লেখাটির সাথে দ্বিমতের বিষয় গুলি তুলে ধরলে উপকৃত হব---
লিখেছেন লিখেছেন সোহাগ্ ২৩ জুন, ২০১৩, ০৫:৪২:২৭ সকাল
নারীকে ক্ষমতাহীন করেছে কে ?আমাদের এক ব্লগর কে দেখলাম মুক্তমনা নারী বিষয়ক একটি লেখা লেখতে-- তার উত্তর খুজতে গিয়ে যা জানলাম---
‘একজন পুরুষের কাছে বেগানা নারীর কনুইয়ের গুতা খাওয়ার থেকে শুকরের ঝাপটা (splash) খাওয়াও উত্তম’।
অথবা
‘তিনটি জিনিস কারো ইবাদতকে বাধাগ্রস্ত করে, যদি তার সামনে দিয়ে কালো কুকুর, মহিলা কিংবা গাধা গমন করে।’
কুকুর ও গাধার সাথে নারীকেও যুক্ত করা হয়েছে অপবিত্রতার চিহ্ন হিসেবে।
লিবারেল মুসলমানরা এসব হাদিস ও প্রমাণকে অপ্রমাণিত বলে চালিয়ে দিতে চান। কিন্তু কোরানের বাণীর ক্ষেত্রে তাদের কি বক্তব্য? কোরানের উপর নির্ভর করেই মাওলানারা ওয়াজ-নসিহত করে যাচ্ছেন যে, পুরুষের চেয়ে নারী নিম্নস্তরের এবং সমানাধিকার ইসলাম বর্হিভূত চিন্তা। তার প্রমাণ আমরা বাংলাদেশে অহরহই পাচ্ছি।
মূল লেখাটি--
নারীর ইসলাম বা ইসলামের নারী
কুরআনের এবং আরব অঞ্চলের প্রধান ধর্মগুলোর পুরুষ থেকে নারীর সৃষ্টি এবং পুরুষের জন্যই তাদের সৃষ্টির যে গল্প, এটাই এসব ধর্মের মূল নারী বিষয়ক দর্শন হয়ে উঠেছে। সুতরাং কাঠমোল্লা থেকে মুসলিম মনীষি সবাই ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন যে, নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে পরে এবং পুরুষের আনন্দের জন্য। এই মিথ বা গল্পকথাকে আরো বাড়ানো হয়েছে এবং এটাকে একটি পবিত্রতার কাপড় পড়ানো হয়েছে যাতে এই গল্পের কেউ কোনো সমালোচনা করলে তা হয়ে দাঁড়ায় ধর্মগ্রন্থের অবমাননা। 'নারী পুরুষের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে'-এ কথায় যদি কেউ অবমাননার বিষয় খুঁজে না পান তবে তাকে কী বলা যায়। সেক্ষেত্রে একটি হাদিস দেখুন: হাদিসে আছে:
‘নারীদের প্রতি বন্ধুত্বমূলক আচরণ করো কারণ তাদেরকে বুকের হাড় থেকে তৈরি করা হয়েছে, বুকের বাঁকা হাড়, যদি তুমি তাকে সোজা করতে চাও তবে তা ভেঙে যাবে; আর যদি তুমি কিছুই না করো, তবে সে বাঁকাই থেকে যাবে।‘
এ বাক্যটি নিশ্চয়ই অবমাননাকর। কিঞ্চিত আত্মসম্মানবোধ থাকলে কোনো নারীই তা অস্বীকার করতে পারবেন না। তাদের অনেকেই হয়তো কোরানের এই আয়াতগুলোতেও নারীর প্রতি অবজ্ঞার বিষয়টি খুঁজে পান না:
‘হে ঈমানদারগন! তোমাদের প্রতি নিহতদের ব্যাপারে কেসাস গ্রহণ করা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তির বদলায়, দাস দাসের বদলায় এবং নারী নারীর বদলায়।‘ (২ : ১৭৮)
‘আর তালাকপ্রাপ্তা নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন হায়েয পর্যন্ত, আর যদি সে আল্লাহর প্রতি এবং আখেরাত দিবসের উপর ঈমানদার হয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহ্ যা তার জরায়ুতে সৃষ্টি করেছেন তা লুকিয়ে রাখা জায়েজ নয়। আর যদি সদ্ভাব রেখে চলতে চায়, তাহলে তাদেরকে ফিরিয়ে নেবার অধিকার তাদের স্বামীরা সংরক্ষণ করে| আর পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের উপর অধিকার রয়েছে, তেমনি ভাবে স্ত্রীদেরও অধিকার রয়েছে পুরুষদের উপর নিয়ম অনুযায়ী, আর নারীরদের ওপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে।‘ (২ : ২২৮)
‘আল্লাহ্ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেন: একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর অংশের সমান। অত:পর যদি শুধু নারীই হয় দু-এর অধিক, তবে তাদের জন্যে ঐ মালের তিন ভাগের দুই ভাগ যা ত্যাগ করে মরে এবং যদি একজনই হয়, তবে তার জন্যে অর্ধেক| মৃতের পিতা-মাতার মধ্য থেকে প্রত্যেকের জন্যে ত্যাজ্য সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ, যদি মৃতের পুত্র থাকে। যদি পুত্র না থাকে এবং পিতা-মাতাই ওয়ারিস হয়, তবে মাতা পাবে তিন ভাগের এক ভাগ। অত:পর যদি মৃতের কয়েকজন ভাই থাকে, তবে তার মাতা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ ওছিয়্যেেতর পর, যা করে মরেছে কিংবা ঋণ পরিশোধের পর| তোমাদের পিতা ও পুত্রের মধ্যে কে তোমাদের জন্যে অধিক উপকারী তোমরা জান না।’ (৪ : ১১)
তো সুরা বাক্বারা ও নিসার আয়াতগুলো পড়ুন। নিসার তিন নম্বর আয়াতে আছে পুরুষের বহুবিবাহের অধিকার আর ৩৪ নম্বর আয়াতে আছে প্রহারের অধিকার। সেগুলো এখানে পুনরুল্লেখ করলাম না। নিসার ১১ নং আয়াতে পুরুষ সন্তান ও মেয়ে সন্তানের মধ্যে যে পার্থক্য করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে সারা পৃথিবীতে অনেক মুসলিম নারী সংগঠন আন্দোলন করছে। তাদের বক্তব্য একটাই পিতার কাছে সন্তানের লিঙ্গ পরিচয় বড় হতে পারে না। কিন্তু কোরানে নারীর প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য আছে আরো অনেক আয়াতেই। হতে পারে এর একটি কারণ কুরাইশরা যে তিনটি দেবীর পূজা করতো সে তিনটি দেবী নারী ছিলেন। পুরুষের তুলনায় নারী যে নীচু তা বুঝা যায় কোরাণের অনেক আয়াতে (যেমন: ৪:১১৭, ৪৩:১৫-১৯, ৫২:৩৯, ৩৭: ১৪৯-৫০, ৫৩:২১-২২, ৫৩: ২৭)।
কোরআনে নবীর স্ত্রীদের উদ্দেশ্যে কিছু আয়াত আছে যা পরবর্তীতে সব মুসলিম নারীদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া অসংখ্য হাদিস আছে যেগুলোতে নারীর অবস্থানকে খাটো করা হয়েছে। হাদিসের সূত্র নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে এবং অনেক হাদিসকে পরবর্তীতে অশুদ্ধ বলে দাবী করা হয়েছে। এসব কারণে সেসব সূত্র উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকলাম। তবে হাদিসের সূত্র ধরে আমাদের সমাজে চলে আসা কিছু রীতি বা বক্তব্য আছে যা আমরা শুনি। যেমন: "স্বামীর পায়ের নীচে স্ত্রীর বেহেশত", “নারীর চলন বাঁকা”, কিংবা “নারীর একমাত্র সদগুণ হল পতিব্রতা স্ত্রী হওয়া” ইত্যাদি। এধরনের আরো অজস্র নিয়ম-কানুন-রীতি ও আইন দিয়ে মুসলিম রমণীদের ভূমিকা ইসলামে নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে যে ভূমিকা হলো বাড়িতে থাকা, পুরুষের ইশারায় ছুটে আসা, স্বামীকে মান্য করা তার ধর্মীয় দায়িত্ব। হাদিসে আরো বলা আছে একজন স্ত্রী কখনও তার স্বামীকে না করতে পারবে না যদি সে উটের উপরেও থাকে। বলা আছে, যেসব বিষয়ের মধ্যে খারাপ ও শয়তানি জিনিস লুকিয়ে থাকে তা হলো: বাড়ি, নারী ও ঘোড়া। নবী নাকি বলেছেন সেই ব্যক্তি কোনোদিন উন্নতির মুখ দেখবে না যে নারীর কাছে তার গোপন কথাগুলো বলে, কিংবা সেই জাতি কখনো উন্নতি করবে না যে জাতি নারীকে নেত্রী হিসেবে গ্রহণ করে ইত্যাদি।
কোরান ও হাদিস দিয়েই শুধু ইসলাম ধর্ম চলে না। ইসলামে খলিফা ও মুসলিম মনীষিদের বক্তব্যকেও গুরুত্ব দেয়া হয়। ইসলামী শিক্ষার ও নিয়ম-কানুনেরই এসব অংশ। তাছাড়া সামাজিকভাবে এসব শিক্ষা চলে আসছে মুসলিম সমাজের মধ্যে। তাই বিভিন্ন খলিফা, দার্শনিক ও ধর্মীয় চিন্তাবিদের নারীবিরোধী কথা-বার্তা ইসলামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অত্যন্ত জোরদার ভাবে (যদিও ইসলাম দাবী করে তারা নারীকে দিয়েছে অধিক স্বাধীনতা। কিন্তু তারা একবারও ভাবে না যে নবী মুহাম্মদ ইসলাম ধর্ম প্রচারের আগেই একজন বিধবার ব্যবসায় কর্মচারি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সুতরাং ইসলামহীন সে পরিবেশেও নারী অনেক অগ্রসর ছিল।)
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর আদেশ দিয়েছিলেন, লেখা শিখতে নারীদের বাধা দাও। আরেকবার তিনি বলেছিলেন, নারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে, এতে অনেক সুবিধা। তার সবচেয়ে নিন্দার্হ বক্তব্য ছিলো যে, তিনি বলেছিলেন, দরকার হলে মেয়েদেরকে কাপড় ছাড়া রাখো। যাতে তারা ঘরের বাইরে যেতে না পারে, বিয়ের অনুষ্ঠানে না যায় এবং প্রকাশ্যে না আসতে পারে। বাইরে গেলেই তারা অপরিচিত পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হবে এবং যা তাদের নাই তার প্রতি নারীরা আকর্ষিত হয়।
নারী বিরোধী বক্তব্য আরো বেশি পাওয়া যায় চতুর্থ খলিফা আলীর বক্তব্যে। তিনি বলেছিলেন, সমস্ত নারী জাতি হচ্ছে দুষ্ট প্রকৃতির এবং সবচে খারাপ দিক হচ্ছে এরা প্রয়োজনীয় দুষ্ট। আরেক জায়গায় তিনি বলেছেন, কখনও নারীর কাছে পরামর্শ চেয়োনা কারণ তাদের পরামর্শ অর্থহীন। তাদেরকে লুকায়ে রেখো যাতে তারা কোনো পুরুষকে দেখতে না পারে। তাদের সংস্পর্শে বেশি সময় কাটায়ো না তাহলে তারা তোমাকে ধ্বংসের প্রান্তে নিয়ে যাবে।
ইসলামের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের এসব বক্তব্য আর মুসলিম দেশগুলোতে নারীর প্রতি ব্যবহার দেখেও যারা বুঝতে পারে না ইসলামে নারীর অবস্থান কোথায় তাদেরকে কি বলা যায়। নারী যদি নিজের অস্তিত্বকে সম্মানিত না করতে পারে তবে সে ধর্মের কাছ থেকে কিভাবে উন্নত ব্যবহার আশা করতে পারে।
নবী মুহাম্মদ বলেছেন নারী ও দাস এই দুই দুর্বল জিনিসকে দয়ার সাথে দেখতে। ইসলামে নারীকে বুদ্ধির দিক দিয়ে, নৈতিকভাবে এবং শারীরিকভাবে নিম্নস্তরের হিসেবে বিবেচনা করা হয়। হাদিসেই আছে নারীদের যুক্তিবোধ ও বিশ্বাস কম। নারীকে স্পর্শের বিষয়ে ইসলামে আছে নানা কটুক্তিমূলক নিষেধাজ্ঞা:
‘একজন পুরুষের কাছে বেগানা নারীর কনুইয়ের গুতা খাওয়ার থেকে শুকরের ঝাপটা (splash) খাওয়াও উত্তম’।
অথবা
‘তিনটি জিনিস কারো ইবাদতকে বাধাগ্রস্ত করে, যদি তার সামনে দিয়ে কালো কুকুর, মহিলা কিংবা গাধা গমন করে।’
কুকুর ও গাধার সাথে নারীকেও যুক্ত করা হয়েছে অপবিত্রতার চিহ্ন হিসেবে।
লিবারেল মুসলমানরা এসব হাদিস ও প্রমাণকে অপ্রমাণিত বলে চালিয়ে দিতে চান। কিন্তু কোরানের বাণীর ক্ষেত্রে তাদের কি বক্তব্য? কোরানের উপর নির্ভর করেই মাওলানারা ওয়াজ-নসিহত করে যাচ্ছেন যে, পুরুষের চেয়ে নারী নিম্নস্তরের এবং সমানাধিকার ইসলাম বর্হিভূত চিন্তা। তার প্রমাণ আমরা বাংলাদেশে অহরহই পাচ্ছি।
এখন আমার জানতে চাওয়া নারীদের এই মুক্তমনার না হওয়ার পিছনে আসলে কি কাজ করছে?
বিষয়: বিবিধ
১৮৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন