মাত্রাতিরিক্ত কঠোরতা নয়, সন্তানকে পরিমিত আদর ও ভালোবাসা দিন

লিখেছেন লিখেছেন মাই নেম ইজ খান ১৫ আগস্ট, ২০১৪, ১১:০৩:৫১ সকাল



সেদিন বাসা থেকে বের হয়ে অফিসে আসার পথে একটি বাচ্চাকে তার মায়ের হাতে খুবই শক্ত হাতে পিটুনি খেতে দেখলাম। বাচ্চাটি কান্না করছিলো আর মাফ চাচ্ছিলো। কিন্তু তার মায়ের মন যেনো কিছুতেই ঠান্ডা হচ্ছিলো না। আমার দৃষ্টিতে বাচ্চাটিকে পিটুনির মাত্রাটি তার বয়স অনুপাতে অনেক বেশি মনে হচ্ছিলো। বিষয়টি দেখে কষ্ট পেয়েছিলাম।

এ রকমটি প্রায়ই হচ্ছে। বিশেষত: মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের উপর শাসনের নামে মার-পিটের মানসিকতাটি অনেক পরিবারেই প্রকট। অভিভাবকের মন্তব্য হচ্ছে, এরকম করে শাসন না করলে নাকি তাদের সন্তান ‌'মানুষ' হবে না। কিন্তু আমার কাছে বিষয়টি মোটেই মানবিক ও ন্যায়ানুগ মনে হয়নি। আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতায় আমি এমন অনেক পরিবারকে দেখেছি, যারা তাদের সন্তানদের উপর ছোট থাকতেই এমন প্রকট আকারে শাসন করতো, বড় হয়ে সেই সকল সন্তানের অনেকেই এখন তাদের অভিভাবকদেরকে মোটেও মান্য করে না। অধিক শাসন তাদের অনেকের অনেক প্রতিভাকে পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছে।

এটি অনুচিত। একটি ছোট শিশু যতক্ষণ পর্যন্ত না বুঝমান হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত বিশেষ প্রয়োজনে তাকে মৃদু শাসন করা যেতে পারে, কিন্তু কঠোর শাসন অবশ্যই নয়। কারণ এ সময় ছোট বাচ্চাদের উপর অধিক শাসন ও অল্পতেই তাদের শক্ত পিটুনি দিলে এতে তাদের মানসিকতা পরিবর্তন হয়ে যায়। অনেকের মাঝে অহেতুক ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। বড়দের তুলনায় একটু বেশি দৌঁড়-ঝাপ ও উচ্চ স্বরে আওয়াজ করা ছোট বাচ্চাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য অপরিহার্য্য একটি বিষয়। কারণ আমাদের কাছে বাচ্চাদের এই চিল্লা-চিল্লি অহেতুক ও বিরক্তিকর মনে হলেও গলার স্বর ও জড়তা কাটানোর জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যায়াম বটে। যারা সঙ্গীত ও উপস্থাপনা করেন তাদের অনেকেই আমাকে জানিয়েছেন যে তাদের বিশেষ কয়েকটি ট্রেনিংয়ে তাদের মুখের জড়তা কাটানোর জন্য তাদেরকে বাচ্চাদের মতো ঐ সকল শব্দ উচ্চারণ করতে হয়েছে। একইভাবে যেই সকল বাচ্চারা খুব চটপটে ও বেশি দুষ্টুমি করে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি থাকে। এজন্য একটু বেশি দুষ্টুমি করলেই কোনো শিশুকে কঠোরভাবে শাসন করা বা কড়া পিটুনি দেয়া খুবই গর্হিত একটি কাজ। এর দ্বারা অভিভাবক তার নিজের অজান্তেই আদরের সন্তানের ক্ষতি করছেন। তবে সাথে সাথে মাত্রাতিরিক্ত আদরও বর্জনীয়। সন্তানের কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়াও অনুচিত। তাকে অবশ্যই সংশোধন করতে হবে এবং প্রয়োজনে সামান্য শাসনও করতে হবে। কিন্তু এই আদর বা শাসন কোনোটাই যেনো মাত্রাতিরিক্ত হয়ে না যায়।

আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা বলে, তিন বছরের উর্ধ্বের বাচ্চাদেরকে কঠোরভাবে না পিটিয়ে ভালোভাবে কোনো বিষয় বুঝিয়ে বললে এটা বেশি ফল দায়ক হয়। কোনো শিশু যদি ভালো ভাবে বুঝতে পারে যে এটি তার জন্য অনুচিত এবং কেউ তার মাঝে জেদ না সৃষ্টি করে তাহলে সে সেই কাজ থেকে নিজেই নিজেকে বিরত রাখে।

প্রিয়নবী সা. এর অনেক হাদীসের মাঝেও সন্তানদের সাথে সুন্দর ব্যবহার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাসূল সা. স্বীয় নাতী হযরত হাসান ও হুসাইন রা. এর সাথে খুবই সুন্দর ব্যবহার করতেন। অনেক সময় তাদের দুষ্টুমিতেও মৌন সমর্থন দিতেন। রাসূল সা. নামাজে সিজদায় গেলে তারা রাসূলের পিঠে উঠে বসলে রাসূল তার সিজদাকে দীর্ঘ করতেন। তারা নেমে যাওয়ার আগে সিজদা থেকে মাথা তুলতেন না। তিনি এতো ভালোবাসতেন ও স্নেহ করতেন ছোটদের।

কিন্তু আজ আমরা তো পারলে আমাদের মসজিদের ধারে-কাছেও বাচ্চাদের আসতে দিতে নারাজ। যদি কোনো বাচ্চা মসজিদে এসে একটু দুষ্টুমি করে তাহলেই সেরেছে। সেই বাচ্চা এবং তার অভিভাবক উভয়েরই খবর আছে। সকল মুসল্লিরা নামাজের সালাম ফেরানোর জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকেন। যেন এরপর তাদের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য হচ্ছে সেই বাচ্চাকে শায়েস্তা করা!

এর ফলে ছোটকাল থেকেই বাচ্চাদের মনে অন্যান্য অহেতুক ভয়ের মতো মসজিদ ভীতিও সৃষ্টি হচ্ছে। এটাও আমাদের জন্য ক্ষতিকর একটি মারাত্মক বিষয়। অথচ উচিত ছিলো মুসলিম সন্তানদেরকে আরো আদর করে মসজিদে টেনে আনা। মোটামুটি বুঝ হয়েছে এমন সকল সন্তানকে সাথে নিয়ে নামাজ আদায় করা। কেউ বেশি দুষ্টুমি করলে সহজ ও সাবলীলভাবে তাকে বুঝিয়ে দেয়া।

যাদের সন্তান আছে বা আশ-পাশে পরিচিত ও আত্মীয়দের সন্তান আছে আমরা সবাই যেনো তাদের সাথে সুন্দর ও উত্তম ব্যবহার করি। অহেতুক বকা দেয়া কিংবা তাদের সাথে কঠোর ব্যবহারের পরিবর্তে সুন্দর ব্যহারের মাধ্যমে তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করি। আর সবার আগে তাদেরকে নৈতিক ও আদর্শিক শিক্ষা দেয়ার চেষ্টা করি। বিশেষত: ছোটকালে তাদেরকে কুরআন শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করি। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক দিন। আমীন।

(লেখাটি প্রথম প্রকাশ ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ ভোর ৬:৫২)

বিষয়: বিবিধ

১৪৪৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

254526
১৫ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০১:৪৭
কাহাফ লিখেছেন : الضرب للصبيان كالمح فى الطعام.. এই প্রবাদ বাক্যের কি হবে তাহলে?
১৫ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১৩
198350
মাই নেম ইজ খান লিখেছেন : এটা হলো মৃদু শাসন। অতিরিক্ত কঠিন আচরণের কথা এখানে বলা হয় নি।
254542
১৫ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০২:২১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ সুন্দর শিক্ষনিয় পোস্টটির জন্য। আমাদের দেশে সন্তানকে অতি আদর এবং অতি শাসন উভয় টিই অত্যন্ত প্রকট। অনেক অভিবাবক আছেন যারা শাসন করে নিজের অজ্ঞানতা ঢাকতে চান। কোন কিছুর কারন জানতে চাইলে ধমকে দেন বাবা-মার কোন নির্দেশ এর কারন জানতে চাওয়া গুনাহ বা বেয়াদবি। এরফলে শিশুদের মধ্য থেকে চলে যায় জ্ঞান স্পৃহা।
আর মসজিদে শিশুদের ব্যাপারে আমরা যা করি মনে হয় দেশের এই অবস্থার জন্য সেটা অনেকাংশে দায়ি। পাঁচওয়াক্ত নামাজ সকল খারাপ কাজ থেকে দুরে রাখে। কিন্তু আমরা শিশুদের নামাজ এর পরিবর্তে অন্য কাজে উৎসাহিত করি। এই নিয়ে আমার একটা ভাল অভিজ্ঞতা আছে। একবার এক ইমাম সাহেব এর সাথে কথা হচ্ছিল তিনি মসজিদে শিশুদের জন্য নামাজের অসুবিধা হওয়ার কথা বলছিলেন। আমি তখন প্রশ্ন করলাম নামাজে মনযোগ এর সাথে আদায় করার নিয়ম নয়কি। তিনি হ্যাঁ সুচক জবাব দিলে আমি হযরত আলি (রাঃ) এর পায়ের তির বেরকরার ঘটনাটি বলে প্রশ্ন করি যে তির বেরকরার সময়ও তার নামাজ এর মনোযোগ নষ্ট হয়নি সেখানে চার-পাচ কাতার পিছনের বাচ্চাদের জন্য তার নামাজ নষ্ট হয় কেন। তিনি কি ঠিকমতো মনযোগের সাথে নামাজ আদায় করেননা!! বিব্রত মেীলবি সাহেব কোন উত্তর না দিয়েই এই অধম এর সঙ্গ ত্যাগ করেন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File