পরকালের প্রস্তুতি
লিখেছেন লিখেছেন মাই নেম ইজ খান ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৮:২২:১৮ সকাল
পরকালের প্রস্তুতি
সংকলন ও সম্পাদনা: মাওলানা মুহাম্মাদ ইসহাক খান
আলহামদুলিল্লাহ, ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা সাইয়িদিনা মুহাম্মাদিন ওয়া আ’লা আলিহি ওয়া আসহাবিহী আজমাঈন।
আমরা মানব জাতি দুনিয়াতে এমন একটা ধারণা নিয়ে বেঁচে থাকি যে, এই দুনিয়াটা আমাদের। এটাই আমাদের থাকার স্থান, ঘরবাড়ি, এখানে আছি, থাকব, যেন এটা আমাদের চির আবাসস্থল। কিন্তু যে বাস্তবতা আমরা জানি না, বা জানতে চাই না যে আমরা একটি ট্রেনে ভ্রমণ করছি, যে ট্রেনটা একটা একটা করে স্টেশন পার হয়ে সর্বশেষ একটি গন্তব্যের দিকে যাচ্ছে। আর এই দুনিয়ার জীবন হচ্ছে এমনই একটা স্টেশনের শুরু মাত্র।
মুলত: আমরা এই দুনিয়ার নই, বা দুনিয়াটাও আমাদের নয়।
আমাদের হাতে যেন একটি টিকেট আছে, যেটার তিনটি অংশ আছে। আমরা মায়ের গর্ভে নয় মাস অবস্থান করি, তারপর সে টিকেটের একটা অংশ ছিড়ে ফেলা হয়। এরপর আমরা এই দুনিয়ার জীবনে প্রবেশ করি, আমাদের নতুন স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু হয়, এরপর যখন আমরা মারা যাই, তখন টিকেটের দ্বিতীয় অংশটুকু ছিড়ে ফেলা হয়। আমাদের হাতে থেকে যায় টিকেটের শেষ অংশটুকু, জান্নাত বা জাহান্নামের প্রবেশ করার সাথে শেষ অংশটুকুও ছিঁড়ে ফেলা হবে, আর সেটাই হবে আমাদের চূড়ান্ত গন্তব্যস্থল।
আমরা, এই দুনিয়ার চিরস্থায়ী বাসিন্দা না, এই দুনিয়া কেবলই আমাদের দীর্ঘ সফরের একটা ক্ষুদ্র অংশ মাত্র, তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
عن ابن عمر رضي الله عنهما قال أخذ رسول الله صلى الله عليه وسلم بمنكبي فقال كن في الدنيا كأنك غريب أو عابر سبيل.
অর্থ: “হযরত ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, প্রিয়নবী সা. আমার ঘাড়ে হাত রেখে বললেন, “এই দুনিয়াতে এমনভাবে বেঁচে থাকো যেন তুমি একজন মুসাফির।” (সহীহ বুখারী)
তিনি এই হাদীসের মাধ্যমে দুনিয়ার জীবনের বাস্তবতাকে এভাবে তুলে ধরতে চেষ্টা করেছেন যে, “ধরো, একটা মানুষ মরুভূমির পথ ধরে যাচ্ছে, এবং সে দেখল একটা গাছ, সেটা দেখে তার ছায়ার নিচে বসল, বিশ্রাম নিল এবং আবার তার অসম্পূর্ণ সফর সম্পন্ন করতে পুনরায় চলতে শুরু করল, এটাই হল দুনিয়ার জীবন।”
“পার্থিব জীবন ঐ পথিকের ন্যায়, যে গ্রীষ্মে রৌদ্রজ্জ্বল তাপদগ্ধ দিনে যাত্রা আরম্ভ করল, অতঃপর দিনের ক্লান্তিময় কিছু সময় একটি গাছের নীচে বিশ্রাম নিল, ক্ষণিক পরেই তা ত্যাগ করে পুনরায় যাত্রা আরম্ভ করল।”
আমরা গাছটার নিচে অল্প কয়টা মূহূর্ত ব্যয় করছি এবং এরপর আবার আগের মতই যাত্রা। সময়ের এই পথ চলা, আমাদের জীবনের, আমাদের অস্তিত্বের ক্ষয় ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রতিটি সেকেন্ডের সাথে সাথে আমাদের অস্তিত্ব ক্রমেই নিঃশেষ হচ্ছে। এই বাস্তবতা আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে যে, আমরা এখানকার কেউ নেই, আর তাই আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে মৃত্যুর জন্য।
আর এই বিষয়টি নিয়ে আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা শুরু করতে যাচ্ছি “আল-আখিরাহ” বা “পরকালের পথে যাত্রা”।
কেন আমরা এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলব? আমাদের অবশ্যই প্রতিটি কাজের পেছনে আমাদের উদ্দেশ্য কী তা জানতে হবে।
প্রথম কথা হচ্ছে, আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস ঈমানের একটি শাখা। এটা বিশ্বাসের একটি স্তম্ভ। আমরা পড়েছি, ‘ওয়া তু’মিনুনা বিল ইয়াওমিল আখিরা’ বা আখিরাতের জীবনের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা।
দ্বিতীয় কারণ নিয়ে আলোচনা করতে গেলে আমাদের ভাবতে হবে, আমাদের চারপাশে কেন এত এত সমস্যা? কেন একজন মুসলিম মদপান করে? কেন বা ব্যাভিচার করবে? বা সুদের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করবে? মিথ্যে বলবে কেন? আমাদের সমস্যাটা কোথায়?
ভাল করে চিন্তা করুন, হযরত আয়েশা (রা)-এর একটি কথা। তাঁর এই একটি কথাতেই আমাদের ব্যক্তিগত এবং সামাজিক জীবনের পরিবর্তনের ইশতেহার বা প্রোগ্রাম দেয়া আছে। তার এই একটি কথা যদি আমরা মেনে চলি, তাহলে আমরা আমাদের জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন দেখতে পাব।
সায়্যিদিনা আয়শা বলেন,
إِنَّمَا نَزَلَ أَوَّلَ مَا نَزَلَ مِنْهُ سُورَةٌ مِنَ الْمُفَصَّلِ فِيهَا ذِكْرُ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ حَتَّى إِذَا ثَابَ النَّاسُ إِلَى الإِسْلاَمِ نَزَلَ الْحَلاَلُ وَالْحَرَامُ، وَلَوْ نَزَلَ أَوَّلَ شَىْءٍ لاَ تَشْرَبُوا الْخَمْرَ. لَقَالُوا لاَ نَدَعُ الْخَمْرَ أَبَدًا. وَلَوْ نَزَلَ. لاَ تَزْنُوا. لَقَالُوا لاَ نَدَعُ الزِّنَا أَبَدًا.
অর্থ: “কুর’আনে সবার আগে যে জিনিষটির কথা বলা হয়েছে তা হল জান্নাত এবং জাহান্নাম। আর যতক্ষণ না পর্যন্ত লোকদের হৃদয় আল্লাহর প্রতি, ইসলামের দিকে নত হয়েছে, আকৃষ্ট হয়েছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এসেছে ঈমানের কথা আখেরাতের কথা। তারপর এসেছে হালাল এবং হারামের হুকুমগুলো। (এমনটি না হয়ে) যদি কুরআনে এই আয়াতটা সর্বপ্রথম নাযিল হত, যে, “তোমরা মদ খেও না”, তাহলে লোকেরা বলত, “আমরা কখনও মদ খাওয়া ছাড়ব না।” যদি সর্বপ্রথম এই আয়াত নাযিল হত যে তোমরা যিনা-ব্যাভিচারে লিপ্ত হয়ো না, তাহলে লোকেরা বলত: “আমরা কখনই যিনা-ব্যভিচার থেকে বিরত হব না”। (সহীহ বুখারী, ফাজায়েলে কুরআন অধ্যায়। হাদীস নং ৫০৪৪)
একটু দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে যে, আইন-কানুন সংক্রান্ত আয়াত মক্কী জীবনে খুব একটা নাযিল হয়নি, শরীয়াহর বেশিরভাগ আইন নাযিল হয়েছে মাদানী জীবনে। মক্কার জীবনটা ছিল এই শরীয়ার হুকুম-আহকামগুলো মেনে চলার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের সময়। এই সময়টা ছিল নিজের ঈমান পূর্ণ করার সময়, আর সেটি ছিল বারবার জান্নাত এবং জাহান্নামের কথা স্মরণ করার মধ্য দিয়ে, আখিরাতের জীবনের কথা স্মরণ করার মাধ্যমে। তাই মক্কী জীবনে বারবার বলা হয়েছে আল-গায়েব বা অদৃশ্যের কথা, যেন মানুষের হৃদয় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার প্রতি অনুগত হতে পারে, যেন অজ্ঞানতা আর অন্ধকারের পর্দা আমাদের মন থেকে উন্মোচিত হতে পারে। এরপরই আল্লাহ তা’আলা হালাল এবং হারামের হুকুমগুলো প্রকাশ করলেন।
চলবে...
বিষয়: বিবিধ
১৩৭৭ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
(পোস্ট মনে হয় ডবল হয়ে গেছে )
দুনিয়ার জীবনটা শুধু চলার এবং ক্ষানিক বিশ্রাম নেবার পথ নয় । এটা হল আখেরাতে আপনি কি পাবেন তার কর্মক্ষেত্র ।
এখানে যে আমল করবেন সেটার অনুরুপ ফল আখেরাতে পাবেন ।
এই ব্লগে অনেক টেকনিক্যাল প্রবলেম। কর্তৃপক্ষ এগুলো ফিক্স করে না।
নিউ পোষ্ট এর ঘর কপি করে কিছু পেষ্ট করার পর একটি স্পেস দিলে ডাবল লেখা হয়ে যায়।
এখন ঠিক করে দিয়েছি।
ভাবছি বাকী দুটো নিয়ে..
অনেক সুন্দর লিখেছেন। মনে ভাবনার অনেক খোরাক দেওয়াতে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
শুভেচ্ছা রইলো।
সংকলন ও সম্পাদনা: মাওলানা মুহাম্মাদ ইসহাক খান
মন্তব্য করতে লগইন করুন