লস খাওয়ার অভিজ্ঞতা ১
লিখেছেন লিখেছেন মাই নেম ইজ খান ১২ আগস্ট, ২০১৪, ১০:৫৪:২২ সকাল
সময়টি ২০০৬ সাল। ১১৬ নয়া পল্টনে (জামান ম্যানশনের পশ্চিম পার্শ্বে খান মিডিয়া সেন্টার নামে একটি দোকানের জন্য ১ লক্ষ টাকা এ্যডভান্স করেছিলাম সেখানকার প্রভাবশালী একজনকে। নোয়াখালী হোটেলের মালিক পক্ষের একজন ছিলেন তিনি। ভদ্রলোক আমাকে দোকান বুঝিয়েও দিয়েছিলেন। সেখানে দোকানে সাইনবোর্ডে নামও লিখেছিলাম। দোকানে নতুন ফ্যান লাগিয়েছি। একটি শোকেসে খান প্রকাশনীর বই ও খান অডিও ভিডিও সেন্টার এর ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশনায় বের হওয়া মুহিব খানের ইঞ্চি ইঞ্চি মাটি, মরু সাহারা, সীমান্ত ‘সীমান্ত খুলে দাও’ ও দিন বদলের দিন এসেছে ক্যাসেট গুলো তাকে তাকে সাজি দোকান সাজানো শুরুও করেছিলাম। কিন্তু তাকদীর!
সময়টি সেই বছরের সম্ভবত: রজব মাসের শেষের দিকে। দাওরায়ে হাদীসের শেষ বর্ষ। আমি জামিয়া রাহমানিয়া, সাত মসজিদ মাদ্রাসার ছাত্র তখন। পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এমন সময় হঠাৎ খবর নয়া পল্টন জামান ম্যানশনের সামনের অংশে নতুন দোকান গুলো সব সরকারের বিশেষ বাহিনী ভেঙ্গে দিয়েছে। আশ পাশের অনেক দোকানও ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। আমি যেখানে দোকান নিয়েছিলাম সেখানকার কিছু জায়গা সরকারী ও কিছু জায়গা ব্যক্তি মালিকানাধীন। কিন্তু ঐ সময়ে সেখানকার চৌধুরী আলম ও স্থানীয় নেতাদের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দের স্বীকার হয়ে শেষ পর্যন্ত সবগুলো দোকান ভাঙ্গা আর ঠেকাতে পারেন নি আমাকে যিনি ভাড়া দিয়েছিলেন সেই ভদ্রলোক।
মাত্র ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছি। বিভিন্ন জন থেকে ঋণ করে দোকানের জন্য এডভান্স দিয়েছি ১ লাখ টাকা। মুহিব খানের লেখা 'আল কুরআনের কাব্যানুবাদ' খান প্রকাশনী থেকে ছাপার কাজ চলছে। সেজন্যও একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। কাব্যানুবাদে আমাদের দোকানের নাম ঠিকানাও প্রিন্ট হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় দোকান গুঁড়িয়ে দিয়েছে সরকারী উচ্ছেদকাজে নিয়োজিত বুলডোজার। অবস্থা কেমন হতে পারে একবার ভাবুন!
দোকান উচ্ছেদের সংবাদ প্রথম শুনে আমি বিষয়টি বিশ্বাস করতে পারি নি। কারণ আমি যাদেরকে টাকা দিয়েছি তারা স্থানীয় প্রভাবশালী। টাকা দেয়ার আগে শ্রদ্ধেয় গাজী আতাউর রহমান, শাহ ইফতেখার তারিক ও মুহিব ভাইদের সাথে আলোচনাও করেছি। তাদের প্রিন্ট মিডিয়ার প্রেসের পাশেই দোকান। এমনটি হওয়ার কথা কেউ ভুলেও ভাবে নি।
মাদ্রাসা থেকে দ্রুত আসলাম। এসে দেখি আমার আশে পাশের অনেক দোকানের বিশাল ক্ষতি হয়েছে। দামী কাঁচ দিয়ে একটি বড় শো-রুম করেছিলো আমার দোকান থেকে পূর্ব দিকে। সেই দোকানটি সম্পূর্ণ ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। বেচারা হয়তো সবই গেছে। অন্য অনেকেরও অনেক ক্ষতি হয়েছে।
আমার দোকানের শাটার বেঁকে আছে। তাড়াতাড়ি দোকানের জিনিষ পত্র বের করে প্রিন্ট মিডিয়ার প্রেসে নিয়ে রাখলাম।
আলহামদুলিল্লাহ জিনিষ পত্র প্রায় সবই পেয়েছি। (অবশ্য ওগুলো অতো দামীও ছিলো না যে কেউ নিয়ে যাবে।) নগদ লসের মধ্যে দোকানে রং করা, ইলেক্ট্রিক কাজ করানো আর সাইনবোর্ড লেখার টাকা গচ্চা।
এডভান্সের টাকা ফেরত পাবো কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিলো। তবে আলহামদুলিল্লাহ সেই ভদ্রলোক আমার পুরাে টাকাটাই ফেরত দিয়েছিলেন। (যদিও ফেরত না দিলে হয়তো তেমন কিছুই করতে পারতাম না।) আল্লাহ তাকে সর্বোত্তম প্রতিদান দিন।
এরপর শুরু হলো নতুন করে টেনশন। আর জীবন পথের নতুন সব চ্যালেঞ্জ।...
বিষয়: বিবিধ
১৫৮১ বার পঠিত, ২৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আচ্ছা চেষ্টা করবো। যেহেতু লাভ লস উভয় টারই অভিজ্ঞতা আছে আলহামদুলিল্লাহ।
সে সময় তারা এ ব্যাপারে একটু বেশীই বাড়াবাড়ি করেছে ।
র্যাংগস ভবন ভেঙ্গেছিল যে কারণে , একই রকম কারন থাকা সত্ত্বেও তারা ভাঙ্গেনি বিজেএমইএ ভবন .
র্যাংগস ভবন বিমান উড্ডয়নের জন্য সমস্যা হচ্ছিল যেটা ক্যাণ্টণম্যাণ্টের বেশ বাইরে এবং বিমান বন্দর থেকেও ক্যাণ্টণম্যাণ্টের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে দূরে ।
অথচ ক্যাণ্টণম্যাণ্টের ভেতরের প্রায় ১৮-২০ তলার আশালতা, বনলতা, স্বর্নলতা , উদয়ন , উদ্দীপন ..... এরা কোন সমস্যা করে না ! জাহাঙ্গীর গেটের মুখেও এখন প্রায় ১৫-১৬ তলা ভবন নির্মিত হয়ে গেছে , সেটাও সমস্যা না !
এসবের কারনে দক্ষিন দিক থেকে আসা বিমান গুলো উত্তর দিকে গিয়ে ঘুরে আসতে হয় ল্যান্ড করার জন্য ।
ঘটনাটি সেই সময়েরই মনে হচ্ছে। : :
দাওরা হাদীস ২০০৬।
বাকি তথ্য আমার প্রফাইলের নিচে দেয়া আছে।
আপনার বিভিন্ন লেখা পড়ে বুঝতে পেরেছি।
ঈমানের মজবুতি রয়েছে যথেষ্ট। আশা করি
ইসলামের খেতমত করে যাবেন। আমাদের
জন্য লিখে যাবেন। যাতে আমাদের ঈমান শক্ত হয়।
আল্লাহ আপনার নেক দু'আর বাস্তবতা আমার মাঝে দান করুন এই কামনা করি।
তবে এবারের টিভি মিডিয়ার বিষয়টিও আর্থিক হিসেবেও হয়েছে 'আরেকটি লসের অভিজ্ঞতা'। সামনে এটিও এক সময় লিখবো ইনশাআল্লাহ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন