৬ এপ্রিল : বিজয়ের নব প্রেরণা

লিখেছেন লিখেছেন মাই নেম ইজ খান ০৬ এপ্রিল, ২০১৪, ০১:২৭:৫৭ দুপুর



আজ ৬ এপ্রিল ২০১৪। গত বছরের এই দিনটিতে বাংলার এই জমীনে সূচিত হয়েছিলো ঈমান ও কুফরের মধ্যকার, মুসলিম ও নাস্তিকদের মধ্যকার পার্থক্য নির্ণায়ক এক ঐতিহাসিক ঘটনা।

দেশী-বিদেশী অপশক্তির সর্বাত্মক সহায়তা আর বিরানি-খিচুড়ীর স্তূপের উপর গড়ে ওঠা শাহবাগের কতিপয় বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নাস্তিকদের বাড়-বাড়ন্ত শয়তানির মূলোৎপাটনের সূচনা হয়েছিলো এই দিন। সারা দেশ থেকে ছুটে আসা মুমিনদের বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ার এই দেশে এবং সারা বিশ্বে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে সকল ঈমানদারকে।

যদি শাহবাগের মাধ্যমে নাস্তিকদের আস্ফালন না বাড়তো তাহলো ঈমানদ্বারদের জাগরণও এভাবে হতো না। আর এটা আল্লাহর ইচ্ছা ছিলো। তারা ষড়যন্ত্র করে আর আল্লাহ হলেন সর্বোত্তম কৌশলী। নাস্তিকরা এদেশ থেকে ইসলাম মুছে দেয়ার জন্য চক্রান্ত করলো আর আল্লাহ তাদেরকেই একেবারে সমূলে নিশ্চিহ্ন করে দিলেন। শেষ পর্যন্ত গত পরশু নাস্তিক গুরু ইমরান তার রক্ষক ও সহায়কদের কাছ থেকেই গলাধাক্কা আর গণপিটুনীর শিকার হলো।

এটা ঐতিহাসিকভাবে সত্য প্রমাণিত যে, নাস্তিক ও ইসলাম বিদ্বেষীদের প্রাদুর্ভাব মুসলিমদের জন্য নতুন বিজয়ের সূচনাকারী। ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. বলেনঃ “অনেক নির্ভরযোগ্য মুসলিমগণ (যারা অভিজ্ঞ এবং ফকীহ) যখন তারা শামের শহর, দূর্গ এবং খ্রিষ্টানদের আবদ্ধ করে রেখেছিলেন তাদের সেই সময়ের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। তারা বলেছেন যে আমরা শহর অথবা দূর্গকে মাসাধিককাল ধরে আবদ্ধ করে রেখেছিলাম, আমাদের অবরোধে তাদের কিছুই করার ছিল না এবং আমরা অনেক সময়ই এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি যে তাদেরকে ছেড়ে দিবো। ত্যাগ করে চলে যাওয়ার অবস্থায় চলে এসেছি! এরপর যখনি তারা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অভিশাপ দিতে লাগল, হঠাৎ করে তাদের দুর্গের পতন হয়ে তা আমাদের হাতে আসতে লাগল, কখনও কখনও মাত্র একদিন বা দুইদিনেই তাদের পতন হয়ে গেলো।

সুতরাং কাফিরদের প্রতি আমাদের অন্তর ঘৃণায় পরিপূর্ণ থাকা অবস্থায় যখন আমরা এটি শুনলাম, তখন আমরা এটাকে একটা শুভ সংবাদ হিসেবে গ্রহণ করলাম, যখন আমরা শুনলাম যে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি অভিশাপ দেয়া হয়েছে বা অবমাননা করা হয়েছে -কারণ এটা ছিল আমাদের আসন্ন বিজয়ের একটি লক্ষণ।”

এবং এটা ছিল সূরাতুল কাওছার এর একটি আয়াতের অর্থঃ

إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ.

অর্থ: “নিঃসন্দেহে তোমার শত্রুরাই হচ্ছে শেকড়াকাটা [অসহায়]।”

সুতরাং সর্বশক্তিমান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শত্র“দের শেকড় কেটে দিলেন

এখন যে ঘটনাটি ঘটছে, সবচেয়ে বাজে ঘটনাগুলোর একটা, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি নিন্দার ঘটনা! বস্তুত, হতে পারতো এটা আমাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে ঘটনা, কারণ এর শুরুটা হয়েছিল ডেনমার্কের একটি পত্রিকার সংবাদ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে এবং এরপরই বিশ্বব্যাপী অনেক সরকার এবং সংবাদপত্রগুলো তাদের “বাকস্বাধীনতার” দোহাই দিয়ে এর প্রতি তাদের সংহতি প্রকাশ করেছে ও সেই সুবাদে কার্টুনটি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী!

এরপরই আপনাদের সামনে এলো সেই অপ্রত্যাশিত সুইডিশ কার্টুন যা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ব্যাঙ্গচিত্র প্রকাশ করেছিল, যা নাকি আমাদের শোনা এখন পর্যন্ত নিন্দার মধ্যে সবচেয়ে বাজেগুলোর একটি! এরপর আপনাদের সামনে এলো সেই ঘটনাটি সর্বশক্তিমান আল্লাহর কিতাবকে এমনভাবে অমর্যাদা করা হয়েছিল যা আমরা এর আগে কখনও শুনিনি - আল্লাহর কিতাবকে টয়লেট পেপার হিসেবে ব্যবহার করা এবং স্যুটিংয়ে লক্ষ্যবস্তু হিসেবে ব্যবহার করা!

এগুলোর ধারাবাহিকতায় আমাদের দেশেও কিছু বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী আস্ফালন শুরু করলো। তারা অনলাইনে এমন সব কুৎসিত আর ভয়ংকর প্রকাশ অযোগ্য অশ্লীল আক্রমণ করে বসলো প্রিয়নবী, তার পবিত্র স্ত্রী এবং মহান আল্লাহর উপর -যা যে কোনো মুমিনকে ব্যথিত করা, উত্তেজিত করা এবং তাদের ঈমানকে নতুন করে শাণিত করতে প্রেরণা জোগালো।

তাই প্রতিটি মুসলিমকেই রাগান্বিতকারী যেই ঘটনাসমূহ অধিকহারে এখন ঘটছে যদিও তা আমাদেরকে ক্রোধান্বিত করছে, কিন্তু এটিকে একটি লক্ষণ ধরে নেয়া উচিত যে, এই কুফফারদের পরাজয় একেবারেই দ্বার প্রান্তে।

৬১৫ সালে মিসরের দিমইয়াত শহরে ক্রুসেডারদের হামলা এবং দখল করার পর মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষষ্ঠ ক্রুসেডের সময়, আইয়ুবী আমির মোহাম্মদ কামিল মানসূরা হতে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত অবস্থায় ছিলেন। সে সময়ের একটি ঘটনা। ক্রুসেডারদের মধ্য থেকে একটা লোক প্রতিদিন নিয়ম করে বেরিয়ে আসতো এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে খুব খারাপ ভাষায় অভিশাপ দিতো। সে এই কাজটি দৈনন্দিন কাজের ভিত্তিতেই করত! মুসলিমদের আমীর মুহাম্মাদ কামিল, কামনা করতেন যে যদি তিনি সেই লোকটিকে হাতে নাতে ধরতে পারতেন! তাই তিনি সেই লোকটির চেহারা নিজ স্মৃতিতে গভীরভাবে গেঁথে নিলেন।

দশ বছর পর ক্রুসেডাররা ব্যর্থ হলো এবং তারা চলে গেলো, কিন্তু এই বিশেষ লোকটি শামে যুদ্ধ করা অব্যাহত রাখলো এবং - সকল প্রশংসা আল্লাহর - সে মুসলিমদের হাতে বন্দী হলো। এরপর আমির মুহাম্মাদ কামিল তাকে দেখে চিনতে পারলেন, আমরা ৬১৫ সালের দশ বছর পরের কথা বলছি! সুতরাং আমীর মুহাম্মাদ কামিল সেই লোকটিকে মদীনায় সেখানকার আমীরের নিকট পাঠিয়ে দিলেন এবং এই আদেশ দিলেন যেন তাকে জুমুআর দিনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবরের সামনে হত্যা করা হয়! দশ বছর পেরিয়ে গেলেও, কিন্তু তিনি তা ভুলেন নি!

আজ যারা আমাদের দেশে এবং আশে-পাশে বসে রাসূল সা. কে ব্যঙ্গ করছে, অশ্লীল কথা বলছে, ব্লগে এবং মিডিয়ার মাধ্যমে যারা ইসলাম নিয়ে কটূক্তি করছে তাদের মনে রাখা দরকার যে তাদের সকল কর্মকান্ডই কিন্তু রেকর্ড হয়ে যাচ্ছে। সব কিছুই তাদের বায়োডাটার সাথে সংযুক্ত হয়ে চলেছে অটোমেটিক। সুতরাং তাদের আমলনামা অনুসারে তাদের প্রাপ্যও যে তারা শীঘ্রই বুঝে পাবেন তা বলাই বাহুল্য!

বিষয়: বিবিধ

১২৪৪ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

203238
০৬ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০১:৫৮
হতভাগা লিখেছেন : সরকারের গোলাবারুদের কাছে এরা অসহায় ।

এদেরকে মানুষ এখন আর কোন ডিসাইডিং ফ্যাক্টর মনে করে না ।
০৬ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০২:০১
152629
হতভাগা লিখেছেন : সঠিকভাবে চললে আল্লাহই সহায় মজলুমের
০৬ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০২:৪৬
152632
মাই নেম ইজ খান লিখেছেন : মানুষ কি মনে করে আর না করে সেটা অনেকের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার বটে। তবে হেফাজতের মাধ্যমে মহান আল্লাহ মুমিনদের যে বিজয় দিয়েছেন তার কল্পনাও কারো ছিলো না -এটা অনস্বীকার্য বাস্তব।
203282
০৬ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৪:০৩
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : সুতরাং তাদের আমলনামা অনুসারে তাদের প্রাপ্যও যে তারা শীঘ্রই বুঝে পাবেন তা বলাই বাহুল্য!

দুটি ঘটনাই সত্যি তুলে এনেছেন। আপনাকে ধন্যবাদ।
০৬ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০০
152692
মাই নেম ইজ খান লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ।

Good Luck Good Luck
203311
০৬ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৪:৩৯
হারিয়ে যাবো তোমার মাঝে লিখেছেন : অবশেষে লেজ গুটিয়ে পালালো
০৬ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৯
152691
মাই নেম ইজ খান লিখেছেন : একদম ঠিক।

বিরানী বন্ধ হওয়ার পর এলো ছাত্রলীগের কিল-ঘুষি, তারপর পুলিশের লাঠি পেটা খেয়ে সবগুলো নাস্তিক শাহবাগ ছেড়ে পালিয়েছে...

(হেফাজত ছিলো, আছে থাকবে ইনশাআল্লাহ। আগামী ১১-১২ তারিখে তারা সমাবেশ করবে)
203508
০৬ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৯:১৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
যে বিশাল জনতার মিছির সেইদিন এসেছিল তাকে আবার ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায়।
০৬ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১০:২১
152852
মাই নেম ইজ খান লিখেছেন : আমাদের প্রত্যেককে তার দায়িত্ব পালন করতে হবে।

ইনশাআল্লাহ শীঘ্রই আসবে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File