পরকালের পথে যাত্রা
লিখেছেন লিখেছেন মাই নেম ইজ খান ২২ অক্টোবর, ২০১৪, ১০:০৩:৫৮ রাত
পরকালের পথে যাত্রা (-পর্ব ৪)
সংকলন ও সম্পাদনা:
মাওলানা মুহাম্মাদ ইসহাক খান
(শীঘ্রই বই আকারে প্রকাশ হতে যাচ্ছে ইনশাআল্লাহ।)
পূর্ব প্রকাশের পর:
একটি বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণকারীদের কথা আলোচনা হচ্ছিলো। তাহলে আমাদের কতটা কাছে হতে পারে এই মৃত্যু? হতে পারে বিমানে এমন কেউ ছিলেন যিনি খাবারের একটি টুকরো মুখে নিয়ে খাচ্ছিলেন আর সেটা মুখে তোলার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে!
হতে পারে দু’বন্ধু গল্প করছিল, আর তাদের কারো একজনের মুখের কথা সম্পূর্ণ শেষ হবার আগেই দু’জনেরই মৃত্যু হয়েছে!
আমাদের বারবার মৃত্যুর কথা স্মরণ করা উচিত। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " أَكْثِرُوا ذِكْرَ هَاذِمِ اللَّذَّاتِ " . يَعْنِي الْمَوْتَ . قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ .
অর্থ: “তোমরা বেশি বেশি করে সুখ-বিনাশকারী মৃত্যুর কথা স্মরণ কর, কারণ মৃত্য হচ্ছে ‘সুখ-বিনাশী’।” (জামিউত তিরমিযি, হাদীস নং ২৩০৭)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই হাদীসে মৃত্যুকে সুখ বিনষ্টকারীরুপে অভিহিত করেছেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
ألموت حق
অর্থ: “মৃত্যু হচ্ছে সত্য, সবচাইতে বড় বাস্তবতা।”
মুসলিম বা অমুসলিম কেউই মৃত্যুকে অবিশ্বাস করে না। তবু ইমাম হাসান আল বসরী বলেন,
يقول الحسن البصري رحمه الله: ما رأيت يقيناً لا شك فيه أشبه بشك لا يقين فيه من الموت]
অর্থ: “মৃত্যু থেকে নিশ্চিত আর কিছুই নেই, তবুও লোকে এমনভাবে এই নিশ্চিত বাস্তবতার সাথে আচরণ করে যেন এর মধ্যে সন্দেহ আছে, যেন তারা চিরজীবন এই দুনিয়ায় থাকবে।”
যেমন ভেবে দেখুন, আমরা জানিনা, কালকে আমাদের জন্য কি পরিমাণ রিযিক্ব নির্ধারিত আছে, তবু আমরা অনিশ্চিত পরিমাণ এই রিযিক্ব উপার্জনের জন্য কত প্ল্যান-প্রোগ্রাম করছি। কিন্তু নিশ্চিত মৃত্যুর জন্য আমরা কয়জন প্রস্তুতি নিচ্ছি?
ব্যাপারটা অবাক করার মতো! মৃত্যুর জন্য কিন্তু আমরা সত্যিকার অর্থে কোন প্রস্তুতিই নিচ্ছি না। যাদেরকে দেখবেন মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা আসলে ঠিক মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে না, বরং তারা মৃত্যু সংক্রান্ত এই দুনিয়াতে যেসব কাজ-কর্ম বা আচার-অনুষ্ঠান রয়েছে সেটার প্রস্তুতি নিচ্ছে, মৃত্যুর পরে কি আছে সেটার প্রস্তুতি নয়। তারা মৃত্যু পরবর্তী অনুষ্ঠান, তারা অন্তেষ্টিক্রিয়া কিংবা গোরস্তান এর পরিচর্যা নিয়ে যতটুকু চিন্তিত, মৃত্যুর পরে কি হবে তা নিয়ে ততটা নয়!
“মৃত্যুর পরে আপনার কি হবে?”
-এই প্রশ্নটা করা হয়েছিল, বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখক আইজ্যাক আসিমভকে তাঁর মৃত্যুর কয়েক মাস আগে। তিনি উত্তর দিলেন, “কিছুই হবে না, আমি মরে গেলে কোন কিছুই হবে না। আমার লাশ পচে মাটিতে পরিণত হবে।”
তার এত জ্ঞান, তার লেখা ভুরি ভুরি বই, তার বুদ্ধিবৃত্তি, তার সম্পদ আর খ্যাতি থাকা সত্ত্বেও তার সাথে আজ থেকে ১৪০০ বছর আগের আরবের নিরক্ষর, অজ্ঞ কাফিরদের কার্যত কোন পার্থক্য নেই। তার তথাকথিত জ্ঞান কোনই কাজে আসেনি, কারণ আমরা একটা মানুষকে যতই বুদ্ধিমান বা জ্ঞানী মনে করি না কেন, তার বুদ্ধিমত্তা প্রকৃতপক্ষে শূণ্যের কোঠায়, যদি সে আখিরাতে বিশ্বাস না করে।
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা এ প্রসঙ্গে বলছেন,
وَقَالُوا لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ أَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِي أَصْحَابِ السَّعِيرِ (১০)
অর্থ: “তারা আরও বলবে, হায় যদি আমরা শুনতাম অথবা বুদ্ধি খাটাতাম, তবে আমরা জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম না।” (সূরা মূলক, আয়াত ১০)
দেখুন তারা বলছে, “যদি আমরা বুদ্ধি খাটাতাম, আক্বল খাটাতাম... ”।
শেষ পর্যন্ত যদি জাহান্নামের আগুনেই পুড়তে হয়, তাহলে আমাদের এত এত মেধা, বুদ্ধিমত্তা জ্ঞান-বিজ্ঞানের কি মূল্য থাকল? অথচ আল্লাহ তা’আলা বলেছেন কেন আমাদেরকে মেধা দিয়েছেন,
وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ قَلِيلًا مَا تَشْكُرُونَ (৯)
অর্থ: “তিনি (মহান আল্লাহ) তোমাদেরকে দিয়েছেন কর্ণ, চক্ষু ও
অন্তঃকরণ। (তবে আফসোস!) তোমাদের মধ্যে সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।” (সূরা আস-সাজদা, আয়াত ৯)।
অর্থাৎ, আমাদের বিবেক এজন্য দেয়া হয়েছে যেন আমরা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি। আল্লাহ আমাদেরকে চোখ এবং কান দিয়েছেন যেন আমরা সেগুলো দিয়ে দেখি, শুনি, জানি। মন দিয়েছেন যেন আমরা চিন্তা করতে পারি এবং যে কেউ এই তিনটি নিয়ামতের সঠিক ব্যবহার করবে, সে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা বোধ করবে এবং ঈমান আনবে।
পূর্বের পর্ব: http://lighthouse24.org/blog/post/viewPost/?postid=1508
চলবে...
বিষয়: বিবিধ
১৬০০ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেকে রাগ করে আছে, কারটা রেখে কারটা যে আগে করি... : :
সুন্দর লিখেছেন। ভালো লাগলো খুব। জাযাকাল্লাহু খাইরান।
ঝাঝাকুমুল্লাহ খায়ের। আল্লাহ আপনাকে জান্নাত বাসী করুক, আমীন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন