অপুরা এখনো বেঁচে আছে
লিখেছেন লিখেছেন নাজমুস সাকিব ১ ০৮ মে, ২০১৩, ০১:২৮:২০ রাত
বাংলাদেশিদের মধ্যে একটা জিনিস বেশ ভয়াবহ রকম বিদ্যমান। PEER PRESSURE. লোকে কি বলল, কি বলবে - এই বিষয়টা নিয়ে বাংলাদেশিরা এক ধরণের দোদুল্যমানতার পীড়ায় ভোগে। এদের মধ্যে একটা শ্রেণী আছে, যারা সেটাই ফলো করে, যেটা বেশিরভাগ মানুষ করছে বা তার বন্ধুবান্ধব, কাছের মানুষরা করছে। এটা শুধু ফলো করাতেই সীমাবদ্ধ নেই। এক কাঠি বেড়ে তা চিন্তাচেতনাতেও প্রভাব ফেলে।
তাই যখন কেউ গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসায়, তখন সেখান থেকে আর ছুটে আসতে পারেনা। সবাই কি বলবে, কি ভাববে - এই আশঙ্কায়। এরা “সার্বক্ষণিক আইডেন্টি ক্রাইসিস” নামক অদ্ভুত এক সামাজিক ব্যাধিতে আক্রান্ত।
যেমন অনেককেই দেখছি যারা গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে শাহবাগে গিয়ে শ্লোগান দিয়েছিলেন। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই শাহবাগ যখন আওয়ামীবাগ হতে শুরু করলো, তখন তারাও সাত পাঁচ না ভেবে সেই আওয়ামীবাগেই পড়ে রইল। কারণ? পাছে লোকে কিছু বলে। এরপর যখন হেফাজতের আন্দোলন শুরু হল, তখনও তারা ভেতরে ভেতরে রাসূল প্রেম থাকা স্বত্বেও তাতে সামিল হতে পারলোনা। কারণ? মানুষ কি বলবে? আমি এদ্দিন শাহবাগে পড়ে রইলাম, আর এখন হেফাজতের সমাবেশে যাবো? আমার ইজ্জত থাকবে? তাই শাহবাগী সরকারের সাথে তারাও তাল মেলালো। এক সুরে বললো, হেফাজতিরা পিশাচ। সবাই যে মন থেকে বলল, তা কিন্তু নয়। PEER PRESSURE. বন্ধু বান্ধব, ফেসবুক ফ্রেন্ড সবাই বলছে, আমি কি করে সুর পাল্টাই? মাথা কাটা পড়বেনা? কতজন আমার স্ট্যাটাস দেখে!
এবং সবশেষে ৫ তারিখ দিবাগত রাতের গণহত্যা। এবারেও তারা কিছু একটা বলতে গিয়েও তা এক ঢোঁকে গিলে ফেললো। কেন? কারণ যারা মরেছে তারা যে হেফাজত কর্মী। এন্টি শাহবাগ পারসোনেল। এদের মৃত্যুতে প্রতিবাদ করলে, এই গণহত্যাকে গণহত্যা বলার সৎ সাহস দেখালে, আমার বন্ধুরা, আমার সহআন্দোলনকারীরা যে আমাকে “ছুপা ছাগু” বলবে! বলবে, “তুই ও দেখি ছাগু হয়ে গেলি। ৭ জন সন্ত্রাসী পিশাচ মরসে, আর তুই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ফালুদা বানিয়ে তাদের সাথে গলা মেলালি? ছিঃ!”
PEER PRESSURE. তারা কিন্তু সরাসরি ইসলামের বিরুদ্ধে নয়। কিন্তু তারা পারছেনা। লোকলজ্জার ভয়। চক্ষুলজ্জার ভয়। মানুষ কি বলবে? এই জন্যে ফেসবুকের ভেতর কিংবা এর বাইরে “ইমেজ” রক্ষার জন্যে তারা গণহত্যার ছবিতে কমেন্ট দিতে পারেনা। পাছে নিউজ ফীডে চলে আসে। আর সেই ফটো বাঁশেরকেল্লা থেকে শেয়ার হলে তো কথাই নেই। সহযোদ্ধারা যে ছিঁড়ে খাবে। সত্য মিথ্যা মিশ্রিত মিডিয়া প্রথম আলো কিংবা কালের কণ্ঠের লিঙ্ক শেয়ার দিতে থোড়াই কেয়ার করলেও একই ক্যাটাগরির ফেসবুক মিডিয়াগুলোর পোস্ট শেয়ার দিতে তাদের পেট মোচড় দিয়ে ওঠে।
এদের অবস্থা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের অপুর মত। মানুষ কি বলবে, এত লোকের বিরোধিতা কিভাবে করি, এই ভয়ানক সামাজিক চাপে পিষ্ট হয়ে অপু নিরব দর্শক হয়ে হৈমন্তীর তিলে তিলে মৃত্যু দেখেছে। রা-টি করেনি। হৈমর মৃত্যুর পর একাকী বাগানে বসে অপু ঠিকই আফসোস করেছিল তার এই সোস্যালী প্রেশারাইজড ইমেজের জন্যে।
অপুরা এখনো বেঁচে আছে।
বিষয়: বিবিধ
১৭১৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন