নাস্তিক এবং ইসলাম বিদ্বেষীরা যারা অনেকবার কোরান আবৃত্তি করেছে তারাও যে তাদের পাপ থেকে হয়ত ছাড়া পেয়ে যাবে--- আসলে কি তাই??
লিখেছেন লিখেছেন সোহাগ্ ২৫ জুন, ২০১৩, ০৩:৪০:৩৪ রাত
একজন মুমিন তার জীবদ্দশায় কত পাপ করবে তার সঠিক হিসাব কেউ জানে না। তবে আমরা ধরে নিতে পারি যে প্রত্যেকদিন সে বারোটি পাপ করে। চিন্তা করা যায় যে সে দৈনিক পাপ করছে এই ভাবে:
দুই হাতে দুই পাপ
দুই পায়ে দুই পাপ
দুই চোখে দুই পাপ
দুই কর্ণে দুই পাপ
এক মুখে এক পাপ
এক জিহবায় এক পাপ
এক লিঙ্গে (স্ত্রী অথবা পুরুষ) এক পাপ
এক নাসিকায় এক পাপ
সর্বমোট বারো পাপ। অবশ্যই এই পাপের তালিকায় অনেক কিছুই বাদ পড়েছে—মস্তিষ্কের পাপ (কুচিন্তা), আঙ্গুলের পাপ, যৌনতার পাপ (বিভিন্ন প্রকার)—এই সব আর কি।
তাই জীবিত অবস্থায় (দশ থেকে পঁচাশি বছর পর্যন্ত) তার পাপের সংখা হবে ১২ গুণ ৭৫ গুণ ৩৬৫ = ৩২৮ ৫০০০ টি (৩ লক্ষ ২৮ হাজার ৫০০)।
এই বিশাল পাপ থেকে মুক্তির উপায় কী?
অনেক পাপই অযুর সাথে মুছে ফেলা হয়। যেমন দুই হাত ধৌতের সময় দুই পাপ ধৌত হয়ে যায়…এই রকম ভাবে একবার অযু করলে ন্যূনতম বারোটি পাপ আল্লাহ্ পাক ক্ষমা করে দেন। অযু শেষে আবার নতুন করে পাপ করা চলবে, এই চক্র চলবে দিন রাত সব সময়ই।
কিন্তু এই বারো পাপের চাইতেও অসংখ্য পাপ এক মুমিন দৈনিক করে থাকে। এই সব অগুনতি পাপ থেকে মুক্তির কি উপায়?
এর এক সহজ উত্তর হচ্ছে সালাত।
দেখুন এই হাদিস:
সহীহ মুসলিম, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার ঢাকা, খণ্ড ২, পৃঃ ৩২২, হাদীস ১২৪০। আবূ হুরায়রা (রা) রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাযের শেষে তেত্রিশবার আল্লাহ্র তাসবীহ বা পবিত্রতা বর্ণনা করবে, তেত্রিশবার আল্লাহ্র তাহমীদ বা প্রশংসা করবে এবং তেত্রিশবার তাকবীর বা আল্লাহ্র মহত্ব বর্ণনা করবে আর এইভাবে নিরানব্বই বার হওয়ার পর শততম পূর্ণ করতে বলবে—“লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শরীকা লাহু-লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি আিইয়েন কাদীর” অর্থাৎ আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি একক ও লা-শারীক। সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী একমাত্র তিনিই। সব প্রশংসা তাঁরই প্রাপ্য। তিনি সবকিছু করতে সক্ষম—তার গোনাহ্সমূহ সমুদ্রের ফেনারাশির মত অসংখ্য হলেও মাফ দেওয়া হয়।
এই হাদীসে পরিষ্কার হয় না—সারা জীবনের পাপ নাকি এক দিন বা তদীয় অংশের পাপ। যদি সারা জীবনের পাপ হয়ে থাকে তবে পাপমোচনের এর চাইতে ভাল পন্থা আর কী হতে পারে? আর যদি দৈনিক পাপের জন্য হয়ে থাকে—তবে গণনা করে নিন কয়বার এই পন্থা নিতে হবে জীবনের সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি পাবার জন্য।
এর চাইতেও ভালো পন্থা আছে: উপরে উদ্ধৃত বুখারী শরীফ হাদীস ৬১৮-তে।
এই হাদিসে বলা হয়েছে:
‘...সে যখন উত্তমরূপে উযূ করল, তারপর একমাত্র সালাতের উদ্দেশ্যে মসজিদে রওয়ানা করল তার প্রতি কদমের বিনিময়ে একটি মর্তবা বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি গুনাহ মাফ করা হয়’।
উপরের হিসাব অনুযায়ী মসজিদের উদ্দেশ্যে ২৩৭ ৭৫০ বার কদম ফেললেই আল্লাহ্ পাক সব পাপ মাফ করে দিবেন।
ইসলামী পাপ থেকে মুক্তি পাবার সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা হবে হজ্জ পালন। একবার হজ্জ পালন করলেই জীবনের সমস্ত পাপ খণ্ডন হয়ে যাবে—প্রতিটি হাজি হয়ে যাবে নবজাত শিশু। কিন্তু এই হজ্ব হতে হবে হজ্বের মৌসুমে—অন্য সময় নয়, অর্থাৎ উমরা করলে সমস্ত পাপমোচন হবে না—হয়ত বা আংশিক হতে পারে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, বুখারী শরীফ, তৃতীয় খণ্ড, পৃঃ ৭০, হাদীস ১৪৩১। আদম (র.)...আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে হজ্ব করলো এবং অশালীন কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত রইল, সে নবজাতক শিশু, যাকে তার মা এ মুহুর্তেই প্রসব করেছে, তার ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে ফিরবে।
আরও একটি হাদীস দেখা যাক:
এহিয়াও উলুমিদ্দীন, বাংলা অনুবাদ মাওলানা মুহিউদ্দিন খান,দ্বিতীয় খণ্ড, পৃঃ ১৭। হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি নামাযে দাঁড়িয়ে কোরআন তেলাওয়াত করে, সে প্রত্যেক হরফের বদলে একশ’টি সওয়াব পায়। যে নামাযে বসে কোরআন তেলাওয়াত করে সে প্রত্যেক হরফের বদলে পঞ্চাশটি সওয়াব পায় এবং যে ওযু ছাড়া পাঠ করে সে দশটি নেকী পায়। রাতের বেলায় নামাযে দাঁড়িয়ে পড়া সর্বোত্তম। কেননা, রাতের বেলায় মন খুব একাগ্র থাকে।
উইকিপিডিয়া ঘাঁটাঘাঁটি করে জানা গেল যে কোরানে ৩৩০ ১১৩টি হরফ আছে; হরফ বলতে এখানে আরবি হরফই বলা হচ্ছে তা’তে কোন সন্দেহ নেই—কারণ কোরানের অনুবাদ, সে যে ভাষায়ই হউক না কেন, তা’ নাকি কোরান নয়—এটা সব ইসলামি পণ্ডিতদের অভিমত।
দেখা যাক একবার কোরান তেলাওয়াত সম্পন্ন করলে কতটুকু সওয়াব বা পুণ্য পাওয়া যাবে। ধরা যাক সে নামাযে বসে সম্পূর্ণ কোরান তেলাওয়াত করল। আর যদি সে আংশিক কোরান তেলাওয়াত করে তবে নিচের হিসাবটি সংশোধন করে নিতে হবে।
৫০ গুণ ৩৩০ ১১৩ =১৬ ৫০৫ ৬৫০ (ষোল মিলিয়নেরও বেশী)
অনেকেই বলে থাকেন একজন সাচ্চা মুমিনের উচিত হবে মাসে একবার কোরান তেলায়াত করা। তাহলে বছরে বারো বার, এবং তার জীবদ্দশায় হবে এই প্রকার—
১৬ ৫০৫ ৬৫০ গুণ ১২ গুণ ৭৫ = ১৪ ৮৫৫ ০৮৫ ০০০ (প্রায় ১৫ বিলিয়ন বা ১৫০০ কোটি)
এই অবিশ্বাস্য নেকী পাওয়া কল্পনারও বাইরে। এর অর্থ হচ্ছে, এক মুমিন যত পাপই করুক না কেন, নামায, কোরান তেলাওয়াত দ্বারা সমস্ত পাপের থেকে সে মুক্তি পাবেই। আর সর্বশেষ পন্থা হচ্ছে শুধু একবার হজ্ব করলেই সমস্ত পাপ আল্লাহ্ পাক ধুয়ে মুছে সাফ করে দিবেন।
এই হিসেব থেকে আমরা পরিষ্কার বুঝতে পারি কেন সমস্ত ইসলামি বিশ্ব পাপ এবং দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত।
শেষ প্রশ্ন হতে পারে—নবী করীম কি কোন পাপ করেছেন কিংবা এখনও করে চলেছেন?
আমরা কোরানে দেখি যে আল্লাহ্ তা’লা নিজেই স্বীকার করেছেন যে তাঁর সবচাইতে প্রিয় নবী অনেক পাপ করেছেন। দেখুন:
৪০:৫৫ অতএব, আপনি সবর করুন। নিশ্চয় আল্লাহ্র ওয়াদা সত্য। আপনি আপনার গোনাহের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং সকাল‑সন্ধ্যায় আপনার পালনকর্তার প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা করুন।
৪৭:১৯ যেনে রাখুন, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন উপাস্য নাই। ক্ষমাপ্রার্থনা করুন, আপনার ত্রুটির জন্যে এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্যে। আল্লাহ্ তোমাদের গতিবিধি ও অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞাত।
নবী সারা জীবনে সম্ভাব্য কত পাপ করেছেন তার একটা ধারণা নিচের হাদিসে পাওয়া যায়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, বুখারী শরীফ, নবম খণ্ড, পৃঃ ৫৫৩, হাদীস ৫৮৬৮। আবুল ইয়ামান (র)…আবূ হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ্র কসম! আমি প্রত্যহ সত্তরবারেরও বেশী ইস্তিগফার ও তাওবা করে থাকি।
উপরের হাদীস থেকে অনুমান করা যেতে পারে রাসূলুল্লাহ দৈনিক গড়পড়তা সত্তরটি পাপ করতেন। এখন সহজেই আমরা হিসাব করে নিতে পারি উনার জীবদ্দশায় কি পরিমাণ পাপ করেছিলেন।
কিন্তু আল্লাহ্ অতিশয় চালাক। তাই নিম্নের আয়াতে আল্লাহ্ পাক নবীর সমস্ত অতীত এবং ভবিষ্যতের পাপ মার্জনা করে দিয়েছেন। অতীতের পাপ বলতে কি বোঝায় তা বোধগম্য। কিন্তু ভবিষ্যতের পাপ বলতে আল্লাহ্ পাক কি বলেছেন তা পরিষ্কার নয়। এমন হতে পারে যে ভবিষ্যতের পাপ বলতে নবীর মরণোত্তর পাপ বলা হয়েছে। অর্থাৎ, মৃত্যুর পরে ইসলামী স্বর্গে গিয়েও নবী পাপ করছেন—এখনও। কিন্তু আল্লাহ্ সেই সব পাপ মাফ করে দিবেন।
৪৮:১ নিশ্চয় আমি আপনার জন্যে এমন একটা ফয়সালা করে দিয়েছি, যা সুস্পষ্ট
৪৮:২ যাতে আল্লাহ্ আপনার অতীত ও ভবিষ্যতে ত্রুটিসমূহ মার্জনা করে দেন এবং আপনার প্রতি তাঁর নেয়ামত পূর্ণ করেন ও আপনাকে সরল পথে পরিচালিত করেন।
অন্যান্য যে সব আয়াতে নবীর পাপের বর্ণনা আছে সেগুলো হচ্ছে: ৯৪:২ এবং ৯৪:৩।
আর একটা সুখবর হচ্ছে—নাস্তিক এবং ইসলাম বিদ্বেষীরা যারা অনেকবার কোরান আবৃত্তি করেছে তারাও যে তাদের পাপ থেকে হয়ত ছাড়া পেয়ে যাবে তা উপরের হিসাব থেকে প্রতীয়মান হয়। তাই নাস্তিক, ইসলামফোব, ইসলাম ঘৃণাকারী, হারামখোর, হারামজাদা…এদের উচিত হবে আরও বেশী বেশী কোরান পড়া।
নাস্তিক এবং ইসলাম বিদ্বেষীরা যারা অনেকবার কোরান আবৃত্তি করেছে তারাও যে তাদের পাপ থেকে হয়ত ছাড়া পেয়ে যাবে--- আসলে কি তাই??
বিষয়: বিবিধ
২৩৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন