ধূমপান হারাম কেনো?
লিখেছেন লিখেছেন মাই নেম ইজ খান ১২ মার্চ, ২০১৪, ১১:৪২:০১ সকাল
ইসলামের মূল উৎস হচ্ছে কুরআন হাদীস। মানব জীবনের সকল মূল সূত্র এখানে বর্ণিত হয়েছে। কোনোটি সংক্ষিপ্তাকারে কোনটি আবার দীর্ঘ ও বিস্তারিতভাবে। মানব জীবনের এমন অনেক বিষয়, বস্তু আছে যার সম্পর্কে কেবলমাত্র ইশারা করা হয়েছে। কিছু বিষয়ে কিছু নির্দিষ্ট মূলনীতি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। যার উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে ফকীহ, মুহাদ্দিস, মুজাদ্দিদ উলামায়ে কিরাম উম্মাহর জন্য বিস্তারিত ব্যখ্যা উলামায়ে কিরাম বিবৃত করেছেন।
বর্তমানে আমাদের সমাজে প্রচলিত ধূমপানও তেমনই একটি বিষয়। পবিত্র কুরআন ও হাদীস থেকে এ সম্পর্কে আমরা যে সকল তথ্য পাই তার আলোকে কেউ কেউ একে মাকরূহ বললেও বর্তমান বিশ্বের উল্লেখযোগ্য প্রায় সকল উলামায়ে কিরাম একে হারাম বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তারা এর হারাম হওয়ার কারণ ও মূলগত রেফারেন্সও উল্লেখ করে দিয়েছেন। নিম্নে সংক্ষেপে পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো।
ধুমপান হারাম হওয়ার কারণসমূহ:
(১) ধুমপান করা হারাম । কারন ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর, ধুমপানে মৃত্যু ঘটে, ধুমপানে ষ্ট্রোক হয়। আর এটা আত্ম ত্যার শামিল। আর নিজেকে নিজে হত্যা করা সম্পূর্ণ হারাম। ইরশাদ হচ্ছে-
(১) وَلا تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا (سورة النساء: ۲۹)
অর্থ ঃ- আর তোমরা নিজেরা নিজদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে পরম দয়ালু। (সুরা:নিসা:২৯)
(২) وَلا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ وَأَحْسِنُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
অর্থ ঃ- এবং নিজ হাতে নিজদেরকে ধক্ষংসে নিক্ষেপ করো না। আর সুকর্ম কর। নিশ্চয় আল¬াহ সুকর্মশীলদেরকে ভালবাসেন। (সুরা:বাক্বারা: ১৯৫)
(২) ধুমপান করা অপচয়, যারা অপচয় করে তারা শয়তানের ভাই।
(১) وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيرًا. إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُورًا.
অর্থ ঃ- আর তেমরা অপচয় করো না। নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার রবের প্রতি খুবই অকৃতজ্ঞ। (সুরা ; বনী ইসরাঈল : ২৭) সুতরাং যে কাজ করলে মানুষ শয়তানের ভাই হয়ে যায় সে কাজটি অবশ্যই হারাম।
(৩) ধুমপান একটি নিকৃষ্ট কাজ, আর এ ধরনের কাজকে হারাম ঘোষনা করাই আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) অন্যতম দায়িত্ব। ইরশাদ হচ্ছে।
(১) وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَائِثَ (سورة الأعراف : ১৫৭)
অর্থ ঃ- এবং তাদের জন্য উত্তম বস্তু হালাল করে আর নিকৃষ্ট বস্তু হারাম করে। (সুরা : আ’রাফ : ১৫৭)
(৪) কোন মানুষকে কষ্ট দেয়া হারাম।
(১) عن جابر قال قال رسول الله : من اكل من هذه قال اول مرة الثوم ثم قال الثوم والبصل والكراث فلا يقربنا في مساجدنا- هذا حديث حسن صحيح
অর্থ:- জাবের থেকে বর্ণিত রসুল (সাঃ) বলেছেন: যে ব্যক্তি কাচা পেয়াজ, রসুন, র্কুরাছ (দুর্গন্ধময় এক জাতিয় খাবার) খাবে সে যেন আমাদের মসজিদের নিকটেও না আসে। (তিরমিজি)
সুতরাং ধুমপানের দুর্গন্ধ অধুমপায়ীদের জন্য আরো বেশী কষ্টকর। তাই ধুমপান করাও হারাম।
(৫) ধুমপানকারী বেঈমান হয়ে মারা যাওয়ার আশংকা আছে।
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ عَنِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ ্র مَنْ أَكَلَ مِنْ هَذِهِ الْبَقْلَةِ الثُّومِ - وَقَالَ مَرَّةً مَنْ أَكَلَ الْبَصَلَ وَالثُّومَ وَالْكُرَّاثَ - فَلاَ يَقْرَبَنَّ مَسْجِدَنَا فَإِنَّ الْمَلاَئِكَةَ تَتَأَذَّى مِمَّا يَتَأَذَّى مِنْهُ بَنُو آدَمَ গ্ধ. صحيح مسلم للنيسابوري
অর্থ:- জাবের থেকে বর্ণিত রসুল (সাঃ) বলেছেন: যে ব্যক্তি কাচা পেয়াজ, রসুন, র্কুরাছ (দুর্গন্ধময় এক জাতিয় খাবার) খাবে সে যেন আমাদের মসজিদের নিকটেও না আসে। কেননা মানুষ যাতে কষ্ট পায় ফেরেস্তারাও তাতে কষ্ট পায়। (মুসলিম)। অতএব, ধুমপায়ীর নিকট আল্লাহর রহমতের ফেরেস্তারা আসবে না। সুতরাং মৃত্যুর সময় শয়তানের খপ্পরে পরে বেঈমান হয়ে মারা যাবে। (সহীহ মুসলিম, ২/৮০)
(৫) ধুমপানকারীগন বাথরুমে গিয়েও ধুমপান করে। বাথরুমের দুর্গন্ধ আর ধুমপানের স্বাদ মিলিয়ে খায় বলেই সিগারেটের বিজ্ঞাপনে লেখা থাকে “স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়।” অথচ বাথরুম মল-মূত্র ত্যাগ করার জায়গা খাবার জায়গা নয়।
(৬) ধুমপানকারী জাহান্নামীদের সাথে সাদৃশ্যতা রাখে। কারণ জাহান্নামীদের নাক-মুখ দিয়ে ধোঁয়া বের হবে।
عن ابن عمر ، قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : (من تشبه بقوم فهو منهم) . سنن أبي داود
অর্থ:- ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্যতা রাখে সে ঐ সম্প্রদায়েরই একজন। (সুনানে আবু দাউদ)। সুতরাং ধুমপানকারী জাহান্নামীদের সাথে মিল রাখার কারনে সে নিজেও জাহান্নামীদের একজন। আর যে কাজ করলে মানুষ জাহান্নামে যায় সে কাজটি হারাম।
(৭) ধোঁয়া আল্লাহর আযাব তথা কিয়ামতের লক্ষন। ইরশাদ হচ্ছে।
يَوْمَ تَأْتِي السَّمَاءُ بِدُخَانٍ مُبِينٍ
অর্থ:- যেদিন স্পষ্ট ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হবে আকাশ। (সুরা দুখান:১০) ধুমপানকারীগন নাক-মুখ দিয়ে ধোয়া বের করে আল্লাহর গযব কেই আহবান করে।
(৮) ধুমপানের কারনে মানুষের বিবেক-বুদ্ধি লোপ পায়। অথচ আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান বুদ্ধি সংরক্ষন করা ফরজ। নষ্ট করা হারাম। এই কারনেই মদকে হারাম করা হয়েছে। কারণ তা মানুষের বিবেক-বুদ্ধি নষ্ট করে দেয়।
(৯) ধুমপানের কারনে ধুমপানকারীর ঠোটের সৃষ্টিগত রূপ বিকৃত হয়ে যায়, আর কোন অঙ্গ ইচ্ছাকৃত ভাবে বিকৃত করা হারাম। এবং উহা শয়তানের কাজ।
وَلَأُضِلَّنَّهُمْ وَلَأُمَنِّيَنَّهُمْ وَلَآمُرَنَّهُمْ فَلَيُبَتِّكُنَّ آذَانَ الْأَنْعَامِ وَلَآمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللَّهِ وَمَنْ يَتَّخِذِ الشَّيْطَانَ وَلِيًّا مِنْ دُونِ اللَّهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُبِينًا.
অর্থ:- ‘আর অবশ্যই আমি তাদেরকে পথভ্রষ্ট করব, মিথ্যা আশ্বাস দেব এবং অবশ্যই তাদেরকে আদেশ দেব, ফলে তারা পশুর কান ছিদ্র করবে এবং অবশ্যই তাদেরকে আদেশ করব, ফলে অবশ্যই তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবে’। আর যারা আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে, তারা তো স্পষ্টই ক্ষতিগ্রস্ত হল। (সুরা নিসা:১১৯)
(১০) ধুমপানের কারনে ধুমপানকারীর অভ্যন্তরে ধোঁয়া প্রবেশ করে আর ধোঁয়া আগুন থেকে সৃষ্টি আর আগুন ভক্ষন করা হারাম। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা আমাদের খাবারের জন্য আগুন সৃষ্টি করেন নাই।
ধূমপান মানবদেহেরে জন্য সীমাহীন ক্ষতিকর। আর ইসলাম ক্ষতিকর সকল বস্তুগ্রহণকে কঠোরভাবে হারাম করেছে। মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর সকল বস্তু হারাম ঘোষণা করে কুরআনে ইরশাদ হয়েছে
وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَائِثَ وَيَضَعُ عَنْهُمْ إِصْرَهُمْ وَالْأَغْلَالَ الَّتِي كَانَتْ عَلَيْهِمْ فَالَّذِينَ آمَنُوا بِهِ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَاتَّبَعُوا النُّورَ الَّذِي أُنْزِلَ مَعَهُ أُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ.
অর্থ:-“ তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করে আর অপবিত্র বস্তু হারাম করে। আর তাদের থেকে বোঝা ও শৃংখল- যা তাদের উপরে ছিল- অপসারণ করে। সুতরাং যারা তার প্রতি ঈমান আনে, তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং তার সাথে যে নূর নাযিল করা হয়েছে তা অনুসরণ করে তারাই সফলকাম। (সুরা আল আ’রাফ:১৫৭)
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنْزِيرِ وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللَّهِ بِهِ وَالْمُنْخَنِقَةُ وَالْمَوْقُوذَةُ وَالْمُتَرَدِّيَةُ وَالنَّطِيحَةُ وَمَا أَكَلَ السَّبُعُ إِلَّا مَا ذَكَّيْتُمْ وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ وَأَنْ تَسْتَقْسِمُوا بِالْأَزْلَامِ ذَلِكُمْ فِسْقٌ الْيَوْمَ يَئِسَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ دِينِكُمْ فَلَا تَخْشَوْهُمْ وَاخْشَوْنِ الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا فَمَنِ اضْطُرَّ فِي مَخْمَصَةٍ غَيْرَ مُتَجَانِفٍ لِإِثْمٍ فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ
অর্থ: “তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত প্রাণী, রক্ত ও শূকরের গোশত এবং যা আল্লাহ ভিন্ন কারো নামে যবেহ করা হয়েছে; গলা চিপে মারা জন্তু, প্রহারে মরা জন্তু, উঁচু থেকে পড়ে মরা জন্তু অন্য প্রাণীর শিঙের আঘাতে মরা জন্তু এবং যে জন্তু, হিংস্র প্রাণী খেয়েছে- তবে যা তোমরা যবেহ করে নিয়েছ তা ছাড়া, আর যা মূর্তি পূঁজার বেদিতে বলি দেয়া হয়েছে এবং জুয়ার তীর দ্বারা বণ্টন করা হয়, এগুলো গুনাহ। যারা কুফরী করেছে, আজ তারা তোমাদের দীনের ব্যাপারে হতাশ হয়ে পড়েছে। সুতরাং তোমরা তাদেরকে ভয় করো না, বরং আমাকে ভয় কর। আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নিআমত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে। তবে যে তীব্র ক্ষুধায় বাধ্য হবে, কোন পাপের প্রতি ঝুঁকে নয় (তাকে ক্ষমা করা হবে), নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা আল মায়েদা:৩)
উপরোক্ত প্রমাণাদির আলোকে ধূমপান যে কতো মারাত্মক এবং ক্ষতিকর হারাম একটি বিষয় তা আমাদের সামনে সুস্পষ্ট হয়ে গেলো। এখন আমরা কিভাবে আমল করবো তা আমাদের বিষয়। আমরা যদি জেনে শুনে হারাম কাজ করি তাহলে এই দুনিয়ার পাশাপাশি এজন্য যে পরকালেও আমাদের শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে তা বলাই বাহুল্য।
তাই আসুন সকলে সমস্বরে শ্লোগান তুলি-
''ধূমপান ছেড়ে দিন, ফুলের সৌরভ নিন''
বিষয়: বিবিধ
১৬৭৮ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
উপরের পয়েন্ট গুলোর কারণে আরবের প্রায় সকল উলামায়ে কিরামই কিন্তু একে হারাম বলেছেন। আমি কি করবো ভাই?
জনগন ধুমপান করে স্টাইল মারতে ।
পেয়াজ-রসুন কাঁচা খাওয়ার ক্ষেত্রে সামান্য সমস্যা। অবশ্য খাওয়ার পর ব্রাশ করে নিলে আর অসুবিধা নেই।
ধন্যবাদ তথ্যপূর্ণ পোস্টের জন্য।
এমন সচেতন পাঠক পাওয়াটাও সৌভাগ্যের বিষয়।
ভালো লাগলো। পিলাচ
আপনাকেও ধন্যবাদ।
এ বিষয়ে আমাদের তথ্য ও লেখা খুবই কম।
সম্ভব বলে একটি প্রেমের উপন্যাস লিখে ফেলুন। বিবাহপূর্ব নকল প্রেম আর বিবাহ পরবতী সত্যিকার প্রেম ও তার ফলাফল থাকবে >- >- >-
বিয়ে করেছি, বিয়ে নিয়ে লিখতে পারি। যেটার অভিজ্ঞতা নাই সেটা নিয়ে লেখা একটু কঠিন বটে! ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন