বাগীদের ধ্বংস দুনিয়া আখেরাতে অনিবার্য : বিজয় শুধু মুমিনের (-শেষ পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন মাই নেম ইজ খান ১০ এপ্রিল, ২০১৪, ১২:৩৬:০৮ দুপুর



পূর্ব প্রকাশের পর-

কিন্তু আজকের বাস্তবতা একটু ভিন্ন। আজ যারা বাগী তারা তাদের বাগাওয়াতের কাজে আজ অনেককেই সহযোগী হিসেবে পাচ্ছে। জনগণের অধিকাংশই তাদের ব্যাপারে সম্যকভাবে অবগত না থাকা এবং ইসলামের প্রাথমিক মৌলিক বিষয়গুলোর উপরও তাদের পর্যাপ্ত নলেজ না থাকার কারণে খুব সহজেই তারা তাদের চটকদার শ্লোগান ও শ্রুতিমধূর নাম দিয়ে সহজ-সরল আপামর জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হচ্ছে।

রাষ্ট্রের অন্যতম অতন্দ্র প্রহরী, জাতির বিবেক সাংবাদিক সমাজ, ইলেক্ট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ার প্রায় পুরোটাই আজ এক অদৃশ্য কলকাঠির ইশারায় বাগীদেরকে সর্বাত্মক সমর্থন দিচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে শাহবাগের নাস্তিকদের উত্থানই সম্ভবত: প্রথম ঘটনা যেখানে লাগাতার ৩ মাস পর্যন্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে সম্পূর্ণ পাশ কাটিকে এমন একটি বিষয়কে ধারাবাহিকভাবে লিড নিউজ করে প্রচার করা হচ্ছে -যার আসলে মৌলিক কোনো ভিত্তিই নেই। যার প্রায় পুরোটাই আবেগের উপর নির্ভরশীল। বিবেকের সাড়া এখানে খুবই গৌন। অনেকেই এ বিষয়ে নিজের বিবেককে ইচ্ছাকৃতভাবে ঘুম পাড়িয়ে রাখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। এ বিষয়ের যৌক্তিকতা ও বাস্তবতা তুলে ধরতে গেলেই সাথে সাথে তোতা পাখির মতো শ্লোগান আসবে ‘তুই রাজাকার' 'তুই রাজাকার'।

আমাদের দেশে বর্তমানে অনেকগুলো দল বা সংগঠন ইসলামের নামে বা ইসলামের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। কোনো সংগঠনের সাথে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক কোনোভাবেই আমি সরাসরি সম্পৃক্ত নই। তবে যারাই ইসলামের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করতে চায়, সত্যের জন্য এগিয়ে যেতে চায় তাদের সকলের প্রতিই আমি সমানভাবে আন্তরিক ভালোবাসা পোষণ করি। তাদের জন্য দু’আ করি। কোন ব্যক্তি বা দল যদি ভুল সিদ্ধান্ত নেয় বা অন্যায় করে তাহলে বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকেই আমি আমার সাধ্য ও সামর্থ্যের আলোকে সত্য ও সঠিক বাস্তবতাটি তাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করি। আমার অভিব্যক্তি তাদের কাছে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে আল্লাহর দরবারে আর্জি জানাই, যেনো তিনি তাদেরকে সুমতি দান করেন। তবে নিজের নানাবিধ অমতার কারণে তাদের সাথে সম্পৃক্ত হতে না পারার কারণে মাঝে মাঝে অনুতপ্তও হই।

১৯৭১ এ বাংলাদেশে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী যে গণহত্যা চালিয়েছিলো তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা সীমাহীন অপরাধ। যারা তৎকালীন হানাদার বাহিনীর এই বর্বরতায় সহযোগিতা করেছিলো তারাও সমভাবেই অপরাধী। তাই বাস্তবিক যুক্তি-প্রমাণের আলোকে, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ বিচারের মাধ্যমে এই অপরাধের সাথে সম্পৃক্তদেরকে বিচার করা হোক এটা এদেশের সকল নাগরিকদের একটি স্বাভাবিক কামনা ছিলো। এতোদিন পরে এ ব্যাপারে একটি বিচার আয়োজন করা সম্ভব হয়েছে। এটি একটি সুখবর ছিলো। আশান্বিত জনতা ভেবেছিলো এবার হয়তো তারা প্রকৃত অপরাধীদেরকে আসামী হিসেবে শনাক্ত করতে পারবেন। তাদের বিচার প্রত্যক্ষ করবেন এবং প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত হবে। কিন্তু এরপর কি হয়েছে তা সচেতন পাঠক আমার চাইতে বেশি জানেন।

আদালত এ পর্যন্ত দু’টি রায় দিয়েছেন। তার মধ্যে একটি ছিলো ফাসির রায় অপরটি যাবজ্জীবন কারাদন্ড। দু’টি রায়ের প্রথমটির পর অনেকেই খুব উৎফুল্ল হলেও পরের রায়টিতে তাদের অনেকেই সন্তুষ্ট হতে পারেন নি। ফলে এক পর্যায়ে শুরু হয় শাহবাগের এই জমায়েত। এই জমায়েত ও বিশাল অবস্থান কর্মসূচীর প্রথমদিকেও অনেকে একে পজেটিভ ও ভালো বলে গ্রহণ করলেও এর আয়োজকদের আভ্যন্তরীণ অবস্থা ও আসল চেহারা ধীরে ধীরে প্রকাশ হতে থাকে। এক পর্যায়ে মানুষ দেখতে পায় যে এখানে আসলে যুদ্ধাপরাধের নাম করে ইসলামের বিরুদ্ধে এক নতুন বাগাওয়াতের সূচনা করা হয়েছে।

৭১ সালে রাজাকার বা যুদ্ধাপরাধীদের ৫%ও যেখানে আলেম ও ইসলামী ব্যক্তিত্ব ছিলেন না, সেখানে তারা আলেম-উলামা ও দাঁড়ি-টুপিওয়ালা ইসলামপ্রিয় ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদেরকেই একমাত্র রাজাকার বলে প্রচার শুরু করে। বিদ্বেষ ছড়ানো শুরু হয় ইসলামী নিদর্শনাবলীর ব্যাপারেও। এক পর্যায়ে দাঁড়ি-টুপি ও লম্বা জামা-জোব্বাই হয়ে উঠে তাদের আক্রমণের প্রথম এবং প্রধান ল্য। কিছুদিন আগে কুকুরের মাথায়ও তারা টুপী পড়ানো এবং তাদের মুখে দাঁড়ি লাগানোর মতো চরমতম ধৃষ্ঠতা দেখিয়েছে। বাগীদের এই আন্দোলনের কারণেই কিছুদিন আগে বিভিন্ন স্থানে কিছু উশৃংখল পাপাচারী নিজ পিতার বয়সী বৃদ্ধ মুসল্লিদেরকে দাঁড়ি ধরে অপমান ও লাঞ্ছনা করতেও তারা দ্বিধান্বিত হয় নি। আর এই বাগী আন্দোলনের মূল হোতারা যে আসলেই ইসলামের উপর কতটা প্তি, ক্রুদ্ধ, বিদ্বেষপূর্ণ তার খানিকটা ছাপ তারা অনলাইনে অনেক আগেই রেখে দিয়েছে। বিভিন্ন ব্লগ এবং ওয়েবে তাদের এই অপকর্ম গুলোর বেশ কিছু বর্তমানে তারা মুছে ফেললেও তার রেকর্ড সচেতন মহলের কাছে যথাযথভাবে সংরতি রয়েছে। রামপন্থী এবং বামপন্থী এই সকল নাস্তিক-কুলাঙ্গার গুলো ইসলাম, কুরআন, প্রিয়নবী সা., তাঁর পবিত্র সহধর্মিনীগণ এমনকি পশুত্বের সর্বনিন্ম স্তরে নেমে গিয়ে স্বয়ং মহান আল্লাহকেও তারা যে কত কদর্য ভাষায় গালি-গালাজ করেছে এবং করছে তার সামান্য এক ঝলক যদি আজকের আত্মপরিচয়হীন হুজুগে নব্য ‘শাহবাগী’রা দেখতেন তাহলে চেতনার মঞ্চে তারা ফুল নয় জুতা নিপে করতেন।

মুসলিম উম্মাহর যুব-তরুণদেরকে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, উন্মাতাল নাচ-গান, আর নানাবিধ দৃশ্যমান ও অদৃশ্য মাদকের আড়ালে মনুষ্যত্বহীনতার কোন অন্ধ গহ্বরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে তা ভাবতেই নুন্যতম বিবেচনা বোধ সম্পন্ন একজন সাধারণ নাগরিকও শিউরে উঠেন ভীষণভাবে।

কতিপয় দাঙ্গাবাজ, বাগী আর দুস্কৃতিকারীদের হাত থেকে এই উম্মাহর তরুণ-যুবকদেরকে রা করার জন্য যাদের এগিয়ে আসা উচিত ছিলো কি এক অদৃশ্য কারণে যেনো তারা সকলেই মুখে কুলুপ এঁটেছে। শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নয় বরং জাতির বিবেক খ্যাত সংবাদ মাধ্যমগুলোর প্রায় সবগুলোই এই কর্মযজ্ঞের কুন্ডলীতে ইন্ধন যোগাচ্ছেন।

তবে একেবারে ব্যতিক্রম যে নেই তা কিন্তু নয়। গতানুগতিকভাবে হঠাৎ ধেয়ে আসা প্রবল স্রোতের মোকাবেলায় সর্বপ্রথম জাতিকে সতর্ক করার জন্য এক ‘অবরুদ্ধ সম্পাদক’ রুখে দাঁড়ান। নিজের সীমিত সাধ্য ও সামর্থ্যরে আলোকে তিনি পুরো জাতিকে ‘হাশিশ খাওয়ানো’র মতো এই মহা অন্যায়ের প্রতিবাদ জানান। বাস্তব সত্য জাতির সামনে তুলে ধরেন। তার সঠিক সময়ের সাহসী উচ্চারণ আরো দু’ একটি সংবাদপত্র ও তার সাংবাদিকদেরও নাড়া দিতে সম হয়েছে। ফলে একটি সামান্য ও ক্ষুদ্র অংশও আজ সত্যের পক্ষে উঠে দাঁড়িয়েছে।

কিন্তু এজন্য দৈনিক আমারদেশ পত্রিকার সংগ্রামী সম্পাদক জনাব মাহমুদুর রহমান এবং তার আমার পত্রিকাকে প্রতিনিয়ত যে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে তাও আজ জাতির সামনে পরিস্কার। প্রতিদিন একেক স্থানে পত্রিকা পোড়ানো, একটি পত্রিকার নিচ তলায় আগুন লাগানোর মতো ভয়ংকর দুঃসংবাদ হয়েছে নিত্য সাথী। কিন্তু এরপরও যারা সত্যের পক্ষে অটল থাকবে, শেষ পর্যন্ত যে তারাই বিজয়ী হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

সূরায়ে কমার এর ৪৫ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বাগীদের ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, যদি মুমিনরা একনিষ্ঠ মুসলিম হিসেবে সামনে অগ্রসর হয় তাহলে অবশ্যই অবশ্যই সংঘবদ্ধ বাগী’রা খুব শীঘ্রই পরাজিত হবে এবং পিঠ দেখিয়ে পলায়ন করবে। আর মুমিনদের বিজয়ের জন্য সূরায়ে নূরের ৫৫ নং আয়াতে দু’টি শর্তারোপ করেছেন, একটি হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ ঈমান, দ্বিতীয়টি হচ্ছে বিচণতার সাথে দ্বীনের বিজয়ের জন্য কাজ করা।

আজকে যারা এই বাগী’র ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে মাত্র বিগত ১০ দিনেই তাদের অবস্থা সেই পরাজিত জার্মান বাহিনীর চাইতেও শোচনীয় অবস্থায় চলে গেছে। গতকাল এবং আজ সকালে যারা শাহবাগ ঘুরে এসেছেন এখানার আবেগী সরলমনা তরুণদের চেহারা দেখেছেন তারাই এর প্রকৃত বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারবেন। নৈতিক ও আদর্শিক নূন্যতম দৃঢ়তাও কিংবা দীর্ঘ মেয়াদী কোনো বাস্তবিক ল্য না থাকায় তাদের চেহারা এবং পুরো জমায়েতে আজ বিরাজ করছে এক সীমাহীন হতাশা। ইসলাম বিদ্বেষী আয়োজক এবং তরুণদের এই জাগরণকে ছিনতাইকারী পরাশক্তির নেতৃবৃন্দ নিজেরাই আভ্যন্তরীণ বিবাদে পর্যুদস্ত। নিজেরাই এখন একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছেন আখের গোছানোর ফন্দি-ফিকিরে। পুরো অবস্থান স্থল এখন মিনি ‘এফডিসি’তে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে মাঝ রাত পর্যন্ত আসর জমছে আবার সকালে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে তা হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে।

আরো অনেক গুলো বিষয় ছিলো কিন্তু লেখাটি বড় হয়ে যাচ্ছে। মহান আল্লাহ যদি তাওফীক দেন তাহলে ইনশাআল্লাহ সামনে কখনো লিখবো। শেষ করছি সূরায়ে হুজুরাতের দু’টি আয়াতের সরল অনুবাদ উদ্ধৃত করে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে অন্তত: ১০ বার এই সূরার ৯-১৫ আয়াত গুলো পড়া উচিত। তাহলে আমাদের করণীয় সম্পর্কে কিছু তথ্য এখান থেকে আমরা লাভ করতে পারবো। মহান আল্লাহ বলেন,

অর্থ: “আর যদি মুমিনদের দু’দল পরস্পরে (ঝগড়া-বিবাদ কিংবা) যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাহলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। ন্যায়ানুগভাবে ফায়সালা করে দাও। অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের উপর বাড়াবাড়ি করে, তাহলে তোমরা সেই বাগী’(দাঙ্গাবাজ)দের প্রতিরোধ করো, তাদের বিরুদ্ধ যুদ্ধ করো, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে, ন্যায় বিচার মেনে নেয়। তারপর যদি (বাগী’রা) ফিরে আসে তাহলে তাদের মধ্যে ইনসাফের সাথে মীমাংসা কর এবং ন্যায়বিচার কর। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়বিচারকারীদের ভালবাসেন।” (সূরা হুজুরাত, আয়াত ৯-১৫)

বিষয়: বিবিধ

১০৯৯ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

205635
১০ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ১২:৩৯
মাই নেম ইজ খান লিখেছেন : পূর্বের লেখা:
‘বাগী’রা কখনো বিজয়ী হয় না -1
http://lighthouse24.org/blog/post/viewPost/?postid=711
যুগে যুগে 'বাগী'দের পরাজয়
http://lighthouse24.org/blog/post/viewPost/?postid=732
বাগী ও শাহবাগীদের পরাজয় : ফিরে দেখা অতীত
http://lighthouse24.org/blog/post/viewPost/?postid=742
205648
১০ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ১২:৫৯
গেরিলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
205677
১০ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০২:১৯
সন্ধাতারা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
205808
১০ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৮:০৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চমৎকার পোষ্টগুলির জন্য অনেক ধন্যবাদ। তথাকথিত গজা মঞ্চ ইতিমধ্যেই অনেক ভাগ হয়েছে। এবং সরকার ব্যবহার শেষে তাদেরকে টয়লেট পেপার এর মত ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। গাদ্দার দের পরিনিতি সবসময়ই তাই হয়।
207883
১৪ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৮:৪১
জেদ্দাবাসী লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File