মৃত্যুর আগমন (পরকালের পথে যাত্রা' বই থেকে -পর্ব ৫)
লিখেছেন লিখেছেন মাই নেম ইজ খান ২৩ নভেম্বর, ২০১৪, ০১:১২:২১ দুপুর
পূর্ব প্রকাশের পর:
মৃত্যুর আগের সময়টার একটা নাম আছে, এটাকে বলা হয়, ইহতিদার। এটি মৃত্যুর একদম পূর্বপর্যায়, এ পর্যায়ে মৃত্যুর ফেরেশতা জান কবজ করতে অবতরণ করে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ইহতিদার পর্যায় সম্পর্কে পবিত্র কুর’আনে বলেন,
وَيُرْسِلُ عَلَيْكُمْ حَفَظَةً حَتَّى إِذَا جَاءَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ تَوَفَّتْهُ رُسُلُنَا وَهُمْ لا يُفَرِّطُونَ.
অর্থ: “এবং তোমাদের উপর প্রেরণ করেন হিফাযতকারীদেরকে। যখন তোমাদের কারও মৃত্যু আসে তখন আমার প্রেরিত ফেরেশতারা তার আত্মা হস্তগত করে নেয়। (সূরা আন’আম, আয়াত ৬১)
ইহতিদার পর্যায়ে যখন ফেরেশতারা অবতরণ করেন তখন মৃত্যুর দিকে অভিমুখী ব্যক্তি তাকে দেখতে পায়। হাদীসের মাঝে ইরশাদ হয়েছে,
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم. إن العبد المؤمن إذا كان في انقطاع من الدنيا وإقبال من الآخرة نزل إليه من السماء ملائكة بيض الوجوه كأن وجوههم الشمس. معهم كفن من أكفان الجنة وحنوط من حنوط الجنة حتى يجلسوا منه مد البصر ثم يجيء ملك الموت حتى يجلس عند.رأسه...
অর্থ: “আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মু’মিন ব্যক্তির যখন দুনিয়া ত্যাগ করা ও আখিরাতের দিকে যাবার সফর শুরু করার সময় চলে আসে তখন ফেরেশতারা উজ্জ্বল মুখে আসমান থেকে অবতীর্ণ হয়। তাঁদের চেহারাগুলো সূর্যের আলোর মতো ঝলমল করতে থাকে। তাঁরা জান্নাত থেকে কাফন এবং সুগন্ধি নিয়ে আগমন করে। পরকালের যাত্রী, চিন্তিত সেই মুসাফির এর পাশে বসে তাকে সান্ত্বনা দিতে থাকে।
এরপর মৃত্যুর ফেরেশতা খুবই নম্র ও ভদ্রতার সাথে, সম্মান প্রদর্শন পূর্বক নেক্কার সেই বান্দাকে বলে, “হে পবিত্র আত্মা! আল্লাহর ক্ষমা আর সন্তুষ্টির দিকে আসো। (ভয় পেয়ো না এবং সামান্যতম চিন্তিতও হয়ো না।)”
অতঃপর এই পবিত্র আত্মা খুব সহজে দেহ থেকে বের হয়ে আসে, যেমন করে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে।
অতঃপর তারা সেই পবিত্র আত্মাটিকে গ্রহণ করবে। যখন তাঁরা সেই আত্মাটিকে গ্রহণ করবে তখন তাঁরা একে নিয়ে একে অপরের সাথে কাড়াকাড়ি লেগে যাবে যে, কে এই সম্মানিত আত্মাকে নিয়ে যাবে। অতঃপর তাঁরা তাকে গ্রহণ করে সেই কাফন এবং সুগন্ধির মধ্যে রাখবে। ফলে তা থেকে জমিনে বিদ্যমান মেশকের সুগন্ধির চেয়েও অধিকতর সুগন্ধি বের হবে। অতঃপর তাঁরা সেই আত্মাকে নিয়ে উর্ধ্বাকাশে গমন করবে। তাঁরা সেই আত্মাকে নিয়ে ফেরেশতাদের মধ্য থেকে যার সামনে দিয়েই অতিক্রম করবে সেই জিজ্ঞাসা করবে, এই পবিত্র আত্মটি কার?
তখন তাঁরা যে সুন্দর নামে তাকে দুনিয়াতে ডাকা হতো তা উল্লেখ করে বলবে, অমুকের ছেলে অমুক। এমনকি তাকে নিয়ে দুনিয়ার আসমানে পৌঁছে যাবে। অতঃপর তার জন্য তাঁরা তা খুলে দেওয়ার আহবান করবে, ফলে তার জন্য তা খুলে দেওয়া হবে। এভাবে তাঁরা তাকে নিয়ে একে একে আসমান ভেদ করে সপ্তম আসমানে চলে যাবে।
তখন আল্লাহ বলবেন, “তোমরা আমার এই নেক বান্দার নাম ‘ইল্লিয়্যিন’ এ অন্তর্ভুক্ত করে নাও এবং তাকে যমীনে মাটির কাছে (তার দেহে) তাকে ফিরিয়ে দিয়ে আসো। কেননা আমি মাটি থেকেই তাকে সৃষ্টি করেছি, সেই মাটিতেই তাকে ফিরিয়ে নিবো এবং সেখান থেকেই তাকে আমি পুনরুত্থিত করবো।
এরপর তার রূহকে তার কবরে ফিরিয়ে দেয়া হবে।
তখন দু’জন ফিরিশতা আসবেন। তাঁরা তার পাশে বসে তাকে বলবেন, তোমার রব কে?
সে বলবে, আমার রব হলেন একমাত্র আল্লাহ।
তাঁরা আবার জিজ্ঞাসা করবেন, তোমার দীন কি?
সে বলবে, আমার দীন ইসলাম।
তাঁরা পুনরায় (প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখিয়ে) জিজ্ঞাসা করবে, ইনি কে? যাকে তোমাদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছিলো?
সে বলবে, তিনি হলেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
এরপর আসমান থেকে এক ঘোষক ঘোষণা করবে, আমার বান্দা সত্য বলেছে। তাকে জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও। তাকে জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দাও এবং জান্নাতের দিকে তার কবরের দরজা উন্মুক্ত করে দাও।
এরপর তার কবরে জান্নাতের সুবাস ও সুশীতল বায়ু প্রবাহিত হওয়া শুরু হয়ে যাবে এবং তার কবরকে দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত সুবিস্তৃত করে দেয়া হবে।
এরপর খুব সুন্দর চেহারার, উত্তম পোশাক-পরিচ্ছদে আবৃত, সুবাস ছড়িয়ে এক ব্যক্তি আগমন করবে। সে এসে বলবে, তুমি আনন্দের সুসংবাদ গ্রহণ করো। এটি তোমার সেই দিন যার ওয়াদা দুনিয়াতে তোমার সাথে করা হয়েছিলো।
এরপর নেককার ব্যক্তি সেই আগন্তুককে জিজ্ঞাসা করবেন, তোমার সুদর্শন চেহারা কল্যাণের বার্তা নিয়ে এসেছে! কে তুমি?
আগন্তুক বলবে, আমি তোমার সৎকর্ম।
তখন নেককার ব্যক্তি বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আপনি কিয়ামত কায়েম করে দিন। যাতে আমি আমার পরিবার-পরিজন ও সম্পদের কাছে ফিরে যেতে পারি।” (সুনানু আবূ দাউদ, সুন্নাহ অধ্যায়, কবরের অবস্থা পরিচ্ছদ, মিশকাতুল মাসাবীহ)
চলবে...
বিষয়: বিবিধ
১২২১ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাজাকাল্লাহ খাইরান ।
আপনার অফিসে আমার দাওয়াত রইলো।
আগন্তুক বলবে, আমি তোমার সৎকর্ম।
দিন দিন পাপের বোঝা ভারি থেকে ভারিতর হচ্ছে। আমাদের জন্য কি কেউ কোনো বার্তা বয়ে নিয়ে যাবে?
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর এমন হৃদয়কে উদ্বেলিত করে এমন পোষ্টটির জন্য।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মৃত্যুর চিন্তা যদি আমরা করতাম তাহলে সব অপকর্ম থেকে বেঁচে থাকতে চেষ্টা করতাম।
মন্তব্য করতে লগইন করুন