কাদের মোল্লার রায়কে কেন্দ্র করে বিস্ফোরণ। যাবজ্জীবন, মৃত্যুদণ্ড নয়। কেন? কেন হলো এমন রায়?
লিখেছেন লিখেছেন সোহাগ্ ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৩:২৫:৪৬ দুপুর
যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করে, ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ভালো কাজ করেও শুরু থেকেই সন্দেহের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি শেখ হাসিনা, আওয়ামী সরকার। তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাদের যোগ্যতা দক্ষতা নিয়ে খুব বড় রকমের প্রশ্ন ছিল প্রথম দিন থেকেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই সন্দেহ শুধু বেড়েছে। দলবেঁধে, গাড়ির বহর নিয়ে, টিভি ক্যামেরা নিয়ে পিকনিক মেজাজে তদন্ত করতে গেছে। তদন্তের সময়কালে প্রকাশ্যে কথা বলেছে। পেশাদারিত্বের, যোগ্যতার সামান্যতম কোনো নমুনা তাদের মধ্যে দেখা যায়নি। সরকার গুরুত্ব দেয়নি। উল্টো বলা হয়েছে এসব বিচার বানচালের ষড়যন্ত্র। ৪০ বছরে পুরনো এত তাৎপর্যপূর্ণ মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে ভয়াবহ রকমের দুর্বলতার পরিচয় দেয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনবিদ হিসেবে যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল প্রথম দিন থেকেই। জীবনে যারা বড় কোনো মামলা পরিচালনা করেনি, আন্তর্জাতিক বিষয়ক কোনো অভিজ্ঞতা যাদের নেই, এমন কিছু অতি সাধারণ আইনবিদ নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে যাকে নিয়োগ দেয়া হলো তিনি কাদের মোল্লাদের পক্ষের লোক। একাত্তরে তার ভূমিকা ছিল মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিল বলে দ্রুতই তাকে বাদ দেয়া হয়েছে, কিন্তু প্রশ্ন থেকে গেছে।
মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নেয়া একজনকে প্রধান তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব দিয়ে দিল সরকার? ভুল হয়েছিল। এভাবে ভাবতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু কাদের মোল্লার রায়ের পর এভাবে, এত হালকাভাবে ভাবার আর সুযোগ নেই। আপিলের ক্ষেত্রে আইন কেন অভিযুক্তের পক্ষে, সরকার তথা জনগণের বিপক্ষে থাকবে? দু’বার সংশোধন করেও কেন উভয়ের জন্য সমান সুযোগ রাখা হলো না? এটাও কি ভুল? কেন দেশের প্রসিদ্ধ, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন আইনবিদদের সম্পৃক্ত করা হলো না? এটাও কি ভুল?
কাদের মোল্লার রায়ের পর দেশের মানুষ প্রতিবাদ করছে। বাংলাদেশের বিচারপ্রার্থী মানুষের কাছেও গ্রহণযোগ্যতা নেই ট্রাইব্যুনালের। সুতরাং ট্রাইব্যুনাল বিতর্কিত। এই ট্রাইব্যুনালের অধীনে বিচার চলতে পারে না।
কাদের মোল্লা ৩৪৪ জনকে হত্যা করেছে। তদন্ত এবং যুক্তিতে এটা প্রমাণ করা যায়নি যে, কাদের মোল্লাই হত্যাকাণ্ডে মূল ভূমিকা পালন করেছে। তদন্তে এবং যুক্তিতে বলা হয়েছে কাদের মোল্লা হত্যাকারী দলে আরও অনেকের সঙ্গে ছিল। মূল হত্যাকারী বলা হয়নি। বিচারক রায় দিয়েছে তদন্ত এবং যুক্তিতর্ক দেখে, শুনে। মূল ঘটনা কি ছিল সেই বিবেচনায় নয়।
আমরা যখন বলছি অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পরেও মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে কেন যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হলো তখন তদন্ত এবং যুক্তির মূল বিষয়টি আড়ালে থেকে যাচ্ছে। অপরাধ প্রমাণিত হওয়া এক বিষয় আর কাদের মোল্লা মূল অপরাধী সেটা তো অন্য বিষয়। বাস্তবে এমনটাই ঘটেছে।
বিষয়: বিবিধ
৯৩৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন