মালয়েশিয়ার গণপরিবহন ব্যবস্থা
লিখেছেন লিখেছেন মাই নেম ইজ খান ২২ এপ্রিল, ২০১৬, ০৪:২৫:১৯ রাত
মালয়েশিয়ার গণপরিবহন ব্যবস্থা
(আমার দেখা মালয়েশিয়া-৫)
মালয়েশিয়া যে সকল বিষয় নিয়ে গর্ব করতে পারে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তাদের দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা। সড়ক, বিমান, সমূদ্র ও পানি পথের প্রত্যেকটিতেই তারা এমন অত্যাধুনিক সুন্দর ব্যবস্থাপনা করেছে বিশ্বে যার নজীর খুবই কম। তারা আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করেছে জনগণকে সকল সুবিধা দেয়ার জন্য। মালয়েশিয়ার গণপরিবহন ব্যবস্থার প্রতিটি ক্ষেত্রেই আপনি এর নজীর দেখতে পাবেন। ইউরোপ-আমেরিকার আধুনিক শহরের প্রায় সকল সুবিধাই আপনি পাবেন কুয়ালালামপুরসহ মালয়েশিয়ার উল্লেখযোগ্য শহর গুলোতে।
একটি দেশের উন্নতি অগ্রগতির সাথে তার যোগাযোগ ব্যবস্থা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যাতায়াত ব্যবস্থা যদি উন্নত না হয়, জনগণের জন্য ইনসাফপূর্ণ, সহজলভ্য ও সুলভ না হয় তাহলে সেই দেশ ও তার জাতির কষ্টের আর অধঃপতনের কোনো শেষ থাকে না। দুর্বল ও কষ্টসাধ্য যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে আজ বাংলাদেশে যেখানে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ বিপর্যস্ত, জর্জড়িত সেখানে আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মালয়েশিয়া।
রাষ্ট্রীয় শাসন কাঠামো এবং চরম দুর্নীতিবাজ শাসক ও অবিবেচক রাজনৈতিক নেতৃবর্গের কারণে ঢাকাসহ বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য প্রায় সকল জেলা শহরগুলোতে অপরিকল্পিত নগরায়ন, অবিশ্বাস্য জ্যাম, গণপরিবহন সেক্টরে শতাব্দীর ভয়াবহতম দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা আর লুট-পাটের কারণে প্রতিদিন এক ঢাকায় যেখানে লক্ষ লক্ষ কর্ম ঘন্টা নষ্ট হচ্ছে, কোটি কোটি টাকার জ্বালানী পুড়ছে অহেতুক জ্যামে আটকে সেখানে আধুনিক বিশ্ব সবার আগে তাদের জনগণের সময়ের মূল্য দিতে শিখেছে। সর্বোচ্চ কম সময়ের মধ্যে শহরের ও দেশের কাঙ্খিত যে কোনো প্রান্তে যাবার আন্তরিক ব্যবস্থা করেছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের জন্য মালয়েশিয়া হতে পারে একেবারে কাছে লক্ষনীয় প্রতিবেশী এবং শিক্ষণীয় অনন্য উদাহরণ।
পুরো মালয়েশিয়ার আয়তন 330,803 কিলোমিটার বা 127,720 স্কয়ার মাইল। তার মধ্যে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের আয়তনে 243 কিলোমিটার বা ৯৪ স্কয়ার মাইল। আর মেট্রোপলিটন এরিয়া 2,243.27 কিলোমিটার বা 866.13 মাইল। আপনি পিক আওয়ার বা অফ পিক আওয়ার যে কোনো সময়েই কাঙ্খিত যে কোনো গন্তব্যে চলে যেতে পারবেন খুবই দ্রুত। সামান্য সময়ের মধ্যেই আপনি পেয়ে যাবেন আপনার কাঙ্খিত পরিবহন।
কুয়ালালামপুরে সড়ক পথে যাতায়াতের জন্য পাবলিক পরিবহন হিসেবে আছে সবচাইতে জনপ্রিয় ট্রেন সার্ভিস। বাস সার্ভিস। ভাড়ায় চালিত ট্যাক্সী ক্যাব। এছাড়াও চাহিদা মতো প্রাইভেট কার, মাইক্রো সার্ভিস।
এক ট্রেন সার্ভিসের মধ্যে আছে অনেক গুলো রুট। এর মধ্যে সবচেয়ে দ্রুততম এবং এক্সপেনসিভ সার্ভিস হচ্ছে কেএলআইএ ট্রানজিট।
Semi-automatic train operation সিস্টেমে চলে এটি। এই ট্রেনটি কুয়ালালামপুর ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট-১ এবং এয়ারপোর্ট-২ হতে সালাক টিঙ্গি-পুত্রজায়া সাইবারজায়া, বান্দার তাসিক সালাতান হয়ে শহরের একেবারে কেন্দ্রস্থল কেএল সেন্টার পর্যন্ত ৫৭ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে প্রতিবার।এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে মাত্র আধাঘন্টায় আপনি চলে আসতে পারবেন শহরের ব্যস্ততম এলাকা এবং মধ্যস্থল কেএলসেন্টারে। ডাইরেক্ট আসলে আপনাকে দিতে হবে ৫৫ রিঙ্গিত। আর ৮ মিনিট দেরি করে সব স্টেশনে থেমে আসা ট্রেনে আসল দিতে হবে ৩৫ রিঙ্গিতের মতো।
এরপর ট্রেন সার্ভিসের মধ্যে আরেকটি রুট ও সেবা আছে কেটিএম কমুউটার। কারেন্টে চলাচলকারী এই ট্রেনটি শহরের মধ্যে কয়েকটি রুটে চলাচল করে। ৪৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পথে সার্ভিস দেয় এই ট্রেন। সেরেমবান এবং পোর্ট ক্লাং এই দুটি লাইনের কয়েকটি রুটে এটি চলাচল করে। সেরেমবান লাইনের ট্রেনের টারমিনাল হচ্ছে রাওয়াং টু সেরেমবান এবং রাওয়াং টু টানজুঙ মালিম। আর পোর্ট ক্লাং লাইনের ট্রেনটি চলাচল করে সেনটুল থেকে পোর্ট ক্লাং এবং বাতুকেভস থেকে সেনটুল।
এছাড়াও আছে দ্রুত গতির র্যাপিড কেএল। শহরের মধ্যে শট ডিসট্যান্সে যাতায়াতের ক্ষেত্রে সবচাইতে আকর্ষণীয় সার্ভিস হচ্ছে এটি। দ্রুত ও সুলভে চলাচলের ক্ষেত্রে এই ট্রেণের বিকল্প নেই। ২-৩ মিনিট পরপর আসতে থাকবে প্রায় ১৫০০ যাত্রাী ধারণ ক্ষমতা বিশিষ্ট একেকটি বিশাল লম্বা লম্বা ট্রেন। সকাল ভোর ৫ টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত বিরামহীন, শতভাগ জ্যামমুক্ত এই সার্ভিস আপনাকে দিবে যাতায়াতের ক্ষেত্রে এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
চলবে...
বিষয়: বিবিধ
১৭৪০ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন