"কাদের সিদ্দিকীর বঙ্গবীর উপাধি কেড়ে নেয়ার হুমকি" এ আমি কোন দেশে বাস করি????
লিখেছেন লিখেছেন শিকদার ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৭:১৫:২৩ সকাল
শেষ পর্যন্ত এই কথাও শুনতে হল!!! এই কথাগুলো বলার পরও সরকার কোন প্রতিবাদ করেনি। কেন করবে কাদের সিদ্দিকী তো এখন তাদের দলের নয়। সরকার না থাকুক ইনশাল্লাহ্ সাধারন মানুষ, সাধারন মুসলমান এবং আল্লাহ তা'আলা তার সাথে আছেন।
"রাজধানীর শাহবাগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিক বাম দলগুলোর উদ্যোগে আয়োজিত চলমান শোডাউন থেকে গতকাল বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর ‘বঙ্গবীর’ উপাধি কেড়ে নেয়ার হুমকি দেয়া হয়। প্রখ্যাত কলামিস্ট ও বাম চিন্তক বদরুদ্দীন উমরকে আমার দেশ পত্রিকায় আর কলাম না লিখতে ‘বিশেষ সর্তক বার্তা’ দেয়া হয়। শাহবাগের শোডাউনস্থলে নির্মিত অস্থায়ী মঞ্চ থেকে গতকাল ছাত্রলীগ ও বিভিন্ন বাম দলের ছাত্রসংগঠনের নেতারা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের চেয়ারম্যান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে ‘যুদ্ধাপরাধীদের দোসর’ অ্যাখ্যায়িত করে তার ‘বঙ্গবীর’ উপাধি কেড়ে নিতে সরকারের কাছে দাবি জানান। কাদের সিদ্দিকীর লেখা প্রকাশ না করতে আওয়ামীপন্থী পত্রিকার প্রতি তারা আহ্বান জানান। ইসলামী দলের কোনো পোস্টার আমার দেশ পত্রিকায় না ছাপানোর সতর্কতা জানিয়ে পত্রিকাটির সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের উদ্দেশে বক্তারা বলেন, ‘এসবের পরিণতি ভালো হবে না।’ এদিকে শাহবাগিদের নিরাপত্তা জোরদারের
সুপারিশ করা হয়েছে।
শাহবাগের শোডাউনে গতকাল সন্ধ্যায় গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন সংহতি জানাতে এলে তার বক্তব্য দেয়া নিয়ে সেখানে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। কয়েকটি বাম সংগঠনের নেতার আপত্তি না থাকলেও উপস্থিত ছাত্রলীগ নেতারা মঞ্চে কামাল হোসেনের বক্তব্য দেয়া নিয়ে প্রবল আপত্তি তোলেন। তাদের আপত্তির মুখে ড. কামাল বক্তব্য দিতে পারেননি। তবে কোনো রাজনীতিবিদের মঞ্চে বক্তব্য দেয়া নিষেধ বলে ড. কামাল হোসেনকে বক্তব্য দিতে দেয়া হয়নি বলে মঞ্চ থেকে দাবি করা হয়। ড. কামালের সঙ্গে ওই সময় ছিলেন বিকল্প ধারা বাংলাদেশের মহাসচিব আবদুল মান্নান। ড. কামালের আগে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ড. আ ফ ম রুহুল হকসহ আওয়ামী লীগের আরও কয়েক নেতা গতকাল শাহবাগের মঞ্চে বক্তব্য দেন।
অন্যদিকে শাহবাগের ওই শোডাউনে দিনে দিনে অস্বাভাবিকভাবে কমে যাচ্ছে উপস্থিতির সংখ্যা। গতকাল শোডাউনের ১৫তম দিনে সকাল ও বিকালে উপস্থিতির সংখ্যা ছিল অস্বাভাবিকভাবে কম। সকালে কিছু উপস্থিতি থাকলেও বিকালে সেখানে উপস্থিতির সংখ্যা প্রায় একশ’তে নেমে আসে। এ সময় ফার্মগেট থেকে শাহবাগ মোড় হয়ে গুলিস্তান, সদরঘাটগামী বাসও চলাচল করে। গত চৌদ্দ দিনের মধ্যে গতকালই প্রথম শাহবাগ মোড় হয়ে যাত্রীবাহী পরিবহন চলাচল করে। অবরোধের কারণে শাহবাগ মোড় হয়ে এতদিন যাত্রীবাহী পরিবহন চলাচল বন্ধ ছিল। গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন নেতাকে শাহবাগে অবস্থান করতে দেখা গেছে। ছাত্রলীগ ও বাম দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকেই গতকাল সকাল ও বিকালে শাহবাগে আসেননি। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকেই শাহবাগ শোডাউনে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি কমছে। অস্বাভাবিকভাবে উপস্থিতি কমতে থাকায় হতাশ হয়ে পড়ছেন ব্লগার, বাম ছাত্র সংগঠন ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তবে তাদের দাবি, লোকসংখ্যা যাই হোক আন্দোলন চলবেই। তবে গতকাল রাতে শাহবাগ মোড়ে বাস ও অন্যান্য পরিবহনের চলাচল আবারও বন্ধ করে দেয়া হয়।
এছাড়া শাহবাগ শোডাউনের ব্লগার তরিকুল ইসলাম শান্তর জানাজা গতকাল বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। মসজিদের খতিব ও প্রধান ইমান পরিবর্তে খাদেম জানাজায় ইমামের দায়িত্ব পালন করেন। এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, কোষাধ্যক্ষ ড. কামাল উদ্দিন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী ও বাম-সমর্থিত নীল দলের আহ্বায়ক শফিউল আলম ভুইয়াসহ বাম সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। জানাজা শেষে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। গত সোমবার বিকালে শাহবাগে স্লোগান দেয়ার সময় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা যান। শান্তর মৃত্যুর ঘটনায় শাহবাগে গতকাল বিকালেও এক মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়।
জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ফোরাম নামের একটি সংগঠনের নামে গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শাহবাগে এ শোডাউন শুরু হলেও প্রথম দিন থেকেই এর নেতৃত্বে আছেন ক্ষমতসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিক বিভিন্ন বাম দলের নেতারা। আওয়ামী লীগ ও বামপন্থী বিভিন্ন সংগঠন, প্রতিষ্ঠানের নেতারা প্রথম দিন থেকেই এতে সংহতি জানাচ্ছেন। শোডাউনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বিকাল ৪টা ১৩ মিনিটে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে চিঠি লিখে বেলুন ওড়ানো হবে।
গতকাল দুপুরে শাহবাগের অবরোধস্থলে আসেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক। তিনি মঞ্চে উঠলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দখলে চলে যায় মঞ্চ। এ সময় বাম দলের কোনো ছাত্রসংগঠনের নেতাদের মঞ্চ ও এর আশপাশ এলাকায় দেখা যায়নি। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান মোল্লা বঙ্গবীর কদের সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে বলেন, ‘এই লোকটা যুদ্ধাপরাধীদের সহযোগী। তার নামের আগে বঙ্গবীর উপাধি ব্যবহার করার অধিকার নেই। সরকারের উচিত তার উপাধি কেড়ে নেয়া।’ এ সময় তিনি বদরুদ্দীন উমরকে আমার দেশ-এর মতো ‘যুদ্ধাপরাধীদের গণমাধ্যমগুলোতে’ কলাম না লিখতে সতর্ক বার্তা দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফ বক্তব্যে কাদের সিদ্দিকীকে যুদ্ধাপরাধীদের দালালি না করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘দালালি করলে আপনার বঙ্গবীর উপাধি কেড়ে নেয়া হবে।’ তাদের বক্তব্য শেষে শাহবাগ অবরোধে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. রুহুল হক। এছাড়া গতকাল বিকালে আওয়ামীপন্থী সাংস্কৃতিক সংগঠক ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ‘জামায়াতিরাই ধর্ম ব্যবসায়ী। ধর্মের প্রতি আমাদের কোনো বিদ্বেষ নেই। জামায়াত-শিবির সমর্থিত আমার দেশ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছে যে, আন্দোলনকারীরা নাকি ইসলাম ও কোরআনকে কটূক্তি করে আন্দোলন করছেন। এটা অপপ্রচার ছাড়া আর কিছুই নয়। জামায়াতের মতো ধর্ম ব্যবসায়ীদের মালিকানাধীন পত্রিকাই এসব অরুচিকর কথা লিখতে পারে।’ তিনি আমার দেশ পত্রিকায় না লিখতে দেশের মুক্তমনের ও প্রগতিশীল লেখকদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আপনাকে অনুরোধ করছি, এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার করুন ও ভবিষ্যতে আর এমন বিজ্ঞাপন ছাপবেন না। এটা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়। এ ধরনের বিজ্ঞাপন ছাপা হলে গণজাগরণ চত্বর থেকে আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আপনাকে সতর্ক করে দিয়ে বলছি, এসবের পরিণতি ভালো হবে না।’
গতকাল বিকাল ৫টায় শাহবাগে সংহতি জানাতে এসে ভিন্নমতের গণমাধ্যম বর্জনের আহ্বান জানিয়ে আওয়ামীপন্থী চলচ্চিত্রকার তানভীর মোকাম্মেল বলেন, ‘এদেশে স্বাধীনতাবিরোধীদের ঠাঁই হবে না। তাদের রক্ষার জন্য যারা ষড়যন্ত্র করছেন, তাদেরও রক্ষা হবে না।’
তানভীর মোকাম্মেলের পর ছাত্র ইউনিয়নের কয়েক নেতাকর্মী বদরুদ্দীন উমরকে আমার দেশ পত্রিকায় না লেখার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আপনি প্রগতিশীল লোক। যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার, আলবদরদের গণমাধ্যম বর্জন করুন। না হলে পাঠকরাই আপনাকে বর্জন করবে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী গতকাল সন্ধ্যার পর শাহবাগে এসে সংহতি জানান। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে আমাদের তরুণ সমাজ যে আন্দোলন শুরু করেছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে আমরা বিজয় অর্জন করব।’ গতকাল তিনি বুয়েট অ্যালামোনাই অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে শাহবাগে সংহতি প্রকাশ করতে আসেন।
শাহবাগিদের নিরাপত্তা জোরদারের সুপারিশ : সংসদ রিপোর্টার জানান, শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে চলমান আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্লগার ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্টদের নিরাপত্তা জোরদারের সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। ব্লগার রাজীব হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক ব্যক্তিদের কঠোর পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখার সুপারিশ করেছে কমিটি।
গতকাল সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব সুপারিশ করা হয়। কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ ছায়েদুল হক বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। কমিটির সদস্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, মুজিবুল হক, হাবিবর রহমান, সানজিদা খানম এবং সফিকুল ইসলাম বৈঠকে অংশ নেন।
সূত্র জানায়, বৈঠকে কমিটির সভাপতি বলেন, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াত ও বিএনপির নেতারা কারাগার থেকে এসএমএসের মাধ্যমে নিজ দলের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এ বিষয়ে তার কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, কারাগারে আটক কেউই মোবাইলে যোগাযোগ করতে পারে না। সংসদীয় কমিটি বিষয়টি জানানোয় তারা আরও সতর্ক থাকবে।
এদিকে জামায়াতসহ যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত সংগঠন ও ব্যক্তির কাছ থেকে পুলিশকে কোনো ধরনের অনুদান গ্রহণ না করার তাগিদ দিয়েছে কমিটি। একই সঙ্গে গণজাগরণ মঞ্চের নিরাপত্তা জোরদারে পুলিশকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়।
কমিটির সদস্য সফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে কমিটির সভাপতি মো. ছায়েদুল হক যুদ্ধাপরাধীদের এসএমএসের মাধ্যমে যোগাযোগের বিষয়টি তুলে ধরেন। পরে কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আটক কোনো বন্দি মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতে পারে না।
এ বিষয়ে সফিকুল ইসলাম বলেন, কমিটির পক্ষ থেকে আটক যুদ্ধাপরাধীদের সর্বক্ষণ মনিটরিংয়ে রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, শাহবাগ থেকে মাঝে মাঝেই শিবিরকর্মী আটকের খবর পাওয়া যাচ্ছে। আমরা পুলিশকে ওই এলাকার নিরাপত্তা আরও জোরদার করার জন্য বলেছি। একই সঙ্গে আন্দোলরত ব্লগারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বলা হয়েছে।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র সচিব সি কিউ কে মুসতাক আহমদ, মহা পুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার, কারা মহাপরিদর্শক আশরাফুল ইসলাম খান, র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।"
লিংকঃ http://www.amardeshonline.com/pages/details/2013/02/20/188724#.USQhV_KfvUg
বিষয়: বিবিধ
১৯৬৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন