নতজানু নাস্তিক্যঃ একটি আইডেন্টিটি ক্রাইসিস
লিখেছেন লিখেছেন নাজমুস সাকিব ১ ০৭ এপ্রিল, ২০১৩, ১২:০৪:০২ দুপুর
বছর তিনেক আগে যখন প্রথম ব্লগের সাথে পরিচিত হলাম, সেসময় ইসলাম নিয়ে অত কিছু জানতাম না। প্র্যাক্টিসিং না হলেও আল্লাহ্র প্রতি ডর ভয় আজীবনই ছিল। হুজুগের ঠেলায় আঁতেল মার্কা লেখালেখি করার জন্যে ব্লগে আইডি খুললাম। মাগার খুলেই আমি তবদা খেয়ে যাই নাস্তিকদের কর্মকাণ্ড দেখে। নাস্তিকদের সম্পর্কে জ্ঞান আমার এতদিন ব্যকরণ বই এর বাক্যসংকোচন "যে ঈশ্বরে বিশ্বাস করেনা = নাস্তিক" এদ্দুরেই আটকা পড়ে ছিল। তবে ব্লগে ঢুকে সেদিন প্রথম বুঝতে পারি কি অন্ধকারেই না ছিলাম পুরো ব্যাকরণিক জীবনে। বুঝতে পারলাম নাস্তিকতা আর ঈশ্বরে অবিশ্বাসে সীমাবদ্ধ নেই।, সেটা আপডেট খেয়ে ঈশ্বরকে অকথ্য ভাষায় গালাগালির শিল্পচর্চা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।
ব্লগ থেকে পাততাড়ি গুটালাম। ফেবুতে লেখালেখির চেষ্টা শুরু করলাম। কিন্তু বিধি বাম। এখানেও তেনাদের দৃপ্ত পদচারণা। কিছু বিশেষ আইডির সাথে পরিচিত হলাম। যারা হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সেবনের ন্যায় দিনে তিন বেলা শরীর ঝাঁকি দিয়ে ফেবুকে আল্লাহ্র চৌদ্দগুষ্টির উদ্ধারাভিযানে নেমে পড়েন। আমার চোয়াল ঝুলে পড়লো। এ কি অবস্থা! এর কোন কারণ খুঁজে পেলাম না। আমি ভাবতাম যার যার বিশ্বাস সে সে পালন করবে, এটাই সত্য। অন্যের বিশ্বাস নিয়ে অশিক্ষিতের মত গালি দেয়াও যে বিশ্বাস জাহিরের একটা পন্থা হতে পারে, তা আমার ধারণার বাইরে ছিল। তবুও সহ্য করলাম। ভাবলাম, তেনারা মনে হয় অনেক বীরপুরুষ। সমাজকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উল্টো স্রোতে গা ভাসিয়েছেন। ভেবে পুলকিত হই।
কিন্তু আজ বহুদিন পর একটি নগ্ন সত্য এসে সামনে উপস্থিত হয়েছে। তেনাদের সাথে বীরপুরুষের দূরতম কোন যোগাযোগ নেই। তবে গিরগিটির সাথে অদ্ভুত মিল রয়েছে। কদিন আগে সরকার থেকে ঘোষণা এল যে ব্লগ-ফেবুতে ইসলাম বিদ্বেষী লেখা পাওয়া গেলে তাকে গদাম দেয়া হবে। যেই না এই খবর চাউর হল, সেই সব ফেসবুক ‘প্লেটো’ আর ‘গ্যালেন’রা গিরগিটির অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলেন। রঙ পালটে নিলেন। উন্মাদের মত টাইমলাইন ঘেঁটে নোট আর স্ট্যাটাস খুঁজে খুঁজে রিমুভ করতে লাগলেন। রিমুভ দেয়ার পর পেট এলিয়ে দিয়ে স্ট্যাটাস দিলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম একজন বিপ্লবী ছিলেন। তিনি সমাজ পালটে দিয়েছেন। হেন। তেন।
আমি আরেক দফা তবদা খেলাম। এ কি! শুধু মাত্র এক পীস গদামের আল্টিমেটামেই গিরগিটির ক্যামোফ্ল্যাজ আয়ত্ত করা! বাহ বাহ! আসলেই অছাম। দুদিন আগেও যে মহাম্মক, লম্পট; এক গদামের নিউজে সে মুহাম্মাদ, বিপ্লবী, সমাজ সংস্কারক!
নাস্তিকদের সাথে ইসলাম পন্থীদের ফেসবুকে একধরণের অঘোষিত কলমযুদ্ধ চলতো। আজ মনে হচ্ছে এই যুদ্ধের কোন প্রয়োজন ছিল না। কারণ যুদ্ধ হয় পুরুষের সাথে পুরুষের। পুরুষের সাথে গিরগিটির নয়। একজন মুসলিম কোনদিন বর্ণচোরা হয়না। সে জানে হক কোনটি। সেই হকের কথা সে আজীবনই প্রচার করে যাবে। শত ধমক, শত ঠ্যাঙ ভাঙ্গা, শত আইনি শাসানী, কোনটাই তাকে হক থেকে বিচ্যুত করতে পারেনা। বাংলাদেশে এখন ইসলামের কথা বলা মানেই বিপদ। সরকার তাগুদ। গণতন্ত্র শিরক। আল্লাহ্র আইন ছাড়া দুনিয়া চলবেনা। এইসব কথা বলতে কলিজা আর বুকের পাটা লাগে। এগুলো বললে ঠিকই জেলে যেতে হয়, নইলে ছাত্রলীগের হাতে মাইর খেতে হয়। তারপরেও কোন মুসলিম কোনদিন তার দ্বীনের সাথে, তার আদর্শের সাথে কম্প্রোমাইজ করেনি। কিন্তু নাস্তিকরা? সরকারের এক ধমকে প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলার মতই ভোল পাল্টে ফেলেছেন। এখানেই মুসলিমদের সাথে বাতিলদের পার্থক্য। তারা সরকারের গ্রেপ্তারের ভয়ে গিরগিটি হয়ে যায়না। মুসলিমই থাকে। মুসলিমদের গায়ে বইছে অকুতোভয় সাহাবাদের রক্ত, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বালের রক্ত, ইমাম ইবনে তাইমিয়ার রক্ত। যারা হাজারো অত্যাচারের ভয়ের চোটে আদর্শ বিক্রি করেন নি। আর ডারউইন, ডকিন্স, হকিন্সদের রক্ত যাদের শরীরে, তারা তো আদতে ব্যবসায়ী। আদর্শ তো বেচবেই।
দুঃখ হয়, এমন কিছু আদর্শ বিক্রেতাকেই আজ অন্ধ অনুসরণ করে আমাদের তরুণ সমাজ।
বিষয়: বিবিধ
১৩৫৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন