"ফুটবলাধিকার"

লিখেছেন লিখেছেন নাজমুস সাকিব ১ ৩১ আগস্ট, ২০১৩, ১১:১৫:০০ রাত

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

আমরা সবাই জানি ফুটবল খেলায় ১১ জন খেলোয়াড় থাকেন। এই ১১ জনের দায়িত্ব হল ১১ রকম। কোন একজনের দায়িত্ব অপরের চাইতে কম নয়। একজন গোলকীপারের জন্যে কোচের প্ল্যানিং থাকে একরকম। ডিফেন্ডারের জন্যে একরকম, মিডফিল্ডারের জন্যে একরকম, স্ট্রাইকারের জন্যে একরকম। বেশিরভাগ সময়েই স্ট্রাইকাররা হয় স্কোরার। মিডফিল্ডাররা হয় গোল মেকার আর ডিফেন্ডার-গোলকীপারের কাজ হল গোল খাওয়া থেকে দলকে বাঁচানো। তাছাড়া ২ জন মিডফিল্ডার এর দায়িত্বও বেশিরভাগ সময় একই হয় না। কেউ রাইট উইং দেখে রাখে, কেউ লেফট উইং। স্ট্রাইকারের ক্ষেত্রেও একই। একজন স্ট্রাইকার রাইট উইং এ প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করেন,আরেকজন করেন লেফট উইং থেকে।

অন্যদিকে ৩-৪ জন ডিফেন্ডারের কাজও কিন্তু সবসময় এক হয়না। দেখা যায় রাইট সাইডের ডিফেন্ডারের কাজই হল প্রতিপক্ষের কোন বিশেষ ফরোয়ার্ডকে আটকে রাখা। আবার অনেক সময় সব ডিফেন্ডারই একসাথে এই দায়িত্ব পালন করে। আর গোলকীপারের কাজ হল ডি-বক্সেই ঘোরাফেরা করা আর গোলপোস্ট পাহারা দিয়ে দলকে গোল খাওয়া থেকে বাঁচানো।

কিন্তু যদি কোনদিন এমন হয়, যে গোলকীপার দাবি করে বসেন অন্যদের তুলনায় তাকে অধিকার বঞ্চিত করা হচ্ছে, তখন কেমন হবে? তিনি যদি বলেন, সবাই কী সুন্দর দৌড়াচ্ছে আর আমি হাবার মত এখানে দাঁড়িয়ে আছি? এটা তো চরম অন্যায়! আবার কোন ডিফেন্ডার যদি বলেন, এটা কিছু হল? মিড আর ফরোয়ার্ডরা কী চরম ভাব নিয়ে গোল দিতে যায়, আর আমরা আছি আরেকজনকে আটকানোর মত “নিচু” কাজে ব্যাস্ত। এটা তো আমাদের অধিকার লঙ্ঘন!

আবার ধরুণ ফরোয়ার্ড বলছেন, “ধুশশালা! এই কোচ তো বেজায় শয়তান! আমাকে সারাদিন দৌড়ের উপর রাখছে আর ঐ ব্যাটা গোলকীপার কি আরামসে গোলপোস্টে হেলান দিয়ে আমাদের দৌড়াদৌড়ি দেখছে। এটা তো চরম অন্যায়!”

এখন সত্যিই যদি বিভিন্ন পজিশনের খেলোয়াড়রা এই ধরণের দাবি তুলে বসেন, যে আমাদের ‘ফুটবলাধিকার’ লঙ্ঘিত হচ্ছে, আমরা সমান অধিকার পাচ্ছিনা, আমাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে, তাই আমরা খেলবোনা – তাহলে কেমন হবে?

যদি মিডফিল্ডার আর স্ট্রাইকাররা গোলের পর গোল করে যায়, আর গোলকীপার-ডিফেন্ডাররা এই বলে বসে থাকে যে তারা ফরোয়ার্ডদের মত সমঅধিকার পায়নি, তাহলে কিন্তু দলটি এক-দুইশ গোলের ব্যবধানে হারার কথা। আবার ফরোয়ার্ডরা যদি বলে তারা গোলকীপারের মত আরাম আয়েশে থাকতে পারেনা, তাই তারা খেলবেনা, তাহলে কোন ভাবেই দলের জেতার সম্ভাবনা নেই।

ইসলামে নারী-পুরুষের কর্তব্য ও দায়িত্ব অনেকটাই এই ফুটবলের ফর্মেশানের মত। নারীর দায়িত্ব এক, পুরুষের দায়িত্ব এক। কিন্তু কারো দায়িত্ব একইরকম নয়। দুজনের দায়িত্ব একই ধরনের নয়। কিন্তু ওজন করতে গেলে কারো দায়িত্ব কারো চাইতে কম নয়। একজন পুরুষ বা নারী যদি বলে তাদেরকে সমান দায়িত্ব বা অধিকার দেয়া হয়নি তাই তারা কাজ করবেনা, তাহলে পারিবারিক ও সামাজিক জটিলতা সৃষ্টি হতে বাধ্য। ফুটবলের একেকজন খেলোয়াড় একেকজনের পরিপূরক। কোন দলই চায়না একজনও লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ুক। গোলকীপারের কাজ স্ট্রাইকারের মত না। স্ট্রাইকারের কাজ গোলকীপারের মত না। কিন্তু একজনের কাজ আরেকজনকে দিয়ে হবেনা। কল্পনা করুন তো, গোলকীপার সাহেব ফাউল করে লাল কার্ড খেয়ে মাঠ ছাড়ছেন। তাহলে বেচারা ফরোয়ার্ডের কি অবস্থা হবে?

আবার ভেবে দেখুন, দুইজন স্ট্রাইকার কিংবা ৪ জন ডিফেন্ডার লাল কার্ড খেয়ে বেরিয়ে গেছেন, অবস্থাটা কি হবে খেলার? গোলকীপার সাহেব, যিনি নিজেকে দায়িত্বহীন আর বঞ্চিত ভাবতেন, এখন তার অবস্থা ও দায়িত্ব কি হবে?

ইসলামেও তেমনি নারীর কাজ আর পুরুষের কাজ পরস্পর পরিপূরক। নারী যদি তার নির্ধারিত কাজে “সমঅধিকার” লঙ্ঘিত হচ্ছে, এই অজুহাতে কাজ কর্মে ইস্তফা দিয়ে বসেন, কিংবা পুরুষ যদি “বেশি দায়িত্ব চলে এসেছে” বলে ঘরে বসে থেকে বউকে বাইরে পাঠিয়ে দেন, তবে অবস্থা হবে এই ফুটবল টীমের মত। হ য ব র ল।

‘সমফুটবলাধিকার’ এর নাম করে ইকার ক্যাসিয়াসকে যদি ফরোয়ার্ডে পাঠিয়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে গোললাইনে দাঁড় করিয়ে গোল বাঁচাতে দেয়া হয়, তবে রিয়াল মাদ্রিদের ম্যাচের ফলাফল কি হবে, তা সহজে অনুমেয়। তেমনি সমঅধিকারের নাম করে নারীর কাজ পুরুষকে করানো আর পুরুষের কাজ নারীকে করানোটাও হবে দায়িত্ব-সংকটের কারণ। এই ধরনের অদূরদর্শী দায়িত্ব বণ্টনের ফলে ফুটবল টীমের যেমন দফারফা অবস্থা হয়ে যাবার কথা, তেমনি আল্লাহ্‌ কর্তৃক নারী-পুরুষের ওপর অর্পিত দায়িত্বকে অদূরদর্শিতার সাথে EXCHANGE করা হলে, পারিবারিক, সামাজিক তথা গোটা পার্থিব জীবনেই বিপর্যয় নেমে আসতে বাধ্য।

ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে নারী-পুরুষের দায়িত্ব বন্টন আসলে ফুটবল টীমের মতই। এখানে একজনের দায়িত্বের সাথে অন্যের দায়িত্বের তুলনা চলেনা। বোকার মত দেখতে চাইলে একজনের দায়িত্ব ও অধিকার আরেকজনের চাইতে কম বলে মনে হতে পারে, কিন্তু কারো দায়িত্ব কমিয়ে দিয়ে আরেকজনের দায়িত্ব বাড়িয়ে দিলে কিংবা একজনের দায়িত্ব আরেকজনকে দিয়ে EXCHANGE করে দেখতে গেলেই বোঝা যায় প্রত্যেকের দায়িত্ব আসলে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামে একজন নারীর দায়িত্ব,একজন পুরুষের দায়িত্বকে পূর্ণতা দান করে। যেটা নারীর কাজ নয়, সেটা নারীকে করতে দিলে, কিংবা যেটা পুরুষের কাজ নয়, সেটা পুরুষকে করতে দিলে হিজিবিজি লেগে যেত বাধ্য। হ্যাঁ, অনেকেই বলতে পারেন যে এমন অনেক গোলকীপার আছেন যারা গোল করেছেন। হুম। কথা সত্য। কিন্তু ফুটবল ইতিহাস নিজেই বলে এইসব উদাহরণ হল বিচ্ছিন্ন উদাহরণ। মানুষ শুধুমাত্র “সাধারণ জ্ঞান” এর অংশ হিসেবেই এইসব গোলকীপারকে মনে রাখে। কিন্তু এত এত গোলকীপার গোল স্কোর করা স্বত্বেও আজ পর্যন্ত গোলকীপারের দায়িত্ব গোল বাঁচানোই রয়ে গেছে। স্ট্রাইকিং এ দেয়া হয়নি। তাই অনেক সময় আমরা নারীদের পুরুষদের সাথে মেলামেশা করে পুরুষদের দায়িত্ব সফলভাবে পালন করতে দেখলেও সেটা কখনই নারী-পুরুষের অধিকার EXCHANGE এর কারণ হতে পারেনা। গোলকীপারের মতই নারীর দায়িত্ব নারীর কাছেই থাকবে। এটাই আল্লাহ্‌ প্রদত্ত ফিতরা।

তাই যতদিন নারী-পুরুষ তাদের একে অপরের পরিপূরক হিসেবে না দেখে প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখবে, ইসলাম বিদ্বেষীরা তার সুযোগ নিয়ে তাদের কানে ‘সমঅধিকার’ নামক বিষ ঢালতে থাকবে, যা ধীরে ধীরে জন্ম দেবে এক লাগামহীন সমাজের, যা নারীর জন্যে কিংবা পুরুষের জন্যে, কারো জন্যেই কল্যান বয়ে আনবেনা।

ডাঙার প্রাণীকে পানিতে ফেলে, জলের প্রাণীকে ডাঙায় তুলে আনলে সাময়িক উথালপাথালের পরে উভয় প্রাণীই ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যায়।

আল্লাহ্‌ আমাদের হিদায়া দান করুন।

আল্লাহ্‌ সর্বজ্ঞানী

বিষয়: বিবিধ

১১৫৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File