বায়তুল্লাহ আমার ভালোবাসা
লিখেছেন লিখেছেন মাই নেম ইজ খান ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৯:২৫:৫০ সকাল
আজকের বায়তুল্লাহ বা কাবা শরীফ।
পূর্ব কথা-
প্রতিটি মুমিনের হৃদয়েই সব সময় একটি আশা, একটি তামান্না বিরাজমান থাকে আর তা হলো জীবনে অন্তত: একবার হলেও মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার ঘর বায়তুল্লাহ বা কা'বা শরীফ এবং প্রিয়নবী সা. এর রওজা তথা মদীনা মুনাওয়ারায় আসা। কিছুদিন এই দুই হারামাইনে থাকা। ইবাদত করা।
সেই ছাত্রজীবন থেকেই আমিও আমার মনে এই নেক নিয়তটি স্বযতনে লালন করে আসছিলাম। ২০০৬ সালে ছাত্রজীবনের প্রাথমিক পর্যায় শেষ করে জীবন ও জীবিকার তাগিতে পরিপূর্ণরূপে ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করার পর থেকে এই তামান্না বেড়ে যায় শতগুন। কিন্তু শুধু আশা করলেই তো হবে না, আশার সাথে বাস্তবতারও মিল থাকতে হবে। সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সমন্বয়ও লাগবে। বাংলাদেশ থেকে সউদী আরব যাওয়া-আসার জন্য প্রয়োজনীয় আবশ্যক বিষয়াদির ব্যবস্থাপনা এবং তার খরচ যোগার করাও আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের জন্য খুবই সময় সাপেক্ষ একটি ব্যাপার।
এর কয়েক বছর পর যখন উমরার খরচ মোটামুটি ব্যবস্থা করা গেলো তখন শুরু করলাম এর জন্য দৌড়-ঝাপ। কিন্তু তখন একের পর এক দেখা দিতে লাগলো নানান সমস্যা। এর প্রথম রূপ হলো বয়স। বাংলাদেশী অনেক অল্প বয়সী লোকজন উমরার ভিসা নিয়ে সউদী আরব যেয়ে পালিয়ে যায়। সেখান থেকে আর তারা দেশে ফিরে আসে না। অবৈধভাবে সউদীতে অবস্থান করে কাজ করে। এজন্য সউদী সরকার বাংলাদেশীদের ক্ষেত্রে উমরার ভিসার জন্য আরোপ করেছেন নানান শর্ত। ভিসা প্রসেস করা ট্রাভেল এজেন্সীর কারো মাধ্যমে কোনো হাজী হজ্জ্বে গিয়ে ফেরত না আসলে তার লাইসেন্স পর্যন্ত বাতিল করে দেয়া হয়। যার কারণে ট্রাভেল এজেন্সী গুলোও হয়ে গেছে আরো কঠোর। তারা নূন্যতম ৪০ বছরের নিচে কাউকে উমরার ভিসা প্রসেস করে না। তবে পারিবারিকভাবে কয়েকজন একসাথে গেলে তখন তারা ক্ষেত্র বিশেষে এই শর্ত কিছুটা শিথিল করে থাকে। আর রামাদানের বরকতময় সময় বাংলাদেশীদের জন্য পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় উমরার ভিসা।
আমি যখন উমরা বা হজ্বের জন্য বেকারার তখন আমার বয়স তাদের শর্তানুসারে অনেক কম। তাদের ঐ অগ্রহণযোগ্য হিসেবে অনুসারে আমাকে অপেক্ষা করতে হবে আরো ১৫ বছরেরও অধিক সময়।
এই জটিলতা চললো কয়েক বছর। এই সময়ের মধ্যে অন্তত: ৯/১০ টি হজ্ব এজেন্সীকে আমার পাসপোর্ট দিয়েছি এবং কিছুদিন পর ফেরতও নিয়েছি। তাদের কেউ আমাকে ভিসা এনে দিতে পারে নি। একদিকে বয়স কম, অন্যদিকে পাসপোর্টে অন্য কোনো দেশের ভিসা নেই। এই দুই অজুহাত বড় কারণ হয়ে দেখা দিলো। উমরার ভিসা কঠিন হলেও শুনলাম হজ্বের ক্ষেত্রে বয়সের বিষয়টি একটু শিথিল করা হয়। সেজন্য গত বছর হজ্বের জন্য প্রাথমিক টাকাও জমা দিলাম। কিন্তু আমি যখন টাকা জমা দেই তখন সময় শেষ হয়ে গিয়েছিলো। অন্য কারো পরিবর্তে বা রিপ্লেস হিসেবে হজ্বের সুযোগ পাওয়ার একটি ক্ষীণ সম্ভাবনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা আর হয় নি। শেষ পর্যন্ত হজ্বের ভিসা পাওয়া গেলো না।
ছোট থেকেই ভ্রমণ আমার কাছে অত্যন্ত প্রিয় একটি বিষয়। দেশের মধ্যে অনেক জেলা ও দর্শনীয় নানান স্থান আলহামদুলিল্লাহ ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছে। এবার বিদেশ ভ্রমণের পালা। ছাত্রজীবনে কাশ্মীরের ভৌগলিক সৌন্দর্য্যের বিবরণ শুনে কাশ্মীর ঘুরে দেখার একটি ইচ্ছা ছিলো খুবই তীব্র। ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসা কিংবা পাকিস্তানের উল্লেখযোগ্য মাদ্রাসায় কয়েকবছর পড়া-লেখা করারও একটি সুপ্ত বাসনা ছিলো। আমার প্রথম এনালগ পাসপোর্টও করা হয়েছিলো সেজন্যই। কিন্তু নানাবিধ কারণে যা সে সময় আর সম্ভব হয় নি।
ব্যবসায় আসার কয়েক বছর পর ঠিক করলাম উমরা হজ্বের মাধ্যমে আমার বিদেশ সফর শুরু করবো। এজন্য অপেক্ষাও করলাম কয়েক বছর। কিন্তু উপরোল্লেখিত কারণে তা আর সম্ভব না হওয়ায় প্রথমে অন্য কিছু দেশ ঘুরে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম। সে হিসেবে গত বছর মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া সফর করলাম। আরো কয়েকটি দেশেরও ভিসা নিয়ে নিলাম। এক বছর পার হতে না হতে মোটামুটি অনেকগুলো ভিসা জমা হয়ে গেলো পাসপোর্টে।
গত বছর হজ্বের চেষ্টায় বিফলতার কারণে এবার হজ্বের জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলাম অনেক আগ থেকেই। হজ্বের নিবন্ধন শুরু হওয়ার প্রথম দিনই যেনো আমার আবেদন ও মুয়াল্লিম ফি'র টাকা জমা হয়ে যায় সেটিও নিশ্চিত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করলাম। আলহামদুলিল্লাহ একটু বিলম্ব হলেও অবশেষে তা সম্ভব হলো। হজ্বের প্রসেসিং শুরু হলো। ভোটার আইডি কার্ডের সূত্র ধরে গ্রামের ঠিকানায় ভেরিফিকেশন গেলো। চাচাতো ভাইয়ের মাধ্যমে সেই ভেরিফিকেশন কর্মকর্তাকে তার বোধগম্য উপায়ে সন্তুষ্ট করা হলো। অন্য সকল কাজ এগিয়ে চললো। এক সময় নিশ্চিত হলাম যে আমার নামে অনলাইনে হজ্ব ভিসার প্রাথমিক আইডি নাম্বার চলে এসেছে আলহামদুলিল্লাহ।
চলবে...
বিষয়: বিবিধ
১৪১৬ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কি আশা করতে পারেন। অনেক দিন পর লেখা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন