প্রেক্ষিত- ''হেলিকপ্টারে এসি নেই তাই...'' (মুসলিম উম্মাহর শাসক ও নেতৃবৃন্দের ক্ষমার অযোগ্য আলসেমির অতীত-বর্তমান)
লিখেছেন লিখেছেন মাই নেম ইজ খান ১১ মার্চ, ২০১৪, ০৪:২৪:০৬ রাত
বর্তমান বিশ্ব মুসলিমদের জন্য সবচাইতে দুর্ভাগ্য জনক বিষয় হচ্ছে তাদের নেতৃবৃন্দ বিশেষত: আরব শাসক আর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উম্মাহকে নেতৃত্ব দেয়ার কথা যাদের সেই আরবলীগ, ওআইসিসহ প্রায় সকল বড় বড় সংগঠনের সাম্রাজ্যবাদের আকন্ঠ দালালীতে নিমজ্জিত হয়ে যাওয়া। মুসলিমদের প্রবাহমান রক্তস্রোত তাদের আরাম নিদ্রায় সামান্য ব্যঘাত ঘটতে না পারলেও মানবতার দুশমন তাগুত ও কুফরের সামান্য সর্দি-কাশিতে তাড়া হয়ে যান পেরেশান। মিশর-তুরস্ক-সউদী আরব, কাতার, কুয়েত ইত্যাদি প্রায় সকল আরব ও মধ্যপ্রাচ্যীয় মুসলিম দেশসমূহের ভোগবাদী শাসকদের যথেচ্ছ অনাচারের জবাব তারা কিয়ামতের দিন কি দিবে?
একথা মনে হলো একটু আগে আজকের দৈনিক মানব জমিন পত্রিকার একটি খবর দেখে। যার শিরোনাম: হেলিকপ্টারে এসি নেই তাই... http://mzamin.com/details.php?mzamin=MTQ2NDM=&sMg==
বিস্তারিত বিবরণে জানা যায়-
রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যেতে চেয়েছিলেন ওআইসি মহাসচিব আইয়াদ আমিন মাদানি। রোববার ঢাকায় নামার পর ওই আগ্রহ ব্যক্ত করেছিলেন তিনি। সরকারের তরফে তার নিরাপত্তাসহ কক্সবাজার সফরের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছিল বেশ তড়িঘড়ি করে। কিন্তু হেলিকপ্টারে এসি না থাকায় সফরটি শেষ মুহূর্তে বাতিল করা হয়। সূত্রের দাবি, নন-এসি হেলিকপ্টারে চড়তে অতিথি নিজেই অপারগতা প্রকাশ করেন। কক্সবাজার না যেতে পারায় তাৎক্ষণিক তিনি তার দ্বিতীয় আগ্রহের বিষয়টি জানিয়ে দেন। রাজধানীর বৌদ্ধ মন্দির পরিদর্শনের আগ্রহ ব্যক্ত করেন অতিথি। গতকাল দুপুরের পর সেখানে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। মুসলিম দেশগুলোর জোট-ওআইসি’র মহাসচিব বৌদ্ধ সমপ্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে বেশ ‘উপভোগ্য’ সময় কাটিয়েছেন বলে দাবি করেন তার সঙ্গে থাকা কর্মকর্তারা।
এই ঘটনার বাস্তবতা আল্লাহই ভালো জানেন। কিন্তু বাহ্যিকভাবে বিশাল সাদা জোব্বা, আবা-কাবায় মোড়ানো, লাল কিংবা সফেদ রুমাল আবৃত দেখতে দরবেশ আকৃতির ভেতরে অনেক শয়তান যে আজ মুসলিম দেশ ও সংস্থার শীর্ষে থেকে ইসলাম ধ্বংসে কাজ করছে, মুসলিমদের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি ব্যয় করছে তা বলা বাহুল্য।
অবশ্য এটি নতুন কোনো বিষয় নয়। মুসলিমদের অতীত ইতিহাসেও এমন অনেক গাদ্দার আর মুনাফিকের বিদ্যমানতা ছিলো। এসম্পর্কে ইমাম আনওয়ার আল আওলাকী রহ. এর উদ্ধৃত দু'টি ঘটনা উল্লেখ করে এই লেখার সমাপ্তি টানতে চাচ্ছি।
ইমাম ইবনে আসীর রহ. তাঁর আল কামিল গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, রোমানরা ৩৬১ হিজরীতে রাহা নগরী আক্রমণ করলে রাহা নগরী থেকে সাহায্যের আবেদন নিয়ে একটি প্রতিনিধি দল বাগদাদে মুসলিম খলীফা বখতিয়ার উবাইহীর নিকট আসেন। তারা গিয়ে দেখতে পান যে মুসলিম শাসক শিকার করা নিয়ে ব্যস্ত আছেন। তাদের অভিযোগ শোনার সময় তার নেই।
এই ছিলো সেই সময়কার মুসলিম শাসকদের অবস্থা। যেখানে তার দায়িত্ব ছিলো মুসলিম উম্মাহকে রক্ষা করার জন্য রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার, সেখানে তিনি ব্যস্ত আছেন শিকার নিয়ে। এটা আসলে নতুন কিছু নয়। উম্মাহর সাথে এমন উপহাস দুনিয়া পূজারী শাসকদের দ্বারা সব সময়ই হয়েছে।
এই তো সেদিনের কথাও স্পষ্ট মনে আছে, আরব দেশের বাদশাহ ওয়াশিংটন ডি.সি. ভ্রমণে এসেছিলেন। সেখানে স্থানীয় মুসলিম সমাজের লোকজনের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য তার পূর্ব নির্ধারিত দিন ছিলো মঙ্গলবার। মুসলমানগণ অনেক দিন থেকে এই অনুষ্ঠানের জন্য বিভিন্ন রকম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। তারা শুধু অপেক্ষা করছিলেন, কবে মঙ্গলবার আসবে। একদিন আগে হঠাৎ সোমবার দিন দূতাবাস থেকে তাদেরকে জানিয়ে দেয়া হলো যে মঙ্গলবার বাদশাহ অন্য একটি জরুরী মিটিংয়ের কারণে মুসলিম কমিউনিটির সাথে নির্ধারিত অনুষ্ঠানে তিনি আসতে পারবেন না।
সাধারণ মানুষজন ধারণা করেছিল যে হয়ত নিশ্চয়ই আমেরিকা প্রশাসনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষস্থানীয় কোনো ব্যক্তির সাথে এমন কোনো জরুরী কাজ পড়ে গেছে, যেটা হয়তো তার পক্ষে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। হতে পারে সেই মিটিংটা মুসলমানদের জন্য এই অনুষ্ঠানের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আফসোস এই উম্মাহর জন্য! পরবর্তীতে পত্রিকায় খবর বের হলো যে বাদশাহ সেদিন তার স্ত্রীকে নিয়ে একাধারে চার চারটি সিনেমা দেখার মহা আনন্দ উপভোগ করেছেন। তিনি একটা সিনেমা শেষ করে আরেকটি সিনেমায় যাওয়ার জন্য বাদশাহ্ সারাদিন ভীষণ ব্যস্ত ছিলেন। এতোই ব্যস্ত ছিলেন যে তার পক্ষে মুসলিম কমিউনিটির মিটিংয়ে আসা সম্ভব হয়নি!
এই ঘটনা থেকে আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে মুসলিম উম্মাহ তাদের জাতীয় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব যাদের হাতে অর্পণ করেছে, উম্মাহর প্রতি তাদের দায়িত্ববোধ, আন্তরিকতা ও ভালোবাসা কি পরিমাণ!
এরা তো এমন ব্যক্তি যাদেরকে একটি মুদী দোকান চালানোর ব্যাপারেও বিশ্বস্ত মনে করা যায় না, অথচ তারা রাষ্ট্রপ্রধানের মতো গুরুত্বপূর্ণ আসন দখল করে আছে। গোটা উম্মাহর ভাগ্যের নিয়ন্ত্রক হয়ে বসে আছে। আবার এই উম্মাহর মধ্যে এমন কতিপয় বেকুবও আছে, যারা বলে থাকে যে আমাদের উচিত এই শাসকদেরকে বাইআত দেয়া এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো কথা না বলা!
যাই হোক, চলুন আবার সেই বাগদাদের ঘটনায় ফিরে যাওয়া যাক। রাহা থেকে প্রতিনিধিদদল বাগদাদে এসে খলীফাকে দেখলো যে তিনি শিকার করায় মহাব্যস্ত। তারা খলীফাকে বুঝালেন যে, মুসলমানদের এই দু:সময়ে শিকার নিয়ে ব্যস্ত থাকা উচিত নয়। তার উচিত রোমানদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করা। খলীফা একথা শুনে বললেন, ‘আল্লাহু আকবার! আসলেই তো আমার যুদ্ধ করা দরকার। কিন্তু যুদ্ধ করতে তো অর্থ দরকার, তোমরা অর্থ সংগ্রহ করো।’ মুসলমানরা তাদের শাসককে অর্থ সংগ্রহ করে দিলো। অথচ সে সেই সমূদয় অর্থ তার ব্যক্তিগত শান শওকত বিলাস ও ব্যসনে খরচ করে ফেললো আর জিহাদের কথা বেমালুম ভুলে গেলো।
মহান আল্লাহ এমন গাদ্দার, বিশ্বাসঘাতক, মুনাফিক আর তাগুতের একনিষ্ট চাটুকার মুসলিম শাসক ও কর্তাব্যক্তিদের থেকে মুক্তি দিন, আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১৩৬০ বার পঠিত, ২৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কী বলবো এদের ব্যপারে! এরা বিলাসীতায় ডুবে গেছে। দুনিয়ার আরামই মূখ্য এদরে জন্য। আচ্ছা আরবে এত ভালো ভালো মানুষ থাকতে এদের কেন মহাসচীব বানায়?
কী বলবো এদের ব্যপারে! এরা বিলাসীতায় ডুবে গেছে। দুনিয়ার আরামই মূখ্য এদরে জন্য। আচ্ছা আরবে এত ভালো ভালো মানুষ থাকতে এদের কেন মহাসচীব বানায়?
এরা বিশাল বিশাল ক্ষমতা পেয়ে গেছে তো - তাই পরকালের পরোয়া করে না ।
যেহেতু উভয়েই মুসলমান ছিলেন সেহেতু তাদের উভয়েরই এক সাথে জামাত করে নামাজ পড়া উচিত ছিল স্টাফদের সাথে নিয়ে । দুই জনের যে কেউ ইমামতি করতে পারতেন ।
গরমের দেশের লোক, এসি না হলে তো সমস্যা হবার কথা না । এটা যদি গ্রীনল্যান্ড বা সাইবেরিয়ার কোন রাষ্ট্রপ্রধান বলতেন তাহলে না হয় একটা কথা ছিল ।
ইচ্ছা থাকলে সামান্য সমস্যাকেও তিনি হাসিমুখে বরণ করে সেখানে যেতে পারতেন।
ওআইসি ও আরবলীগ এবং সউদী ও আরব শাসকদের অনেক শয়তানি আমাদেরকে তাদের সম্পর্কে তিক্ত ধারণা পোষণ করতে বাধ্য করছে।
কিন্তু তার থেকে এমন আচরণ মর্মাহত করেছে লাখো মুসলিমকে...
মন্তব্য করতে লগইন করুন