নকল ও চুরি করে ইসলামী বই ছাপলে সওয়াব হবে না কবীরা গুনাহ হবে?

লিখেছেন লিখেছেন মাই নেম ইজ খান ২২ জুন, ২০১৫, ০২:৩০:১৯ দুপুর



গত কয়েক মাস যাবত আমার নতুন কোনো বই প্রকাশ হচ্ছে না।

কেনো প্রকাশ হচ্ছে না?

প্রকাশ করার আগ্রহ পাচ্ছি না।

কেনো আগ্রহ পাচ্ছি না?

এমনিতেই আমাদের বইয়ের খরচ এবং বিক্রির মাঝখানে লাভের পরিমাণ থাকে খুবই কম। অন্যান্য ব্যবসায় যেখানে ১০০% থেকে কয়েকশত পার্সেন্ট লাভ করা যায় সেখানে আমাদের বই ও প্রকাশনা ব্যবসায় সর্বসাকূল্যে ২০-২৫% লাভ করাটাই বিরাট চ্যালেঞ্জ।

তার মধ্যে আবার যদি আসে হরতাল, অবরোধ, ইসলামী বই না কেনার জন্য সাম্রাজ্যবাদীদের দেশজুড়ে নেগেটিভ প্রচারণা তাহলে তো পুজি ভেঙ্গে প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখাই কঠিন। লাভ তো পরের কথা।

শাহবাগের উত্থান ও দেশ জুড়ে অরাজকতা শুরু হওয়ার পর থেকে আমাদের বই সার্কুলেশন ও বিক্রি খুবই কম হচ্ছে। গত কয়েক মাস হরতাল-অবরোধের ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতে আমাদের দেশের ইসলামী অঙ্গন তথা কওমী মাদ্রাসা গুলোর বার্ষিক পরীক্ষার বন্ধের সময় চলে এলো। যার কারণে আমাদের বই বিক্রি আরো কমে গেছে।

তবে এর মধ্যে আজ শুনলাম আরেক মর্মান্তিক সংবাদ। আমাদের খান প্রকাশনীর ছোট ছোট যেই বই গুলো বেশি বিক্রি হতো সেগুলো ঢাকার বাইরে নকল ও চোরাইভাবে ছাপা হচ্ছে। কম মূল্যে কিছু জেলার পাইকারী বই বিক্রেতারা অধিক লাভের আশায় সেগুলো বিক্রিও করছে।

একটি বই পান্ডুলিপি থেকে নিয়ে সফট কপি কমপ্লিট করতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। অনুবাদ বা লেখা, প্রুফ-সম্পাদনা, কম্পোজ, ডিজাইন ইত্যাদি খাতে বইভেদে লাখ টাকার উপরও অনেক সময় খরচ হয়ে যায়।

যারা প্রকাশনার সাথে সম্পৃক্ত তারা বিষয়টি ভালো বুঝবেন। কিন্তু যারা নকল করে বা চুরি করে অন্যের বই ডাইরেক্ট ফটোকপি মেশিনে ট্রেসিং টেনে ছেপে বিক্রি করে তাদের এই খরচ নেই। আর কাগজ এবং ছাপার কোয়ালিটিরও বালাই না থাকায় তাদের লাভ প্রায় ৭০% পর্যন্তও হতে পারে।

এটি অনৈসলামিক ক্ষেত্রে হলে একটি কথা ছিলো। কিন্তু চরম দু:খজনক বিষয় হলো এটি হচ্ছে আমাদের ইসলামী প্রকাশনীর বইয়ের ক্ষেত্রেও। এবং অনেক ক্ষেত্রে এর সাথে কিছু 'সহীহ আকীদা' তাওহীদী ভাই বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলা কিছু লোকও এর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে গেছে!

এই আফসোস আর কষ্ট কার কাছে বলবো বলুন!

ইতোপূর্বে আমার লেখা এসো বক্তৃতা শিখি বইয়ের মধ্য থেকে অনেক পৃষ্ঠা হুবহু কপি করে বক্তৃতার উপর বই লেখা অনেক লেখক তাদের নামে চালিয়ে দিয়েছিলেন। একজন 'এসো বক্তৃতা শিখি' নামটিও দখল করার অপচেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেটি আমার নামে সরকারীভাবে কপিরাইট করা থাকায় এবং বাংলাবাজার কর্তৃপক্ষ হস্তক্ষেপ করায় পরে সেটি আর নতুন না ছাপার অঙ্গীকার করেন।

কিছুদিন আগে আমার প্রায় দুই মাস সীমাহীন পরিশ্রম করে অনুবাদ, সংকলন ও সম্পাদনা করা 'মুসলিম ভূমির প্রতিরক্ষা' বইয়ের পুরোটি আরেক লেখক তার বইতে ডাইরেক্ট কপি করে নিজ নামে চালিয়ে দিয়েছেন। আজ দোকানে গিয়ে শুনলাম বিভিন্ন জেলায় নাকি আমার বেশ কিছু ছোট বইয়ের নকল বিক্রি হচ্ছে! যার ফলে এক চট্টগ্রামেই যেখানে আগে মাসে নূন্যতম ১৫-২০ হাজার টাকার বই বিক্রি হতো সেটি এখন নেমে এসেছে একেবারে নিচে। অথচ এদিকে আমরা দোকান, অফিস ভাড়া, বাসা ভাড়া, কর্মচারী বেতন ইত্যাদিতে ঝুলে আছি কয়েক মাস!

আমার খান প্রকাশনী থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬০টির অধিক বই প্রকাশ ও বর্তমানে মওজুদ আছে। যার প্রতিটির পেছনে ব্যয় হয়েছে আমার জীবনের এক দীর্ঘ সময়। মেধা, শ্রম ও অর্থ যা ব্যয় হয়েছে তা কেবল ভুক্তভোগীগণই উপলব্ধি করতে পারবেন। যদি এমন নকল ও চৌর্যবৃত্তি চলতে থাকে তাহলে সামনে কি এতো মেধা খরচ করে নতুন কোনো বইয়ের কাজ আর হাতে নেয়া যাবে?

যারা এমন কাজ নকল করছেন তাদের দুনিয়া ও আখেরাতে কি অবস্থা হবে?

বিষয়: বিবিধ

১৫২৫ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

327106
২২ জুন ২০১৫ দুপুর ০২:৪৩
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : অত্যন্ত দু:খ জনক ঘটনা।
এভাবে আয়রোজগার করলে তা তো হারাম রুজি হবে। আর এসব নকলবাজদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন করা দরকার মনে করি।
শুনেছি এরা সিন্ডিকেট বদ্ধ হয়ে কাজ করে।
327110
২২ জুন ২০১৫ বিকাল ০৪:০৬
খন্দকার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ লিখেছেন : বই প্রকাশনা বিষয়ে যখনো কারো সাথে পরামর্শ করি তখন তাঁরা সর্ব প্রথম যে কথাগুলো বলেন তাহলো 'প্রকাশনীগুলো চিটিং বাটপার, মিথ্যুক মোনাফেক' এই কথাগুলো বলার পরেই তিনি বলেন যে ভাল মানুষ পেলে বই দিয়েন, না হলে দিয়েন না। এর পর নিজের অভিজ্ঞতার যে বর্ণনা তিনি দিলেন সেটা আর বলার মত না। আমার ছোটদের বিজ্ঞান মহাকাশপর্ব বইটির পান্ডুলিপি ঢাকার এক প্রকাশনীকে দিয়েছিলাম। তা নেয়ার পরে তারা আর ফোনও রিসিভ করে না। পরে চট্টগ্রামের আবুল খায়র ফাউণ্ডেশন বইটি প্রকাশ করে। আমি এখন ভাবছি ঢাকার কেও বইটা চুরি করে চাপাচ্ছে কিনা আল্লাহ জানেন। বই মানুষকে ভাল হতে শেখায়। কিন্তু বই যারা প্রকাশ করেন তারা কেন খারাপ হয়ে যায়? খান ভাই@ আপনাদের মত কিছু মহৎ মানুষের কারণে ইসলামী প্রকাশনীর আলো এখনো কিছুটা জলছে। আল্লাহ আপনাদেরকে সাহায্য করুন। বই চুরি করছে শুনে খুব খারাপ লাগছে।
327117
২২ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:০০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : কপিরাইট আইন এর জটিলতা আর এই দেশের আইন এর চোদ্দ অবস্থা এই জন্য দায়ি। আমরা এখন বউ চুরি থেকে বই চুরি পর্যন্ত এক্সপার্ট!!
327125
২২ জুন ২০১৫ রাত ০৮:১২
শেখের পোলা লিখেছেন : এটি চরম অন্যায়৷ এতে সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন৷ যেন চোরেরা শাস্তি পায়৷ আপনি এগিয়ে চলুন৷আল্লাহ আপনার সহায়৷ ধন্যবাদ৷
327135
২২ জুন ২০১৫ রাত ১০:২৭
মাজহারুল ইসলাম লিখেছেন : চুরি আমাদের রক্তে মিশে গেছে এর থেকে আমরা বাহির হতে পারবো না মনে হয়।আর কপিরাইট আইন বলতে বাংলাদেশে কিছুই নাই যা আছে তা শুধু মাত্র সরকার এবং সরকার দলীয় লোকদের জন্য। সাধারন মানুষের জন্য এই দেশে কিছুই নাই।
327150
২২ জুন ২০১৫ রাত ১১:৩৯
অবাক মুসাফীর লিখেছেন : আপনাদের বই বিভাগীয় শহরগুলোতে খুঁজে খুঁজে হয়রান হতে হয় আর জেলা শহরগুলোতেই কিনা পাইরেটেড বই! সেইরাম অবস্থা...!!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File