হারিয়ে গেলো শাহবাগ ও ঘুরে ফিরে হেফাজত

লিখেছেন লিখেছেন মাই নেম ইজ খান ২১ এপ্রিল, ২০১৪, ০১:০৩:২৬ দুপুর





অনেক আগে জনৈক কাবুলিওয়ালার একটি প্রবাদ বাক্য শুনেছিলাম, যার বাংলা অর্থ হচ্ছে- 'আমি তো কম্বলকে ছাড়তে চাই, কিন্তু কম্বল আমাকে ছাড়ে না।'

বেচারা ভাল্লুককে কম্বল মনে করে টেনে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো। কিন্তু একটা পর্যায়ে নিজের ভুল বুঝতে পেরে কে ভাল্লুককে ছেড়ে দিলেও পরিশেষে দেখা গেলো ভাল্লুক তাকে আর ছাড়ছে না।

বর্তমান হেফাজত নিয়ে নাস্তিক ও তাদের দোসরদের অবস্থা হয়েছে অনুরূপ। যেই নীরব, নিস্তব্ধ, নিভৃতচারী হেফাজত কেবলমাত্র তাদের ঘর, মসজিদ আর মাদ্রাসার মাঝেই নিজেদেরকে সীমাবদ্ধ করে রেখেছিলো, মুসলিমদের ব্যক্তিগত ঈমান, আকীদা আর পারিপার্শ্বিক সামান্য কিছু আমল সঠিকভাবে চালিয়ে রাখার ক্ষেত্রেই যাদের চিন্তা, মেধা, সময় ও শ্রম নির্দিষ্ট ছিলো, সেই ঘুমন্ত শার্দুলদেরকে সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তি ও কর্পোরেট মিডিয়াগুলো শাহবাগের কতিপয় বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী, বখাটে আর অসভ্য-বর্বর নাস্তিক মানবতার ঘৃণিত দুশমনদেরকে দিয়ে খুঁচিয়ে জাগ্রত করে দিয়েছে। এখন হেফাজত যখন একবার জেগে উঠেছে এখন তাকে তো আর সামলানো সহজ হচ্ছে না। ফলে নাস্তিকদের বর্তমান অবস্থা হয়েছে সেই 'কম্বল লোভী' বেকুবের মতো। কম্বলের লোভে শেষ পর্যন্ত যার জানটাও যায় যায়।

কিল-গুতো হজমকরে সেদিন টিভির সংবাদে ছন্নছাড়া ইমরান আক্ষেপ করছিলো আর বলছিলো- ''....এখন আর তাদের গণজাগরণ মঞ্চ দরকার নেই। তাদের দরকার হেফাজতে ইসলাম...।''

আমি সংবাদ দেখছিলাম আর মুখ টিপে হাসছিলাম। মনে মনে বলছিলাম, আরে বেকুব! তুমি যদি কুরআন পড়তে তাহলে অনেক আগেই এই মহাসত্য উপলব্ধি করতে সক্ষম হতে। কারণ মহান আল্লাহ তো অনেক আগেই বিষয়টি পরিস্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন-

كَذَلِكَ يَضْرِبُ اللهُ الْحَقَّ وَالْبَاطِلَ فَأَمَّا الزَّبَدُ فَيَذْهَبُ جُفَاءً وَأَمَّا مَا يَنْفَعُ النَّاسَ فَيَمْكُثُ فِي الْأَرْضِ كَذَلِكَ يَضْرِبُ اللهُ الْأَمْثَالَ

অর্থ: ‍"...এমনিভাবে আল্লাহ হক ও বাতিলের দৃষ্টান্ত দেন। অতঃপর উচ্ছিষ্ট ফেনাগুলো নিঃশেষ হয়ে যায়, আর যা মানুষের উপকার করে, তা যমীনে থেকে যায়। এমনিভাবেই আল্লাহ দৃষ্টান্তসমূহ পেশ করে থাকেন।" (সূরা রা'দ ১৩, আয়াত ১৭)

অবশ্য ক্ষমতার দম্ভে বাতিল প্রথম দিকে বেশ ফর্মে থাকে। ইহুদী মিডিয়া আর সাম্রাজ্যবাদীদের সহযোগিতায় তাদের হুমকি-ধমকি আর আস্ফালন দেখে কে?

কিন্তু সামান্য সময়ের ব্যবধানে তাদের পতন এমন ভয়ংকর হয় যে, শেষ পর্যন্ত তারা হয়ে যায় চর্বিত তৃণখন্ড কিংবা ময়লা-আবর্জনার ফেনার মতো।

পক্ষান্তরে হকের পতাকাবাহীরা কন্টকাকীর্ণ পথে চললেও, নিবু নিবু করে তাদের প্রদীপ শিখা একবার প্রজ্বলিত হওয়ার পর দুনিয়ার কোনো শক্তিই তাদেরকে আর একেবারে নির্মুল করতে পারে না। এক স্থানে সাময়িক ছন্দ পতন হলেও পরক্ষণেই অপর স্থানে তারা ভেসে উঠে আপন মহিমায়।

শত-শহস্র শহীদের জীবন ও শাহাদাতের বিনিময়ে আজ নাস্তিকরা তাদের আশ্রয়দাতাতের কাছেই হয়ে গেছে ফুটবল আর টিস্যু পেপারের মতো। যদি তারা এখনও তওবা না করে তাহলে দুনিয়ার চাইতেও পরকালের তাদের পরিণতি হবে আরো অনেক গুণ ভয়াবহ।

আর ইদানিং ফিতনাবাজ মিডিয়া আর হলুদ কারখানার দালাল গুলো আল্লামা আহমাদ শফী দা. বা. ও হেফাজতকে বিতর্কিত করার জন্য কিছু না পেয়ে মন মতো আবোল-তাবোল নিউজ করছে। হুজুরের এক কথাকে অন্য শব্দে ও বাক্যে পাল্টে দিচ্ছে। মাদরাসার জন্য লীজ নেয়া জমিকে ব্যক্তিগত ও দলীয় সম্পদ বলে মিথ্যাচার করছে। আর তাই দেখে কতিপয় অতি আবেগপ্রবণ দীনী ভাইদের বোকার মতো পোষ্ট, স্ট্যাটাস আর কমেন্ট দেখে আফসোস ছাড়া আর কিছুই করার নেই। দীনের এতোদিনের পরীক্ষীত নিবেদিতপ্রাণ দায়ীদের ব্যাপারে মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ ছড়াবার যেই এজেন্ডা হলুদ কারখানাগুলো হাতে নিয়েছে আমাদের কিছু ভাই না বুঝে তাতেই কেরোসিন ঢালছে।

এতে অবশ্য একদিকে সত্যের পথিকদেরই লাভ হচ্ছে। বাতিল ও তাগুতের অপপ্রচারে মানুষ সাময়িক থমকে দাঁড়ালেও পরক্ষণেই সত্য জানতে পেরে আরো বেশি পরিমাণে দীনের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। মিডিয়াতে একবার মুখ দেখানো ও তার নামটা প্রচারের জন্য রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা যেখানে রাতদিন কতো চেষ্টা-তদবির করেও সফল হয় না, সেখানে হেফাজত ও উলামায়ে কিরামের পদতলে প্রতি নিয়ত মিডিয়া হুমড়ি খেয়ে পড়ছে তাদের সামান্য থেকে সামান্য বক্তব্য উদ্ধৃতি প্রচারের জন্য। আসলে আল্লাহ তো সত্যিই বলেছেন-

ومكروا ومكرالله والله خير الماكرين

তারা ষড়যন্ত্র করে, আর আল্লাহ হলেন সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী ও কৌশলী।''

আল্লাহ তাদের, আমাদের সকলকে হিদায়াত দিন। আমীন।

বিষয়: বিবিধ

১২০২ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

211141
২১ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০১:১৯
নূর আল আমিন লিখেছেন : একদম সত্য ঠিক কাবুলিওয়ালার প্রবাদের মতো
২১ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫১
159747
মাই নেম ইজ খান লিখেছেন : ধন্যবাদ। Good Luck Good Luck
211158
২১ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০১:৩৬
গেরিলা লিখেছেন : দালালী করলো হেফাযত
২১ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫২
159748
মাই নেম ইজ খান লিখেছেন : সস্তা গাল-গপ্পে কান দিয়ে সময় নষ্ট করা বোকামী!
211171
২১ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০২:০২
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : লেখকের লেখাটিতে সূর্যদয়ের ন্যায়ে সত্যগুলো উঠে এসেছে। আল্লাহ আাদেরকে সত্য বুঝার ও মানার তৌফিক দান করুন। আমিন।
২১ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫২
159750
মাই নেম ইজ খান লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ।
211194
২১ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০২:৪৯
সন্ধাতারা লিখেছেন : আপনার লিখনি চমৎকার তবে হেফাজতের মত শক্তিশালী, গণমুখী এবং দ্বীনি সংগঠনকে অনেক সতর্ক ও সাবধানী বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হওয়া দরকার। কারণ চারিদিকে শয়তানী গোষ্ঠী ওঁত পেতে বসে আছে এটা স্মরণে থাকা জরুরী। ক্ষুদ্র স্বার্থে বৃহত্তর উদ্দেশ্য বিপন্ন না হয়ে যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার কারণ মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেড়ে গেছে হেফাজতের কাছে।
২১ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৩
159751
মাই নেম ইজ খান লিখেছেন : সহমত।

তবে একজনের কাছেই সব চাওয়াটাও কিন্তু ঠিক নয়। সব যদি হেফাজতই করে তাহলে অন্য রাজনৈতিক ইসলামী দলগুলো কি করবে?
211212
২১ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০৩:৪০
শের খান লিখেছেন : আঁধার শেষে আলো একদিন আসবেই,এই প্রত্যাশাই করেছিলাম। একটু দেরিতে হলেও তার প্রতিফলন হয়েছে।
২১ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৩
159752
মাই নেম ইজ খান লিখেছেন : ইনশাআল্লাহ মুমিনদের জন্য বিজয় অতি নিকটে।
211230
২১ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৪:০৭
হতভাগা লিখেছেন : একটা সময় ইমরানদের দরকার ছিল , তাই তাদেরকে ফেভার করেছে । আর হেফাজতকে মেরেছে ।

কাজ হাসিল হয়ে যাবার পর এখন ইমরানরা হয়ে গেছে পাজি।

ইমরানদের ফেভার করার জন্য এবং হেফাজতীয়ানদের দাবড়ানী দেবার ফলে ইসলাম বিরোধী যে রেপুটেশন গড়ে উঠেছিল তা মিটিয়েছে ইমরানদের পিটিয়ে এবং হেফাজতদের প্রতি নরম হয়ে ।




হেফাজত যদি এতটাই শক্তিশালী হয় তাহলে ২৩/২৪ ডিসেম্বরের সমাবেশ বাতিল করেছিল কেন ?

Don't over-estimate the Hifazath and under-estimate the Shahbagian .

কারণ ইমরানরা যেটার জন্য নেমেছিল তা তারা করে দেখিয়েছে ।

বোকা হেফাজতরা যে আওয়ামী লীগের নির্মম পলিটিক্সের শিকার তা তারা এখনও বুঝতে পারে নাই ।

৫ই মে যেখানে ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে সমাবেশ করার কথা ছিল সেখানে একেবারেই শাপলা চত্বরে আবারও সমাবেশ করার সুযোগ পেয়ে তারা ''মেঘ না চাইতে জল'' পেয়ে গেছে মনে করেছিল । কিন্তু এটা যে সরকারের চাল তা তারা বোঝারও ধারে কাছে যায় নি ।

এখন সরকারের প্রয়োজন পড়ে গেছে হেফাজতকে কাছে টানার ।

প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলেই যে শফিদেরকেও ইমরানদের মত পরিনতি ভোগ করতে হবে তা অন্য সবাই বুঝলেও বুঝে না হেফাজতের লোকেরা ।
২১ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০০
159757
মাই নেম ইজ খান লিখেছেন : এতো বড় মন্তব্যের পয়েন্ট ভিত্তিক জবাব দিতে হলে আলাদা পোষ্ট লিখতে হবে।
তবে সংক্ষেপে -
আপনার যে কোনো প্রয়োজনই অপর কারো উপকার ও অপকার করতে পারে অল্প বিস্তর। দুধ ও বাচ্চার জন্য আপনি গোয়ালঘর দিলে তার গোবর থেকে প্রতিবেশী কেউ যদি উপকৃত হয় সেই জন্য কি আপনি গোয়াল ঘর পুড়িয়ে দিবেন?

সব 'শক্তি' এক রকম নয়। সব সুঁই ও এক রকম নয়। তবে প্রত্যেকটিই তার নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে অপরিহার্য্য।

কে কার পলিটিক্সের শিকার তা সময়ই বলে দিবে। সবচেয়ে বড় কৌশলী কিন্তু মহান আল্লাহ।

৫ মে সরকার যদি তাদের ১৩ টি দাবীর কোনো একটির সিকি ভাগও মেনে নিতো তাও হতো। কিন্তু তা না করে যেভাবে অবজ্ঞা ও তাচ্ছিল্য করা হয়েছে তাতে মতিঝিলে সমাবেশ করার বিকল্প কিছু ছিলো না হেফাজতের কাছে। সামান্য রাজনৈতিক উপলব্ধি থাকলে এটা বোঝার কথা।

ইমরান আর আল্লামা শফী দা. বা.। কই আব্বাস আর কই গাবগাছ!

বোঝা গেলো আল্লামা আহমাদ শফী দা. বা. ও হেফাজত সম্পর্কে আপনার ধারণার ব্যপকতা!
২২ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৮:৫২
159975
হতভাগা লিখেছেন :



০ '' মতিঝিলে(শাপলা চত্বরে) সমাবেশ করার বিকল্প কিছু ছিল না'' তাদের ( আপনার মতে)এই উচ্চ মার্গীয় রাজনৈতিক উপলব্ধির ফল কি হয়েছিল ?

দেখা যাক শফিদের সম্পর্কে আপনার যে ধারনা তার কেমন দাম দেয় শফিরা

( অলরেডি আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে বন্ধু হিসেবে ঘোষনা দিয়ে দিয়েছে এক সময়ে যাদেরকেই তারা অভিযুক্ত করেছিল ৬ই মে এর ম্যাসাকারের জন্য)

নিজেদের পারষ্পরিক স্বার্থ হাসিল করতে হেফাজত ও জামাত এবং আওয়ামী লীগ সামনের দিন আরও কাছাকাছি আসবে । ইমরানদেরকে পিটুনি দেওয়া সেটারই ইঙ্গিত করে ।
212453
২৪ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০১:০৩
সায়িদ মাহমুদ লিখেছেন : চরম লিখেছেন ভাইজান।
২৪ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০২:১৯
160722
মাই নেম ইজ খান লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File