শুধু রাষ্ট্রর্ধম নয়, রাষ্ট্রব্যবস্থা ইসলাম চাই
লিখেছেন লিখেছেন মাই নেম ইজ খান ১৮ মার্চ, ২০১৬, ০৬:৪৭:৫৫ সন্ধ্যা
বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম কি হবে তা নিয়ে এক ধরণের বিতর্ক দেশ স্বাধীনের পর থেকেই শুরু হয়। পরবর্তীতে ৭২ এ প্রণীত সংবিধানকে কাঁটাছেড়া করার এক পর্যায়ে যখন এরশাদের শাসনামলে সংবিধান সংশোধন করে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা হয় (অবশ্য তার আগে জেনারেল জিয়াউর রহমান সংবিধানে বিসমিল্লাহ সংশোধন করেন) তখন বিষয়টি ধর্মনিরপেক্ষতা বাদীদের বিরুদ্ধে তথাকথিত ডানপন্থীদের এক ধরণের বিজয় বলেই গণ্য হয়।
ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করার কাজটি যখন করা হয় তখন অনেকেই ভেবেছিলেন বাংলাদেশ বোধ হয় ইসলামী রাষ্ট্র হয়ে গেলো। বিশেষ করে যারা নিজেরা ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজ করেন না কিন্তু চান যে, ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাক। কিন্তু তাদের ভুল ভাঙতে বেশী দেরী হয়নি। যখন তারা দেখলেন সংবিধান নামক বইয়ের কঠিন কঠিন শত শত শব্দের মধ্যে একটি দু’টি শব্দের নড়ন-চড়ন ছাড়া বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের এবং বাংলাদেশী নামে পরিচিত জনগণের বাস্তব বিষয়াবলীতে কোন পরিবর্তন ঘটেনি। পরিবর্তন ঘটেনি দেশের দেওয়ানী ফৌজদারী আইন-কানুন, রাষ্ট্রীয় কাঠামো, রাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে (যদি আদৌ থেকে থাকে) সামাজিক রীতি-নীতি, প্রচলন, অর্থনীতি কলকব্জা, বৈষম্য-শোষণ কোন কিছুরই। সবকিছু আগের মতোই চলছে। শুধু ঝড় উঠেছে বুদ্ধিজীবিদের চায়ের কাপে আর রাজনীতিবিদদের জিহ্বার অগ্রভাগে।
আমাদের সবার এটা জানা থাকা দরকার যে, বাংলাদেশের ইসলামী দল এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর একটিও কিন্তু রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হতে হবে এমন কোন দাবী তোলেনি। তাঁদের দাবী হচ্ছে ইসলাম দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে। রাষ্ট্র ঔপনিবেশবাদী ব্রিটিশ বেনিয়াদের সব কিছু অনুসরণ করবে আর ইসলামকে রাষ্ট্রধর্মের স্বীকৃতি দিয়ে কিছুটা ফেভার করা হবে এধরণের অপমানকর দাবী কোন মুসলমান (যিনি ইসলাম সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণাও রাখেন) করতে পারেন না। বিষয়টি আরো পরিষ্কার করলে বলা যায়, ‘ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম’ মানে হচ্ছে রাষ্ট্রে বিদ্যমান বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা বেশী লাভ করবে ইসলাম অথবা রাষ্ট্রে প্রাধান্য থাকবে ইসলামী অনুষ্ঠানাদির। আর এ ধরণের ধারণা রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকে ক্ষুন্ন করে বটে কিন্তু রাষ্ট্রকে ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করে না। কেননা, ইসলামী রাষ্ট্র হচ্ছে সেই রাষ্ট্র যে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ থাকে মুসলমানদের হাতে আর রাষ্ট্রের সমস্ত আইন-কানুনের ভিত্তি হচ্ছে কুরআন ও সুন্নাহ। অন্যভাবে বলতে গেলে, ইসলামী রাষ্ট্রে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক হচ্ছে ইসলামী চিন্তা-চেতনা ও শরীয়াহ। কোন রাষ্ট্রের ভিন্ন কোন আইন-কানুন থাকবে আর সেই রাষ্ট্রের ছাতার নীচে কোন যায়গায় ইসলামের কিছুটা সুবিধাজনক স্থান থাকবে এ ধরণের ধারণা ইসলামের দাবীর সম্পূর্ণ বিপরীত।
কেননা, মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন,
إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْإِسْلامُ
অর্থ: “তোমাদের জন্য মহান আাল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত এবং গ্রহণযোগ্য একমাত্র জীবন ব্যবস্থা হচ্ছে ইসলাম।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৯)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,
فَاحْكُمْ بَيْنَهُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ وَلا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ عَمَّا جَاءَكَ مِنَ الْحَقِّ
অর্থ: “আর আপনি আপনার উপর যে সত্য নাযিল হয়েছে তা দ্বারা লোকদের মাঝে ফায়সালা করুন।”" (সূরা মায়েদা, আয়াত ৪৮)
আরো ইরশাদ হচ্ছে,
وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ
অর্থ: “আর যারা আাল্লাহরর নাযিলকৃত জীবন বিধান দ্বারা ফায়সালা করেনা তারাই তো কাফির।” সূরা মায়েদা, আয়াত ৪৪)
তাহলে কারা কি উদ্দেশ্যে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করার প্রক্রিয়াটি শুরু করেছে -তা আমাদের একটু খতিয়ে দেখা দরকার। বস্তুত একাজটি করেছে দেশে বিদ্যমান সবচেয়ে সুবিধাবাদি শ্রেণীটি। সৌদি-পাকিস্তানী-মার্কিনী শাসকগোষ্ঠীর অনুকম্পা ও দয়া দাক্ষিণ্য প্রত্যাশী এই চক্রটি সাবেক স্বৈর শাসক এরশাদকে দিয়ে একাজটি করিয়ে নিয়ে পরস্পরের স্বার্থ উদ্ধারের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ঘোষণা করা, যখন তখন মক্কা-মদীনার পবিত্র ভূমি সফর করা, দেশের বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে জুমার নামাজ আদায় করা, রঙ বেরঙের বাহারী টুপি-পাঞ্জাবী পরিধান করা ইত্যাদির মাধ্যমে এরশাদ একদিকে তার হাজারো দুষ্কর্মকে কিছুটা আড়াল করতে চেয়েছেন, অন্যদিকে এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। এরশাদ সাহেবের পাশাপাশি মেরুদন্ডহীন সুবিধাবাদী চক্রটিও দেশকে ইসলামের লেবাস পড়ানোর বাহানায় দেশী বিদেশী বিভিন্ন উৎস থেকে শত শত কোটি টাকার দান অনুদান সংগ্রহ করে নিজেদের উদরস্থ করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেছে আর গণধিকৃত অবস্থান থেকে সমাজ ও রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবার খায়েশ চরিতার্থ করেছে।
ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করার মাধ্যমে ইসলাম বিরোধী (এবং সেই সাথে সমস্ত নৈতিকতা বিরোধী) এই চক্রটি কৌশলে জনগণের প্রাণের দাবী -ইসলামিক রাষ্ট্রব্যবস্থা খিলাফত প্রতিষ্ঠার দাবীকে পাশ কাটিয়ে গেছে এবং জনগণের সাথে সুস্পষ্ট প্রতারণা করেছে। [বিষয়টিকে অবুঝ শিশুর হাতে আইসক্রিমের বদলে আইসক্রিমের মোড়ক ধরিয়ে দেয়ার সাথে তুলনা করা যায় -যে ক্ষেত্রে শিশুটি কিছু সময়ের জন্য হলেও প্রাপ্তির আনন্দে মশগুল হয়ে তার আসল চাওয়াকে ভুলে যায়]
আজ যারা এই স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে খেলা করছে তাদের পরিষ্কারভাবে মনে রাখা দরকার, এই উম্মাহ হচ্ছে খায়রা উম্মাহ। এই শতাব্দী হচ্ছে মুসলিমদের বিজয়ের শতাব্দী ইনশাআল্লাহ। ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা আমাদের অতীত দাবী ছিলো না, আমাদের দাবী তো ছিলো রাষ্ট্রব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকে গ্রহণ করা। তবে একবার রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামের নাম আসার পর তা বাদ দেয়ার সুস্পষ্ট অর্থ হচ্ছে তোমাদের মুরতাদ হয়ে যাওয়া। কারণ তোমরা তো অনেক আগ থেকেই নিজেদের মনে ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ করতে। রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে গ্রহণ করা তোমাদের জন্য যতোটা কষ্টকর রাষ্ট্রব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকে মেনে নেয়া এবং শরীয়ত কায়েম করা তার চাইতে শত-সহস্র গুন বেশি কষ্টকর তা আমরা জানি। কিন্তু আমরা শীঘ্রই রাষ্ট্রব্যবস্থা হিসেবেই ইসলামকেই প্রতিষ্ঠিত করবো, ইনশাআল্লাহ। আর বিষয়টি ততটাই দ্রুত হবে, যতোটা তোমরা এ নিয়ে খোচাখুচি করবে!
বিষয়: বিবিধ
২১৭৬ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যোগাযোগ হয়েছে ভাই।
I agree with you brother.
মতিঝিল মডেল হাইস্কুল এন্ড কলেজে হিজাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিশ্বস্ত একটি সুত্র হতে জানা যায়, কেউ হিজাব করলে তাকে টিসি দেয়া হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও কিছু টিচার মডেলে ঢোকা এবং বের হবার সময় গার্ড দেন যাতে কেউ হিজাব পরে ঢুকতে বা বের হতে না পারে।
এমনকি মেয়েদের মাথা থেকে ওড়না টেনে নামিয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটছে প্রতিদিন। কারো ছোটবোন মডেলে থাকলে তার কাছ থেকেই বিষয়টির ভয়াবহতা জানতে পারবেন।
গভর্নিং বডির সভাপতি গত ১৪ তারিখ কলেজের কিছু রুমে ঢুকে মেয়েদের ব্যান্ডেজ বাধতে (হিজাব পড়তে) নিষেধ করেন। একটি মেয়েকে হিজাব খুলতে বাধ্য করা হয় এবং হিজাব খোলার পর মেয়েটিকে ভালো লাগছে বলেও অভিমত ব্যাক্ত করেন।
তিনি বলেন, "হিজাব খুললে তো ভালোই লাগে! " এবং আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে মহিলা টিচারদের কেউ হিজাব পরলে তাদেরকে ক্লাসরুমে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। এ ঘটনা প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ঘটছে। আওলাদ হোসেনের বিরুদ্ধে সবাই ক্ষেপে থাকলেও কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।
এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলার জন্য ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে, ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে কলেজের একাধিক ছাত্র-ছাত্রীর সাথে কথা বলে এ বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন