আবারও জমজমাট খাম্বা বাণিজ্য ।(কপি পেষ্ট)
লিখেছেন লিখেছেন প্রবালদ্বীপ ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০২:১৯:১৫ দুপুর
বৈদ্যুতিক 'খাম্বা' (খুঁটি) নিয়ে আবারও জমজমাট বাণিজ্য চলছে। সরকারের শেষ সময়ে এসে এই বাণিজ্যের আরও প্রসার ঘটেছে। গত চার বছরে প্রায় ১৫ লাখ বৈদ্যুতিক খুঁটি কেনা হয়েছে। আরও ১০ লাখ খুঁটি কেনার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রায় একশ' কোটি টাকা ব্যয়ে ৬১ হাজারের বেশি খাম্বা কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় 'খাম্বা' ব্যবসা মূলত তৎকালীন সরকার সমর্থক এক শ্রেণীর প্রভাবশালী মহলের নিয়ন্ত্রণে ছিল। একইভাবে বর্তমান মহাজোট সরকারের সময়ে ওই ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ হাত বদল হয়েছে মাত্র। এখন সরকার সমর্থক প্রভাবশালী মহলই এসব নিয়ন্ত্রণ করছে। এখন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ ব্যক্তির ভাই এবং আরেকজনের ছেলে এ ব্যবসার প্রধান নিয়ন্ত্রক।
অভিযোগে জানা যায়, গিয়াস উদ্দিন মামুনের খাম্বা ব্যবসা নিয়ে বিগত চারদলীয় জোট সরকার ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে দৃষ্টি না দিয়ে তখন মাঠের পর মাঠ খাম্বা বসালেও তার বেশিরভাগেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া যায়নি। শুধু মোটা অংকের মুনাফা লুটতেই তখন লাখ লাখ খাম্বা বসানো হয়।
সূত্র জানায়, খাম্বা নিয়ে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য হয় পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে (আরইবি)। এ সংস্থার আওতাধীন ৭০টি সমিতি এলাকায় খাম্বা বসানোর নামে চলছে বাণিজ্য। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে খাম্বা কেনা হয়। স্টোরে পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও নতুন করে খাম্বা কেনা হয়। এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী-শিল্পপতি খাম্বা সরবরাহের কাজ নিয়ে সরকার সমর্থক ওই প্রভাবশালী মহলকে মোটা অংকের অর্থ দেয়। ওই অবৈধ আয়ের ভাগ সমিতির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে আরইবির সর্বোচ্চ পর্যায়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে।
দেশের পাঁচটি বিতরণ সংস্থার মধ্যে আরইবির আওতাধীন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোর (পবিস) অবস্থা খুবই করুণ। ৭০টি পবিসের মধ্যে এখন বেশির ভাগেই সংযোগ দেওয়া বন্ধ রয়েছে। আর যেগুলোতে নতুন সংযোগ দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো মাসে কতটা নতুন সংযোগ দিতে পারবে তা আরইবি থেকে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ওভারলোডের কারণে কোন পবিসের কোন কোন ফিডারে নতুন সংযোগ দেওয়া যাবে
না তাও তালিকা করে পবিসগুলোকে নির্দেশনা পাঠিয়েছে আরইবি। এ কারণে অনেক শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত করেও বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় তা চালু করা যাচ্ছে না। এতে সংশ্লিষ্ট মালিকরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বর্তমানে সব বিদ্যুৎ সংস্থার বিতরণ ব্যবস্থায় সীমাবদ্ধতা রয়েছে। জরাজীর্ণ বিতরণ লাইন ছাড়াও সিস্টেম চলছে ওভারলোডে। উপকেন্দ্র থেকে শুরু করে বেশির ভাগ ফিডার এবং ট্রান্সফরমার ওভারলোডে চালানো হচ্ছে। অর্থাৎ সেগুলো ক্ষমতার চেয়ে গ্রাহকদের মাঝে বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। অর্থের অভাবে প্রয়োজন অনুযায়ী ফিডার ও ট্রান্সফরমারও বসানো যাচ্ছে না। ফলে বর্তমান উপকেন্দ্র, ট্রান্সফরমার এবং ফিডারগুলোর অবস্থা আরও শোচনীয় হচ্ছে। এতে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা ঘটছে। অর্থের অভাবে বিদ্যমান বিদ্যুৎ লাইন এবং অবকাঠামোর উন্নয়ন করা না গেলেও খাম্বা কেনার দিকেই বিদ্যুৎ বিভাগসহ বিতরণ সংস্থাগুলোর আগ্রহ বেশি।
আরইবি সূত্র জানায়, ৭০টি পবিসের মধ্যে ৬৩টিই চলছে লোকসানে। এর মধ্যে ৩৯টির বেশির ভাগ সাব-স্টেশন এবং ফিডার চরম ওভারলোডে চলছে। এ ব্যাপারে সংস্থাটির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দিন সমকালকে বলেন, সিস্টেম ওভারলোডের কারণে অনেক ফিডারে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না। আর্থিক সমস্যার কারণে এর উন্নয়ন করা যাচ্ছে না।
আরইবির বাইরে পিডিবি, ওজোপাডিকো, ডেসকো ও ডিপিডিসিতেও কমবেশি খাম্বা বাণিজ্য চলছে।
দেশে এখন দেড় ডজনের বেশি কোম্পানি খাম্বা তৈরি করে, যার অধিকাংশ সরকার সমর্থক। আরইবি ১৮ লাখ নতুন গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে ৪৫ হাজার কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন সম্প্রসারণ প্রকল্প গ্রহণ করায় এ ব্যবসা আরও জমজমাট হয়ে উঠেছে। এ জন্য এ ধরনের কোম্পানি আরও বাড়ছে। খুঁটি সরবরাহের কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে কোম্পানির অভিজ্ঞতা এবং খাম্বার গুণগত মানের চেয়ে 'নেগোসিয়েশন মানি'ই গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রভাবশালী মহলকে সন্তুষ্ট করতে না পারায় কোনো কোনো কোম্পানি খাম্বা সরবরাহের কাজ পাচ্ছে না।
গত বছরের ৩০ জুন আরইবির ১৮ লাখ গ্রাহক প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অনুমোদন করে। এ প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে পাঁচ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। এর একটা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে খাম্বা কিনতে। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাম্বা কেনা হচ্ছে কি-না জানতে চাইলে আরইবির চেয়ারম্যান বলেন, নতুন নতুন এলাকা বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায় আনতে হলে খুঁটি তো কিনতেই হবে। প্রয়োজনের দিকে খেয়াল রেখেই খুঁটি কেনা হয় বলে তিনি দাবি করেন।
উৎসঃ সমকাল
বিষয়: বিবিধ
১১৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন