প্রযুক্তির লড়াইয়ে আমরা কোথায়?
লিখেছেন লিখেছেন মাই নেম ইজ খান ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১০:৩৭:৩৩ সকাল
একবিংশ শতাব্দী তথ্য-প্রযুক্তি আর বিজ্ঞানের শতাব্দি। বৈজ্ঞানিক নানাবিধ উন্নয়ন আর অগ্রগতির শতাব্দী।
একবিংশ শতাব্দির সবচেয়ে দ্রুত বিকাশমান, সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় এবং সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তি। আজকের এই আধুনিক বিশ্বের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব তারাই দিচ্ছে বা দিতে পারছে, যাদের হাতে যুগের শ্রেষ্ঠ হাতিয়ার তথ্য প্রযুক্তির লাগাম রয়েছে। যে দেশের জনগণ তথ্য-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যতো অধিক শিক্ষিত, আজকের বিশ্বে তারাই ততো উন্নত। বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তির এই শাখায় যারা যতো বেশি অভিজ্ঞ বর্তমান বিশ্বে তারাই ততো বেশি কর্তৃত্ব করতে পারছে। অধিক সম্পদ উপার্জন বা অধিক আয় তো আছেই।
একটা সময় ছিলো যখন ঢাল-তলোয়ার আর উট-ঘোড়ার দ্বারা যুদ্ধ হতো। এক গোত্রের লোকদের উপর অপর গোত্র কিংবা এক দেশের উপর অন্য দেশের শ্রেষ্ঠত্ব বা মর্যাদা নির্ণিত হতো যোদ্ধা ব্যক্তির আধিক্য ও তীঁর-বল্লম জাতীয় অস্ত্র-শস্ত্রের ব্যাপকতার উপর। কিন্তু পরিবর্তনশীল এই বিশ্বে দিন দিন উপায়-উপকরণ ও তথ্য-উপাত্ত পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হতে হতে মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের আগেকার সেই মানদন্ড সেকেলে হয়ে গেছে। এর স্থলে এসেছে নতুন প্রযুক্তি আর আবিস্কার। আজ সারা পৃথিবীতে আগের মতোই কিংবা তার চেয়েও অনেক বেশি যুদ্ধ হচ্ছে কিন্তু অস্ত্র সম্ভারের ক্ষেত্রে ঢাল-তলোয়ার আর উট-ঘোড়ার পরিবর্তে এসেছে আধুনিক সব যুদ্ধ সম্ভার। অত্যাধুনিক মিসাইল, আনবিক-পারমানবিক অস্ত্র-শস্ত্র আর বিধ্বংসী যুদ্ধ বিমান আপন শক্তিতে স্থান করে নিয়েছে। আর এর সবই সম্ভব হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে।
শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিকাশমান এই ধারায় মুসলিম উম্মাহ যেনো পিছিয়ে না থাকে সে জন্য পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার প্রথম বক্তব্য বা বাণীই ছিলো ‘ইকরা’ বা পড়ো (তোমার রবের নামে)। উচ্চতর অধ্যয়ন ও গবেষণার প্রতি সীমাহীন গুরুত্বারোপ করা হয়েছে পবিত্র কুরআনের অসংখ্য স্থানে। এর বিস্তারিত উল্লেখ করতে গেলে কলেবর অনেক বেড়ে যাবে।
অজ্ঞতার মূর্খতা আর মানবরচিত মতবাদের অন্ধকার থেকে বিশ্ব মানবজাতিকে প্রকৃত শিক্ষা ও উন্নত জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোকিত পথে নিয়ে আসার জন্যই মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বিশ্ব মানবজাতির জন্য অবতীর্ণ করেছেন মহাগ্রন্থ আল কুরআন। এই কুরআনের আলোকে মানবজাতিকে শিক্ষিত ও সম্ভ্রান্ত করার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে প্রেরণ করেছিলেন প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে।
এই মাটির পৃথিবীতে ৬৩ বছরের এক সংক্ষিপ্ত সফরে এসে রাসূলুল্লাহ সা. তার উপর অবতীর্ণ কুরআনের আলোকে তৎকালীন অন্ধকারাচ্ছন্ন আরব সমাজকে এবং তারপর রোম-পারস্যের নিপীড়িত মানবজাতিকে তাকওয়া, প্রকৃত শিক্ষা এবং ঐশী জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করেছিলেন। বিশ্বের ইতিহাসে সূচনা করেছিলেন এক নবদিগন্তের।
ইসলামে শিক্ষা ও উন্নত জ্ঞান আহরণের সীমাহীন গুরুত্বের কারণে প্রিয়নবী সা. তাঁর সময়ে সাহাবীদেরকে এ ব্যাপারে সদা-সর্বদা উদ্বুদ্ধ করতেন। তৎকালীন সময় পর্যন্ত উদ্ভাবিত পার্থিব জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মুসলমানরা যেনো পিছিয়ে না পরে সেজন্য বদরের যুদ্ধে বন্দী হয়ে আসা মক্কার অনেক অমুসলিমদের জন্য মুক্তিপণ নির্ধারণ করেছিলেন -লেখা-পড়া করতে না জানা মুসলিমদের লেখা-পড়া শেখানো।
৬২২ খৃষ্টাব্দে মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর মহানবী সা. কর্তৃক রচিত ‘মদীনা সনদ’ আজও পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম লিখিত রাষ্ট্রীয় সংবিধান হিসেবে বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত হয়ে আছে।
মুসলিম উম্মাহকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে এভাবে এগিয়ে রাখার আন্তরিক প্রচেষ্টা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর আমলের ন্যায় খোলাফায়ে রাশেদার যুগে এবং তারপর ১৯২৪ সন পর্যন্ত যথারীতি অব্যাহত ছিল। যদিও খিলাফতের শেষের দিকে রাষ্ট্র কাঠামোর দূর্বলতার কারণে এ ব্যাপারে গুরুত্বারোপটি আগের মতো ছিলো না। কিন্তু তারপরও এই দীর্ঘ সময় সারা বিশ্বজুড়ে অন্যান্য বিষয়ের মতো জ্ঞান-বিজ্ঞান আর তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও মুসলিমরাই নেতৃত্ব দিয়েছে। ইতিহাস সাক্ষী, মুসলমানরাই জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রশস্ত দ্বার উন্মোচন করেছে। মানবতার জন্য কল্যাণকর একের পর এক নতুন নতুন আবিস্কার উপহার দিয়েছে সারা বিশ্বকে। মুসলমানদের কোন একটি আবিস্কার বা তার ব্যবহার বিশ¡মানবতার অকল্যাণে বা ক্ষতির জন্য হয়নি।
জ্ঞান বিজ্ঞানের সকল শাখার সূচনা ও মানোন্নয়ন মুসলিমদের হাতে হলেও মুসলিমরা বর্তমান বিশ্বে শতধা বিভক্ত হয়ে থাকা এবং একজন আমীর, একজন মুসলিম খলীফার অধীনে তারা ঐক্যবদ্ধ না থাকার কারণে বর্তমান বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলমানরা তাদের আশানুরূপ অবদান রাখতে পারছে না। তারপরও ইউরোপ আমেরিকার বর্তমান প্রতিটি আবিস্কাররের পেছনে মুসলিমদের আবিস্কৃত সূত্রের অসীম অবদান এবং ইউরোপ আমেরিকার গবেষণাগারে অসংখ্য মুসলমানদের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকা সত্ত্বেও কুরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে পরিচালিত ইসলামিক রাষ্ট্রব্যবস্থা না থাকার ফলে দু:খজনক বাস্তবতা হলো আজ বিশ¡ রাজনীতির সম্মাজনক আসনে আর মুসলমানরা নেই। যার কারণে আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় তারা সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারছে না।
মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞান গবেষণার দ্বারা ক্রমবর্ধমান। দিন যত যাচ্ছে কুরআন ও বিশ¡ প্রকৃতির উপর গবেষণা করে বিজ্ঞান তত এগিয়ে যাচ্ছে। আর আজকের উইরোপ আমেরিকার গবেষণাগারে যারা গবেষণা করছেন তাদের মধ্যেও উলে−খযোগ্য সংখ্যক মুসলিম আছে। আমার জানা মতে নাসাতেই কয়েকজন বাংলাদেশী পাক্কা মুসলিম আছেন। ইউটিউবের অন্যতম প্রতিষ্ঠা জাওয়াদ করিমও বাংলাদেশী মুসলমান। সুতরাং আজকের আমেরিকা-ইউরোপের আবিস্কারের পেছনেও মুসলমানদের মেধা ও অবদান অনস¡ীকার্য। এমনকি পাকিস্তান-ইরান ইসলামিক রাষ্ট্র না হলেও মুসলমানরা সেখানে বসে নেই। তারা তাদের সাধ্য মতো বিভিন্ন আবিস্কার করে যাচ্ছে। আমাদের এই বাংলাদেশেও বিজ্ঞানীদের অভাব নেই। ইউরোপ-আমেরিকার ইহুদী-খৃষ্টানরা যা করতে পারে নি সেই পানি দিয়ে গাড়ি চালানো, বাতাস দিয়ে গাড়ি চালানো, পাথরকুচি পাতা থেকে বিদুৎ তৈরী করার মতো একের পর এক অত্যাশ্চর্যজনক আবিস্কার কিন্তু এদেশের মুসলিমরাই একের পর এক করে যাচ্ছেন। কিন্তু দু:খজনক বাস্তবতা হলো রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তারা অকালে ঝড়ে যাচ্ছে। কদিন পর আর আমরা তাদের কোন খবর পাচ্ছি না।
বিশ¡রাজনীতির বর্তমান নেতৃত্বে মুসলমানরা সামনের সারিতে না থাকার কারণে বর্তমান ইউরোপ-আমেরিকার যে কোন আবিস্কার মানবতার কল্যাণের চাইতে অকল্যাণেই বেশি ব্যায় হচ্ছে। সকল প্রযুক্তি দিয়ে তারা এখন মানবতার ক্ষতি করছে। পরমাণু অস্ত্র ও নানাবিধ রাসায়নিক অস্ত্র বানিয়ে তার দ্বারা ইরাক-আফগানিস্তানের অসহায় মানুষদেরকে হত্যা করা হচ্ছে। রকেট আর স্যাটেলাইট দ্বারা বিশ¡ মানবতার উপকারের চেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে কখন কোন দেশে ডাকাতি করা যাবে, বোমা মারা যাবে সেই জন্যে।
ইন্টারনেট প্রযুক্তি আবিস্কার হয়েছে কিন্তু তাতে তথ্য-প্রযুক্তি ও গবেষণার চেয়েও লক্ষ গুন বেশি পর্ণগ্রাফী ঢুকে পড়েছে। এগুলোকে তারা নিয়ন্ত্রণ তো করছেই না, বরং এর মাধ্যমে তারা ব্যবসা করছে। কিন্তু বিশ¡ রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ মুসলমানদের হাতে থাকেলে এটা হতো না, যেমনটি অতীতে ইসলামিক রাষ্ট্রব্যবস্থা থাকাকালীন হয় নি।
বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয়:
তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর উপর আক্রমণ করা বর্তমান এই পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় কি?
আমরা কি শুধু দেখেই যাবো? আমরা কি সামান্য কিছু প্রতিবাদ করেই থেমে যাবো?
না এটি কোনো সমাধান নয়। কারণ এধরণের ঘটনা আগেও ঘটেছে সামনেও ঘটবে। এজন্য প্রয়োজন দীর্ঘ মেয়াদী বিস্তৃত কর্ম পরিকল্পনা। তারা যেমন তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে ইসলামের ব্যাপারে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে আমাদেরও উচিত তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে এর জবাব দেয়া। শালীনভাবে ইসলামের সঠিক স্বরূপ জনগণের সামনে তুলে ধরা। নাস্তিক ও ইসলাম বিদ্বেষীদের অজ্ঞান প্রসুত প্রশ্নের জবাব দেয়া। এজন্য আলেম উলামাদের এগিয়ে আসা সময়ের একান্ত অপরিহার্য দাবী।
কিন্তু দু:খজনক বিষয় হলো আমাদের আলেম উলামা এবং ইসলামী সংগঠনসমূহ এ বিষয়ে সম্যক অবগত না থাকার কারণে তারা এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। আমরা যারা বিগত আড়াই-তিন বছর যাবত ব্লগ ও নেটের সাথে সম্পৃক্ত আছি তারা অনেক বড় বড় আলেমকে এ ব্যাপারে আগে বললে তারা বলতেন এখানে অহেতুক সময় নষ্ট হয়। এর দ্বারা জাতীয় পর্যায়ে কোনো ফলাফল নেই।
কিন্তু আলহামদুল্লিাহ সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা তাদের চোখ খুলে দিয়েছে। এখন তাদেরই অনেকে আমাকে ডাকছেন। আলাপ করছেন। পরামর্শ চাচ্ছেন। তথ্য-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে চাচ্ছেন।
এজন্য আমরা গত কিছুদিন শীর্ষস্থানীয় অনেক আলিম এবং বাংলাদেশের অরাজনৈতিক কয়েকটি সামাজিক সংগঠনের সাথে এ বিষয়ে বিস্তর আলোচনা শেষে শীঘ্রই আলিম ও ইমাম খতীবদেরকে তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এজন্য আমাদের প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে ২৫ টি ল্যাপটপ, একটি প্রজেক্টর কেনা। এর মাধ্যমে আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকার বড় বড় মাদ্রাসাগুলোতে এবং পর্যায়ক্রমে অন্যান্য জেলাতেও আইটি ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা হবে।
প্রাথমিক পর্যায়ে আলেমদের মধ্যে যারা কম্পিউটার সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখেন তাদের নিয়ে কোর্স করবো। তাদেরকে ইন্টারনেট, ই-মেইল, ওয়েব সার্চিং ও ব্লগিং সম্পর্কে প্রাথমিক নলেজ দেয়ার চেষ্টা করবো। তাদের জন্য আমাদের নিজস্ব ওয়েব ও ব্লগে একাউন্ট করে দেবো। আশা করা যায় এই প্রজেক্ট সফল হলে আগামী তিন মাসের মধ্যে অনলাইনে সত্যের পক্ষে আমরা অনেক অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে সাথে পাবো।
মহান আল্লাহ যেনো আমাদের এই প্রজেক্ট সফল করার তাওফীক দেন সেজন্য সকলের আন্তরিক দু’আ চাচ্ছি। আর যদি কেউ এতে আর্থিকভাবে শরীক হতে চান তাহলে তিনিও আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। ২৫ টি ল্যাপটপের মধ্যে গতকাল একটি কেনা হয়েছে। এখনও ২৪ টি ল্যাপটপ বাকী। ইনশাআল্লাহ ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তবে সাদাকায়ে জারিয়ার এই কাজে কেউ সম্পৃক্ত হতে চাইলে সে সুযোগ রয়েছে। তবে দু’আর প্রয়োজন আমাদের সবচেয়ে বেশি।
Email:
মহান আল্লাহ আমাদেরকে সফলতা দান করুন। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১২৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন