কিভাবে নিজেকে খাঁটি মুসলমান ভাববেন Day Dreaming Day Dreaming Day Dreaming

লিখেছেন লিখেছেন সোহাগ্ ২৬ জুন, ২০১৩, ০৮:৫১:৫২ রাত

বিখ্যাত মানুষজন থেকেও বাছাই করতে হবে হালাল হারাম। রবীন্দ্রনাথ হারাম কবি, নজরুল হালাল কবি এইটা তো একটা ছোট শিশুও জানে। খাঁটি মুসলিম হতে হলে আপনাকে আরও উপরে উঠতে হবে। হারাম লেখকদের শীর্ষে রাখতে হবে জাফর ইকবাল এবং হুমায়ুন আজাদ কে। আবার কান টানলে মাথা আসে মনে করে জাফর ইকবালকে টানার সাথে সাথে হুমায়ূন আহমেদকেও ফট করে টানাটানি শুরু করে দিবেন না। হুমায়ূন আহমেদকে ঠিক হারাম লেখক ক্যাটাগরিতে ফেলা যাবেনা। তিনি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক চমৎকার উপন্যাস লিখেছেন, সিনেমা বানিয়েছেন এটা আপনার মনকষ্টের কারণ হতে পারে। তবে সেইসাথে এটাও খেয়াল রাখতে হবে উনি কখনোই কারো মনে খুব বেশী কষ্ট দেননি। ছোটবেলা থেকে বাংলা, হিন্দি ছবিতে দেখে এসেছি একেবারে সময়মত ঘরের বাতিটি নিভে যেতে। নায়ক - নায়িকা ব্যাপক কচলাকচলি করছে, জামাকাপড় আলুথালু, উত্তেজনা তুঙ্গে। শেষ মুহূর্তে শালার ঘরের বাতি নিভে যায় অথবা নায়ক - নায়িকা খেতার নিচে ঢুকে পড়ে। পরে বুঝেছি অশ্লীলতা এড়াতে সময়মত খেতার নিচে ঢুকে পড়াটা সভ্য মানুষের জন্য অত্যন্ত জরুরী। হুমায়ূন আহমেদ সবসময়ই জনমানুষের লেখক। সপরিবারে পাঠযোগ্য সকল মনের মানুষের জন্য লেখা মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসে তাই কোন শিশুর ধর্ষণের কথা আসতে পারেনা। পিতার সামনে কন্যার স্তন ছিঁড়ে নেয়ার কথা আসতে পারেনা। পাড়ার হুজুরের মুক্তি জবাই এর বর্ণনা আসতে পারেনা। ভাষা সৈনিক গোলাম আজমের কথা আসতে পারেনা। রাজাকার আলবদর আলশামস এর কথা আসার আগেই লাইট অফ বা খেতার নিচে ঢুকে যাওয়া। এতো কথা বলার অর্থ হচ্ছে, আপনাকে খাঁটি মুসলিম হতে হলে হালাল লেখকদের ভালোভাবে চিনতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখলেই কেউ হারাম হয়ে যায়না, বরং সুন্দর ও সুশীল-ভাবে লিখতে পারলে এরচেয়ে হালাল আর কিছুই হতে পারেনা।

যাইহোক আপনার কচি মস্তিষ্কে যেন বেশী চাপ না পড়ে তাই নিচে একটা হালাল হারাম এর ছোট লিস্টি দিয়ে দিচ্ছি। চোখ বন্ধ করে মুখস্থ করে ফেলেন



পোশাকআশাক

সবসময় গুটলীযুক্ত, গোল, কোণাবন্ধ, নিসফুস সাক্ব ক্বমীছ পরতে হবে। মানে কি আমাকে জিজ্ঞেস করে লাভ নেই। তবে পালন করতে হবে এইটা জানি। অনেকক্ষণ মাথা চুলকে বুঝলাম ক্বমীছ মানে কামিজ। সালওয়ার কামিজের কামিজ। তারপরে বিস্তারিত পড়াশোনা করে বুঝলাম গুটলীযুক্ত, গোল, কোণাবন্ধ নিসফুস সাক্ব ক্বমীছ হচ্ছে এই - "যার গেরেবান আছে যা বন্ধ করার জন্য কাপড়ের গুটলী লাগানো হয় যা নিছফুস সাক্ব। অর্থাৎ হাঁটু ও পায়ের গিরার মধ্যবর্তী স্থান পর্যন্ত প্রলম্বিত। গোল যা কোণা ফাড়া নয়, যার আস্তিন আছে, যা অতি সহজেই মানুষের সতর ও ইজ্জত আবরু ঢাকে " । আরও জানলাম - শামায়িলুত তিরমিযীর বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘শরহুল মানাবী মিছরী’ কিতাবে উল্লেখ আছে, “ক্বমীছ সিলাইযুক্ত হবে, যার দুটি আস্তিন থাকবে। কোণা ফাড়া হবে না তথা গোল হবে।” (অনুরূপ মিরকাত শরীফ-এও আছে)।



হে হে ভেবেছিলেন খাঁটি মুসলিম হওয়া এতই সহজ? খাঁটি মুসলিম আর কি মেনে থাকে? সুতরাংখাঁটি মুসলিম হতে হলে আপনাকেও গুটলীযুক্ত, গোল, কোণাবন্ধ, নিসফুস সাক্ব ক্বমীছ" পরতে হবে। সতর্ক হতে হবে আপনার স্ত্রী এবং কন্যার পোশাকের ব্যাপারেও। বিশেষত শিশু কন্যাকে ভালো করে পুটুলিতে মুড়িয়ে রাখতে হবে। কাপড়ের বদলে এলুমিনিয়াম ফয়েলেও মুড়িয়ে রাখতে পারেন।

বৈজ্ঞানিক খাঁটি মুসলিম

খাঁটি মুসলিম কখনোই মূর্খ নয়। খাঁটি মুসলিম হতে হলে আপনাকে জ্ঞানে বিজ্ঞানে হতে হবে উন্নত। সেইসাথে জানতে হবে মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান। এককালে জ্ঞানার্জনের জন্য সুদূর চীনদেশে যেতে হতো। এখন ফেসবুকে লগইন করে বসে থাকলেই হবে। জ্ঞান এমনিতেই চলে আসবে।

আমি বহুদিন থেকেই বলে আসছি স্কুল কলেজ লেভেলে আলাদা করে ধর্মশিক্ষা বিষয় রাখার প্রয়োজন নেই। যেহেতু ধর্ম আর বিজ্ঞান একে অপরের সাথে লাইলি-মজনু, সিরাজ-সত্যপীর, সাহিত্য-দলছুট, ব্যাকটেরিয়া-অনার্য্য, ক্লিনটন-মনিকা, ইউনুস-হিলারি অথবা বগল-চপ এর মতো করে মিশে আছে। সুতরাং দুটোকে মিলিয়ে কিছু হাইব্রিড সাবজেক্ট ম্যাট্রিক ইন্টারে বাধ্যতামূলক করা দরকার। যেমন -

১ ইসলামী পদার্থবিজ্ঞান -

এখানে নিউটন সহ বাকিসব চোর বিজ্ঞানীদের বদলে আসল মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদানের কথা বলা হবে। নিউটন আইনস্টাইন সহ অনেক বড় বড় বিজ্ঞানীর অনেক বড় বড় আবিষ্কারই আসলে মৌলিক নয়। যেমন এখানে চোর নিউটনের তিন সূত্রের আসল আবিষ্কারকদের কথা বলা হয়েছে।

আমি শুধু তৃতীয় সূত্রটির কথা তুলে ধরলাম - গতির তৃতীয় সূত্রে বলা হয়েছে যে,“প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।” অথচ হিবাতুল্লাহ আবুল বারাকাত আল বাগদাদী (১০৮০-১১৬৫) মহাচোর নিউটনের ৫৫০ বছর পূর্বেই “আল মুকতাবার ফিল হিকমা” (The Considered in Wisdom) কিতাবে উল্লেখ করেন যে, “কুস্তির সময় একে অন্যের উপর বল প্রয়োগ করে (ঘুসি দেয়) । যদি দু’জনের একজন (ঘুসির ফলে) পিছু হটে যায় তার মানে এই নয় যে, দ্বিতীয় ব্যক্তির বলের (দ্বিতীয় বলটির) অস্তিত্ব নেই বরং দ্বিতীয় বল ব্যতীত প্রথম বলটি প্রভাব বিস্তার করতে পারে না ।” মুসলিম বিজ্ঞানী হিবাতুল্লাহ আবুল বারাকাত আল বাগদাদী, মানতেকের ইমাম ফখরু উদ্দীন রাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইবনে হাইছাম, উনাদের প্রত্যেকের বক্তব্যের দ্বারা স্পষ্টতঃ প্রমাণিত হয় যে, মহাচোর নিউটন তৃতীয় সূত্রটিও মুসলমানদের থেকে চুরি করেছে।

২ সহিহ গণিত

পারদর্শী হতে হবে গণিতেও। তাহলেই বুঝতে পারবেন এরকম ছোটখাটো অনেক গাণিতিক কুদরত আশেপাশে ছড়িয়ে আছে।



বলতে গেলে মহাভারত হয়ে যাবে। এরকম শতশত গাণিতিক কুদরতের কথা আমরা প্রতিনিয়তই কারো না কারো কাছে শুনতে পাই। বাইবেলের গাণিতিক ব্যাপারস্যাপার নিয়েও এরকম Biblical Mathematics সহ নানা বই আছে রীতিমতো।

৩ হালাল জীববিজ্ঞান

শুরু করতে হবে ডারউইন কে ইয়োগা মেরে। বিবর্তন একটা ভ্রান্ত ধারণা এটা ইতোমধ্যে ফেসবুকের পাতায় পাতায় প্রমাণিত।



বিস্তারিত বলুন। মানুষ বাঁদর থেকে আসেনি, আদম থেকে এসেছে। জানতে আদমচরিত পড়ুন। এখানে বিশিষ্ট লেখক ও ঐতিহাসিক মুখফোড় আদমের জীবন নিয়ে ঐতিহাসিক গল্প লিখেছেন। হুমায়ূন আহমেদের "দেয়াল" এর মতো আদমচরিতেও ইতিহাসের বিন্দুমাত্র বিচ্যুতি হয়নি।

একইভাবে আরও এরকম আছে শরীয়তী রসায়ন, দারুল ভূগোল, মুনাফা অর্থনীতি (সুদ না কোনভাবেই), জিহাদি পৌরনীতি ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমরাদেরকে ছোটবেলা থেকে ইহুদীদের ঘৃণা করতে শিখানো হয়েছে, কিশোরবেলায় আমেরিকাকে ঘৃণা করতে শিখানো হয়েছে। (পাকিস্তানকে ঘৃণা করতে অবশ্য তেমন কেউ শিখায়ে দেয় নাই, রক্তের টানে কেউ কেউ হয়তো এমনি এমনিই শিখে গেছে)। যে কোন জিনিসকে হালাল করার জন্য পশ্চিমা আর ইহুদী ষড়যন্ত্রের চেয়ে কার্যকরী আর কোন শব্দ নেই। তাই জোর করে এই শব্দ টি বলতে শিখুন--

মসজিদে আমাদের সবারই কম বেশী জুতা চুরি যাবার অভিজ্ঞতা আছে। অনেকে আবার বের হয়ে নিজের জুতা না দেখে পরে একটু ঘুরে ফিরে পছন্দমতো একটা জুতা পরে চলে আসে। যাইহোক, এই জুতাচুরি যে সংঘবদ্ধ ইহুদী নেটওয়ার্ক এর কাজ সেটা এতদিনে জানলাম-

বেশ কয়েক বছর আগে ফেনীতে এক জুতা চোর ধরা পড়ে। দেখতে বেশ ভদ্র ও শিক্ষিত। জিজ্ঞাসা করা হলো, তোমাকে তো দেখে মনে হচ্ছে তুমি শিক্ষিত। তাহলে তুমি জুতা চুরি করো কেনো? জুতা চোর বললো, আমি এক এনজিও (NGO) তে চাকরি করি। আমার মতো আরোও অনেকে রয়েছে। আমাদের কাজ দেয়া হয়, মসজিদ, মাদরাসা ওয়াজ মাহফিলে গিয়ে জুতা চুরি করতে। বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকা পাই। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যুগেও ইহুদীরা এ রকম কাজ করতো। যাতে মানুষ মসজিদে, ওয়াজ মাহফিলে না যায়। মসজিদে জুতা হারিয়ে গেলে মানুষ বলবে নামায পড়তে আসলাম আল্লাহ পাক তিনি দেখলেন না। নাঊযুবিল্লাহ! ইহুদীরা চায়- মুসলমানগণ আল্লাহ পাক উনাকে দোষ দিয়ে কাফির হয়ে যাক। নাঊযুবিল্লাহ!

যাইহোক, মোদ্দা কথা হচ্ছে খাঁটি মুসলমান হতে গেলে আপনাকে এইসব বিদেশী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ওয়াকিবহাল ও সদা সচেতন থাকতে হবে।

সেইসাথে খাঁটি মুসলমান হতে হলে আপনাকে ব্রেক মারা বন্ধ করতে হবে। মানে সহজ। প্রচলিত কৌতুক দিয়ে বুঝিয়ে বলি। ছাত্রকে একই বস্তু কিন্তু স্থানভেদে নাম ভিন্ন হয় এমন একটি জিনিসের উদাহরণ দিতে বলা হয়েছে। ফটকা ছাত্র বলে, মাথার উপর থাকলে চুল, চোখের উপর ভুরু, ঠোঁটের উপর গোঁফ, চিবুকে দাড়ি। এই পর্যন্ত আসা মাত্র শিক্ষক চেঁচিয়ে উঠেছে, ওরে থাম থাম, ব্রেক মার, আর নিচে নামিসনে। সুতরাং বড় ছাগল হতে গেলে আপনাকে এইরকম ব্রেক না মেরে নিচে নামতে হবে। সীমান্তে ভারতের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে করতে একসময় পাকিস্তানকে ভালোবেসে ফেলতে হবে। আমেরিকার পুঁজিবাদকে কে ঘৃণা করতে করতে একসময় হিটলারকে ভালোবেসে ফেলতে হবে। বুশ কে অপছন্দ করতে করতে লাদেনের প্রেমে পড়ে যেতে হবে। ইসরাইলের হারামিপনা দেখতে দেখতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদী গণহত্যায় বগল বাজাতে হবে। দুই নেত্রীর কাণ্ডে অসহ্য হয়ে এরশাদ কে ভালবেসে ফেলতে হবে। ছাত্রলীগের হারামিপনার প্রতিবাদ করতে সৎ লোকের শাসন চাই বলে জামাতের পতাকাতলে চলে যেতে হবে। অনেক বলদরা আপনাকে বলতে পারে, শত্রুর শত্রু সবসময় বন্ধু হয়না, অনেক সময় আরও বড় শত্রু হয়। কান দিবেন না। একেবারে কোন বেরেক না মেরে এগিয়ে চলুন।

খাঁটি মুসলমান হতে হলে নিয়মিত তারেক মনওয়ার এর ওয়াজ শুনতে হবে।




মন উদাস হলেই আমি শুনি। হুজুর বিশাল জ্ঞানের কথা বলেছে - শক্তিশালী বাঘ বনে লুকায়ে থাকে, লোকালয়ে আসলে মানুষ পিটিয়ে মেরে ফেলতে পারে। নিরীহ ছাগল মাথা উঁচু করে লোকালয়ে থাকে। সবাই জানে তার মালিক আছে। কেউ তার ক্ষতি করার আগে দুইবার ভাববে।

সুতরাং অস্তিত্বের কারণে বাঘ না হয়ে ছাগল হওয়াই উত্তম। তবে ছাগল হয়েছেন বলে মন খারাপের কিছু নেই। সঠিক সময় ও সুযোগ মত হয়ে উঠুন বাঘ। ঠিক যেমন করে বাঘ হয়েছিলেন কিছুদিন আগে সাতক্ষীরায় । কোন বেচাল দেখলেই উচ্চ কণ্ঠে সবাইকে ডাক দিন, ধর্ম অবমাননাকারীদের বিচারের জন্য , ঠিক এমন করে ।

আমাদের এই লোকে লোকারণ্য ঢাকা শহরেই কিছুদিন আগে কিছু বীর তরুণ পথচলতি এক তরুণীর পাজামা টেনে নামিয়ে দিয়েছে সবার সামনেই। চিৎকার আর কান্নায় কেউ তেমন এগিয়ে আসেনি। না আসারই কথা। মেয়েটি তো কোন প্রেরিত মানুষ ছিলোনা। সুতরাং নিশ্চিন্তে যার খুশী তার পাজামা ধরে টানুন। কেউ কিছু বলবে না। শুধু ধর্ম বা কোন প্রেরিত পুরুষ এর পাজামায় কেউ টান দিলে গর্জে উঠুন, চোখের নিমিষে দেখবেন আপনার পাশে শতসহস্র প্রতিবাদী মানুষ। জ্বালিয়ে পুড়িয়ে চোখের নিমিষে তৈরি করে ফেলবে আরেকটি সাতক্ষীরা।

শেষকথা

আমার বাবার একটাই ভাই ছিল। বাবা ও বড় চাচা দুজনেই মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। বাবা এসএসসি এর পর বাংলা মাধ্যমে চলে আসেন, সেইসাথে গ্রাম থেকে মফস্বল শহরে। তারপর ঢাকায়। চাচার মৃত্যু হয় আমার জন্মের আগে। তিন চাচাতভাইয়ের একজন আমাদের সাথে বড় হলেও অন্য দুজন রয়ে যায় গ্রামেই। তাদের পড়াশোনার শুরু আর শেষ মাদ্রাসাতেই। তাদের পুত্রকন্যাদেরও তাই। কালক্রমে একজন হয়ে যায় ছোটখাটো পীর। আশেপাশের আরও কয়েক গ্রাম থেকে তার কাছে পানিপড়া নিতে আসে লোকজন এখনো। জোর করেও তাঁকে ঢাকায় এনে রাখা যায় না। ঢাকার রাস্তায় শুধু পাপ, চোখ খুললেই শয়তানের বাক্স টেলিভিশন। একবার আব্বার শরীর খারাপ শুনে তাবিজ দিতে ঢাকা আসলেন। আব্বা আরবি ভালোই জানেন। তাবিজ খুঁজে তাকে যে আয়াত লেখা আছে তার মানে জানতে চাইলেন। তিনি উত্তর দিতে ব্যর্থ হলে আব্বা শুধু ঠাণ্ডা গলায় বললেন, এইসব ভণ্ডামি আমার সামনে করলে চড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিবো। আমি মাঝেমাঝে ভাবি আমি যদি আজকে আব্বার ঘরে না জন্মে চাচার ঘরে জন্মাতাম তবে এখন কোথায় থাকতাম, কি করতাম? মনওয়ার হুজুরের ওয়াজ শুনে চোখের পানিতে বুক ভাসাতাম, নাকি নিজেই আরেকজন মনওয়ার হতাম।

আমাদের দেশে দুটি পথ সুস্পষ্ট ভাবে ভাগ হয়ে যাচ্ছে। বয়স আরও কম ছিল যখন তখন স্বপ্ন দেখতাম পথ দুটি একদিন মিলে যাবে। এখন বুঝি সেটা সম্ভব না এই জনমে অন্তত। লেদার রেক্লাইনার এ হেলান দিয়ে এসির বাতাসে বসে আইপ্যাড এর জানালা দিয়ে তাকিয়ে দিনকে দিন বরং পথ দুটির আলাদা হয়ে যাওয়া দেখি। ভাবি আমার কি আসে যায়। দেশের প্রতি আমার দায়িত্ব পালন এখন শেষ। আর পৃথিবীর অন্য কোনায় বসে মনওয়ার এর ওয়াজ শুনে হাজার হাজার খাঁটি মুসলমান তৈরি হবে প্রতিদিন। লক্ষ লক্ষ মুসলিম কেঁদে বুক ভাসাবে ধর্ম অবমাননার জন্য, লক্ষ শান দেবে তরবারিতে সঠিক সময় ও সুযোগের অপেক্ষায়। যার মধ্যে হয়তো আমার ফেলে আসা চাচাতো ভাই আর তার সন্তানেরাও আছে।

বিষয়: বিবিধ

২৪৫৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File