প্রথম আলোর আজকের শিরোনাম "বিশ্বজুড়ে বৈষম্যের শিকার নাস্তিকরা: জাতিসংঘ "

লিখেছেন লিখেছেন শিকদার ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১০:৫২:১৯ রাত

যে পত্রিকা প্রকাশ্যে এই ধরনের শিরোনাম করতে পারে তাদেরকে কি বলা যায়???? বিবেচনা আপনার

নাস্তিক, মানবতাবাদী ও মুক্তচিন্তার মানুষেরা বিশ্বজুড়ে নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এসব মানুষের স্বাধীন মতপ্রকাশকে বিশ্বের অনেক দেশে শাস্তিযোগ্য অপরাধ ও নিন্দনীয় বিবেচনা করায় এবং কোনো কোনো দেশে নাস্তিকতাকে মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করার ফলে এসব বৈষম্য ক্রমে বেড়ে চলেছে। রয়টার্স জানায়, গতকাল সোমবার জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ২২তম সভায় উপস্থাপিত একটি প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক পরিষদের তৈরি প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বিশ্বের বেশ কিছু দেশে ব্যক্তির ধর্মহীনতা বেআইনি ও দণ্ডনীয় অপরাধ। এসব দেশে ব্যক্তিকে কোনো একটি ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা হয়। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘বিশ্বজুড়ে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নাস্তিক, মানবতাবাদী ও ধর্মহীনদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বৈষম্য চলছে।’

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক পরিষদের আনুষ্ঠানিক নাম আন্তর্জাতিক মানবতাবাদী ও নৈতিক সংঘ (আইএইচইইউ)। বিশ্বের ৪৫টি দেশের প্রায় ১২০টি সংগঠন এ সংঘের সদস্য হিসেবে কাজ করছে।

আইএইচইইউ জানায়, আফগানিস্তান, ইরান, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, মৌরিতানিয়া, সুদান ও সৌদি আরবে ধর্মহীনতা ও মুক্তচিন্তা মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ। সংঘটি বলছে, এসব আইন পরিষ্কারভাবে জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদের পরিপন্থী।

ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অন্য অনেক দেশের আইনি কাঠামোতে ‘নাস্তিকতা, স্বাধীন মতপ্রকাশ ও ধর্মহীন মতবাদের প্রচারকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়’, নয়তো মুক্তচিন্তার অধিকারীদের কাঠামোগত বৈষম্যের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়।

জাতিসংঘ যেন ধর্মের সব ধরনের অবমাননা নিষিদ্ধ করে, সে জন্য সম্প্রতি কয়েকটি মুসলিম-প্রধান দেশ জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব এনেছে। মুসলিম-প্রধান দেশগুলো বলছে, ‘ইসলামভীতির’ অজুহাতে ধর্মের অবমাননা চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, জাতিসংঘে এসব দেশ যে প্রস্তাব এনেছে, তার জবাব হিসেবে মানবাধিকার পরিষদ এ প্রতিবেদন পেশ করেছে।

পাকিস্তান, মৌরিতানিয়া ও মালদ্বীপে ইসলাম ধর্মের অবমাননা করলে সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে মৃত্যুদণ্ড। কোনো নাস্তিক যদি তাঁর বিশ্বাসের কথা জনসম্মুখে প্রকাশ করে, তবে এসব দেশে সেটিকেও ধর্মের অবমাননা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অথচ এ দেশ তিনটি মানবাধিকার পরিষদের সদস্য।

মানবাধিকার পরিষদের সভায় তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেত ডাবোতৌলু জানান, বিশ্বজুড়ে ইসলামভীতি বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা মুসলমান ও অন্য ধর্মবিশ্বাসীদের প্রতি যেকোনো উসকানিমূলক বক্তব্য ও বৈষম্যের তীব্র বিরোধী।’

ওআইসির তত্পরতা

এ মাসের শুরুতে ইসলামি সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, ধর্মের অবমাননাকে যাতে সব দেশে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, সে জন্য ৫৭টি রাষ্ট্রের সংগঠন ওআইসি পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে দেনদরবার করবে।

গত নভেম্বরে ২১ রাষ্ট্রের জোট আরব লীগ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক সভায় প্রস্তাব দেয়, এমন একটি আন্তর্জাতিক নিয়ম তৈরি করা হোক যাতে ‘ধর্মীয় বিশ্বাস ও প্রতীকের পবিত্রতা’ রক্ষা করা হয়।

তবে আইএইচইইউ ও বিভিন্ন বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা বলছে, মুসলিম-প্রধান দেশের সরকারগুলো নাস্তিক, ভিন্ন ধর্মানুসারী ও মুক্তচিন্তার মানুষকে দমন করতে ‘ধর্মের অবমাননা’ পরিভাষাটিকে ব্যবহার করছে।

আইএইচইইউ তার প্রতিবেদনে বলছে, এসব মুসলিম-প্রধান দেশের সরকারগুলো ‘ধর্ম বিষয়ে সংশয়ী মানুষদের ও ভিন্নমতাবলম্বীদের নাস্তিক বিবেচনা করে দণ্ডিত করছে।’

বাংলাদেশ, বাহরাইন, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, কুয়েত, সৌদি আরব, তিউনিশিয়া ও তুরস্কের মতো ইসলামিক দেশগুলো ইতিমধ্যে ফেসবুক ও টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ধর্ম বিষয়ে ব্যক্তিগত মতপ্রকাশকে ‘ধর্মের অবমাননা’ বিবেচনা করে ওইসব ব্যক্তিকে সাজা দিচ্ছে।

বিষয়: বিবিধ

৩১৬২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File