আমাদের মৃত্যু পূর্বনির্ধারিত ও অবধারিত (পরকালের প্রস্তুতি : part 3)
লিখেছেন লিখেছেন মাই নেম ইজ খান ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০১:৩২:৫৮ দুপুর
আমাদের মৃত্যু পূর্বনির্ধারিত ও অবধারিত
সংকলন ও সম্পাদনা: মাওলানা মুহাম্মাদ ইসহাক খান
(শীঘ্রই বই আকারে প্রকাশ হতে যাচ্ছে ইনশাআল্লাহ।)
পূর্ব প্রকাশের পর:
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন,
كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ إِلا وَجْهَهُ لَهُ الْحُكْمُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ (৮৮)
অর্থ: “আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, আল্লাহর সত্তা ব্যতীত সবকিছু ধবংস হবে। বিধান তাঁরই এবং তোমরা তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।” (সূরা, ক্বাসাস, আয়াত ৮৮)
প্রত্যেকটা বস্তুর পরিসমাপ্তি আছে, একমাত্র আল্লাহ তা’আলার কোন শেষ নেই। আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন,
كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ (২৬) وَيَبْقَى وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلالِ وَالْإِكْرَامِ (২৭)
অর্থ: “প্রত্যেক সত্ত্বাই মৃত্যু আস্বাদনকারী, তারপর আমাদেরই কাছে তোমাদের ফিরিয়ে আনা হবে। (সূরা আর রহমান, আয়াত ৫৭) । আরো ইরশাদ হয়েছে,
كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ثُمَّ إِلَيْنَا تُرْجَعُونَ (৫৭)
অর্থ: “প্রত্যেক সত্ত্বাই মৃত্যু আস্বাদনকারী, তারপর আমাদেরই কাছে তোমাদের ফিরিয়ে আনা হবে।” (আল-আয়শাবূত ঃ ৫৭) ।
প্রত্যেককেই, মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে, আর যত যাই থাকুক না কেন, সকলকেই তার নির্দিষ্ট সময়ে মৃত্যুবরণ করতে হবে। এ সম্পর্কে আরো ইরশাদ হয়েছে,
وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَنْ تَمُوتَ إِلا بِإِذْنِ اللهِ كِتَابًا مُؤَجَّلًا.
অর্থ: “আর আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ মরতে পারে না- সেজন্য একটা সময় নির্ধারিত রয়েছে।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৪৫)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-
وَلِكُلِّ أُمَّةٍ أَجَلٌ فَإِذَا جَاءَ أَجَلُهُمْ لا يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً وَلا يَسْتَقْدِمُونَ.
অর্থ: “প্রত্যেক সম্প্রদায়ের একটি মেয়াদ রয়েছে। যখন তাদের মেয়াদ এসে যাবে, তখন তারা না এক মুহুর্ত পিছে যেতে পারবে, আর না এগিয়ে আসতে পারবে। ” (সূরা আরাফ, আয়াত ৩৪)
কিছু লোক যারা মৃত্যু থেকে পলায়ন করার চেষ্টা করছিল,
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ خَرَجُوا مِنْ دِيَارِهِمْ وَهُمْ أُلُوفٌ حَذَرَ الْمَوْتِ فَقَالَ لَهُمُ اللهُ مُوتُوا ثُمَّ أَحْيَاهُمْ إِنَّ اللهَ لَذُو فَضْلٍ عَلَى النَّاسِ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لا يَشْكُرُونَ
অর্থ: “তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা মৃত্যুর ভয়ে নিজেদের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন? অথচ তারা ছিল হাজার হাজার। তারপর আল্লাহ তাদেরকে বললেন মরে যাও। তারপর তাদেরকে জীবিত করে দিলেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের উপর অনুগ্রহকারী। কিন্তু অধিকাংশ লোক শুকরিয়া প্রকাশ করে না।” (সূরা বাকারাহ, আয়াত ২৪৩)
মুসলিম শরীফের এক হাদীসে উম্মে হাবিবা রা. বলেন,
قَالَتْ أُمُّ حَبِيبَةَ زَوْجُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم " اللَّهُمَّ أَمْتِعْنِي بِزَوْجِي رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَبِأَبِي أَبِي سُفْيَانَ وَبِأَخِي مُعَاوِيَةَ . قَالَ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " قَدْ سَأَلْتِ اللَّهَ لآجَالٍ مَضْرُوبَةٍ وَأَيَّامٍ مَعْدُودَةٍ وَأَرْزَاقٍ مَقْسُومَةٍ لَنْ يُعَجِّلَ شَيْئًا قَبْلَ حِلِّهِ أَوْ يُؤَخِّرَ شَيْئًا عَنْ حِلِّهِ وَلَوْ كُنْتِ سَأَلْتِ اللَّهَ أَنْ يُعِيذَكِ مِنْ عَذَابٍ فِي النَّارِ أَوْ عَذَابٍ فِي الْقَبْرِ كَانَ خَيْرًا وَأَفْضَلَ " .
অর্থ: “হে আল্লাহ! আমার স্বামী রসূল দ্বারা আমাকে উপকৃত করুন তাকে একটি দীর্ঘ জীবন দান করার মাধ্যমে। আমার পিতা আবূ সুফিয়ান দ্বারা আমাকে উপকৃত করুন তাকে একটি দীর্ঘ জীবন দান করার মাধ্যমে এবং আমার ভাই মুয়াবিয়ার দ্বারা আমাকে উপকৃত করুন দ্বারা আমাকে উপকৃত করুন তাকে একটি দীর্ঘ জীবন দান করার মাধ্যমে।”
তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলছিলেন, তুমি এমন কিছু চাও যা আল্লাহ তোমাদের জন্য পূর্বনির্ধারিত করে দিয়েছেন, তোমাদের দিন গণনা করে রেখেছেন এবং তোমাদের রিযিক্ব যা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে এবং বন্টন করে দেয়া হয়েছে। তুমি যদি আল্লাহর কাছে জাহান্নামের আগুন থেকে এবং কবরের আযাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করতে তাহলে এটা তোমার জন্য অধিকতর মঙ্গলজনক দু’আ হত।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৯৪১)
আমরা আমাদের জন্য, আমাদের পিতা মাতা ভাইদের জন্য দীর্ঘায়ু কামনা করি। বলে থাকি, আল্লাহ তোমাকে হায়াত দান করুন!
অথচ আমরা কে কয়দিন বাচঁব তা পূর্ব নির্ধারিত। এটা কখনই পরিবর্তন হবার নয়। আর মৃত্যুর আগমন হবে কোন ঘোষণা ছাড়াই। মৃত্য হবে সেখানেই, আল্লাহ তা’আলা মৃত্যুকে যেখানে ঠিক করে রেখেছেন।
আমি আপনাদেরকে একটা বাস্তব ঘটনা বলছি। এটা ঘটেছিল রিয়াদে। একটা বিল্ডিং এর ৭ম তলায় কন্সট্রাকশনের কাজ করছিল এক কর্মী। হঠাৎ সে উপর থেকে পড়ে গেল, সেখানে নিরাপত্তামূলক কোন ব্যবস্থা ছিল না, সে সোজা ফুটপাথের উপর এসে পড়ল।
ভেবে দেখুন, ৭ম তলা থেকে একটা মানুষ সোজা এসে পড়েছে শক্ত কনক্রিটের ওপর! পথচারীরা তৎক্ষণাৎ তার দিকে ছুটে গেল, তারা ভাবল সে মারা গেছে, চারদিক থেকে লোকজন দৌঁড়ে আসল। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে লোকটি দাঁড়িয়ে পড়ল!
তার কিছুই হয় নি, সে লাফ দিয়ে আনন্দে দাঁড়িয়ে পড়ল। সে খুশী! আল্লাহ তা’আলা তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। সবাই অবাক বিস্ময়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকল। লোকটি এতটাই আশ্চর্য আর আনন্দিত হল যে, সে এই স্মরণীয় মুহূর্ত উদযাপন করতে সবাইকে দাওয়াত দিল। ড্রিংক্সের আমন্ত্রণ জানাল। তাই রাস্তার অপর পাশ থেকে ড্রিংকস আনতে রাস্তা পার হতে গেল। রাস্তা পার হবার সময় সে কিছুটা অমনোযোগী ছিল এবং হঠাৎ একটি গাড়ি এসে তার উপর দিয়ে চলে যায় এবং সে সাথে সাথে মারা গেল।
লোকটি ৭তলা থেকে পড়েও মরেনি, কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সেখানে সেভাবে তার মৃত্যু চান নি। বরং তিনি তার মৃত্যুর জন্য একটা নির্দিষ্ট স্থান-কাল-পাত্র ঠিক করে রেখেছিলেন, যেখানে তার আত্মাকে শরীর থেকে কেড়ে নেয়া হবে। সে বিল্ডিং থেকে পড়ে গিয়েছিল এই কারণে যে, আল্লাহ তাকে মৃত্যুর জন্য নির্ধারিত স্থানে তাকে নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। লোকটি বিল্ডিং থেকে পড়ে বেঁচে গিয়ে, মৃত্যুর দিকেই হাটঁতে শুরু করল।
সে যখন এত উচুঁ বিল্ডিং থেকে পড়েও মরল না, সে ভেবেছিল, তাকে বোধহয় অনেক দীর্ঘ জীবন দান করা হয়েছে, আর এই ভাবনাটা সাথে করে নিয়েই তার জীবনের পরিসমাপ্তি হল। সে ব্যাপারটা ভেবেছিল এমন যে, যদি এভাবে তার মৃত্য না-ই ঘটে, তাহলে নিশ্চয়ই, তার সামনে দীর্ঘ জীবন পড়ে আছে। কিন্তু ভাবতেও পারে নি, রাস্তার মাঝেই আজরাইলের সাথে ঠিক করা ছিল তার এপয়েন্টমেন্ট।
এমন আরো একটি ঘটনা আছে, মিসরে কয়েক বছর আগে একটা ভূমিকম্প হয়েছিল। বেশিরভাগ মিডিয়াতে খবরটি এসেছিল। সেখানে একটা লোক ধংসস্তুপের নিচে অনেকদিন বেঁচে ছিল, যদিও বা বেঁচে থাকার মত কোন অবস্থাই সেখানে ছিল না। কিন্তু সে বেঁচে ছিল, কারণ তার মৃত্যু সে সময় আল্লাহ চান নি। তার সাথে ছিল তার মা এবং বোন, দু’জনই মারা গিয়েছিল, কিন্তু তার কিছু হয় নি।
মৃত্যু আসবে কোন ধরণের ঘোষণা ছাড়াই, হঠাৎ করে। আমরা হয়তো ভাবছি, আমরা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নেব। কিন্তু এমন হতে পারে মৃত্যু এমনভাবে এসেছে যে আপনি বিন্দুমাত্র টেরও পান নি।
আপনি কত তাড়াতাড়ি মৃত্যুর দেখা পেতে পারেন তার সবচেয়ে ভাল উদাহারণ দিতে গেলে বলতে হয় কয়েক বছর আগে ভারতে ঘটে যাওয়া দু’টো বিমান বিধ্বস্ত হবার ঘটনা। যেখানে দু’টো বিমান, একটি সৌদি এবং অপরটি ইউক্রেনিয়ান এয়ারলাইন্সের। তাদের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। ভেবে দেখুন, দুটো বিমানের মধ্যে যখন এভাবে সংঘর্ষ হয় তখন তারা প্রায় ১৬০০ মাইল বেগে ধাক্কা খায়, কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই! রাস্তাঘাটের সাধারণ ঘটে যাওয়া দূর্ঘটনাগুলোতেই লোকজন তাৎক্ষণিক মৃত্যুবরণ করে আর সেখানে ভেবে দেখুন ১৬০০ মাইল বেগে দু’টো বিমানের দূর্ঘটনা।
চলবে...
বিষয়: বিবিধ
১২৬৭ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মৃত্যু এক অবশ্যম্ভাবী বিধান।
একে এড়ানোর কোনো পথই নেই।
অনেক ভালো লাগলো এ পর্বটিও। আসলেই যার যেখানে মৃত্যু যে সময়ে নির্ধারণ করা আছে, সেই যায়গা এবং সেই ক্ষণ একচুলও পরিবর্তন হবে না।
ধন্যবাদ সুন্দর লেখাটির জন্য।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
এটার কি কোন বই বেরিয়েছে?
মন্তব্য করতে লগইন করুন