শাপলার শহীদদের আত্মত্যাগ ও আমাদের দায়িত্ব
লিখেছেন লিখেছেন মাই নেম ইজ খান ০৬ মে, ২০১৪, ০২:৪৫:২২ রাত
দেখতে দেখতে একটি বছর পার হয়ে গেছে। শাপলা চত্ত্বরের শহীদী ঈদগাহে গত বছরের এই দিনটিতে ঘটেছিলো এক নারকীয় ঘটনা। এই বঙ্গভূমিতে এবং এই প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের ইতিহাসে যার দ্বিতীয় নজীর জানা নেই। শাপলা চত্ত্বরে ঈমানের অগ্নিপরীক্ষা দেয়া উলামায়ে কিরাম ও মু'মিন, মুসলিমদের জন্য আজ একটি স্মরণীয় দিন। আজকের দিনে গত বছরের সেই ঐতিহাসিক ঘটনায় শাহাদাতবরণকারী সকল শহীদদের কথা স্মরণ হচ্ছে। মহান আল্লাহ সকল শহীদদেরকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম ও মর্যাদা দান করুন। আমীন।
শাহাদাত মুমিনদের জন্য কোনো পরাজয় নয়। বরং সৌভাগ্যের রাজমুকূট। মুসলিমরা তাদের সারা জীবনই ব্যয় করে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। কুরআনের সূরায়ে তাওবার ১১১ নং আয়াতের দাবী অনুসারে মুনিদের জীবন, সম্পদ সবই তো মহান আল্লাহর কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। এগুলোর মালিক তো মহান আল্লাহ। সুতরাং আল্লাহর নির্দেশিত ও নির্ধারিত পথে এই পন্য গুলোকে ক্রেতার কাছে সমর্পণ করাই তো বুদ্ধিমানের কাজ।
মহান আল্লাহর সাথে মুমিনের এই চুক্তির ধরণটিই হলো -ক্রেতা যখন চাইবেন তখনই তাকে তার প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে হবে। এর আগ পর্যন্ত স্বযতনে যথাযথভাবে হেফাজত করতে হবে। এক্ষেত্রে মহান আল্লাহ তার বান্দাদের মধ্যে থেকে কাউকে আগে ডেকে নেন। কাউকে পরে। কেউ আগে তার মহান প্রতিপালকের কাছে নিজের সর্বস্ব উজার করে দিয়ে জান্নাতের পাখী হয়ে যান। আবার কেউ দুনিয়াতে কিছুদিন সময়ও পান। তবে এক্ষেত্রে যাদের ডাক আগে আসে তারা অন্যদের চাইতে আগেই চিন্তা ও দায়িত্ব মুক্ত হতে পারেন। বাকিদের ক্ষেত্রে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হয় -যতক্ষণ না তার সেই নির্দিষ্ট সময়টি আসে। তাই ইসলামে শহীদ হওয়া বা গাজী হওয়া -উভয়টিকেই মহা বিজয় হিসেবে ধরা হয়। তবে স্বাভাবিকভাবেই শহীদদের শাহাদাত ও তাদের রক্তের বিনিময়ে আল্লাহর যমীনে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার গুরু দায়িত্বটা গাজীদের উপরই অর্পিত হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে যদি কেউ অলসতা বা অবহেলা করে কিংবা তার দায়িত্ব পালনে যথাযথভাবে সক্রিয় না হয়, তাহলে তার ব্যাপারে দুশ্চিন্তাটা থেকেই যায়।
অনেক ঘটনা, চড়াই-উৎড়াই, রাজনীতির কূটিল বাক পেরিয়ে, কারো সুবিধা আবার কারো অসুবিধা করে দিয়ে ইতিহাসের অবিশম্ভাব্য ঘটনা হিসেবে এবং মহান আল্লাহর চূড়ান্ত ইচ্ছার প্রতিফলন হিসেবেই শাপলা চত্ত্বর ও তার মাঝে শত সহস্র শাহাদাতের ঘটনা সংগঠিত হয়েছে -প্রথমদিকে বিষয়টির এমন ভয়াবহতা হয়তো অনেকেরই ধারণারও অতীত ছিলো। ঠিক যেমনটি ছিলো ইসলামের সর্বপ্রথম যুদ্ধ বদরের ক্ষেত্রে।
বদরের যুদ্ধের প্রথম দিকে মুসলিম এবং কাফির কারোই ইচ্ছা ছিলো না এমন ভয়াবহ একটি যুদ্ধে জড়ানো। মুসলিমদের লক্ষ্য ছিলো আবূ সুফিয়ানের সমরাস্ত্রের বহর আর যুদ্ধযাত্রার পূর্বে মক্কাবাসীদেরও লক্ষ্য ছিলো আবূ সুফিয়ানকে নিরাপদে মক্কায় নিয়ে আসা। কিন্তু আল্লাহর টার্গেট ছিলো এর মাধ্যমে কিছু সাহাবীকে শহীদ করে তাগুতের মূল উৎপাটন। যেমনটি তিনি বলেছেন-
وَإِذْ يَعِدُكُمُ اللَّهُ إِحْدَى الطَّائِفَتَيْنِ أَنَّهَا لَكُمْ وَتَوَدُّونَ أَنَّ غَيْرَ ذَاتِ الشَّوْكَةِ تَكُونُ لَكُمْ وَيُرِيدُ اللَّهُ أَن يُحِقَّ الحَقَّ بِكَلِمَـٰتِهِ وَيَقْطَعَ دَابِرَ الْكَـٰفِرِينَ*
অর্থ : “আর স্মরণ করো ঐ সময়ের কথা। যখন মহান আল্লাহ দু’টি কাফেলার একটির উপর তোমাদের বিজয়ের ওয়াদা করেছিলেন। তোমরা চাচ্ছিলে এমনটি যাতে যা অত্যন্ত সহজসাধ্য-প্রতিবন্ধকতাহীন তাই তোমাদের হোক। আর আল্লাহ চাচ্ছিলেন সত্যকে স্বীয় বাণী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করতে এবং কাফিরদের ভিত্তিমূল উপড়ে ফেলতে।” (সূরা আনফাল : ৭)
একইভাবে গত বছরের শাপলার শাহাদাতের ঘটনা যে এতো ব্যাপক ও বিস্তৃত হবে তা উলাায়ে কিরাম বা অন্য অনেকের ধারণাতেও ছিলো না। তাদের লক্ষ্য ছিলো মাত্র নাস্তিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক একটি ব্যবস্থা। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা ছিলো এর মাধ্যমে পুরো নাস্তিক্যবাদ এবং ইসলাম বিরোধী শক্তির মূলোৎপাটন ও এই ভূখন্ডে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ আগমনের পথ সুগম করা।
সবার শেষে মহাকৌশলী মহান আল্লাহর ইচ্ছাই বাস্তবায়িত হয়েছে। বদরের মতো এখানেও পরিস্থিতি হয়েছে অকল্পনীয়। যার কিছু সুফল তো দেখা ইতোমধ্যে বাকি গুলোও পর্যায়ক্রমে সামনে আসবে ইনশাআল্লাহ।
গত বছরের এই দিনে যারা শাহাদাত বরণ করেছিলেন তারা সর্বোতভাবেই সফল হয়েছেন। তবে এই ঘটনার আগে পরে যারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে তাদের আজ নিজের আমলনামা ফিরে দেখা দরকার।
যারা এক সময় প্রকা্শ্যে সাক্ষাতকার দিয়ে বলেছিলো- 'ইসলামী খিলাফত বা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা আমাদের উদ্দেশ্য নয়' তাদেরও আজ আবার ভেবে দেখা দরকার যে সেদিন এমন ফালতু ও অপ্রয়োজনীয় কথা বলা তাদের আসলে উচিত হয়েছিলো কি না।
আজ যারা গুরুত্বপুর্ণ দায়িত্বে থেকে তার অসৎব্যবহার কিংবা অলস ও অকর্মণ্য আচরণ করছেন, নেতৃবৃন্দকে সঠিক তথ্য না দিয়ে কেবলমাত্র তেল সরবরাহ করতে ব্যস্ত তাদেরও নিজেদের কার্যক্রম নিয়ে আরেকবার ভেবে দেখা দরকার। শহীদদের রক্তস্নাত অবয়ব গুলোকেও নিজেদের দৃষ্টির সামনে আবার তুলে আনা দরকার।
একইভাবে যারা একটি একেবারেই নতুন সংগঠনের কাছ থেকে অল্প সময়েই সব ধরণের বিজয় প্রত্যাশা করেন তাদেরও ভেবে দেখা দরকার নিজেদের অতিরিক্ত প্রত্যাশা ও আকাঙ্খার সীমা সম্পর্কে।
যারা হেফাজত থেকে তাদের আশানুরূপ উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারেন নি, এক সময় যারা হেফাজত সম্পর্কে প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকলেও এখন কেবলই বিরোধীতা করছেন আর হলুদ মিডিয়ার বিভ্রান্তি ও মিথ্যাচারকে ওহী মনে করে শ্রদ্ধেয় উলামায়ে কিরামের ব্যপক সমালোচনায় লাগামছাড়া হয়ে যাচ্ছেন তাদেরও গভীরভাবে ভেবে দেখা দরকার যে ইসলামের জন্য তাদের নিজেদের ত্যাগ ও কুরবানী কতটুকু!
আর যে সকল অসভ্য, অভদ্র আর নব্য সেলিব্রেটিরা সামান্য কয়টি লাইক পাওয়ার আশায় তার চাইতে কয়েক যুগের সিনিয়র, সর্বোজন শ্রদ্ধেয় মুরুব্বী, উলামায়ে কিরামের বিরুদ্ধে নাস্তিকদের মতোই 'তেতুল' কিংবা অন্যান্য চরম গর্হিত মন্তব্য করছেন তাদের নিজ বিবেকের প্রতি অন্তত: এতোটুকু উত্তম আচরন করা উচিত।
আফসোস!
শত আফসোস! আমরা কি জবাব দিবো কিয়ামতের ময়দানে আমাদের শহীদ ভাইদের সামনে?
তারা তো তাদের দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়েছেন যথাযথভাবে। শরীরের শেষ রক্ত বিন্দুটি পর্যন্ত উজার করে ঢেলে দিয়েছিলেন পীচঢালা রাজপথে। কয়েক যুগের বন্ধ্যা এই ভূ-অঞ্চলে আবারও শাহাদাতের দরজা খুলে দিয়ে গেছেন তারা। তাদের সেই ধারাবাহিকতা যথাযথভাবে আমরা যদি ধরে রাখতে না পারি, তাদের মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে ও সেই সূত্র ধরে এদেশের মানুষের মাঝে ইসলাম ও ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার বিষয়টি আরো গভীরভাবে উপলব্ধি করাতে না পারি এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম পুরোপুরি কায়েমের দিকে এগিয়ে যেতে না পারি তাহলে কিন্তু ভয়ংকর জবাব দিহিতার সম্মুখীন হতে হবে আমাদের। সেই উপলব্ধিটুকুও কি আমাদের আছে?
বিষয়: বিবিধ
১২৮৩ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এ পর্যন্ত আপনার কয়জন লোক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ইসলামের জন্য কাজ করতে গিয়ে তা জানাবেন কি?
পারলে আপনিও নামেন না! আহমাদ শফী দা. বা. এর মতো আপনিও আপনার প্রতিপক্ষ বা জালিমদের বিরুদ্ধে সমাবেশ করুন। পারলে কিছু করে দেখান।
চিল নিয়েছে কাকে বলে কাকের পেছনে দৌঁড়ানোর দিন কি এখনও আছে?
আর বয়োবৃদ্ধ, সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমের নাম এমন অভদ্রভাবে সেই নাস্তিক ইনুর মতো উচ্চারণ না করলে কি হতো না?
আমার অবাক লাগে সেই গাজীদের আচরণে, যারা সেদিন প্র্যক্ষদর্শী ছিল তারা মিথ্যা প্রচারণার (একটাও গুলি চলেনি, কেউ মরেনি, গায়ে রংমেখে পড়ে ছিল)বিরুদ্ধে আজও আওয়াজ তোলেনি৷
তবে একটি জামাত সর্বদাই মিডিয়ার মাধ্যমে সত্যের প্রচারে আছে, থাকবে ইনশাআল্লাহ।
সেইদিনের ফলাফল কার ঘরে উঠেছে সেটা আমি বলতে পারিনা। কিন্তু এটা বলতে পারি শাহদাতের ফল সবাই তার নিয়ত অনুযা্য়ি পাবেন।
সুতরাং যে যতটুকু অবদান রেখেছে সে ততটুকুর কল্যাণ পাবে। তবে সুযোগ থাকার পরও অন্যায়ের প্রতিবাদ না করে শুধু এবাদত বন্দেগী করলে সে এবাদত ধুলোর মত পরিত্যক্ত হবে। আল্লাহর ঘোষণা
আপনার এই মূল্যায়নের সাথে একমত। আপনাকে মোবারকবাদ।
সুন্দর যুক্তিপূর্ণ এবং সঠিক কথা বলেছেন।
কিছু মনে করবেন না। একটা বই প্রকাশ করতে চাইছিলাম। ব্লগের মাধ্যমে জেনেছি আপনার প্রকাশনি আছে। মেহেরবানি করে যদি আমাকে একটা ইমেইল করেন তাহলে বিস্তারিত আলাপ করতাম। ইমেইল:
মন্তব্য করতে লগইন করুন