সিরিয়া ও ইরাকের সাম্প্রতিক খিলাফত ঘোষণাকে সমর্থন করলে কি গুনাহ হবে?
লিখেছেন লিখেছেন মাই নেম ইজ খান ২৪ জুলাই, ২০১৪, ০৪:০২:৪৫ বিকাল
সাম্প্রতিক সময়ে সব চাইতে আলোচিত বিষয় গুলোর অন্যতম হচ্ছে ইরাক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক রাষ্ট্র ''আদ দাওলাতুল খিলাফাতুল ইসলামিয়া'' এবং এর খলীফা আবূ বকর আল বাগদাদী দা. বা.।
এটি খুবই স্পর্শকাতর একটি বিষয়। এই রমজানের শুরু থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত এটি নিয়ে ভাবছি। খেলাফত ঘোষণার পর আমাদের অবস্থান ও কর্মতৎপরতা কি হওয়া উচিত?
একজন মুসলিম ও মুমিন হিসেবে আমাদের ভূমিকাই বা এক্ষেত্রে কি হওয়া দরকার?
১৯২৪ সনের ৩মার্চ তুরস্কে ইসলামিক খিলাফত ও খলীফা সিস্টেমের আনুষ্ঠানিক বিলুপ্তি ঘটায় কুফফাররা। খিলাফত ব্যবস্থা যদিও সেই সময়টিতে খুবই ভঙ্গুর এবং দূর্বল অবস্থায় ছিলো কিন্তু তারপরও যতদিন পর্যন্ত খিলাফতের নামটি বিদ্যমান ছিলো ততদিন পর্যন্ত কাফিররা ফিলিস্তিনের দিকে হাত বাড়াতে সক্ষম হয় নি।
১৯২১ সনের দিকে তুরস্কের সর্বশেষ খলীফার কাছে ইহুদীদের একটি প্রতিনিধি দল গিয়ে ইহুদীদেরকের ফিলিস্তিনের একটি অংশ দেয়ার বিনিময়ে তুর্কি খিলাফত সরকারকে অনেক প্রলোভন দেখিয়েছিলো। তুর্কি খিলাফতের সকল ঋণ পরিশোধ করে দেয়া, তুরস্কের অর্থনীতিকে পুনরায় সমৃদ্ধ করাসহ আরো অনেক সুবিধার বিশাল ফিরিস্তি ছিলো সেই ইহুদী প্রতিনিধি দলের হাতে। কিন্তু তৎকালীন সেই দূর্বল খলীফাও কেবলমাত্র খলীফা হওয়ার জন্যই সেদিন একটি চমৎকার বাক্য দিয়ে ইহুদীদেরকে বিদায় করে দিয়েছিলেন তার দরবার হতে। আর তা ছিলো-
"ফিলিস্তিন মুসলিমরা নিজেদের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে স্বাধীন করেছে। পুরো ফিলিস্তিন তো দূরের কথা তার এক ইঞ্চি জমীনও অমুসলিম কাউকে দেয়ার কোনো সুযোগ ইসলাম কাউকে দেয়নি। তোমরা আমাদের শরীরকে খন্ড খন্ড করতে পারবে কিন্তু যতদিন খিলাফত বিদ্যমান থাকবে- ফিলিস্তিনকে মুসলিম মানচিত্র থেকে আলাদা করতে পারবে না। । যদি খিলাফত বিলুপ্ত হয়ে যায় তাহলে তোমরা ফিলিস্তিনকে ফ্রিই দখল করে নিতে পারবে।"
এরপর তারা নানাবিধ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ১৯২৪ সনের ৩মার্চ অবশেষে খিলাফতকে আনুষ্ঠানিকভঅবে বিলুপ্ত করতে সক্ষম হয়। খিলাফতকে বিলুপ্ত করার মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই ১৯৪৮ সালে ইহুদীরা দখল করে নেয় ফিলিস্তিন।
এরপর পেরিয়ে গেছে অনেক দিন। বিগত ৯০ বছর যাবত মুসলিমরা খলীফা বিহীন অবস্থা আছে। মুসলিমদের খিলাফত আর খলীফাহ আর ফিরে আসে নি। অথচ রাসূল তার হাদীসে পরিস্কারভাবে বলেছেন-
عن عبد الله بن عمر عن نبي الله صلى الله عليه وسلم أنه قال [من خلع يداً من طاعة لقي الله يوم القيامة ولا حجة له ومن مات وليس في عنقه بيعة مات ميتة جاهلية] رواه مسلم
অর্থ: "হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন, যে ব্যক্তি খলীফার আনুগত্য হতে সামান্য পরিমাণ দূরে সরে গেলো সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে এমন অবস্থায় যে তার কোনো সম্বল ও প্রমাণ থাকবে না। আর যে এমন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে যে তার গর্দানের উপর খলীফার বাইআত নেই, তার মৃত্যু হবে জাহেলি জুগের মৃত্যু।" (সহীহ মুসলিম)
আমরা এই বিগত ৯০ বছরে অনেক বিষয়েই সাহাবায়ে কিরামের ইজমার কথা বলেছি। কিন্তু রাসূলের ইন্তিকালের পর তার লাশ মোবারককে দাফন করা বিলম্ব করে সাহাবায়ে কিরামের খিলাফতের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ এবং আগে খলীফা নিযুক্ত করে তারপর রাসূলের জানাযা ও দাফন সম্পন্ন করার বিষয়টি নিয়ে ভাবার এবং ৩ দিনের অধিক মুসলিমদের খলীফা বিহীন থাকা হারাম হওয়ার সাহাবায়ে কিরামের সর্ব সম্মত ঐক্যত্যের এই বিষয়টিকে কখনো সামনে আনিনি।
অবশ্য এই সময়ে খিলাফতের জন্য বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কিছু কাজ হয়েছে। কিন্তু তা সামগ্রিকভাবে তেমন কোনো ফলাফল আনতে পারে নি। মাঝখানে আফগানিস্তানে ৫ বছর ইসলামিক রাষ্ট্র বা ইমারাহ বিদ্যমান ছিলো। কিন্তু সেখানেও বাস্তবিক কিছু কারণেই হয়তো খলীফাহ ও খিলাফতের বিষয়টিকে আমরা প্রত্যক্ষ করি নি।
এরপর নানা ঘটনা পরিক্রমায় ইরাক ও সিরিয়ায় শুরু হলো জিহাদ। চলমান জিহাদে মুসলিম মুজাহিদগণ মহান আল্লাহর সাহায্যে বিজয় অর্জন করতে লাগলেন। একের পর এক এলাকা, শহর ও নগর মুজাহিদদের হাতে আসতে লাগলো। একটা পর্যায়ে দেখা গেলো যে আশ-শামের আলেপ্পো থেকে 'ইরাক্বের দিয়ালা পর্যন্ত বিস্তৃত আয়তন প্রায় ৩,৫০,০০০ বর্গ কিলোমিটারেরও বেশী আইএস মুজাহিদগণ দখল করে নিতে সক্ষম হলেন এং যা এখনও প্রতিদিন বাড়ছে। 'ইরাক্বের ২য় বৃহত্তম মহানগর মসউল, আশ-শাম সিরিয়ার ৩য় বৃহত্তম মহানগর আর-রাক্কাহ; এছাড়াও জারাবলুস-মানবিয-আল বাব-মাদায়ীন-আল বুকামাল-তাল আফার-আল ক্বায়িম-রাওয়া-হাদীছা-বাইযি-সারক্বাত-তিকরিত-ফালুজ্জা ইত্যাদি যাতে লক্ষ লক্ষ মুসলিমের বসবাস।
'ইরাক্বের ৫০% আর সিরিয়ার ৩৫% ভূমির নিয়ন্ত্রন এখন খিলাফাহ'র নিয়ন্ত্রণে। 'ইরাক্বের ৩২% আর সিরিয়ার ৬০% তেল-গ্যাস ক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রন এখন খিলাফাহ'র হাতে।
এই খলীফা ও খিলাফত সম্পর্কে সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তি এবং সিরিয়ার কুফফার বাশার আল আসাদ ও ইরাকের শিয়া মালিকি ও তার মিত্র আমেরিকা প্রতিনিয়ত ফন্দি করে যাচ্ছে। সম্মুখ সমরে তারা সকলেই মার খাচ্ছে। কিন্তু এখনও তারা এই খিলাফতের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য কোনো অর্জন করতে পারেনি।
এখন এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলের শাসন ব্যবস্থা কি হবে?
এ নিয়ে অনেক আলোচনা পর্যালোচনার পর সেখানকার প্রভাবশালী আইএস মুজাহিদগণ তাদের মজলিসে শূরা ও আহলুল হাল্ল ওয়াল আকদের মাধ্যমে খিলাফত ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিলেন। রমজানের প্রথম শুক্রবার মসূলে মুসলিমদের খলীফা হিসেবে খুতবা দিলেন আবূ বকর আল বাগদাদী। এরপর এ নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে শুরু হলো নানা তর্ক বিতর্ক ও আলোচনা, সমালোচনা।
অবশ্য ইতোপূর্বে আইএসএইএসের কিছু অতি আবেগী ভাইদের হাতে অপর কিছু মুজাহিদদের শাহাদাতের খবর এসেছে। এর মধ্যে কিছু হতাহতের বিষয়টি আইএস অস্বীকার করেছে। কিছু বিষয়ে মুসলিমদের মধ্যকার আভ্যন্তরীণ তিক্ত বিভেদ ও সাম্রাজ্যবাদীদের ইন্ধনও কাজ করেছে বলে সংবাদ এসেছে। এই সকল কলহ ও হত্যাকান্ড কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
কিন্তু কথা হলো ঘোষণা হওয়া এই খিলাফত ও খলীফা সম্পর্কে এখন আমরা কি সিদ্ধান্ত নিতে পারি?
আমরা যদি এই খিলাফত ও তার খলীফাকে সমর্থন করি তাহলে কি গুনাহ হবে?
না সমর্থন না করলে আমরা গুনাহগার হবো?
এ বিষয়ে সকলের মন্তব্য আশা করছি। জাযাকুমুল্লাহ।
বিষয়: বিবিধ
১৭৯১ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বটে!
আমিও শুরুতে সন্দেহে পড়েছিলাম-
তবে "খিলাফত" "দাবীদার"দের ব্যাপারে অনেক কথা আছে- বিশ্বব্যাপী প্রায় সকল পরিচিত ইসলামী ব্যক্তিত্ব ও ফুকাহায়ে কিরাম এটিকে আরেকটি মুসলিমবিধ্বংসী ষড়যন্ত্র মনে করছেন এবং "বাতিল" বলেছেন!!
আল্লামা ইউসুফ কারদ্বাভীও একটি নাতিদীর্ঘ অভিমত দিয়েছেন- সেটি দেখতে পারেন!
[দুঃখিত, লিংকটা এই মুহূর্তে দিতে পারছিনা]
জামায়াতের লোকরা যে বরাবর আমেরিকা আর পশ্চিমা অমুসলিম শক্তির দালাল এই লেখাটা তার প্রমান ।
তা না হলে আমেরিকার লাগানো চাড়া গাছকে কেন সমর্থন করতে যাবে মওদুদি ও ওহাবী সন্ত্রাসীরা ।
দেশের কোনায় বসে বড় বড় কথা বলা।
কবর পূজারী।
এ বিষয়ে লেখক নিজেও মন্তব্যের মাধ্যমে সবার মতামত আশা করেছেন।
আমি অবশ্যই যৌন জিহাদি ও ওহাবী সন্ত্রাসীদের নিয়ে একটা লেখা লিখবো । আশা করি, আমার সাথেই থাকবেন ।
আমার বর্তমান লেখাগুলো পড়ার জন্য আপনাকে বিনীতভাবে অনুরোদ করছি ।
এখন আবু বকর আল বাগদাদী সাহেবের খিলাফত ও নিজেকে খলিফা ঘোষনার পর অনেকের মতো আমিও দ্বিধায় আছি। এ বিষয়ে বিস্তারিত বলার সময় আমার মতে এখনো আসেনি, যেহেতু তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি কোন দলিল এখনো আমরা পাইনি। সুতরাং আমার মত হলো, অন্তত মুজাহিদ হিসেবে তাদেরকে আমরা অবশ্যই সমর্থন করতে পারি। কেননা তারা ইরাকের মুসলিমদের শিআদের অত্যচারের হাত থেকে রক্ষা করেছেন।
অনন্তর যারা অহেতুক তাদের গালাগালী করে তাদের একটু প্রশ্ন করতে চাই, আসলেই যে তারা এজেন্ট ইত্যাদি এর পক্ষে তাদের হাতে কি প্রমাণ আছে? আর যদি নাই থাকে তাহলে তারা কি না জেনে কারো সম্পর্কে মিথ্যাচারের পরিণতি জানেন না!
মন্তব্য করতে লগইন করুন