সেই পরিবারে ঝামেলা অনিবার্য- টুডে অর টুমোরো।
তবে ছোট ছোট বিভিন্ন বিষয়ে আপনি তাকে নেতৃত্ব ডেলিগেট করে দিতে পারেন, সেখানে আবার তার সিদ্ধান্ত গ্রহণে নাক গলাবেননা। সে ভুল সিন্ধান্ত নিলেও কঠোর সমালোচনা না করে পর্যালোচনার আকারে বিশ্লেষণ করুন। কাচাবাজার, সপিং, রান্না, কারো সাথে কোন বিষয় ডিল করা, সন্তানের ছোটখাট কোন বিষয় ইত্যাদি বিষয়ে স্ত্রীকে পাওয়ার ডেলিগেট করে দিতে পারেন।
০৪. অপছন্দনীয় বিষয়গুলোতে পর্যালোচনা করে রিএক্যাক্ট করুনঃ
আপনার স্ত্রীর কোন কোন কাজ আপনার ভাল লাগবেনা। সেই বিষয়গুলো টাচ করার আগে ভাবুন বিষয়গুলো হালাল হারামের সাথে সম্পর্কিত কিনা, আর্থিক কিংবা শারিরিক লাভ ক্ষতির সাথে সম্পর্কিত কিনা। রুচী ও সৌজন্য কি নৈতিকতার সাথে সম্পর্কিত কিনা।
তার ঘুম, মশারী টানানো, হাঁটার স্টাইল, হাসি কিংবা কথা বলার স্পিড ও স্টাইল, রং পছন্দ, খাবার পছন্দ, ডিজাইন পছন্দ- ইত্যাদি বহু বিষয় আপনার সাথে পুরোপুরি অমিল। খেয়াল করে দেখুন উপরের বিষয়গুলোর সাথে এগুলোর কোনটি সম্পর্কিত কিনা। যদি হালাল হারাম, লাভ ক্ষতি, রুচি সৌজন্য কি নৈতিকতার সাথে সম্পর্কিত না হয়, মেনে নিন। ভীষণ অপছন্দনীয় হলেও মেনে নিন। খুব বেশি হলে বলুন- এই বিষয়টা এ রকম হলে আরেকটু ভাল হত।
তবে যদি সম্পর্কিত হয়... সংশোধনের প্রজেক্ট হাতে নিন। অর্থাৎ কখন কিভাবে বললে ভাল হয়, কতদিন ধরে বললে ভাল হয় ইত্যাদি চিন্তা ভাবনা করে কাজ শুরু করে দিন, দেরী করবেননা। আর যদি সরাসরি হালাল হারাম, জায়েজ নাজায়েজ এর বিষয় হয়, সত্বর সরব হওয়াই ভাল। তাকে জানিয়ে দেয়াও ভাল যে এ বিষয়ে আপনি ছাড় দিতে রাজি নন। আদর করে কি ধৈর্য্যের মডেল হয়ে ছাড় দিয়েছেন তো ধরা খেয়েছেন। আল্লাহ ও তার রসূলের নিদের্শনার বাহিরে তাকে চলতে দিলে অকস্মাৎ এমন এক বিপর্যয় সামনে দেখবেন, তখন আর পিছনে ফেরার পথ থাকবেনা।
অবশ্য, একশন নেয়ার আগে নিজের মধ্যে এ জাতীয় কিছু আছে কিনা একবার রিভিউ করে নিন। শরীয়াহ বিষয়ে আপনি বেশ সরব, তবে ফজর নামাজ কোনরকম সূর্য ওঠার আগে দুটো টাক দিয়ে সম্পাদন করেন, কিংবা স্টুডেন্ট লাইফের ছাত্রী ক্লাসমেটদের সাথে ফোনালাপ কি ফেসবুক চ্যাটিং আপনার কাছে স্বাভাবিক বিষয়- আপনার সংশোধন প্রজেক্ট কোন কাজে আসবেনা।
০৫. পরিবারের সর্বক্ষেত্রে একত্ব প্রতিষ্ঠা করুন
কিছু কিছু বিষয়ে আপনার পরিবারের ঐতিহ্য এক রকম, স্ত্রীর পরিবারের ঐতিহ্য অন্যরকম। সে একভাবে দেখে বড় হয়েছে, আপনি অন্যভাবে বড় হয়েছেন। যেমন, বিয়ের অনুষ্ঠান, জন্মদিন, মুরব্বীদের সাথে সম্পর্ক, ঈদ ও অন্যান্য উৎসব ইত্যাদিতে দুইজনের দুই মনোভাব, দুই ধরণের আকাঙ্খা।
খুব সহজ সমাধান হচ্ছে, দ'জনে একটি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছান, পরিবার কি ঐতিহ্যের যত শীর্ষ পর্যায়ের বিষয়ই হোক, আল্লাহর নির্দেশের বিরুদ্ধে গেলে মানা হবেনা। আর যদি বিষয়টি শরীয়াহ লঙ্ঘন না করে, উভয়ে উভয়ের বিষয়গুলো গ্রহণ করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবো।
... দাম্পত্য জীবনটা অনেক সহজ হয়ে যাবে যদি এমন মানদণ্ড ঠিক করতে পারেন। নতুবা ঘাটে ঘাটে টক্কর লাগবে। সে চাইবে তার শৈশবের দেখা কিংবা স্বপ্নের মত করে সাজাতে, আপনি চাইবেন আপনার মত করে বাস্তবায়ন করতে। এর সাথে যখন উভয় পরিবার জড়িয়ে পড়বে- সে এক বিশাল কারবার হয়ে দাঁড়াবে।
তার বাবা মা সন্তানের সাথে ফ্রেন্ডলি, আপনার বাবা-মা একটু হ্রাসভারী। বিয়েতে অমুকের সাথে কথা বলা, দাঁড়ানো, সালাম দেয়া, অমুক জিনিস দেয়া নেয়া করা, আগে করা পরে করা, এভাবে করা ওভাবে করা, সন্তান হলে কি করা না করা, অসুস্থ্য হলে কি করা- ইত্যাদি বহু বিষয়, বিষয়ের অভাব নেই।
মানদণ্ড ঠিক করুন আল্লাহ ও তার রসূল (স)। যদি আল্লাহ ও রসুলের বিরুদ্ধে যায়- দুজনে একমত হোন তা করা যাবেনা। তা যদি আপনার পরিবারের সাথে সম্পৃক্ত হয়, ঠেকানোর দাযিত্ব আপনি নিন বা বুঝানোর দায়িত্ব, তার পরিবারের হলে বুঝানোর দায়িত্ব সে নেবে।
আর যদি শরীয়া লংঘণের বিষয় না হয়, মানিয়ে নেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করুন, জোড় করবেননা কারন সে বাধ্য নয়।
এটারই নাম একত্ব বা তাওহীদ। সর্বক্ষেত্রে একটি মাত্র মানদণ্ড। নতুবা দেখবেন প্রতিটা কাজে অসংখ্য খোদা হাজির হবে- তাদের দাসত্ব করে দিশা পাবেননা। আপনার পরিবারের রেওয়াজ এক খোদা, তার পরিবারের রেওয়াজ আরেক খোদা, আপনার এলাকার ঐতিহ্য এক খোদা, তার পরিবারের ঐতিহ্য অন্য খোদা, আপনার রুচি বা আকাঙ্খা, তার রুচি ও প্রত্যাশা- প্রত্যেকটা আলাদা আলাদা খোদা হিসেবে আবির্ভুত হবে, একেক খোদাকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে জান কোরবান হয়ে যাবার যোগাড় হবে, আর মানিব্যাগ হবে চিড়ে চ্যাপ্টা।
তবে স্ত্রী যদি সব জায়গায় আল্রাহ খোদাকে বিবেচনা করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে, আল্লাহ ও তার রসূলের চেয়ে ঐতিহ্য রেওয়াজ ইচ্ছা আধুনিকতা ইত্যাদিকে কখোনো কখোনো প্রাধান্য দিতে চায়- খুব শক্তভাবে স্পষ্টভাষায় জানিয়ে দিন- 'স্যরি', তোমার যে কোন বিষয় আমি এই মানদণ্ডে বিবেচনা করবো, তাতে তোমার খুশি অখুশির চার পয়সার দাম দিতে আমি প্রস্তুত নই। আর আমার কোন বিষয়ে যদি তুমি শরীয়াহ দ্বারা প্রমাণ দেখাতে পার, আত্মসমর্পন করার জন্য প্রস্তুত।
এভাবে দাম্পত্য জীবনকে মানদণ্ডের লাইনে আনতে পারলে জীবন অনেক সহজ হয়ে যাবে, নতুবা অসংখ্য জটিলতার জন্য প্রস্তুত হোন, যার অনেক কিছু আপনি মানতেও পারবেননা, খণ্ডাতেও পারবেননা।
...... আপাতত দাম্পত্য ভাবনা এতটুকুই। আরো কিছু ছোটখাট বিষয় আছে যা আরেক পর্বে আলোচনার চেষ্টা করা হবে। অনেকের দ্বিমত থাকতে পারে, দ্বিমত থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে বড় ধরণের ভুল ধরা পড়লে মন্তব্যে প্রকাশ করা যেতে পারে।
দাম্পত্য ভাবনা - ২
বিষয়: বিবিধ
১৫৯৫ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
'আল্লারাখা'নাম- যেহেতু শরীয়া লঙ্ঘন করেনা- মেনেই নিন না হয়
নজরুলের কোন সাহিত্যে যেন আছে, আবুল আসাদের সাইমুম সিরিজেও আছে- তাই মেরে দিলুম।
নোটেড
এইবার আর ফসকাবে না...ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ না চাইলে আমি কি করবো!....
মন্তব্য করতে লগইন করুন