‘বাগী’রা কখনো বিজয়ী হয় না -1
লিখেছেন লিখেছেন মাই নেম ইজ খান ০৭ এপ্রিল, ২০১৪, ০৪:৫৬:৩২ বিকাল
(১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ এর লেখা। এতো তাড়াতাড়ি যে আল্লাহ বাগীদের পরাজয় দেখাবেন -এই লেখা লেখার সময় ভাবতেও পারি নি। পাঠকদের উপকার হবে ভেবে রিপোষ্ট করলাম।)
নাম বা শ্লোগানের শব্দ ও অর্থের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, দল বা প্রতিষ্ঠানের একটি মিল থাকে। প্রত্যেকের নাম ও শ্লোগানের প্রভাবও নিজেদের মাঝে ও কর্মতৎপরতার মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয় প্রায়শই। নিজের ভেতরের আসল মানুষটি যার সাথে সামঞ্জস্যশীল ঠিক তেমনই কোনো নাম বা শ্লোগানের সাথে কাকতালীয়ভাবেই অনেক সময় আমরা নিজের অজান্তেই নিজেদেরকে পরিচিত করতে উদগ্রীব হয়ে উঠি। এর মাধ্যমে যখন নিজের খোলস খসে পরে তখন আঁৎকে উঠে পিছু হটার চেষ্টা করি। কিন্তু ততক্ষণে হয়ে যায় অনেক দেরি।
ইদানিং অনেকে আবার না জেনে বা না বুঝে নিজেদের সন্তানদের বা প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য এমন এমন নাম বাছাই করে থাকেন, যার হয়তো কোনো অর্থই নেই কিংবা এমন অর্থ আছে যা খুবই মন্দ ও নিকৃষ্ট। ব্যক্তি যদি সেই অর্থটি জানতেন তাহলে হয়তো কখনই এমন নাম রাখতেন না। ইসলাম ও কুরআন-হাদীসের প্রাথমিক জ্ঞান থেকেও দূরে থাকা আমাদের দেশের উচ্চশিতিদের মধ্যে এটি বর্তমানে খুব বেশি প্রত্যক্ষ করা যায়। একটি উদাহরণ দেই। বছর খানেক আগে একজন বড় আলিমের সাথে আমি বরগুনা গিয়েছিলাম। সেখানে শহরে একটি বড় ব্যনার আমার চোখে পড়লো যাতে লেখা ছিলো... ছেলে মাহিনের অকাল মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত...
এ বিষয়টি সম্পর্কে স্থানীয়দেরকে জিজ্ঞাসা করলে তারা জানালেন সেখানকার খুবই ধনাঢ্য ও সম্ভ্রান্ত এক ব্যক্তির অতি আদরের ছেলের নাম ছিলো মাহিন। যে কিছুদিন আগে তার সহপাঠীদের সাথে ক্রিকেট খেলার সময় সামান্য একটি বলের আঘাতে মৃত্যুবরণ করেছে। এজন্যই তার ছেলের নামে অন্যরা ব্যানার টানিয়ে শোক প্রকাশ করছেন।
ঘটনাটি খুবই দু:খজনক। শুনে কষ্ট পেয়েছিলাম। স্কুলের একটি ছেলে এভাবে সামান্য তুচ্ছ একটি কারণে চলে যাওয়া খুবই বেদনার।
কিন্তু যে বিষয়টি আমাকে এরপর আশ্চর্য করেছিলো তা হলো ‘মাহিন’ নামটি। আমি জানি এই নাম আরো অনেকেই তার ছেলের জন্য রেখেছেন বা রাখেন। আমার খুবই জানতে ইচ্ছে হয়, যারা নিজেদের সন্তানদের জন্য এই নাম রাখেন তারা কি জানেন এই ‘মাহিন’ শব্দটির অর্থ কি?
হয়তো জানেন না। অর্থ জানলে আমি নিশ্চিত তারা নিজেদের আদরের সন্তানদের জন্য এমন নাম রাখতে পারতেন না। মাহিন শব্দের অর্থ হচ্ছে খুবই তুচ্ছ, নিকৃষ্ট, অপবিত্র, নাপাক -ইত্যাদি।
পবিত্র কুরআনে সূরা সাজদার ৮ নং আয়াতে এই মাহিন শব্দটি আছে। সেখানে মহান আল্লাহ বলেছেন, “তারপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন তুচ্ছ, নাপাক একফোটা পানির নির্যাস থেকে।”
এখন আরবী ভাষা সম্পর্কে ধারনা নেই বা কম এমন কেউ যদি কুরআন থেকে এই আয়াতটি দেখে সেখানে অবস্থিত ‘মাহিন’ শব্দ দেখে ব্যকুল হয়ে যান এবং এর অর্থ না দেখেই নিজের সন্তানকে এই নামে ডাকেন, এই নাম রাখেন তাহলে অবস্থাটি কি দাঁড়াবে?
কিছুদিন আগে বারিধারার একটি অফিস থেকে আসার সময় পার্শ্বের একটি বিল্ডিং এর সাইনবোর্ড দেখলাম তারা নাম দিয়েছে ‘ইনকারনা’। এটিও একটি আরবী শব্দ, যার অর্থ: অস্বীকার করা। আমার ধারণ এই কোম্পানীর কর্তাব্যক্তিরা হয়তো অমুসলিম হবেন অথবা মুসলিম কিন্তু নিজেদের কোটি টাকার প্রজেক্টের এই সুবিশাল বিল্ডিংটির তারা কি নাম দিয়েছেন তার অর্থ নিজেরাও একবার যাচাই করে দেখার সময় পান নি। খিলগাঁও এ একটি দোকানের নাম দেখেছিলাম ‘হায়েজ ইঞ্জিনিয়ারিং...
আর আগালাম না। এই হলো আমাদের অবস্থা। যে বিষয়ে লেখা শুরু করতে চাচ্ছিলাম এখন তা বলা যায়। তবে তার আগে একটি শব্দের প্রতি সচেতন পাঠকের একটু দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছি।
باغى ‘বাগী’ একটি আরবী-ফার্স শব্দ। যার সহজ অর্থ: ফিৎনা সৃষ্টিকারী, দাঙ্গাবাজ, লুট-তরাজ ও অরাজকতা সৃষ্টিকারী। এটি ইসমে ফায়েল এর সিগা। এর মাসদার হচ্ছে بغاوت ‘বাগাওয়াত’ (দাঙ্গাবাজী)।
‘বাগাওয়াত’ ‘বাগাত’ বা ‘বাগী’ এই শব্দগুলো যখন ইসলামের কোনো বিষয়ের সাথে ব্যবহৃত হয় তখন এর অর্থ দাঁড়ায়- ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণকারী, ইসলামের ক্ষতি করতে আপ্রাণ প্রচেষ্টায় লিপ্ত, ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারী -ইত্যাদি।
পবিত্র কুরআনে সূরা হুজুরাত এর ৯ নং আয়াতে এই শব্দটি (بغت) ব্যবহৃত হয়েছে। এই সূরার ৯ থেকে ১৫ নং আয়াত আজ যখন আবারও পড়ছিলাম তখন মনে হচ্ছিলো এটি মনে হয় মহান আল্লাহ আমাদের বর্তমান ফিৎনা-ফাসাদের এই সময়ের জন্যই অবতীর্ণ করেছেন। এই লেখার শেষে আয়াতের অর্থ গুলো তুলে ধরা হবে ইনশাআল্লাহ।
ফিরে যাচ্ছি প্রথম আলোচনায়। দিন দিন আমাদের সমাজে এমন অনেক নামের প্রচলন দেখা যাচ্ছে যার অর্থগুলো খুবই ভয়ংকর। অনেকে জেনে বা না জেনে, বুঝে বা না বুঝে সেই মন্দ নামগুলোকেই গর্বের সাথে উচ্চারণ করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে সর্বাধিক প্রচলিত তেমনই একটি শব্দ হচ্ছে ‘বাগী’।
এই বাগী শব্দের আগে পরে একেকজন একেক শব্দ যোগ করে নিজেদের পরিচয়ের জানান দিচ্ছেন। কেউ হয়তো বসাচ্ছেন ‘কুতুব’। হয়ে যাচ্ছেন 'কুতুববাগী'। কেউ যোগ করছেন ‘দেওয়ান’। হয়ে যাচ্ছেন দেওয়ানবাগী। কেউ আবার এটি বসাচ্ছেন ‘রাজা’ শব্দের সাথে। ফলে তিনি হচ্ছেন 'রাজারবাগী'। তবে গত ১০ দিনে এই বাগী শব্দটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে ‘শাহ’ শব্দের সাথেই। হ্যাঁ পাঠক, ঠিকই ধরেছেন আমি সাম্প্রতিক সময়ে ‘শাহবাগে’ চলমান আন্দোলন এবং তাতে অংশগ্রহণকারী ‘শাহবাগী’দের কথাই বলছি...
চলবে...
http://lighthouse24.org/blog/post/viewPost/?postid=711
বিষয়: বিবিধ
১৮৭২ বার পঠিত, ২৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার লিখা্টা খুবই যৌক্তিক ও আকর্ষনীয়। ধন্যবাদ ভাইজান। অনেক কিছুই জানলাম। তবে শাহ-বাগী শব্দটির অর্থ পড়ে দারুনভাবে অভিভূত হয়েছি। নাম আর কাম এক। এখানেই নামের স্বার্থকতা।
দ্বিতীয় পর্বের অপেক্ষায়...
তবে আমি আশ্চর্য হচ্ছি এতো তাড়াতাড়ি মহান আল্লাহ বাগীদেরকে পতন দিচ্ছেন দেখে। আল্লাহর ওয়াদা সত্যিই সুনিশ্চিত।
কিন্তু ইদানিং আপনাকে খুজে পাচ্ছি না। ফেসবুকের মেসেজ চেক করেন প্লিজ।
তবে আপনার "বাগী" ত্বত্তটি ঠিক নয়। ওরা শাহবাগে জড়ো না হইয়ে মিরপুরে জড়ো হলে ওদের বলা হোত "মিরপুরী"। এখানে কিন্তু সিঙ্গারা বা পুরী নেই। ঠিক তেমনি "শাহবাগী" শব্দিটির মধ্যে "বাগী" বলে কিছু নেই।
ধন্যবাদ।
তোমাদের কারণে ৬মে তে অগণিত নিরীহ আলেম খুন হল। তোমরা কি মনে কর তার ফল পাবে না?
প্রকৃত পক্ষে তোমরা তোমাদের কৃত কর্মের ফল ভোগ করবেই। যা ইতিমধ্যে পেতে শুরু করেছ...
وَلا تَهِنُوا فِي ابْتِغَاءِ الْقَوْمِ إِنْ تَكُونُوا تَأْلَمُونَ فَإِنَّهُمْ يَأْلَمُونَ كَمَا تَأْلَمُونَ وَتَرْجُونَ مِنَ اللَّهِ مَا لا يَرْجُونَ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا (104
অর্থ: "আর তোমরা শত্রুদের পশ্চাদ্ভাবন ও মোকাবেলার ক্ষেত্রে কোনো প্রকার অলসতা করো না। যদি তোমরা আহত হয়ে থাকো (৫-৬ মে) তাহলে জেনে রেখো তারাও (তোমাদের বিরোধী নাস্তিক-কাফিররাও) কিন্তু তোমাদের মতোই আহত ও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। তবে তোমরা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে যে নিয়ামত ও পুরস্কারের আশা করো, ওরা কিন্তু তার ছিটে-ফোঁটাও পাবে না। আর নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়।" (সূরা নিসা, আয়াত ১০৪)
শুধু তাই নয়, অতীতের সব ঘটনা গুলোই যেনো ঘুরে ফিরে বারবার আসছে...। বর্তমান শাহবাগীদের আদর্শিক গুরু ইহুদীদের যে অবস্থা হয়েছিলো ১৪শত বছর আগে ওদেরও সেদিন তাই হলো। আল্লাহ কত সুন্দরই না বলেছেন-
هُوَ الَّذِي أَخْرَجَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ مِنْ دِيَارِهِمْ لِأَوَّلِ الْحَشْرِ مَا ظَنَنْتُمْ أَنْ يَخْرُجُوا وَظَنُّوا أَنَّهُمْ مَانِعَتُهُمْ حُصُونُهُمْ مِنَ اللَّهِ فَأَتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ حَيْثُ لَمْ يَحْتَسِبُوا وَقَذَفَ فِي قُلُوبِهِمُ الرُّعْبَ يُخْرِبُونَ بُيُوتَهُمْ بِأَيْدِيهِمْ وَأَيْدِي الْمُؤْمِنِينَ فَاعْتَبِرُوا يَا أُولِي الْأَبْصَار
২. আহলে কিতাবদের মধ্যে যারা কুফরী করেছিল তিনিই তাদেরকে তাদের ঘর-বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছিলেন প্রথমবার সমবেতভাবে। তোমরা ধারণাও করনি যে, তারা বেরিয়ে যাবে। আর তারা ধারণা করেছিল যে, তাদের দুর্গগুলো তাদেরকে আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু আল্লাহর আযাব এমন এক দিক থেকে আসল যা তারা কল্পনাও করতে পারেনি এবং তিনি তাদের অন্তরসমূহে ত্রাসের সঞ্চার করলেন, ফলে তারা তাদের বাড়ী-ঘর আপন হাতে ও মুমিনদের হাতে ধ্বংস করতে শুরু করল। অতএব হে দৃষ্টিমান লোকেরা তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।" (সূরা হাশর, আয়াত ২)
মহান আল্লাহ ইহুদীদেরকে খায়বর থেকে বিতাড়িত করার সময় যেমন ওদের বাড়িঘর ওদের হাত দিয়েই ধ্বংস করেছিলেন, ভেঙ্গে চুড়ে একাকার করেছিলেন, একইভাবে বর্তমান শাহবাগীদেরকেও আজ তাদেরই গুরু ও আশ্রয়দাতারা মেরে-তাড়িয়ে শাহবাগ ছাড়া করছে।
কি অদ্ভুতভাবে মহান আল্লাহর ওয়াদাগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে!
শাহবাগিরা মনে করেছিল ইসলাম বিরোধি সরকার আর পুলিশের ছত্রছায়ায় তারাই দেশটা চালাবে। কিন্তু সরকার এটা জানে কুকুর পাগল হওয়ার লক্ষন দেখলেই মেরে ফেলা দরকার।
মন্তব্য করতে লগইন করুন