পরিমিত আদর ও ভালোবাসায় বেড়ে উঠুক আগামী প্রজন্ম
লিখেছেন লিখেছেন মাই নেম ইজ খান ২৫ আগস্ট, ২০১৪, ০৯:২৭:১৯ রাত
(আমাদের অত্যন্ত্র প্রিয় একজন ব্লগার ও অনলাইনের চমৎকার লেখিকা আফরোজা হাসান আপুর শীঘ্রই প্রকাশিতব্য 'আপনার সন্তান, আপনার ভবিষ্যত' বই এর জন্য খান প্রকাশনীর প্রকাশকের কথা হিসেবে আমার লেখা-)
একজন পিতা বা মাতার কাছে তার সন্তানের চাইতে প্রিয় কিছু আছে আছে কি না আমার জানা নেই। সন্তান পিতা-মাতার কাছে সবচেয়ে বড় আপনজন। প্রত্যেক পিতা-মাতাই চান তার সন্তান একজন আদর্শ নাগরিক হোক। শিক্ষা-দীক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে অতুলনীয় মেধা ও মননশীল হোক। অর্জন করুক বিশ্বজোড়া জশ-খ্যাতি।
কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে, বর্তমান সময়ের অনেক অভিভাবকই আপন সন্তানের সর্বাঙ্গীন কল্যাণ ও মঙ্গল প্রত্যাশায় নিজেদের সর্বস্ব উজার করে দিলেও নিজেদের অজান্তেই তারা আপন সন্তানের জীবনে বেশ কিছু অপূর্ণতা সৃষ্টি করে দেন। তাদের জীবনে অনাকাঙ্খিত কিছু বাঁধা ও প্রতিবন্ধকতা তুলে দেন। সন্তানের দৈহিক সৌন্দর্য ও অবয়ব সুন্দর করার পেছনে তারা যে পরিমাণ সময়, মেধা ও শ্রম ব্যয় করে থাকেন তার দশভাগের একভাগও দিতে চান না সন্তানের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তার চিন্তা-চেতনা, বিশ্বাস আর ঈমানের চারা বীজ বপন ও তার পরিচর্যার পেছনে।
অথচ মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা পবিত্র কুরআনে বলেন,
الرَّحْمَنُ (১) عَلَّمَ الْقُرْآَنَ (২) خَلَقَ الْإِنْسَانَ (৩) عَلَّمَهُ الْبَيَانَ (৪)
অর্থ: “পরম করুণাময়, দয়ালু আল্লাহ। তিনি (মানুষকে) শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন। তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষ। তাকে শিখিয়েছেন ভাষা।” (সূরা আর রাহমান ৫৫ : ১-৪)পবিত্র কুরআনের উপরোক্ত চারটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু ব্যাপক অর্থবোধক আয়াত বা বাক্যের মধ্যে মহান রাব্বুল আলামীন একটি বিস্ময়কর তথ্য দিয়েছেন। তিনি প্রথমে ‘আর রাহমান(পরম করুণাময়)’ বলে তাঁর নিজের পরিচয় দিয়েছেন। এরপর বলেছেন, মানুষদেরকে কুরআন শিক্ষা দেয়ার কথা। এরপর বলেছেন তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন ও তাকে ভাষা শিখিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে আমরা দেখি যে, মানুষ পৃথিবীতে আগে আসে, তারপর সে ধীরে ধীরে ভাষা ও কথা-বার্তার সক্ষমতা লাভ করে, এরপর হয়তো সে কুরআনের শিক্ষা অর্জন করে। এই হিসেবে পবিত্র কুরআনের উপরোক্ত আয়াতে আগে মানুষ সৃষ্টি, তারপর মানুষকে কুরআন শিক্ষাদান ও ভাষার যোগ্যতা প্রদান করার বিষয়টি বলা উচিত ছিলো। কিন্তু আমরা দেখি যে, মহান আল্লাহ এখানে এর বিপরীত আগে কুরআন শিক্ষা দেয়া, এরপর মানুষ সৃষ্টির কথা বলেছেন।
মুফাসসিরীনে কিরাম এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন যে, এখানে আমাদের স্বাভাবিক দৃষ্টিতে মানুষ সৃষ্টির কথা আগে উল্লেখ করে তারপর তাকে কুরআন শিক্ষা দেয়ার কথা বলাটা ক্রমানুসারে অগ্রগণ্য হওয়া উচিত ছিলো বলে মনে হতে পারে। কিন্তু আসলে মানুষ যতক্ষণ না সে তার সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহকে চিনবে এবং কুরআনের ইলম অর্জন করবে ততক্ষণ পর্যন্ত কেবলমাত্র জন্মগ্রহণ আর রক্ত-মাংসে সুস্থ-সবলভাবে গড়ে উঠার কারণেই সে প্রকৃত মানুষ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। অর্থাৎ একজন মানুষ আর একটি প্রাণীর মাঝে ব্যবধান এখানেই যে, একজন কুরআনের জ্ঞান অর্জন করে শিক্ষিত হবে, মহান আল্লাহকে চিনবে, তার সম্পর্কে জানবে। আর অপরটি কেবল জন্মসূত্রে প্রাপ্ত তার দেহ বড় করা আর কিছু জৈবিক চাহিদার পেছনেই সারা জীবন ব্যয় করা। একজনের মাঝে কুরআনের শিক্ষা গ্রহণ করার মতো যোগ্যতা ও সামর্থ দেয়া হয়েছে, অপরটির মাঝে তা দেয়া হয়নি। তাই একটি চতুস্পদ প্রাণীর চেয়ে একজন মানুষ তখনই শ্রেষ্ঠ ও আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে পরিগণিত হতে পারে, যখন সে কুরআনের শিক্ষায় শিক্ষিত হবে। মহান আল্লাহর একত্ববাদ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা লাভ করবে। শিরক ও বিদআতমুক্ত হয়ে একনিষ্ঠ ঈমান ও তাওহীদী বিশ্বাসে বলিয়ান হবে।
একটি আদম সন্তান বা সৃষ্টির সেরা জীব একজন সম্মানিত মানুষ যখন ঈমান-আক্বীদা সংক্রান্ত ইসলামের মূল বুনিয়াদী বিষয়গুলো সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করবে, তখনই সে আসলে মহান আল্লাহর কাছে একজন মানুষ হিসেবে পরিগণিত হবে। কুরআনে বর্ণিত ইসলামের এই মৌলিক শিক্ষা গ্রহণ করা ছাড়া একজন ব্যক্তি মানুষের আকৃতিতে জন্মগ্রহণ করতে পারে, কিন্তু সে চতুস্পদ প্রাণীর চাইতে শ্রেষ্ঠ হতে পারে না। (অবশ্য ইসলামের মৌলিক বিষয়ের অপরিহার্য জ্ঞান অর্জনের পর জাগতিক যে কোনো উচ্চশিক্ষা গ্রহণে শরীয়তের পক্ষ থেকে কোন বাঁধা নেই।)
কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, আমাদের বর্তমান সমাজে কুরআন ও ইসলামের মৌলিক শিক্ষা তথা ঈমান-তাওহীদ, শিরক-বিদআত এবং দৈনন্দিন জীবনে ইসলামের অপরিহার্য নির্দেশনার ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। বিশেষত: শিশু-কিশোরদেরকে তাদের বাল্যকাল থেকেই এ ব্যাপারে একটি বুনিয়াদী শিক্ষার সুযোগ সংকুচিত করে ফেলার কারণে ভবিষ্যত প্রজন্মের অবস্থা যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা ভাবতেই গা শিউরে উঠে। এক সময় এদেশে মুসলিম সন্তানরা তাদের অভিভাবকদের সাথে ভোরে উঠে নামাজ পড়ে কুরআন পড়া শিখতো। প্রতিদিন সকালে ভোরের পাখিদের কলতানের সাথে প্রতিটি ঘরের জানালা দিয়ে কুরআন তিলাওয়াতের সুমধুর আওয়াজ ভেসে আসতো। কিন্তু বর্তমানে এই অবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। এখন আর আগের মতো মসজিদে ফজরের নামাজে পিতার হাত ধরে শিশুদের আগমন লক্ষ্য করা যায় না। ঘুম থেকে উঠে কুরআন পাঠের অভ্যাসের পরিবর্তে এখন আমরা প্রতিদিন ছোট-ছোট মুসলিম শিশুদেরকে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠিয়ে তাদেরকে স্কুলে, কিন্ডারগার্টেনে বা কোচিংয়ে পাঠিয়ে দেই। মুসলিম ঘরগুলো থেকে কুরআনের তিলাওয়াত ভেসে আসার পরিবর্তে হারমোনিয়ামের সুর শোনা যায়।
বাচ্চারা ঘুমের রেশ নিয়ে চোখ ডলতে ডলতে স্কুল ভ্যানে করে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যায়। তারা আর কুরআনের সংস্পর্শে আসার সুযোগ পায় না। এই যে তাদের জীবনের চাকা ঘোরা শুরু হলো, ব্যাস এভাবেই চলতে থাকে। তার সামনে পুরো জীবনের একটি মাত্র লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নির্ধারিত করে দেয়া হচ্ছে। আর তা হলো ভালো রেজাল্ট করে ভালো একটি চাকরী বা ব্যবসা করতে হবে। অনেক টাকা ইনকাম করতে হবে। সুন্দরী একটি মেয়েকে বিয়ে করে সুখের জীবন কাটাতে হবে। এটিই সর্বোচ্চ সফলতা। অথচ নিজ স্রষ্টা মহান আল্লাহর সাথে সম্পর্কহীন, কুরআনের শিক্ষা বঞ্চিত এবং ইসলামের মূল বুনিয়াদী বিষয় সম্পর্কে অচেতন হয়ে রক্ত-মাংসের মানুষ হলেও প্রকৃত মানুষ কখনোই হওয়া যায় না। কেবল জৈবিক চাহিদা পূরণের এমন জীবনাচরণই যদি সব হয় তাহলে চতুস্পদ প্রাণীর থেকে আমাদের আলাদা বৈশিষ্ট্য ও শ্রেষ্ঠত্ব রইলো কোথায়?আজকের শিশুটিই আগামী দিনের নবীন-যুবক-অভিভাবক। এরপর সে-ই এক সময় সমাজ ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করবে। আজ যদি এই শিশুটিকে ঈমান ও তাওহীদের মৌলিক শিক্ষা না দেয়া হয়, তার সাথে তার প্রতিপালকের সম্পর্ক জুড়ে দেয়া না যায়, তবে কিয়ামতের দিন কিন্তু এজন্য আমাদেরকেই সবার আগে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
আজ আমরা যারা অনেক কষ্টে উপার্জন করে, খুবই আদর আর যতেœর সাথে নিজ নিজ আপন সন্তানদেরকে লালন-পালন করছি। তাদেরকে উত্তমরূপে গড়ে তুলতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলছি। প্রিয় সন্তান ও সজনদের শারীরিক সুস্বাস্থ্য আর সুঠাম দেহের জন্য বিভিন্ন উপাদেয় খাদ্য-খাবার এবং ভিটামিন এনে দিচ্ছি, তারা কি একবারও ভেবে দেখেছি যে, আমাদের সন্তানদের নৈতিক ও আদর্শিক চাহিদা পূরণ হচ্ছে কি? তাদের আত্মিক উন্নতি ও প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ার জন্য ঈমান ও ইসলামের মূল বুনিয়াদী সঠিক শিক্ষা কি তারা পাচ্ছে?সন্তানদেরকে মহান আল্লাহর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার কারণে বড় হয়ে এখন আর তারা নিজ অভিভাবকদের কথাই শুনে না। অনেক সন্তান আজ নিজ পিতা-মাতাকেই সম্মান করে না। এর মূল কারণ হলো, আমরা তাদেরকে ঈমান ও তাওহীদের শিক্ষা দেই নি। তাদের নৈতিকতাকে মজবুত করিনি। যার কারণে তারাও আজ নীতিহীন চতুস্পদ প্রাণী আর জড়পদার্থের মতোই আচরণ করছে। আমরাও যেন দিন দিন এতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি। এখন তো বৃদ্ধ মাতা-পিতাদের জন্য পাশ্চাত্যের ধাঁচে ‘ওল্ডহোম’ও তৈরী করা হয়েছে। যেনো তাঁদেরকে অপ্রয়োজনীয় ও বিরক্তিকর হিসেবে সেখানে নির্বাসন দেয়া যায়।আমাদের দেশের বর্তমান সরকারী, বেসরকারী, ইংলিশ মিডিয়াম, ক্যাডেট স্কুল এবং বিভিন্ন মাদ্রাসার শিশু শিক্ষা বিষয়ক সিলেবাসগুলোর দিকে তাকালে এক বিরাট হতাশা ছাড়া আর কিছুই বলার থাকে না। অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হলো, এই সকল প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশের সিলেবাসেই একটি ছাত্রের জন্য বিশেষ করে একজন শিশু ও কিশোরের জন্য অপরিহার্য নৈতিক ও আদর্শিক শিক্ষা নেই বললেই চলে। ইসলামের মৌলিক ও বুনিয়াদী বিষয়ের অভাবও বলে শেষ করার মতো নয়। আর ইসলামের নামে যা কিছু সামান্য পাঠ্যও আছে তার অধিকাংশই ইসলামের বিকৃতি ও অপব্যখ্যা। আমাদের আগামী প্রজন্মের সুন্দর ও মননশীলভাবে বেড়ে ওঠার জন্য এসকল বিষয়ে আজ আমাদের গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা ও উদ্যমী পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার।
সন্তানকে শাসনের ক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয়: আরেকটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন বলে মনে করছি। আর তা হলো সন্তান লালন-পালন ও তাদের সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে অনুশাসন। এক্ষেত্রে আমাদের সকল অভিভাবকদের মনে রাখা দরকার যে আপনার সন্তান আপনার প্রতিপক্ষ নয়। একইভাবে আপনার সন্তান আপনার রাগ ও ক্রোধ প্রশমিত করার স্থূল জরপদার্থও নয়। নয় আপনারই একমাত্র আশা-আকাঙখা প্রতিফলিত করার গিনিপিগ।সেদিন অফিসে আসার পথে একটি বাচ্চাকে তার মায়ের হাতে খুবই শক্ত হাতে পিটুনি খেতে দেখলাম। বাচ্চাটি কান্না করছিলো আর মাফ চাচ্ছিলো। কিন্তু তার মায়ের মন যেনো কিছুতেই ঠান্ডা হচ্ছিলো না। আমার দৃষ্টিতে বাচ্চাটিকে পিটুনির মাত্রাটি তার বয়স অনুপাতে অনেক বেশি মনে হচ্ছিলো। বিষয়টি দেখে কষ্ট পেয়েছিলাম।
এ রকমটি প্রায়ই হচ্ছে। বিশেষত: মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের উপর শাসনের নামে মার-পিটের মানসিকতাটি অনেক পরিবারেই প্রকট। অভিভাবকের মন্তব্য হচ্ছে, এরকম করে শাসন না করলে নাকি তাদের সন্তান ‘মানুষ’ হবে না। কিন্তু আমার কাছে বিষয়টি মোটেই মানবিক ও ন্যায়ানুগ মনে হয়নি। আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতায় আমি এমন অনেক পরিবারকে দেখেছি, যারা তাদের সন্তানদের উপর ছোট থাকতেই এমন প্রকট আকারে শাসন করতো, বড় হয়ে সেই সকল সন্তানের অনেকেই এখন তাদের অভিভাবকদেরকে মোটেও মান্য করে না। অধিক শাসন তাদের অনেকের অনেক প্রতিভাকে পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছে।
এটি অনুচিত। একটি ছোট শিশু যতক্ষণ পর্যন্ত না বুঝমান হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত বিশেষ প্রয়োজনে তাকে মৃদু শাসন করা যেতে পারে, কিন্তু কঠোর শাসন অবশ্যই নয়। কারণ এ সময় ছোট বাচ্চাদের উপর অধিক শাসন ও অল্পতেই তাদের শক্ত পিটুনি দিলে এতে তাদের মানসিকতা পরিবর্তন হয়ে যায়। অনেকের মাঝে অহেতুক ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। বড়দের তুলনায় একটু বেশি দৌঁড়-ঝাপ ও উচ্চ স্বরে আওয়াজ করা ছোট বাচ্চাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য অপরিহার্য্য একটি বিষয়। কারণ আমাদের কাছে বাচ্চাদের এই চিল্লা-চিল্লি অহেতুক ও বিরক্তিকর মনে হলেও গলার স্বর ও জড়তা কাটানোর জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যায়াম বটে। যারা সঙ্গীত ও উপস্থাপনা করেন তাদের অনেকেই আমাকে জানিয়েছেন যে তাদের বিশেষ কয়েকটি ট্রেনিংয়ে তাদের মুখের জড়তা কাটানোর জন্য তাদেরকে বাচ্চাদের মতো ঐ সকল শব্দ উচ্চারণ করতে হয়েছে।
একইভাবে যেই সকল বাচ্চারা খুব চটপটে ও বেশি দুষ্টুমি করে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি থাকে। এজন্য একটু বেশি দুষ্টুমি করলেই কোনো শিশুকে কঠোরভাবে শাসন করা বা কড়া পিটুনি দেয়া খুবই গর্হিত একটি কাজ। এর দ্বারা অভিভাবক তার নিজের অজান্তেই আদরের সন্তানের ক্ষতি করছেন। তবে সাথে সাথে মাত্রাতিরিক্ত আদরও বর্জনীয়। সন্তানের কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়াও অনুচিত। তাকে অবশ্যই সংশোধন করতে হবে এবং প্রয়োজনে সামান্য শাসনও করতে হবে। কিন্তু এই আদর বা শাসন কোনোটাই যেনো মাত্রাতিরিক্ত হয়ে না যায়। আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা বলে, তিন বছরের উর্ধ্বের বাচ্চাদেরকে কঠোরভাবে না পিটিয়ে ভালোভাবে কোনো বিষয় বুঝিয়ে বললে এটা বেশি ফল দায়ক হয়। কোনো শিশু যদি ভালো ভাবে বুঝতে পারে যে এটি তার জন্য অনুচিত এবং কেউ তার মাঝে জেদ না সৃষ্টি করে তাহলে সে সেই কাজ থেকে নিজেই নিজেকে বিরত রাখে। প্রিয়নবী সা. এর অনেক হাদীসের মাঝেও সন্তানদের সাথে সুন্দর ব্যবহার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাসূল সা. স্বীয় নাতী হযরত হাসান ও হুসাইন রা. এর সাথে খুবই সুন্দর ব্যবহার করতেন। অনেক সময় তাদের দুষ্টুমিতেও মৌন সমর্থন দিতেন। রাসূল সা. নামাজে সিজদায় গেলে তারা রাসূলের পিঠে উঠে বসলে রাসূল তার সিজদাকে দীর্ঘ করতেন। তারা নেমে যাওয়ার আগে সিজদা থেকে মাথা তুলতেন না। তিনি এতো ভালোবাসতেন ও স্নেহ করতেন ছোটদের।
কিন্তু আজ আমরা তো পারলে আমাদের মসজিদের ধারে-কাছেও বাচ্চাদের আসতে দিতে নারাজ। যদি কোনো বাচ্চা মসজিদে এসে একটু দুষ্টুমি করে তাহলেই সেরেছে। সেই বাচ্চা এবং তার অভিভাবক উভয়েরই খবর আছে। সকল মুসল্লিরা নামাজের সালাম ফেরানোর জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকেন। যেন এরপর তাদের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য হচ্ছে সেই বাচ্চাকে শায়েস্তা করা! এর ফলে ছোটকাল থেকেই বাচ্চাদের মনে অন্যান্য অহেতুক ভয়ের মতো মসজিদ ভীতিও সৃষ্টি হচ্ছে। এটাও আমাদের জন্য ক্ষতিকর একটি মারাত্মক বিষয়। অথচ উচিত ছিলো মুসলিম সন্তানদেরকে আরো আদর করে মসজিদে টেনে আনা। মোটামুটি বুঝ হয়েছে এমন সকল সন্তানকে সাথে নিয়ে নামাজ আদায় করা। কেউ বেশি দুষ্টুমি করলে সহজ ও সাবলীলভাবে তাকে বুঝিয়ে দেয়া।
যাদের সন্তান আছে বা আশ-পাশে পরিচিত ও আত্মীয়দের সন্তান আছে আমরা সবাই যেনো তাদের সাথে সুন্দর ও উত্তম ব্যবহার করি। অহেতুক বকা দেয়া কিংবা তাদের সাথে কঠোর ব্যবহারের পরিবর্তে সুন্দর ব্যহারের মাধ্যমে তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করি। আর সবার আগে তাদেরকে নৈতিক ও আদর্শিক শিক্ষা দেয়ার চেষ্টা করি। বিশেষত: ছোটকালে তাদেরকে কুরআন শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করি। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক দিন। আমীন
বিষয়: বিবিধ
১৬০৮ বার পঠিত, ৩৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহ আপনাকে ও আফরোজা আপুকে উত্তম বদলা দান করুন! আমীন!
ফাকিবাজ হারি
ফাকিবাজ হারি"" -- এটাতে মুরাক্কাব গাইর মুফীদ..... এইডা আগে পুরন করেন..... হারি শীঘ্রই কি হপে/কি পাবে? তাড়াতাড়ি বলেন.... নয়তো পাহাড়ের উপর থেকে ধাক্কা দেবো
যাজাকুমুল্লাহু খাইর .....
এম. আর. এম. ভাইয়া, সম্ভবত আপনি এই বইএর লেখিকাকে জানেন না। উনি এই ব্লগের একজন নক্ষত্র। সবার শ্রদ্ধেয়া একজন সিনিয়র ব্লগার আফরোজা হাসান - (এখানে দেখুন উনার ব্লগ) উনার কয়েকটা পোস্ট পড়ে দেখার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করছি। আপনাকে ধন্যবাদ ভাইয়া।
দুষ্টু হারিকেনের জন্য এবার বেত নিয়ে এলাম... = =
ব্লগারদের লেখাগুলো বই আকারে প্রকাশ হওয়া দরকার। খুবই খুশী হওয়ার মতো একটি সংবাদ।
তবে হাসান ভাই এবং আফরোজা আপুকে অনেকদিন মনে হয় দেখা যাচ্ছে না এখানে! একসময় মনে হয় আফরোজা আপুকে জিজ্ঞেস করে জেনেছিলাম – তারা জামাই-বউ দু’জনেই এখানে লিখেন।
https://www.facebook.com/photo.php?fbid=4466940008412&set=a.3009961144851.1073741825.1737161932&type=1&ref=notif¬if_t=like
https://www.facebook.com/photo.php?fbid=4466940008412&set=a.3009961144851.1073741825.1737161932&type=1&ref=notif¬if_t=like
প্রকাশকের কথাগুলো ভাল লাগল। ধন্যবাদ প্রকাশক ভাইকে
মন্তব্য করতে লগইন করুন